প্রজা

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

শামীম খান
  • ১৭
  • ২৭
( ১ )
অনামিকার ধারনা ঘরের খেয়ে যারা বনের মোষ তাড়ায় তাদের দলে নাম লিখিয়েছি আমি । দোতলা এ বাড়ীটার বেশীটাই অব্যবহৃত । নীচ তলার রাস্তার দিকের একটি রুমে তাই সপ্তাহে একদিন পাড়ার তরুন লেখিয়েদের নিয়ে বসতে শুরু করেছি । সব কিছুরই একটা নাম থাকলে সুবিধে হয় । আমরা এই আড্ডার নাম দিয়েছি ‘মুক্তাঙ্গন সাহিত্য সভা’ । আমি অবশ্য তেমন লিখিনা , শুনি । মনোযোগী শ্রোতা আর সমালোচক হিসেবে এরই মধ্যে আমি সবার মনে কিছুটা শ্রদ্ধা আদায় করেছি । কিন্তু অনুর কথা হোল , বাংলা সাহিত্যের বড় কোন ভবিষ্যৎ নেই । আর থাকলেও আমার মত নীরস ঝুনা নারিকেল গোছের ছোকরাকে দিয়ে কিছুই হবে টবে না । তার মতে পুরুষ মানুষ তিন টাইপের হয় । এক , কমলা টাইপ । এরা দেখতেও ভাল , কাজে ও চলনসই । দুই , আম টাইপ , এরা দেখতে মোটামুটি কিন্তু কাজে দারুন । সুচারু দক্ষতায় এরাই সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় । পৃথিবীর বেশীর ভাগ সফল পুরুষই নাকি এই গ্রুপের । তিন , পাকা ঝুনা নারিকেল টাইপ । দেখতে হতচ্ছাড়া , চাখতে চাই কসরত , তারপরও যে সবার ভাল লাগবে তেমন নয় । এতক্ষনে নিশ্চয় আপনারা অনামিকার সাথে আমার সম্পর্ক নিয়ে বেশ হতাশ হয়ে উঠেছেন । আসলে কিন্তু তা নয় । অনুর অন্যদিকটা হোল সে আমার বোন হয়েও বন্ধুর চেয়ে কিছু বেশী । এমন কোমল স্নেহছায়ায় যেসব সৌভাগ্যবানেরা আশ্রয় পেয়েছেন তাদের কাউকেই আমি দেখিনি , শুধু উপন্যাসে পড়েছি । কিন্তু বেঁধে গেলে মুহূর্তেই উবে যায় বন্ধুত্ব , শুরু হয় ভয়ঙ্কর আক্রমন ! অনুকে তখন সামলানো কঠিন । ভরসা দোতলার ঐ কোনার ঘরটা । ওখানে আমার মা থাকেন । পক্ষাঘাত নিয়ে তাঁকে চব্বিশ ঘণ্টাই শুয়ে থাকতে হয় । তবে আমাদের হট্টগোল শুরু হলে তাঁর গলা দিয়ে গোঙানির মত শব্দ হয় । আমরা রনে ভঙ্গ দেই ।
লেখালেখি নিয়ে রাত জাগা প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । মাঝে মাঝে আমি মায়ের পাশে এসে বসি । দিন আর রাত তার কাছে সমান ক্লান্তিকর , একঘেয়ে । মা বোধ হয় প্রতীক্ষায় আছেন , মুক্তির প্রতীক্ষা । আমার চোখে পানি আসে । কখনো কখনো আমি মায়ের পাশে শুয়ে পড়ি । তাঁকে জড়িয়ে ধরি । কিছুদিন হোল , এমনটা করলে মা কাঁপতে থাকেন , তাঁর মুখ দিয়ে লালা বেরিয়ে আসে । আমি বেশ বুঝতে পারি ,তাঁর উদ্ভ্রান্ত দুটো চোখে মেশানো থাকে ভয় । নিজের ছেলেকে কেউ ভয় পায় ! নিশ্চয় আমার মায়ের মাথা ভাল কাজ করছে না ।
আমার জীবনযাত্রা অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্ন । এসবের পেছনে অবশ্য গত বছর লটারিতে পেয়ে যাওয়া পঞ্চাশ লাখ টাকার একটা বিরাট ভুমিকা রয়েছে । এভাবে রাস্তার ধারে টাকা মিলে গেলে একেক জন একেক কাণ্ড করে বসে । কেউ ধোঁয়ার কুণ্ডুলীতে উড়িয়ে দেয় , কেউ রঙ-বেরঙের পানিতে ভাসিয়ে দেয় , কেউ পিতলের কলসীতে পুঁতে ফেলে মাটির নীচে । আমি অবশ্য ছড়িয়ে দিয়েছি । একটা চিংড়ি চাষ প্রকল্প দাঁড় করে ফেলেছি , এই শহর থেকে অল্প দূরে । সুন্দরবনের কাছাকাছি নালিতাবুনিয়া নামের এক গ্রামে , পশুর নদীর পাড়ে । কৃষক ধান ছড়িয়ে দিলে যেমন মাঠ ভরে ওঠে সবুজ সৌরভে , আমার ছড়ানো টাকা এখন রুপালী আভায় চারিদিক উজ্জ্বল করে তুলেছে । পুষ্ট চকচকে রুপালী চিংড়িগুলো জাল ভরে উঠে এলে আমার চোখ জুড়িয়ে যায় । ভদ্র সম্ভ্রান্ত লোকদের খাবার টেবিলে মাংসল চিংড়িগুলো যে ভীষণ আলোড়ন তুলবে তা আমি এখান থেকেই বেশ বুঝতে পারি ।
