প্রাপ্তি

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

Rajib Ferdous
  • ৫৫
  • 0
  • ৫৪
বৃষ্টিকে যে আমি ভালবাসি তা প্রথম দিকে বুঝতে পারিনি। বুঝেছিলাম অনেক পরে। যখন সে একদিন আমাকে বলল, রফিক ভাই আপনি কি আমাকে বিশ্বকাপের প্রথম খেলা দেখার জন্য টিকিট ম্যানেজ করে দিতে পারবেন?
বৃষ্টি মামুনের ছোট বোন। মামুন আমার কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির বন্ধু। একসময় আমি কারণে অকারণে ওদের মিরপুরের একতলা নিজস্ব বাসায় যেতাম। সত্যি বলতে কি তখন বৃষ্টির প্রতি আমার তেমন ফিলিংস কাজ করতো না। জানতাম মামুনের কলেজ পড়ুয়া একটি ছোট বোন আছে। মাঝে মধ্যে দু'এক পলক দেখাও হতো। কথা যে হতনা এমন বলবোনা। তবে তা ছিল খুবই সামান্য। এর চাইতে বেশি কিছু আমি অবশ্য আশাও করতামনা। বরং এত ঘন ঘন ওদের বাড়িতে গিয়ে উৎপাত করার ফলে নিজেকে একটু গুটিয়ে রাখতাম। কখন আবার কে কি বলে বসে!
তবে কেউ কিছু বলেনি কখনো। প্রথম প্রথম আঙ্কেল অর্থাৎ মামুনের বাবাকে ভয় করতাম। তিনি গম্ভীর হয়ে বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়তেন। মামুনের সঙ্গে যখন যেতাম তিনি কেবল চোখ তুলে একবার দেখে আবার পড়ায় মন দিতেন। যেদিন গিয়ে মামুনকে না পেয়ে ফিরে আসতে চাইতাম, তিনি ডাক দিতেন। কাছে বসতে বলতেন। বৃষ্টিকে চা করে দিতে বলে তিনি আমার সাথে গল্প জুড়ে দিতেন। তার গল্পের বিষয় বস্তুর পুরোটা জুড়ে থাকতো খেলা এবং সেটা কেবলই ক্রিকেট খেলা। সামনেই বিশ্বকাপ। আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশও আছে এবং বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলছে, এই নিয়ে তার ভীষণ উত্তেজনা। তিনি বিশ্বকাপের খুঁটি নাটি বিষয়, নানা খবরা খবর আমার সাথে শেয়ার করতে চাইতেন। আমি ক্রিকেট ভাল বুঝিনা। তাছাড়া নানান ব্যস্ততায় খবরের কাগজের খেলার পাতাও পড়ার সুযোগ পাইনা। তাই তার সাথে এ প্রসঙ্গে আলোচনায় তাল মেলাতে পারিনা। তিনি যা বলেন আমি কেবল হ্যাঁ হু বলে কাটিয়ে যাই। এতে তিনি বিরক্ত হননা। দ্বিগুণ উৎসাহে আমাকে খেলার সব খুঁটিনাটি বিষয় শেখাতে থাকেন। যেন আমি এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলছি এবং তিনি আমার কোচ। মাঝে মাঝে আমার বিরক্ত ধরে যায়। তখন মিথ্যা কাজের ছলছুতা দিয়ে রেহাই পাই।
এভাবে ধীরে ধীরে ভদ্রলোকের উপর থেকে আমার ভয়টা উঠে যায়। বুঝতে পারি ভদ্রলোক ভয়ংকর কোন ব্যক্তি নন। বরং গল্প করার মত কাউকে পেলে খুশিই হন। আমি এমন অনেকদিন মামুনদের বাড়িতে গেছি শুধু ওর বাবার সাথে গল্প করার জন্য। মামুনের জন্য নয়। গল্পে যেন তাল মেলাতে পারি এজন্য ফুটপাত থেকে একদিন "ক্রিকেট খেলার সহজ নিয়ম শিক্ষা" জাতীয় একটি চটি বই কিনলাম। তাই পড়ে পড়ে তার সাথে একটু আধটু তাল মেলাই। তিনি খুশি হন। মামুন লন্ডন চলে যাওয়ার পরও ওদের বাড়িতে আমার যাওয়া আসা চলতে থাকে।
