যাত্রা

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

আহমেদ রাকিব
ভ্যান চলিতেছে। ভ্যানের উপর মালপত্র। খাট, টেবিল, দুটা চেয়ার, তোষক, থালা, বাটি, বটী আরো অনেক গুরাগারি জিনিস গিট্টু দিয়া বাঁধা। আর তার উপর বসিয়া আছি আমি। আজ নতুন মাসের এক তারিখ। সুদীর্ঘ চার মাস পর শেষমেষ বাড়িওয়ালা নিতান্তই অতিষ্ট হইয়া বাড়ি ছাড়িবার নোটিশ দিলেন। তার বউয়ের অভিযোগ, এই রুমে নাকি নেশা হয়। তো রুমে নেশা হইলে সেটা রুমের দোষ হইতে পারে! কিংবা কোনো দুষ্ট বালকের ষড়যন্ত্র হইতে পারে! কিন্তু এই কথাটা ত্যাদর বাড়িওয়ালাকে কে বুঝাইবে? অগত্যা ভ্যানের উপরে আমি আর আমার উপর খোলা আকাশ।

বছরের শেষ হইতে আরো দু’মাস বাকি। এরই মধ্যে তিন তিনবার ভ্যানের উপর আমার খাট। কিছুই করার নাই। এটা আমার প্রতি স্রস্টার অবহেলার একটি অতি সাধারন উদাহরণ। অসাধারণ কিছু যে করেন না তিনি আমার জন্য, তা বলিলে মিথ্যা বলা হইবে। এই যেমন কিছুদিন আগে একটি প্রাইভেট ফার্মে ইন্টারভিউ দিয়া আসিলাম। হুম্‌.........দিতে হইল। পত্রিকার কাজটা পার্মানেন্ট না, ফুরুত করিয়া চলিয়া গেলে পথে বসিতে হইবে। যাই হোক, সাক্ষাত্কার গ্রহিতার রিয়েকশান ছিল চরম আশাব্যঞ্জক। আমিও সেই আশায় আশান্বিত হইয়া দিন গুনিতে লাগিলাম। এবং কিছুদিন পরই একটি ফোন কল আমার আশার বীজে চারা ফুটাইতে বাধ্য করিল। দ্বিতীয়বার ডাকা হইল আমায়। মিটিং-এর দিন ধার্য হইল দু’দিন পর। এই দুই দিনে সেই চারা তার নিজের গতিতে তর তর করিয়া বাড়িতে থাকিল। আর চলিতে থাকিল আমার মাথায় শত সহস্র ভাবনা। বেতন কত দিবে.........কতটুকু হইলে as a permanent job আমার চলিয়া যাইবে, জবটা বন্ধু কিরণের সমমান কিংবা অধিক কিনা, পত্রিকায় লেখালেখির কাজটাও পাশাপাশি চালিয়ে নিতে পারিব কিনা......আরও কত কি। সক্রেটিসের একটা কথা মনে পড়ে গিয়েছিল সে সময়ে, মানুষের চিন্তার বিষয় মৃত্যু নয়, মানুষের চিন্তার বিষয় অসম্মান। কথাটা সে মোটেও ভুল বলে নাই। তাই জীবিত মাত্রই এরকম চিন্তা মাথায় আসবে বৈকি!

যাই হোক, যথাসময়ে উপস্থিত হলাম আবার অফিসে। আগের থেকে এবার আমি অনেক কনফিডেন্ট। অফিসে ঢুকতেই দেখিলাম সেই রিসেপশনিস্ট মেয়েটাকে। সাথে সাথে বুকের বাম পাশের তীক্ষ্ণ ব্যথাটা আবার শুরু হইল। বুঝিতে পারিতেছি না, ইদানীং এই ব্যাথাটা ঘন ঘন দেখা দিতে শুরু করিয়াছে। কিন্তু, এখন ইহাকে আমলে নেয়া যাইবে না, নগদ অর্থের কথা ভাবিতে হইবে। “আগে পেট পুজো, তারপর আফ্রোদিতির!”
-স্যার আসতে পারি?
-হ্যা আসুন।.........বসুন।
-আপনার নাম তো রায়হান।
-জ্বী স্যার......সাঈদুল রায়হান।
-আচ্ছা!.........বাসা চান্‌খারপুল, পুরান ঢাকা।
-জ্বী স্যার।
-হুম্‌ম্‌......দেখুন, আপনি যে পোস্টে অ্যাপ্লাই করেছেন, আপনাকে আমরা তা দিতে পারছি না, আপনার সিভি ততটা এনরিচ্‌ড না। তবে, রিসেন্টলি...... আমাদের মার্কেটিং সেক্টরে কিছু পোস্ট খালি হয়েছে। আপনার যদি আগ্রহ থাকে তাহলে আমরা আরো কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি।

মনটা একটু খারাপ হইয়া গেল। তারপরও ভাবিলাম কি বলিতে চায় শুনেই দেখি না,
-জ্বী স্যার বলুন।
-আসলে......মার্কেটিং সেক্টরের কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। এমন কাজের জন্য স্মার্ট লোকের দরকার পরে...........আপসেট হওয়ার কোনো কারন নেই। আমার মনে হয় আপনার জন্য এই কাজটাই বেটার। কাজ করতে পারলে এই সেক্টরে ভালো ডেভ্‌লপ করা যায়।