আমার পরিচয় এখন চিংড়িচাষি এবং সাহিত্যসেবী । এতে অবশ্য আমার চেহারার ভিটে মাটিতে নতুন গজিয়ে উঠতে থাকা বুদ্ধিজীবি বুদ্ধিজীবি ভাবটা অকালে তিরোহিত হয়েছে । দেশের আর দশটা মফস্বল শহরের মত এই শহরেও কলেজের প্রভাষক সর্বসাধারন স্বীকৃত একজন স্থানীয় বুদ্ধিজীবি । এম এস সি পাশ করে এখানকার একটি বেসরকারী কলেজে রসায়নের রসাস্বাদনে একাদশ আর দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের আগ্রহী করে তুলতে ব্রতী হয়েছিলাম । চাকুরীটা ছেড়েছি বছর গড়াতে যাচ্ছে , লটারি জেতার পরপর । খবরটা শুনে অনামিকার মুখখানি সাদা হয়ে গিয়েছিল । বজ্রাহত হতে শুনেছি , দেখেনি । অনুকে দেখে সেদিন ওটাই ভাবছিলাম । ওকে আমি নাম ধরেই ডাকি । আমার থেকে বছর সাতেকের বড় । ও কিন্তু আমার নিজের বোন নয় । একটি ছোট্ট ইতিহাস আছে ওর , যা আজকাল আর খুব সহজে মনে পড়ে না । আমি হবার আগে পরপর তিনটি সন্তান জন্মের কয়েকদিনের মাথায় মারা গেল বাবা মার । বেশ মুষড়ে পড়েছিলেন ওঁরা । শহরের একপাশে এই পুরনো দোতলা বাড়ীটিতে তখন খাঁ খাঁ শুন্যতা । বর্ষার মওসুম চলছিল । কয়েকদিন অঝোরে ঝরে সেদিন ভোরে বৃষ্টি একটু থেমেছে । বাবা আজান শুনে ফজরের নামাজ পড়তে নীচে নেমে বাইরে ভারী অদ্ভুত একটি দৃশ্য দেখতে পেলেন । চার পাঁচ বছরের একটা মেয়ে রাস্তা ঘেঁষা বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে । তার দুচোখের পানি বৃষ্টির ছাটের সাথে একাকার । কি নাম , কি পরিচয় , কোথা থেকে এসেছে কিছুই বলতে পারেনা । বাবা ছিলেন আইনজ্ঞ । নামাজ শেষে ফিরে পুলিশে খবর দেবার প্রয়োজন মাথায় এলো । কিন্তু মা ততক্ষনে ছোট্ট সেই মেয়েটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেলেছেন । আর নিজের একটি ওড়নাকে শাড়ী বানিয়ে তাকে পরিয়ে দিয়েছেন । মায়ের কোলে শিশুটিকে দেখে বাবা হেসেছিলেন । তার হাসিতে কতখানি ভালবাসা মেশানো ছিল তা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি । তবে অনুর কোন সাধ-আহ্লাদ বেঁচে থাকতে বাবা মুখ থেকে মাটিতে পড়তে দেন নি । ও এ বাড়ীতে আসার ঠিক এক বছর পর আমার জন্ম হোল । এসব ক্ষেত্রে সাধারনত কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চাটিকে সবাই ভুলে যায় । আমার বাবা মা করেছেন ঠিক তার বিপরীত , সবকিছুতে অনুর পছন্দই আগে । অবশ্য আমি কখনো এ নিয়ে মন খারাপ করেছি মনে পড়েনা । বোনটিকে সুখী দেখতে আমার সবসময় ভাল লাগে ।
( ২ )