সকালে দু'একটি টিউশনি করি আর বিকেল হলে চলে যাই মামুনদের বাড়ি। না গেলে কেন যেন ভাল লাগেনা। আঙ্কেলের সাথে গল্প করি। বৃষ্টি চা করে দেয় খাই। তারপর সন্ধ্যা হলে আমি আমার মেসে চলে আসি। এর বাইরে ওই বাড়িতে আমার আর কিছুই করার থাকেনা। মাঝে মধ্যে না গেলে ফোন পাই। আঙ্কেল নিজে ফোন না করে বৃষ্টিকে দিয়ে ফোন করান বলে কিছুটা অবাক হই। ওই বাড়িতে এত যাই, এতক্ষণ ধরে গল্প করি। তবু বৃষ্টির সাথে কোন কথা হয়না। কেবল যেদিন না যাই সেইদিন বৃষ্টির ফোন পাই। ব্যাপারটা আমাকে গভীর চিন্তায় ফেলে। তবে আমি মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করেই ওই বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেই। সেটা বৃষ্টির ফোন পাওয়ার জন্য কিনা জানিনা। তবে আমি তার ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম।
তারপর একসময় আবিষ্কার করলাম আমি আসলে বৃষ্টির প্রেমে পড়ে গেছি। এমনকি আমি যে এত ঘন ঘন ওদের বাড়িতে যাই সেটা আসলে আঙ্কেলের জন্য নয়, বৃষ্টির জন্য। রাত জেগে সিগারেট টানি। রবীন্দ্রনাথের গান শুনি আর মনে মনে ভালবাসার অনন্ত কথামালা সাজাই। মেসের অন্য মেম্বাররা বিরক্ত হয়। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করিনা। কত কি যে সয়ে যেতে হয়, ভালবাসা হলে! কিন্তু আমার এসবই বৃথা যায় পরদিন বৃষ্টিদের বাড়িতে গিয়ে। আজন্ম লাজুক আমি বৃষ্টির সামনে গিয়ে রাতভর সাজানো কথামালার কিছুই বলতে পারিনা। সুযোগ যে পাইনা এমন নয়। কতদিন যে আঙ্কেলকে না পেয়ে চলে আসার সময় বৃষ্টি বসতে বলেছে। চা খেয়ে যেতে বলেছে। আমি বসিনি। মিথ্যে কাজের ছুতায় চলে আসতাম।
এরকম একদিনের ঘটনা। ওইদিন আর না করতে পারিনি। বৃষ্টি জোর করেই বসায়। চা করে খাওয়ায়। দুজনের মাঝে স্বাভাবিক কিছু কথা হয়। লক্ষ্য করি ও কথা বলতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু আমি কোন কথা খুঁজে পাইনা বলে উঠে আসতে চাই।
এমন সময় ও বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিটের কথাটি বলে। সেইদিনই প্রথম আমি বৃষ্টির প্রতি গভীর ভালবাসা অনুভব করি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি টিকিট আমি জোগাড় করবোই। যে কোনভাবেই হোক। তখনো জানতাম না এই টিকিট নামের 'সোনার হরিণ' জোগাড় করতে আমাকে কত কাঠখড় পোড়াতে হবে। তবু কোন কিছু না ভেবেই বৃষ্টির কথায় রাজি হয়ে যাই। ও টাকা এনে আমার হাতে গুঁজে দেয় এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে, এখানে তিনটি টিকিটের টাকা আছে। যেগুলো একহাজার টাকা করে ওগুলো আনবেন। আমি অবাক হয়ে বলি, তিনটি কেন? ও হেসে বলে, আমি আর বাবা তো যাচ্ছিই , আপনিও আমাদের সাথে যাচ্ছেন। আমি একটু আধটু ইতস্তত করি। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর না করিনা। টাকাটা হাতে নেই। আমার এই অভাবের জীবনে টাকার ব্যাপারে না করাটা সাহসে কুলায় না।