প্রায় পনেরো মিনিট আরো থাকা হইয়াছিল সেখানে। সত্যি বলিতে কাজটা সম্পর্কে যতটুকু শুনিলাম, মন্দ লাগিলো না। করা যায়। আর দশটা মার্কেটিং জবের মত ইহাতেও টারগেট বেসিস ইনকাম। আমার কাজ হইবে একটা টিমকে তদারকি করা। বেসিক? মন্দের ভাল.........তবে টিমের পারফর্মেন্স ভালো হইলে দৃশ্যপট হইবে অন্যরকম। এককালে কাবাডি দলের ক্যাপ্টেন ছিলাম(সে অনেক অনেক কাল আগের কথা)। কাকে, কখন, কিভাবে ও কোথায় কোথায় চাপিয়া ধরিলে তার রিয়েকশান কিরূপ হইবে তা মনে হয় খুব একটা খারাপ জানি না। কথায় আছে না.........”অস্ত্র জমা দেয়া যায়, ট্রেনিং তো আর না”। অতএব, প্রত্যাশিত চাকরি না হওয়া সত্যেও বাড়ন্ত সে চারাগাছ তার শাখা-প্রশাখা চারপাশে মেলে দিতে দিতে হইয়া গেল এক প্রকাণ্ড মহীরুহ! আর সেই প্রকাণ্ড মহীরুহের মগডালে বসিয়া আছে রিসেপ্‌শনিস্ট সুন্দরী!

বন্ধুরা বলে “পার্টি দে”।............দিলাম। কত আর খাবি! ফাস্টফুডের দোকানে বসিয়া পকেটের শেষ বড় নোটটাও নিশ্চিন্তে ভাঙিয়া ফেলিলাম। ভুলিয়া গিয়াছিলাম, আমার জীবনে “নিশ্চিত” শব্দটাই বড্ড বেশি অনিশ্চিত। ঘটিলো ঠিক সেই রকম।

জয়েনিং-এর আগের দিন কল করিয়া “না” বলিয়া দিল! তাদের কথা হইল, চানখারপুল থেকে উত্তরা অনেক দূর। এত দূর হইতে প্রত্যহ আমি সঠিক সময়ে উপস্থিত হইতে পারিব কিনা তাতে তাদের ব্যাপক সন্দেহ! যে সন্দেহ তাহাদের জব সার্কুলার দেয়ার সময় মনে ছিল না। যাই হোক, সেই সন্দেহের বলি হইতে হইল আমাকে আর সেই মহীরুহকে, যার উপর মিস রিসিপ্‌শনিস্ট পদ্মাসনে সমাসীন!

বন্ধু আজিম বলল, দোস্ত দুঃখ করিস না.........এই নে! জ্বালাইয়া দুইটা টান দে!
কি জিনিস তা দেখার জন্য ঘার কাত করিলাম। সালা এই ছাই পাস এখনো ছাড়ে নাই। মাত্র এক দেড় বছর আগের কথা, এই আজিমই তখন জিম করিয়া এক খানা ফিগার বানাইয়া ছিল। দেখার মত! আর এখন তাহার ফিগার বলিতে পৈত্রিক সম্পত্তি ঐ হাড্ডিগুলা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নাই। সম্ভবতঃ কোনো নারীঘটিত ব্যাপার।

-কি হইল? জ্বালা!

হূট করিয়া আমার মনে আরও বিষন্নতা জাকিয়া বসিল। হৃদয় যেন দীর্ঘশ্বাসে মুক্তি খুঁজিতে চাইল। বন্ধু আজিমের দিকে তাকাইয়া বলিলাম,
-“গঞ্জিকা” টানিলে কি দুঃখ ভোলা যায় রে পাগলা??......”গঞ্জিকা” টানিলে দুঃখ ভোলা যায় না!

ভ্যান চলিতেছে। অসাধারন ঝামেলা হইতে আপাতত সাধারণ ঝামেলা এই বাসা বদলানোটাই বেশ যন্ত্রনাদায়ক মনে হইতেছে। কারন, ড্রাইভার সাব। সে ভুলিয়া গিয়াছে তাহার গাড়ি ঢাকার রাজপথে চলিতেছে, আকাশ পথে না। আমি প্রায় অনেকটাই নিশ্চিত যে, আগের জনমে এই ব্যক্তি ছিলেন অতি উত্‌কৃষ্ট শক্তিশালী একটি চতুষ্পদি প্রানী.........ঘোড়া। মালপত্রের উপর তাই শক্ত হইয়া বসিয়া আছি। আপাতত এ জীবনের একটাই লক্ষ্য। সরাসরি বাসায় যাইতে চাই, হাসপাতালে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমেদ রাকিব ধন্যবাদ ভ্রাতাগণ ........লেখাটা আসলেই ছোট হয়ে গেছে ......এটা অল্প কিছু সময়ের ফসল.......এটাকে আরো বড় করার ইচ্ছে আছে.........আপনাদের মন্তব্য় আমার উত্সাহ হয়ে রবে ......
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৫
মিছবাহ উদ্দিন রাজন মোটামুটি ভালোভাবেই বাস্তবতাকে নিয়া বিদ্রুপ করিতে পারিয়াছেন । ভুল ধরা আমার কাজ নহে । চালাইয়া যান ।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫
জাতিস্মর আপনি তো বেশ মজা করিয়া লেখাটা লিখিলেন। আমিও মজা পাইলাম। পর সমাচার এইযে, এরপর একটু ঠাণ্ডা মস্তিস্কে, সময় নিয়া লিখিতে বসিবেন। আপনি মনে হইতেসে ভালো করিবেন। আমারো একটা ছোট্ট গল্প আর একটা ছোট্ট কবিতা আছে। সময় পেলে পড়ে দেখবেন। ।
শামীম খান সুন্দর লেখার হাত আপনার । গল্পটা বেশ তরতর করে এগিয়ে চলছিল । মনে হোল , তাড়াহুড়া করে শেষ করে দিলেন । শুভ কামনা রইল ।

২৯ এপ্রিল - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