কদিন আগে চিংড়ি খামারের পাশে আমি বেশ কিছু জমি কিনে নিয়েছি । সস্তায় পেয়ে গেলাম , তা ছাড়া ঠিক আমার খামারের সাথে লাগোয়া জমি । নেশায় নেশা বাড়ে । ধীরে ধীরে আমি টাকার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছি । নিজেকে চোখ রাঙাই , সাবধান করি , তারপর একসময়ে ঠিকই কাজে নেমে পড়ি । এখন শুকনো মৌসুম । চারপাশে মাটি তুলে পাড় মত করতে হবে । অনেক লোক কাজ করছে । রোজ শহর থেকে ওখানে যেয়ে দেখা শোনা করা কষ্টসাধ্য । ভাবছি ওখানেই একটা বাড়ী কিনবো কিনা । সেদিন সকালে মাটি তুলে গড়া পাড়ের উপর দাঁড়িয়েছিলাম । কাজ দেখছি । হঠাৎ চোখ পড়লো এক চ্যাঁই মাটির ভেতরে কালো মত কিছু একটার ওপর , রোদে চকচক করছে । একটা মূর্তি ! কালের ঘাত-প্রতিঘাতে কিভাবে যেন টিকে আছে । এদিকটায় একসময়ে বসত বাড়ী ছিল ,নদীর ভাঙ্গনে শেষ হয়ে গেছে । হিন্দু প্রধান এঅঞ্চলে কাদা-মাটির নীচে একটি ভাঙ্গা মূর্তি পেয়ে যাওয়া বিরাট কোন সংবাদ নয় । তবে আমার হাতের ভাঙ্গা মূর্তিটি কোন দেব-দেবীর নয় তা আমি হলফ করে বলতে পারি । পুরোটা কুচকুচে কালো , শুধু চোখদুটো সাদা । পুরুষের মুখাবয়ব । পাতলা ঠোঁট । অবয়বে খেলছে কাঠিন্য । মুখবিবরে জিহ্বাটা কেমন যেন বিসদৃশভাবে লকলক করছে । শোনা যায় এখানকার জমিদারেরা খুব নিষ্ঠুর ছিল । তাদের নানান ধরনের শোষণ-নিষ্পেষণে জনসাধারণ সারা জীবন অতিষ্ঠ থাকতো । অবাধ্য প্রজাদের চোখ গেলে তপ্ত সীসা ঢেলে দেবার একটা নির্মম শাস্তির কথাও শোনা যায় । কি ভেবে মূর্তিটির একটা নাম দিয়ে ফেললাম , প্রজা ! জমিদারদের অত্যাচারে নিষ্পেষিত হয়েও টিকে থাকার ঔদ্ধত্যের সাথে নামটি বেশ মানিয়ে যায় । প্রজার শরীর থেকে কাদা মাটি ধুয়ে বাড়ীতে আমার শোবার ঘরে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখেতে রাখতে একটা ছেলেমানুষি করে ফেললাম । তার চোখে চোখ রেখে ডাকলাম , 'প্রজা' । মুহূর্তে জবাব এল , 'শুনছি' । একবারই , কিন্তু স্পষ্ট । আমি প্রাত্যহিক জীবনে অলৌকিকতা মানিনা । বাইরে বৈশাখের সন্ধ্যা । ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেছে । দুর থেকে বজ্রধ্বনি ভেসে আসছে । মূর্তিটির সামনে পাথরের মত বসে রইলাম আমি । রাতে ঘুমটা হোল ছাড়া ছাড়া । ঘুমের ভেতর বারবার উঠে প্রজাকে দেখলাম । কোন অস্বভাবিকতাই চোখে পড়লো না । সকালে বুঝতে পারলাম , অডিটরি হ্যালুসিনাশন । সারাদিনের ক্লান্তিতে আমার স্নায়ু ছিল তপ্ত , মন বিক্ষিপ্ত । প্রজার সাথে কথোপকথন যে নিতান্তই আমার মনের ভেতরের ব্যাপার ছিল এতে আর কোন সংশয় রইল না ।
পরদিন বিকালে কাজ থেকে ফিরে অনুর সাথে কথা হচ্ছিল আমার ঘরে । এটা সেটা আলাপের ফাঁকে হঠাৎ প্রজার দিকে চোখ পড়তেই ওর দৃষ্টি অন্যরকম হয়ে গেল । যেন হারিয়ে যাওয়া পুতুলটির দিকে তাকিয়ে আছে একটা ছোট্ট মেয়ে । অনেকক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল । এরপর ওটা নিয়ে দৌড়ে চলে গেল নিজের ঘরে । এমন সময়ে নীচ থেকে হট্টগোলের আওয়াজ এলো । নেমে দেখি দারোয়ান সাজু এক বৃদ্ধ ভিখারীকে ধমকাচ্ছে । লোকটি আজ রাতটুকু থাকার আশ্রয় চাইছে , আর সাজু তার উপর চোটপাট করছে । নীচতলায় দুটো রুম এখনো খালি পড়ে আছে । একরাতের জন্য একজন বৃদ্ধ ভিখারীকে থাকতে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না । আমি সাজুকে নিরস্ত্র করলাম । ভোর রাতে ঘুম টুটে গেল নীচ তলা থেকে আসা প্রার্থনার শব্দে । বৃদ্ধের কণ্ঠ ! জিহ্বায় যথেষ্ট আড়ষ্টতা , সেটা ছাপিয়ে প্রার্থনার কান্না অন্ধকার আর নিস্তব্ধতার সাথে মিলে এক আধ্যাত্মিক আবেশ তৈরি করেছে । কি দুঃখ তার বুকে ! বাকী রাত আর ঘুম এলো না । ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে । চোখ বুজে এটা সেটা ভাবছি । হঠাৎ চোখ খুলতেই শির শির করে কেঁপে উঠলো সারাটা শরীর । পায়ের দিকের খোলা জানালায় দাঁড়িয়ে আছে কুচকুচে কালো একজন লোক । মুহূর্তেই লোকটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল । আমি বৃথা বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি করে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম ।
