কোন কিছুর ভরকেন্দ্র বলতে সেই বিন্দুকে বোঝায় যে বিন্দুতে সমগ্র ভর কেন্দ্রীভূত বলে ধরে নেওয়া হয় এবং যেখানে লব্ধি বল ক্রিয়া করে।
দুঃখিত। আমি আসলে বিজ্ঞানের কোন সমস্যা নিয়ে নয় বরং তার চেয়েও জটিল কোন সমস্যার সাথে পরিচিত করাতে যাচ্ছি।
একটা গল্প লিখছি। কিন্তু এর পরিণতি সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। বিষয়টা খুলেই বলি। আমি একটা রোমান্টিক গল্প লিখছি। যেন তেন রোমান্টিক গল্প নয়, নিখাদ প্রেমের গল্প। লিখতে গিয়ে ভাবলাম, সবাই তো একভুজ, দ্বিভুজ, ত্রিভুজ প্রেমের গল্প লিখে। আমি ভাবলাম, আমি নাহয় পঞ্চভুজ প্রেমের গল্প লিখি। চারজন ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে। কত ভাগ্যবতী নায়িকা তাই না?
সমস্যা হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না, কোন ছেলেকে ভাগ্যবান বানাব, মানে কার সাথে মিল দেখাব। আপনাদের সাহায্য চাই। তাই আপনাদের আগে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।
মোবারক হোসেন, আমার গল্পের নায়িকা অদ্বিতীর চাচাত ভাই। পিঠাপিঠি। বড় হয়েছে একই সাথে। পড়াশোনায় তেমন ভালো নয়, বিস্তর সম্পত্তি থাকায় গ্রামেই রয়ে গিয়েছে। অদ্বিতীকে প্রচন্ড ভালোবাসে। কিন্তু কখনোই মুখ ফুটে বলতে পারে না।
দিলান আহমেদ, অদ্বিতীর কলেজ বন্ধু। একসাথেই কলেজে পড়েছে। ভার্সিটি আলাদা। কৈশোরের প্রথম ভালোবাসাকে আজও সযতনেই আগলে রেখেছে। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকবারই বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বলা আর হয় নাই। ভার্সিটি আলাদা হলেও এখন ভালো যোগাযোগ রয়েছে।
ইখলাস রহমান, ভার্সিটির বন্ধু। একই ডিপার্টমেন্টে একই সাথে পড়ছে। এম.এসসি তেও একই সাথে। প্রথম দেখাতেই প্রেম পড়েছে, এখনো সেই প্রেমেই পরে আছে। অবশ্য একবার প্রপোস করেছে, কিন্তু উত্তর না হওয়া সত্ত্বেও এখনো হাল ছাড়ে নাই।
আর সবশেষে, উপল চৌধুরী, অদ্বিতীর ফেসবুক বন্ধু। তিনবার দেখাও হয়েছে। লেখক মানুষ, বিধায় প্রায়শই অদ্বিতীকে কথার জালে ফাঁসাতে ফাঁসাতে নিজেই তার প্রেমে ফেঁসে গিয়েছেন। যদিও প্রস্তাব দেন নি, তবুও সবুজ সংকেতের আশা ছাড়েন নি।
একজন গ্রামে অপেক্ষা করে, একজন অন্য ভার্সিটিতে, আরেকজন একই ভার্সিটিতে, অন্যজন অনলাইনে অপেক্ষা করেন। আর তাদের ভরকেন্দ্র সবাইকে অপেক্ষায় রেখেছে। আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না, কার সাথে মিল দেব?
আচ্ছা, এক কাজ করি, এই পাঁচজনকে একসাথে করি, তারা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হবে সেটাই পরিণতি, কি বলেন? কিন্তু কিভাবে তাদের পাঁচজনকে একসাথে করব? পেয়েছি...
বইমেলা। আজ উপল চৌধুরীর চতুর্থ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে। তার নিমন্ত্রণে অদ্বিতী এসেছে, সাথে নিয়ে এসেছে ইখলাসকে। মোবারক গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন অদ্বিতীকে দেখতে। বাসায় যাওয়ার আগে ভাবলেন, অদ্বিতী তো বই পড়তে অনেক ভালোবাসে, সেই সাথে বইমেলাও চলছে, কিছু বই কিনে নেওয়া যাক। সে প্রেক্ষিতেই বইমেলায় আসা। বাকি রইলো দিলান। সে এলো, কারণ বইপড়া তার নেশা। তারপর যা হবার তাই হলো। সবার সাথে সবার দেখা হলো। আড্ডা দিতে বসে পড়লো। এখন এখান থেকে অদ্বিতীকে সরানো প্রয়োজন। তাই সে আকস্মিক প্রয়োজনে সবাইকে রেখে বেশ কিছুক্ষণের জন্য হাওয়া। আশা করি, সে ফিরে এলেই তার জোড়াকে পেয়ে যাবে, কি বলেন?