এরপর দ্বিগুণ উৎসাহে টিকিট সংগ্রহের কাজে লেগে পড়ি। আর তখনি বুঝতে পারি টিকিট পাওয়াটা মোটেও সহজসাধ্য কোন বিষয় না। তবু আমি হাল ছাড়ি না। একদিন বিকেল থেকে লাইনে দাড়াই। রাত চলে গিয়ে ভোর হয়। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে, দীর্ঘ রাত কাটিয়েও শেষ পর্যন্ত যখন টিকিট নামের সোনার হরিণের নাগাল পাইনা তখন নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হয়। কিন্তু বৃষ্টির কাছে এসবের কিছুই প্রকাশ করিনা। তাকে ক্রমাগত আশ্বাস দিয়ে যাই। এদিকে খেলার দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে। আমি আর টিকিটের নাগাল পাইনা। বন্ধুদের নানা কথা শুনতে পাই। অমুকের কাছে নাকি দশ হাজার টাকায় প্রতিটি টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টাকা দিলে দুই তিনটা এখনি ম্যানেজ করে দিতে পারবে। আমি মনে মনে হিসেব মেলাই। বৃষ্টি আমাকে দিয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা। আমি এই টাকায় কিভাবে কালো বাজার থেকে ওর জন্য টিকিট কিনি? বুক জুড়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। তবু হাল ছাড়িনা। চেষ্টা চালিয়ে যাই।
একদিন কথাপ্রসঙ্গে বৃষ্টি আমাকে বলে, রফিক ভাই আমিও আপনার মত ক্রিকেট খেলার তেমন কিছু বুঝিনা। আমাকে কি আপনার ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন শিক্ষা সংক্রান্ত বইটা একটু পড়ার জন্য ধার দেয়া যায়? ভাল করে খেলা না বুঝে খেলা দেখায় মজা পাবনা।
আমি বৃষ্টির কথায় চোখ কপালে তুলি। এই মেয়ে আমার ক্রিকেট খেলা শেখার নিয়ম কানুনের বই কেনার কথা কিভাবে জানলো তার হিসাব মেলাতে পারিনা। অবাক হয়ে প্রশ্ন করি, তুমি কিভাবে জানলে এই কথা? বৃষ্টি বুদ্ধিমতী মেয়ে। কিছু বলেনা। কেবল রহস্যময় হাসি হাসে। আমিও আর কথা বাড়াই না। পরবর্তীতে বইটি নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেসে চলে আসি।
এরপর দিন যেতে থাকে। কিন্তু আমি টিকিট ম্যানেজ করতে পারিনা। পারবো যে তার কোন লক্ষণও দেখিনা। অন্তত লাইনে দাড়িয়ে তো নয়ই। এর মধ্যে দুইবার সারা রাত জেগে লাইনে দাড়িয়েও ব্যর্থ হয়েছি। চিন্তায় রাতে ভাল ঘুম হয়না। যখন আর কোন কুল কিনারাই পেলাম না তখন কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। বৃষ্টিকে আমি ভালবাসি, তার জন্য যে করেই হোক আমাকে টিকিটের জোগাড় করতেই হবে। তিনটি না হোক অনন্ত দুইটি টিকিট আমাকে ব্যবস্থা করতেই হবে। আমি না হয় খেলা নাই দেখলাম। আমি অনেক কষ্টে টিউশনির টাকা থেকে কিছু কিছু টাকা ব্যাংকে আমার একটি সেভিং একাউন্টে জমাচ্ছিলাম। একরাতে জমা বই বের করে দেখলাম মোট বাইশ হাজার টাকার মত জমা পড়েছে। অনেক সময় অনেক কষ্ট এসে হাজির