কাজে বেরবার আগে নীচতলায় লোকটির খোঁজ নিলাম । চলে গেছে । মনের ভেতর একটা চাপ তৈরি হোল । কেন যেন এই বৃদ্ধকে ভাল লেগে গেছে আমার । দারোয়ানকে বলে দিলাম , লোকটি ফিরে এলে থাকা খাওয়ার আয়োজন করতে । সারাদিন দৌড়াদৌড়ীতে কেটে গেল । নতুন কেনা জমিটির শরীক বলে দাবী করছে অচেনা দুজন লোক । কথাবার্তায় বুঝলাম টাকা চায় । কোট-কাচারী আর পুলিশের হুমকি দিল । আমি কোন পেরেশানী বুঝতে দিলাম না । এসবে ধৈর্য ধরতে হয় , শিখে ফেলেছি । সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে বাইরের বারান্দায় বৃদ্ধ ভিখারীকে দেখতে পেলাম পেছন থেকে । খেতে বসেছে , তার সামনে একটা প্লেটে সাদাভাত আর একটুকরো মাছ । খুব সাধারন খাবার কি অসাধারন পরিতৃপ্তিতে খাচ্ছে লোকটি ! আমার উপস্থিতি টের পাবার আগেই পা টিপে টিপে সরে এলাম ।

( ৩ )

খামারের কাজ প্রায় শেষ । মায়ের শরীরটা আরও খারাপের দিকে । অনুর সাথে কথা বলে ডাক্তার সীতারাম ঠাকুরকে বাসায় ডেকেছি । ডাক্তার ঠাকুরকে ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি । অনেকটা পারিবারিক ঐতিহ্যের মত তিনি আমাদের জীবনের সাথে মিলেমিশে আছেন । ভাবছি উনি অনুমতি দিলে মাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করবো । ডাক্তার অনেক সময় নিয়ে পরীক্ষা করে বললেন , বাড়ীতে যতটা আরামের ব্যবস্থা করা যায় সেটাই ভাল । বড় নার্সিং হোম থেকে বেশী কিছু পাবার স্বম্ভাবনা ক্ষীন । তাছাড়া স্বাস্থ্যের যে অবস্থা তাতে টানাহ্যাঁচড়া সইবেনা । মায়ের হাজারো কোমল স্মৃতি মনটা তোলপাড় করছে । সেগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই । ঘুম যখন ভাঙ্গল , চারিপাশে বিশাল হৈ চৈ । বেরিয়ে আসতেই পিছল কিছুতে পা হড়কে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলাম । রক্ত , আমার রুমের সামনে একদলা জমাট রক্ত ! কিছুক্ষন পরেই খবরটা এলো । পাশের বাড়ীর ছোট্ট মেয়েটি , রঞ্জিতা ভোর রাত্রে মারা গেছে । মেয়েটি প্রায় এবাড়ীতে আসতো । এঘর ওঘরে বিনা বাঁধায় ঘুরে বেড়াতো ফুটফুটে পুতুলটি । কাজ ফেলে বিমর্ষ মনে সারাদিন বসে রইলাম । কোন রোগ বালাই ছিলনা । কিভাবে মারা গেল কেউ বুঝতে পারছে না , তবে তার চেহারা ছিল রক্তশুন্য । আমার মনে হয় মৃত্যুর পর সবাইকেই কমবেশি রক্তশুন্য দেখায় ।
