বৃষ্টি মেয়ে

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

Rajib Ferdous
  • 0
  • ১৩
আকাশে মেঘ করলেই আমার মনের রং বদলে যায়। আমি যেন সেই ছোট্ট কিশোর হয়ে যাই। যে আকাশে মেঘ দেখলেই কিংবা বৃষ্টি হলেই লাফিয়ে উঠতো স্কুলে যেতে হবেনা এই আনন্দে। অথচ এখন আমার কোন স্কুলে যাবার তাড়া নেই। না যাওয়ার জন্য মায়ের বকুনিও নেই। সারাদিন বাসায় পড়ে থেকে ঘুমালেও কিংবা ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলেও বলার বা শাসন করার কেউ নেই। তবুও আনন্দে আমার হৃদয় দোলে। মনটা নেচে ওঠে। আমি জানি কেন এমন হয়। আকাশে মেঘ জমলে, আকাশটা ঘন কালো হয়ে গেলে আমি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করি। মনে মনে বৃষ্টি চাই খুব। ঝুম বৃষ্টি। কেন চাই তা-ও আমার জানা। আমি পাঁচতলা একটি বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলার মেসের যে রুমটাতে থাকি তার একটি জানলা বেশ অবারিত। খুললেই আমার দু'চোখ বরাবর আরেকটি বিল্ডিং। দুরুত্ব এমন যে ওই বিল্ডিংয়ের যে কাউকে স্পষ্টই দেখতে পাই। মাঝে মাঝে এমন হয়, ওপারের বিল্ডিংয়ের কারো চোখে চোখ পড়লে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাই। তবুও যখন আকাশ কালো হয়, যখন ঝুম বৃষ্টি নেমে আসে তখন আমি রাজ্যের আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকি আমার নাক বরাবর ওপারের বিল্ডিংয়ের দিকে। কারণ ঠিক তখনই, যখন বৃষ্টি নেমে পড়ে চারদিক অন্ধকার করে, যখন বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগে আমার গালে, চোখে, গায়ে, ঠিক তখনই সেই এক ঘোর লাগা কাব্যিক পরিবেশে ওপারের বিল্ডিংয়ে আমার দৃষ্টি বরাবর যে জানালাটি, তার সামনে এসে বসে একটি মেয়ে। আহা মেয়ে! বৃষ্টি মেয়ে। আমি শুধু বৃষ্টি নামলেই তাকে জানালায় বসতে দেখি। আর কোন সময়ই আমি তাকে দেখিনি কিংবা লক্ষ করিনি। আসলে আমি তো কেবল বৃষ্টি নামলেই এতটা সময় বাসায় থাকি আর উদাস আকুল মন নিয়ে বাইরে তাকাই, এত কিছু দেখি। কম্পিউটারে বাজাই _ আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে...।
মেয়েটি তার জানালায় আর আমি আমার জানালায়। মাঝখানে এক বৃষ্টি পারাবার। এক বর্ষা সেতু। এক রংধনুর বিনিময়। মেয়েটি আমার দিকে চোখ বাড়ায়। আমি অন্য দিকে তাকানোর ভান করি। মনে হয় এই বুঝি মেয়েটি বর্ষার সেতু পার হয়ে, বৃষ্টির রংধনু বেয়ে আমার এই জানালায় চলে এলো। আমি তার নাম জানি না। জানালায় ওই অবস্থায় বসে থাকা ছাড়া আমি আর কোনভাবে তাকে কখনোই দেখিনি। দেখার আমি হয়তো চেষ্টাও করিনি। কেন যেন এই বৃষ্টি মেয়েকে আমার এই ভাবে, শুধু এই বৃষ্টির দিনেই ওই জানালার পাশে বসে থাকতে দেখতে ইচ্ছে করে। দেখতে ভাল লাগে। ভীষণ ভাল লাগে। সে দুই হাত প্রসারিত করে জানালার বাইরে বাড়ায়। বৃষ্টি নিয়ে দুই হাতে খেলা করে। তারপর ভেজা দুই হাতের তালু তার গালে চেপে ধরে। ধরতে ধরতে সে আবার আমার দিকে তাকায়। সেকি আসলে আমার দিকে তাকায়? আমিও একটু সাহস সঞ্চয় করে তাকাই তার চোখের তারার দিকে। বৃষ্টির অস্পষ্ট আলো-আধারিতে তার চোখের তারা আমার চোখে ধরা পড়েনা। তার চোখের ভাষা আমার চোখ পড়তে পারেনা। আমি আকুল হই, অস্থির হই। কি আছে তার চোখের ভাষায়? মেয়েটি আমার দিকে তাকায় একেবারে অন্যরকমভাবে। অন্যরকম এক দৃষ্টিতে । সেই দৃষ্টিতে কি আছে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। আমার জানতে ইচ্ছে করে ও কি আমার জন্যই জানালায় বসে, নাকি বৃষ্টির জন্যে? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে আমি কি বৃষ্টির জন্যে জানালায় বসি না ওর জন্যে? এরকম আমার আরো অনেক কিছুই ইচ্ছে করে। এক জীবনে মানুষের তো কত কিছুই ইচ্ছে করে।
মেয়েটিকে আমি ওপারের বিল্ডিংয়ের জানালায় আবিষ্কার করেছি এই বর্ষায়। মাত্র দিন সাতেক হবে হয়তো। আশ্চর্য! আমি বা সে এতদিন কোথায় ছিলাম? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে জীবনান্দদাশের মত---এতদিন কোথায় ছিলেন? তারপর বৃষ্টি ধরে আসলে, আকাশ আলো হতে থাকলে মেয়েটি সন্তর্পণে কখন চলে যেত জানালার কাছ থেকে আমি একদিনও তা খেয়াল করতে পারতাম না। নিজের উপর আমার রাগ হত, কেন টয়লেটে গেলাম। কেন গান চেঞ্জ করতে উঠলাম। আর মেয়েটি? তার উপরও কি আমার কম অভিমান হত। তাকে দৃষ্টির আড়াল করলেই কি তাকে উঠে যেতে হবে? আমি তাকে আসতেও দেখিনা, উঠে যেতেও দেখিনা। দেখি কেবল ওপারের ওই জানালায় বসে থাকতে। বৃষ্টি দেখতে, বৃষ্টি ধরতে। গালে বৃষ্টির পরশ ছোঁয়াতে। আর তাকে আমি দেখি কেবল বর্ষার দিনেই, বৃষ্টি নামলেই।
কিন্তু সেদিন, সেই বৃষ্টি শেষ হয়ে যাওয়া বিকেলে, সেই আকাশ আলো হয়ে যাওয়া বিকেলে আমি তাকে দেখলাম অন্যভাবে। আমি সেদিন একটুও নড়িনি। একটুও দৃষ্টি সরাইনি তার দিক থেকে। সেই বৃষ্টি মেয়ের দিক থেকে। কেউ একজন এসে দাঁড়াল তার কাছে। কে হতে পারে? তার মা? মা-ই তো। চেহারায় যে দুজনের অনেক মিল। আমি দেখলাম, মায়ের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মেয়েটি হাতড়ে তার মাকে ধরে ফেলল। তার মার হাত থেকে সাদা ছড়িটি নিয়ে নিলো। তার কিছুৰন পরে, তার মা তাকে রেখে চলে যাওয়ার একটু পরেই সে সাদা ছড়িটি সামনে মেলে ধরে উঠে দাঁড়ালো। এক হাতে সাদা ছড়িটি ধরে, অন্য হাত সামনে প্রসারিত করে, পথ হাতড়ে মেয়েটি আমার দৃষ্টি থেকে আড়াল হয়ে গেল। আমি হতবিহবল। তাকিয়ে আছি ওপারের ওই শূন্য জানালায়। সামনে থেকে সরে গেছে বর্ষার সেতু। বৃষ্টিরা চলে গেছে অন্য কোন পাহাড়ে। রংধনুর পারাবার অন্য কোন সাগরে। আমার কম্পিউটারে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা করুণ কণ্ঠে কেঁদে যাচ্ছে..... চোখের আলোয় দেখেছিলেম/ চোখের বাহিরে, অন্তরে আজ দেখবো/ যখন আলোক নাহিরে.......।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
risha naznin খুবই ভালো লাগল ।
ভালো লাগেনি ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মিজানুর রহমান রানা আমি হতবিহবল। তাকিয়ে আছি ওপারের ওই শূন্য জানালায়।
মিজানুর রহমান রানা ধৈর্য মহত্বের লক্ষণ। আপনার কর্ম আপনি করে যান। দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে।

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