হয়েছে। অনেক অভাবে দিন গেছে। তবু আমি এই টাকায় হাত দেয়নি। কিন্তু এবার আর পারলামনা। আমার ভিতর কি জানি কি হয়ে গেল। একদিন টাকাগুলো তুলে নিয়ে আমার এক বন্ধুর হাতে দিলাম। ও পরদিন কোথা থেকে যেন আমাকে দুইটি টিকিট এনে দিল। টিকিট দুটি হাতে পেয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। নিজেকে শূন্য শূন্য লাগছিল। ওই অবস্থাতেই ছুটে গেলাম বৃষ্টির কাছে। ওর হাতে টিকিট দুটি তুলে দিলাম। নিজেকে তখন সিনেমার নায়কদের মত মনে হচ্ছিল। ও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, দুইটা টিকিট কেন? আমি একটি মিথ্যা অজুহাত আগে থেকেই বানিয়ে রেখেছিলাম। সেটি বলে কোন রকম পার হলাম। টিকিট হাতে পেয়ে বৃষ্টি এভারেস্ট জয়ের হাসি হাসলো। তবে ও আমাকে ধরলো আমাকেই তার সাথে খেলা দেখতে যেতে হবে। বাবা বাসায় থাকবেন। তাকে সে বুঝিয়ে বলবে। আমি কিছু বললাম না। টিকিট দুটি আমি কিভাবে কত টাকায় ম্যানেজ করলাম এসব কিছুই আর ও জানতে চাইলো না। তাই বলাও হলোনা আমার।
বৃষ্টিকে আমার আরো অনেক কিছুই বলা হলনা। আমি বলতে পারিনা। কেন এমন হয় আমি জানিনা। বুকের খুব গভীরে তার জন্য সীমাহীন ভালবাসা শাখা প্রশাখায় বিস্তার লাভ করতে থাকে। কিন্তু আমি তাকে কিছুই বলতে পারিনা। একদিন ওর বাবা আমাকে বললেন, আসছে ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃষ্টির বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। তুমি কিন্তু বাবা এক'টা দিন আমার সঙ্গে সঙ্গেই থাকবে। আমি তখনো কিছুই বলতে পারিনি। বিধ্বস্ত এক মন নিয়ে মাতালের মত টলতে টলতে মেসে ফিরে এসেছি। একটার পর একটা সিগারেট শেষ করেছি। আর নিজেকে ধিক্কার দিয়েছি, ভীরু কোথাকার বলে।
এরপর মিরপুরের ওই একতলা বাড়িটিতে আমার আর যেতে ইচ্ছা করলোনা। এরমধ্যে খেলার দিন ঘনিয়ে এলো। বৃষ্টি ফোন করে আমাকে পাগল করে ফেললো। আঙ্কেলও ফোন করলো অনেক। ইচ্ছা করেই কারও ফোন রিসিভ করলাম না। তাদের এই নির্মম রসিকতার আমি কোন মানে খুঁজে পেলামনা। এ যন্ত্রণা থেকে বেড়িয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। মোবাইলটা বিক্রি করে দিলাম। তাছাড়া টিউশনিগুলোতে অনিয়মিত হয়ে পড়ায় ওগুলো হাতছাড়া হয়ে গেল। ফলে বেশ অর্থকষ্টে ভুগছিলাম। মোবাইলটা বিক্রি করায় হাতে কিছু টাকা আসে এবং বৃষ্টির ফোন পাওয়া থেকে রক্ষা পাই।
এরপর দিন গড়িয়ে যেতে থাকে। এর মধ্যে মহাসমারোহে শুরু হয়ে যায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট। মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশেই আমার মেস। তাই উপলব্ধি করছিলাম বিশ্বকাপকে ঘিরে মানুষের আনন্দ উত্তেজনা। প্রথম উদ্বোধনী খেলা শুরু হয়ে গেল। বাংলাদেশ খেলছে ভারতের বিপক্ষে। সবার ভিতর টান টান উত্তেজনা। আমার মেসের কেউ খেলা দেখার টিকিট না পেলেও স্টেডিয়ামের আশে পাশে