ঝামেলা কখনো কখনো জ্যামিতিক হারে বাড়ে । জমির মালিক আমি ছাড়া আরও দুজনের কাছে জমিটি বিক্রি করেছে । পুরনো শরীক আর সদ্য আবিষ্কৃত দুই ক্রেতা , সবাই আজ এসেছিল একে একে । প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় একই কথা বলে শাসিয়ে গেল । আমি বিজ্ঞানের ছাত্র । ধৈর্য সুত্রে অগাধ আস্থা নিয়ে অপেক্ষা করছি । কণ্ঠ থেকে বিনয়টুকু আপাতত ধুয়ে ফেলেছি , তবে আমি আমার সীমাবদ্ধতা জানি । তিনদিন বাদে আজ সন্ধ্যায় অনুর দেখা পেলাম । ফ্যাঁকাসে আর রোগাটে দেখাচ্ছে তাকে । চোখের নীচে কালি । আমার মর্মাহত দৃষ্টির উত্তরে সে নিজ থেকেই বলল , রাতের ঘুমটা ঠিকমত হচ্ছে না । কেন জানতে চাইলে এড়িয়ে গেল । বৃদ্ধ ভিখারী জয়নাল মিয়া সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ালেও রাতে নিয়মিত এখানে থাকছে । আরও আশ্চর্য হোল সাজুর সাথে জয়নালের একটা স্বস্তিদায়ক সখ্যতা গড়ে উঠেছে । কালরাতে দেখলাম দুজনে বারান্দায় বসে , খোশ গল্পে মসগুল । জয়নাল মিয়া ইদানিং বাড়ীর টুকটাক কাজে হাত লাগাতেও শুরু করেছে । সন্ধ্যায় আমি ওকে ডেকে ছোটখাট ফুট ফরমাসের জন্য এ বাড়ীতে থাকা খাওয়া আর একটা মাসোহারার ব্যবস্থা শুনিয়ে দিলাম , ওর এদিক ওদিক ঘোরার আর প্রয়োজন রইল না । রাতে কখন ঘুমিয়েছি জানি না । মাঝরাতে বাথরুমের ট্যাপ থেকে পানি ঝরার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । ওটা বন্ধ করতে বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে যাব , দরজা ভেতর থেকে আটকানো ! শেষ কখন ওখানে গিয়েছি আমার স্পষ্ট মনে আছে । ভাবলাম কোনভাবে ছিটকানিটা ভেতর থেকে আটকে গেছে । হতাশ হয়ে শুতে ফিরবো , এমন সময়ে দড়াম করে আপনাআপনি খুলে গেল দরজাটা । ভিতরে কেউ নেই । ট্যাপটি বন্ধ । বাড়ীতে কদিনে এসব কি উদ্ভট ঘটনা ঘটে চলেছে ! আমার বিরক্তির সীমা রইল না ।

( ৪ )

জমির সমস্যা সামান্য কিছু টাকায় রফা হয়ে গেল । একা খাবার খেয়ে নির্ভার মনে রাত দশটার দিকে শরীরটা এলিয়ে দিলাম নরম বিছানায় । সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ শেষে ক্লান্তি আমাকে টেনে নিচ্ছে । ঘুম ভেঙ্গে গেল মধ্যরাতে , গোঙানির শব্দে । অনুর ঘর থেকে আসছে গোঙানির সাথে মেশানো কান্নার শব্দ, থেমে থেমে । তীর বেগে ছুটে যেয়ে পায়ের আঘাতে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলাম । তারপর আলো জ্বেলে যে দৃশ্য দেখলাম তা ছিল অবিশ্বাস্য ! বিছানায় ফ্যাঁকাসে একটা মৃতদেহ পড়ে আছে , শরীরে একফোঁটা রক্ত নেই , ভয় মাখানো দৃষ্টি স্থির দূরে বইয়ের র‍্যাকে রাখা প্রজার মূর্তির দিকে । একি , মূর্তির মুখে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত লেগে আছে ! আমার গগন বিদারী চিৎকারে বাড়ীর লোকজন সবাই জড় হোল আর আমি এক ব্যাখ্যাহীন এই ঘটনার ভার বইতে না পেরে জ্ঞান হারালাম ।
দুঃসময় পরকে আপন করে দেয় । দুর্দিনে শ্রেনীর দেয়াল পেরিয়ে মানুষ একই সমান্তরালে এসে দাঁড়ায় । অনুর মৃত্যুতে মায়ের অবস্থার সাংঘাতিক অবনতি হয় । বাড়ীর লোকজন তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে । মাকে আর বাড়ীতে ফেরানো যায়নি । সব কষ্টের অবসান ঘটিয়ে মা ও অন্য দুনিয়ায় চলে গেছেন । অনু আর মা পাশাপাশি শুয়ে আছে তিন হাত মাটির নীচে । দুদিন পার হয়ে গেছে ।