আজ কৈলং নয়াবাড়ীর মেলা। নয়াবাড়ীর সামনে সবুজ দুর্বাঘাস বিছানো প্রশস্ত মাঠ, মাঠের দক্ষিনে গনেশের হাওর, যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজ ধানী জমি, পূর্বে ও পশ্চিমে দুর্বা ঘাসের মাঠ, মাঠে রাখালেরা গরু চড়ায়। আমি আর ছোট চাচা মেলায় গিয়েছি। মেলায় বিভিন্ন খেলনা জিনিস সহ মুড়ি মুড়কির দোকান বসেছে। মেলায় অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। মেলাটি যখন বিকেল বেলা পরিপূর্ন জমে উঠেছে তখনই হঠাৎ প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করল, এক পর্যায়ে ঝড় বৃষ্টি শুরু হল। মেলায় আগত লোকজন দৌড়ঝাপ শুরু করল এবং দোকানিরা তাদের দোকান গুচিয়ে নয়াবাড়ীর অনেকের বাড়ীতে আশ্রয় নিল। মানুষের ভীরের মধ্যে ছোট চাচাকে হারিয়ে, বৃষ্টিটিতে ভিজে ভিজে আমিও একটি বাড়ীতে আশ্রয় নিলাম। যখন বৃষ্টি থামল তখন রাত প্রায় আটটা বাজে। ছোট চাচা বা আমাদের গ্রামের কাউকে না পেয়ে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। একাএকা বাড়ী যেতে আমার ভয় হচ্ছিল, অন্ধকার রাত আবার যোগীর পাড়ের রা¯তা। যোগীর পাড় ইছামতি খালের পূর্বপাশে হিন্দুদের শশ্মান ঘাট। এখানে মরা মানুষের বিছানা পত্র, বালিশ, চাটাই, পাতিল ভাঙ্গা, পুড়া কাট ইত্যাদি পড়ে আছে দেখলে গা শিউরে উঠে। এ পথ দিয়ে যেতে দিনের বেলাও ভয় হয়। আমি দাদুর মুখে যোগীর পাড়ের অনেক কাহিনী শুনেছি। সন্ধ্যার পর নাকি এ পথ দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারেনা।
ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ক্ষেতের আল দিয়ে আমি আস্তে আস্তে এগুচ্ছি। যোগীর পাড়ের যত কাছে আসছি মনের ভিতরটা শুধু ধুকধুক করছে, আর দাদুর মুখে শুনা গল্পগুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ভয়ে ভয়ে ক্ষেতের আল দিয়ে হাঁটছি আর মাথার মধ্যে চিন্তা একটাই কিভাবে যোগীর পাড়ের শশ্মান ঘাট পার হব। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল, যোগীর পাড়ের রাস্তায় না গিয়ে ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে আরও উত্তর দিকে এগিয়ে ইসকান্দরের বাড়ীর পাশ দিয়ে ইছামতির খালটা পাড় হলেই সাধন রাউতের বাড়ী, আর সাধন রাউতের বাড়ী থেকে ১০/১৫ মিনিটের রাস্তা আমাদের বাড়ী। বৃষ্টি হওয়ার কারনে ক্ষেতের মধ্যে পানি জমে আছে, পা ফেলা মাত্রই কাদায় পা আটকে যাচ্ছে। জুতা গুলো হাতে নিয়ে কাদার উপর দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি সামনের দিক থেকে একটি আলো আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আলোটি দেখা মাত্র আমার শরীরটা অবশ হয়েগেল, গলাটা শুকিয়ে গেল, পা দুটি থরথর করে কাঁপতে আরম্ব করল। আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে পড়লাম, এই বুঝি যোগীর পাড়ের ভূতটা আসছে, আজ আর আমার রক্ষা নেই। এক্ষুনি এসে আমাকে ধরে খেয়ে ফেলবে। আলোটি যত আমার দিকে এগিয়ে আসছে, ভয়ে শরীর থরথর করে কাঁপছে আর ঘামে ভিজে যাচ্ছে, এই মুহুতের্ আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। মনে মনে আমি বারবার আল্লাহর নাম নিচ্ছি। আলোটি আমার আরও কাছে চলে এসেছে, আমার এতই ভয় হচ্ছে যে ঘামে পুরো শরীর গোসলের মত ভিজে গেছে। আমি কোন উপায় না দেখে দুচোখ বন্ধ করে হঠাৎ বিকট আওয়াজে একটা চিৎকার দিয়ে পিছনের দিকে দৌড় দিলাম। এর পর আর কিছুই বলতে পারিনি।
পরদিন মায়ের মুখে শুনলাম সন্ধার পরও আমি যখন মেলা থেকে ফিরে আসিনি, বাবা তখন একটি আলোয়ান জ্বালিয়ে আমাকে আনতে গেলেন। আমি যে রাস্তায় আসছি বাবাও সেই রাস্তায় আমাকে আনতে গেলেন। বাবার হাতে আলো দেখে ভূত মনে করে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। বাবা আমাকে কাদা মাখা অবস্থায় কোলে তোলে বাড়ী নিয়ে আসেন।
সেদিন মায়ের মুখে ঘটনাটি শুনে ভয়ের চেয়ে লজ্জাই লেগেছিল বেশী।
০৩ জুলাই - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
১৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