গিয়ে আনন্দ উত্তেজনায় সামিল হল। মেসে আমি একা থাকলাম। খেলা চলছিল। আমার চোখ টিভির পর্দায়। ঠোটে সিগারেট। মাঝে মাঝে টিভি ক্যামেরা দর্শক গ্যালারিতে ধরলে আমার বুক কেপে ওঠে। এই বুঝি বৃষ্টিকে ক্যামেরা বন্দী করে ফেলল! এই বুঝি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মেয়েটি গ্যালারিতে লাফালাফি করছে তার হবু বরের সাথে। আমার ততদিনে একটি ধারণা হয়ে গেছে যে, বৃষ্টি তার দুই টিকিটে অবশ্যই তার হবু বরকে নিয়ে খেলা দেখতে যাবে।
কিন্তু এসবের কিছুই হলনা। খেলা শেষ হয়ে গেল। তারপর একে একে বাংলাদেশের সবগুলো খেলাই শেষ হল। বাংলাদেশ বাদ পড়লো বিশ্বকাপ থেকে। আমারও জীবন থেমে থাকলো না। স্বল্প বেতনে একটি চাকরিতে যোগ দিলাম। লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে অফিসে যাই। দুপুরে পাউরুটি আর কলা কিনে খাই রাস্তার ধারের কোন খুপরি দোকানে দাড়িয়ে। রাতে বাসায় ফিরে বুয়ার রান্না করা অখাদ্য খেয়ে টান টান হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। মোটামুটিভাবে দিন চলে যাচ্ছিল আমার। বৃষ্টি নামের মায়াবী চেহারার কোন এক মেয়ের কথা আমার স্মৃতি থেকে বিবর্ণ হয়ে গেল। তাকে একেবারে ভুলেই যেতাম যদি না শেষ আরেকটা ঘটনা ঘটতো।
একদিন অফিস থেকে ফেরার পর মেস মেম্বার হাবিব একটি প্যাকেট এগিয়ে দিল। হাতে নিয়ে অবাক হলাম। বৃষ্টি আমার ঠিকানায় এই পার্সেলটি পাঠিয়েছে। দ্রুত খুলে ফেললাম। ভেতর থেকে যা বের হল তা দেখে আমি আরো অবাক। বৃষ্টিকে দেয়া সেই ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন শিক্ষা বিষয়ক বইটি। সঙ্গে একটি চিঠি-
রফিক ভাই,
জানিনা আপনি আগের ঠিকানায় আছেন কিনা। তবুও বইটি পাঠালাম। আপনার জিনিষ আপনাকে দিয়ে দায়মুক্ত হলাম। আপনি জানেন কিনা জানিনা, আমার বিয়ে হয়েছে এক ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে। ওর নাম তৌফিক। ওকে নিয়ে আপনার কিনে দেয়া টিকিটে বিশ্বকাপ খেলা দেখেছি। খেলার দিনও আপনার এই বইটি আমার সাথে ছিল। ও দেখে অনেক হেসেছে। তৌফিক ক্রিকেট অনেক ভালো বোঝে। আপনার কথা ওকে অনেক বলেছি। ও আপনাকে দেখতে চেয়েছে। আচ্ছা আপনি আমাদের সাথে কেন এমন করলেন? ইচ্ছা করলে আমি আপনার মেসে যেতে পারতাম। আমার কাছে ঠিকানা ছিল। কিন্তু ইচ্ছা হয়নি। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন বাবা। কেন অমন করলেন আপনি? থাক এতদিন পর আর ওসব জানতেও ইচ্ছা করেনা। আজ আর বিশেষ কিছু লিখছিনা। হয়তো আর কোনদিনও লেখা হবেনা। ভালো থাকবেন।
ইতি
বৃষ্টি।