সারাদিন আমি ঘোরের মধ্যে শুয়ে থাকি । আর জয়নাল মিয়া আমার ঘরের সামনে টুকটাক ফরমাশের অপেক্ষায় বসে থাকে । আজ বিকালে আমি উঠে আস্তে আস্তে অনুর ঘরটিতে গেলাম । সেদিনের সেদৃশ্যটি হয়তো ভুল ছিল । ঘুমের ভেতর হার্ট এটাক জাতীয় কিছুও হয়ে থাকতে পারে অনুর , দুঃস্বপ্ন দেখলে যা হয় । আমি যা দেখেছি তা হয়তো ছিল হ্যালুসিনেশন । অথবা সত্য ছিল । সব সত্য , সব রহস্যতো আজও উন্মোচিত হয়নি । যা বিজ্ঞান আজও জানেনা সে আমাদের অদেখা জগত । বড়ই রহস্যময় সেই দুনিয়া । কখনো সখনো সেখানে আমাদের অনাধিকার প্রবেশ ঘটে গেলে ভিন্ন বাস্তবতায় খেই হারিয়ে ফেলি , আমরা কনফিউজড হয়ে পড়ি । প্রজাকে হাতে নিয়ে পরীক্ষা করতে করতে এসব ভাবছিলাম । না , কোথাও রক্তের দাগ দেখা যায় না । হঠাৎ পেছন থেকে তীব্র আক্রশে ছুটে এসে জয়নাল মিয়া আমার হাত থেকে প্রজাকে ছিনিয়ে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো । তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইল , ‘এ সর্বনাশা মূর্তি তুমি ক্যামনে পাইলা ?’ আমি উত্তর না দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে রইলাম । এবার জয়নাল নিজেই বলে ফেলল সাতাশ বছর আগে ঘটে যাওয়া কিছু কথা , ‘উঠতি বয়েসে আমি আছিলাম জমিদারের সেপাই । জমিদারী ব্যবস্থা চইলে গেলি এদিক সেদিক ঘুইরে বেড়ালাম অনেক দিন । শেষ বয়েসে সংসারের স্বপ্ন দেখছিলাম , বাজান । বিয়ে কইরে আমি দাকোপের হোগলাবুনিয়া খেয়াঘাঁটের মাঝি হলাম । বউ আর চার বছরের মাইয়া নিইয়া ছোট্ট সংসার আছিল । বাড়ীর কানাচে এমূর্তি খুঁজে পাইছিলো আমার বউ রোমেনা । ঝর্না ,আমার মাইয়া , ওডারে নিজের পুতুল বানায়ে ফেলল । পরদিন কুচ্ছিত এই মূর্তিডারে বাড়ীর পেছনে ফেলায় আলাম আমি । মাইয়া সারাদিন কান্না কাটি করলো । সন্ধ্যায় কান্না আরও চেইতে গেলি ঝর্নার মা ওডি আবার কুড়ায় আইনে দেলো । পরদিন বউ আর বাচ্চারে নিইয়ে আমি নালিতাবুনিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে রওনা দিলাম । নদীর ওপারই নালিতাবুনিয়া । নিজের নৌকা । ঝড় বাদলার দিন । হঠাৎ মাঝ গাঙে ঝড় উঠলো , বাজান । ভাল মাঝি আছিলাম আমি । কোনোমতে কুলে ভিড়াতি পারছি কি তুফানে নাও ডুবে গেল । ডুবন্ত নায় আমি দেখছি । এইডা রাক্ষস ! আমি নিজ চউক্ষে দেখছি রোমেনার রক্ত চুষে এই মূর্তির রাক্ষসডা আমার বউডারে মাইরা ফেলল , আমি মাইয়াডারে নিইয়ে ঝাঁপায় কুলে উঠেই জ্ঞান হারায়ে ফেলি । জেলেরা পরে আমারে উদ্ধার করে । তারপর জ্ঞান ফিরেলে দেহি মাইয়াডাও নাই । ’
বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে শুনতে শুনতে আমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনাগুলো একসাথে সাজিয়ে ফেলি । নৌকা ডুবেছিল যেখানে সেই নালিতাবুনিয়ায়ই নদীরে পাড়ে পেয়েছি প্রজাকে । ঘটনাটি ঘটেছিল সাতাশ বছর আগে । এর পরপরই অনুকে ঘটনাক্রমে এবাড়ীতে পাওয়া গিয়েছিল । মনে পড়লো অনু কি নির্নিমেষ চোখে তাকিয়েছিল মূর্তিটার দিকে । কারন স্পষ্ট , ওটা ছিল তার ছেলেবেলার ভাললাগা । অনেকদিন পরে মূর্তিটি পেয়ে সে তার ভুলে যাওয়া অতীতের সৌরভ ফিরে পেয়েছিল ।
কথা শেষ হতে না হতেই বৃদ্ধ তার হাতের লাঠির উপর্যুপরি আঘাতে প্রজাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলল । একটি পোড়ামাটির মূর্তির উপর ক্রোধের বিস্ফোরণে যদি সব হারানো লোকটির সামান্য স্বান্তনা মেলে , ক্ষতি কি । আমি ভাঙ্গা টুকরা আর ধুলোবালিটুকু একটা টিনের পাত্রে জড় করে আমার ঘরের এক কোনে রেখে দিলাম । ততক্ষনে বৃদ্ধ আমার ঘরের সামনে বারান্দার একপাশে প্রার্থনায় দাঁড়িয়ে পড়েছে । ভাবছি নামজের শেষে অনুর কথাটি তাকে জানাতে হবে । সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে । আকাশের চাঁদোয়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেঘগুলো এক হয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারকে আরও গাঢ় করে দিয়েছ । হাওয়া ক্রমশ বাড়ছে , দেখতে পাচ্ছি কালবোশেখির হাতছানি । বৃদ্ধের নামাজ শেষ হবার আগেই মুহুর্মুহু বজ্রপাতে কানে তালা লাগে গেল । শুরু হোল মুষলধারায় বৃষ্টিপাত । এমন সময় বিদ্যুৎ চলে যাবে , অবধারিত ছিল । আলো জ্বালার প্রস্তুতি নিতে উঠে দাঁড়িয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম । বাড়ীর মুল দরজা পেরিয়ে প্রাঙ্গণ বেয়ে অন্ধকারে এগিয়ে আসছে একটি কালো ছায়া । ঘন ঘন বিদ্যুতের চমকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাকে । ঋজু কালো দেহে এতটুকু সুতো নেই । সাদা দুটো মনিবিহীন চোখ । থামানোর কোন পথ নেই । অশরীরি প্রতিহিংসায় এগিয়ে আসছে প্রজা । মুহূর্তে আমি কর্তব্য স্থির করে ফেলি । সময়ে অসময়ে চা খাই । একটি ষ্টোভ আর কেরোসিন ঘরে তাই রেডি থাকে । বাইরে তুমুল বৃষ্টি । কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি মূর্তির ভাঙ্গা টুকরোগুলোতে বোতলের কেরোসিন ঢেলে দেশলাই নিয়ে প্রস্তুত । বারান্দার বাইরের সিঁড়ির মাথায় বারান্দার দরজায় খট খট শব্দ করছে আগন্তুক । নির্ভুল শুদ্ধতায় আমি জানি কে দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপারে । বজ্রের শব্দ ছাপিয়ে জোরদার হয়ে উঠেছে দরজায় ঠক ঠক শব্দ । অন্ধকারে আমার হাত কাঁপছে । প্রচণ্ড ধাক্কায় অনুমতির তোয়াক্কা না করেই ঢুকে পড়লো আগন্তুক । আর একটি বিস্ফোরণের আওয়াজে পুরো বাড়ীটা থরথর করে কেঁপে উঠলো । অন্ধকারে পোড়া মাংসের কটু গন্ধ পেলাম এবার । আতঙ্কে শেষ হয়ে গিয়েছিলাম আমি । বিপদমুক্ত হবার স্বস্তি নিয়ে বসে রইলাম ।
কতক্ষন অন্ধকারে বসে ছিলাম জানিনা । মিনিট পাঁচেকতো হবেই । বিদ্যুৎ চলে এসেছে । জয়নাল মিয়ার নামাজ নিশ্চয় এতক্ষনে শেষ হয়েছে । ঐ তো সে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায় । তাকে আমার শোনাতে হবে আমার বোন অনামিকার গল্প , ঝর্নার গল্প । আস্তে আস্তে তার পাশে যেয়ে দাঁড়াই । এবার ঘুরে মুখোমুখি হোল জয়নাল । এ কি দেখছি আমি ! একটু আগে দেখা জয়নালের চোখদুটো নেই , সেখানে জুড়ে আছে সীসার আস্তর ! আমি ছুটে বেরিয়ে যেতে চাই , কিন্তু পা যেন মেঝেতে পুঁতে গেছে । স্বর বেরুতে চাইছেনা গলা থেকে । ছায়াটি কথা বলে উঠলো , ‘বাজান , আমারে মাফ কইরে দিও । পাপ , আমার পাপ আমারে ধইরে ফেলছে । ষাট বছর আগে জমিদার লক্ষ্মী নারায়নের বরকন্দাজ আছিলাম । অবাধ্য প্রজা আছিল লোকটা । সাতদিন অন্ধ কুঠুরিতে মুগুর ভাঁজার পরও খাজনা দিতে রাজী হোল না । শেষে জমিদার ইশারা দিল । আমি তার চোখ তুলে গরম সীসা ঢাইলে দিছিলাম বাজান । শুনিছি , বাড়ী ফিরার আগেই সে মইরে গেছিল । তোমার কোন ক্ষতি আমি করবো না বাজান , যাই , একটু লক্ষ্মী নারায়নের খোঁজ নিতি হবে। আমি ভুত হইয়ে গেছি , বাজান । আমারে মাফ কইরে দিও ..........।’