চিঠিটা পড়ে ভাজ করে বিছানার নীচে রেখে দিলাম। মেস মেম্বাররা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো কে পাঠিয়েছে। উত্তর দিতে ইচ্ছা হলনা। রাতের খাবার শেষ করে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছিলনা কিছুতেই। তখন গভীর রাত। মেসের সবাই গভীর ঘুমে। আমার কি মনে হল জানিনা। ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন সংক্রান্ত বইটি আবারও পড়ার ইচ্ছা হল। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে বইটি নিয়ে বসলাম। কিন্তু মন বসাতে পারছিলামনা। শুধু পাতা উল্টাচ্ছিলাম। এভাবে কিছুদূর যেতেই বইয়ের মাঝামাঝিতে এসে আমার চোখ আটকে গেল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দুটি টিকিটের অনেকগুলো ছেড়া টুকরো অংশ বইয়ের ভিতর রাখা। কিছুক্ষণ টুকরোগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে কয়েকটি হাতে নিলাম। বাতাসে কিছু টুকরো ছড়িয়ে পড়লো মেঝেতে। আর ঠিক তখনি আমার মনে হল, এই ছেড়া টিকিটের কিছু টুকরো ছাড়া বৃষ্টির কাছ থেকে আমি আর কি বা পেতে পারতাম!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Rajib Ferdous তাবাসসুম আমি তো জানিনা কিভাবে এত ভাল লিখি। তবে ভাল যে লিখি তা আপনার মন্তব্য থেকে জানতে পারলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।
স্য়েদা তাবাসসুম আহমেদ রাজীব আপনি এত ভালো কিভাবে লিখেন????
Rajib Ferdous রওশন জাহান আমরা আমাদের সব লেখায় কিন্তু নিজেদের ফুটিয়ে তুলতে পারিনা। এমনো হয় এক বছর পর একটি লেখা আমাকে পাঠকের খুব কাছে নিয়ে গেছে। তারপর আবার বিরতি। কলম আমার সাথে আড়ি দিচ্ছে। তবে আফটার অল কিছু লেখা কলম দিয়ে বেরুবেই। কিন্তু সেই লেখার মূল্যায়ন নির্ভর করবে পাঠকের উপর। বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাঠকও বিভিন্ন রকমের। সমস্যাটা এখানেই। যাইহোক ভাল থাকবেন। যেন ভাল লিখতে পারি সেই দোয়া করবেন।
রওশন জাহান এখানকার অনেক অনেক মন্তব্য পাওয়া লেখার চেয়ে ভালই লেগেছে . তবু প্রথম সংখ্যার দিবস রজনী বা কৃষ্ণকলির সেই লেখক রাজিব ফেরদৌস কে খুঁজে পেলাম না .আরো গভীর অনুভুতির লেখায় আপনাকে ফিরে পেতে চাই.
Rajib Ferdous মির্জা আজিজ আমার গল্প আপনার কাছে কেন ভাল লাগেনী তা বললেন না। বললে হয়তো লেখালেখি বাদ রেখে আগে ভাল গল্প লেখা শিখে তার পর চেষ্টা করতাম। কারন আমি সবসময়ই ভাল লেখার পক্ষে। হাবিজাবি কিছু একটা লেখা আমার ধাতে সয়না। আশা করি পরামর্শ দেবেন।
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লাগলো
মুহাম্মদ জহুরূল ইসলাম ভালো গল্প পড়ার লোক নাই. যারা আছে তেলে তেল লাগায়. চালিয়ে যান. আর ইংরেজি বর্জন করুন.
onamika আরো ভাল করতে হবে.
রাজিয়া সুলতানা montobbo korar moto sahos pacchina .....amar lekha porar amontron roilo...asakori amar lekha pore apnar mulloban montobbo tule dhorben...anek shuvokamona roilo....
মোঃ মুস্তাগীর রহমান রাজিব ফেরদৌস,চেষ্টায় তুষ্টি........এখনই বা কম কী.......সে.........

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