বারান্দার অন্যপাশে জয়নাল মিয়ার নশ্বর দেহটি পড়ে আছে । অক্ষি কোটরে চোখদুটো নেই , শুধু জমাট বাঁধা রক্ত । ছায়াটি খুব দ্রুত প্রাঙ্গণ বেয়ে চলে যেতে যেতে ছোট্ট একটি বিন্দু হয়ে দূরে হারিয়ে গেল , লক্ষ্মী নারায়ণকে যে তার পেতেই হবে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইদুল আলম সিদ্দিকী অনবদ্য! শুভ কামনা রইল।
অনেক ধন্যবাদ মাইদুল ভাই । শুভ কামনা আপনার জন্য ও ।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন "
ধন্যবাদ Gobindo Bin . অবশ্যই আসবো ভাই । ভাল থাকুন ।
biplobi biplob গল্পের প্রত্যেকটি লাইন আর্কশনীয়তার পাশাপাশি বিশেষ কিছু ও রয়েছে
অনেক ধন্যবাদ বিপ্লবী বিপ্লব মন দিয়ে পড়ার জন্য । শুভ কামনা রইল ।
Arif Billah প্রিয় শামীম ভাই চমৎকার গল্পের উপাচারের জন্য ধন্যবাদ। যাতে পাঠকের খোরাক রয়েছে। শ্রদ্ধা জানেবন।
অনেক ধন্যবাদ আরিফভাই । শুভ কামনা ।
মোজাম্মেল কবির ভুতের গল্প মানে যে শুধু অশরীরী একটি ছায়ার গল্প নয়, সমাজের অনাচার , ইতিহাস এই সব তুলে ধরার সুযোগ আছে আপনার এই গল্পটিতে তাই প্রমাণ হলো। লেখায় দক্ষতার ছাপ সুস্পষ্ট... শুভ কামনা সাথে যোগ্য পাওনা রেখে গেলাম।
অনেক অনেক ধন্যবাদ কবির ভাই । আপনার মন্তব্যে সামনে এগিয়ে যাবার সাহস পাই । শুভ কামনা সতত ।
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম নলিতাবুনিয়া কি দাকোপের পরেই ? , কয়রা উপজেলায় নাকি দাকোপে ? ঠিক মনে পড়ছে না। ১৯৮৯ সালে ছিলাম দাকোপে । আপনার বাড়ি কি ঐ এলাকায় ? যাহোক, জমিদারী অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে ভেৌতিক !! ভাল লেগেছে ।
প্রিয় ইমদাদ ভাই , আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রানিত হলাম । নিতান্তই নামের প্রয়োজনে এই নামগুলো টেনে এনেছি , বাস্তবতার সাথে এগুলোর মিল থাকার কথা নয় । অবশ্য হোগলা বুনিয়া নামে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় একটি গ্রাম আছে , কোন এক বিশেষ কাজে সেখানে গিয়েছিলাম ১৯৯৩এ । নালিতাবুনিয়া নামে দাকোপে কোন গ্রাম নেই , কয়রায় থাকতে পারে । নালিতাবাড়ি , শেরপুরে , বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে । দাকোপের একটি স্কুলে আমি তিন বছর পড়ালেখা করেছি , এখনো অসংখ্য বন্ধু খোঁজ নেয় , আমিও চেষ্টা করি । আমার বাবার বাড়ী মধুমতী নদীর পাড়ে । অতীতচারী লোক , অনেক কথা বলে ফেললাম , যা এখানে না বললেও চলত । মানচিত্রের এই জায়গাটি সম্পর্কে আপনার জ্ঞান নির্দ্বিধায় অগ্রগন্য । আবার ধন্যবাদ । অনেক শুভকামনা ।
নাজনীন পলি টান টান উত্তেজনা নিয়ে পড়লাম , খুব ভালো লাগলো ।
অনেক ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য । শুভ কামনা সতত ।
সোপান সিদ্ধার্থ গল্পটার বাঁকে বাঁকে চমক্, অসাধারণ লাগলো শামীম ভাই; ভোট দিয়ে গেলাম।
আপ্লুত হলাম । অনেক ধন্যবাদ প্রিয় সিদ্ধার্থ । শুভ কামনা সতত ।
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব বেশ ভাল লাগল ভাই। শুভকামনা রইল। "আমার চলতি সংখ্যায় গল্প কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন "
ধন্যবাদ । অবশ্যই আসব ।

২২ জুলাই - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