উপল চৌধুরী তার প্রেমে পড়ার কাহিনী বলতে লাগলেন, অদ্বিতীর সাথে আমার প্রথম পরিচয়, ফেসবুকে “আদার’স” ফোল্ডারে একটা মেসেজের মাধ্যমে, “আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে। আমরা কি বন্ধু হতে পারি।” সেই থেকে শুরু। ধীরে ধীরে কখন যে তার প্রেমে পরে গেলাম, নিজেও বুঝিনি। আগে কখনো কারো প্রেমে পড়িনি কিনা। ভাবছি পঞ্চম বইটা তাকেই উৎসর্গ করব।
এবার দিলান, ভালোবাসা কাকে বলে তা ঠিক বুঝি না। কলেজের সেই সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো স্বাধীন জীবনে তাকেই ভালো লাগতো, এখনো তাকেই ভালো লাগে। সেই অনুভূতি এখনো কাজ করে।
ইখলাস বললেন, ঠিক করেছিলাম, প্রেম-ভালোবাসা এসব বিয়ের পরেই বউয়ের সাথেই করব। বিবাহপূর্ব এসব সম্পর্কে খুব একটা আস্থা ছিল না। ভার্সিটিতে ভর্তির আগ পর্যন্ত সেই ধারণাই বলবৎ ছিল। অদ্বিতীর সাথে পরিচয়ের পর সেই ধারনাটাই পাল্টে গেল। আমি তার প্রেমে পরে গেলাম।
-ভাই আমি মূর্খ সুখ্যুমানুষ। অতো বিদ্যা আমার নেই। অদ্বিতী আর আমি একসাথে বড় হয়েছি। কত যে বর-কনে খেলেছি, পুতুল বিয়ে দিয়েছি, তার কোন ইয়ত্তা নেই। তারা যখন শহরে চলে গেল, তখন থেকে কেমন যেন একটা শুন্যতা অনুভব করি। একে যদি আপনারা ভালোবাসা বলেন, তবে এটা তাই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন মোবারক হোসেন।
কি বুঝলেন? এদের সবারই প্রথম এবং আপাতত শেষ প্রেম অদ্বিতী। সবাই নিজ নিজ সামর্থ্যনুযায়ী তাকে ভালোবাসে। এখন আপনারাই বলুন, কার জীবন ট্র্যাজেডি আর কার জীবন রোমান্টিক করব? ভালোই ফ্যাসাদে পরে গেলাম দেখছি। এখন অদ্বিতীর মুখে শুনি সে কি বলে?
-মোবারকের সাথে আমার ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালো পরিচয়। অনেক শান্ত আর ভদ্র ছেলে। কিন্তু আমি তো তাকে ভাই ছাড়া অন্য কোন দৃষ্টিতে দেখি না। যদিও আমার প্রতি তার অনুভূতি টের পাই। তাই ওর কাছে থেকে পালিয়ে বেড়াই। দিলানের সাথে কলেজে পরিচয়। আমি জানি না, একজন কলেজ পড়ুয়া ছেলের ভালোবাসা সম্পর্কে কতটুকুই বা ধারণা থাকে? সে আজও তার সেই কৈশোর প্রেম নিয়েই আছে। সে একটা অপরিণত ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে আছে। কি করে তার ভালোবাসায় সাড়া দেব? অপরদিকে ইখলাসকে অনেক ভালো বন্ধু হিসেবে দেখি। যে কারণেই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমি বুঝি না, একটা মেয়ে একটা ছেলের কাছে মুক্তমনা হলেই কেন ধরে নেয় যে মেয়েটা তাকে ভালোবাসে? এটা কি তাদের নিচু মনের বৈশিষ্ঠ্য? আমার অতটা পরিষ্কার ধারণা নেই। আর উপল চৌধুরীর কথা কি বলব? তার লেখা অনেক ভালো লাগে। তার মানে এই নয় যে ব্যক্তি উপলকেও ভালো লাগে। তার প্রতি যে ভালোলাগাটা কাজ করে সেটা আসলে শ্রদ্ধারই এক রূপ। অদ্বিতী এবার থামলো।
লে হালুয়া,সবই যে জিলাপির মতো পেঁচিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে ওরা চারজনই অদ্বিতীকে ভালোবাসে আর এদিকে অদ্বিতী কাউকেই ভালোবাসে না। ধেৎ, এমন হলে তো কোন পাঠকই আমার গল্প পড়বে না। পাঠকরা তো গল্পে নায়ক-নায়িকা চায়, তাদের মাঝে মিল যায়। এখন আমি কি করি?
আচ্ছা, অদ্বিতী তো বাহিরে। ওকে সড়ক দুর্ঘটনায় মেরে ফেলি। তাহলে কারো সাথেই মিল দেবার প্রয়োজন পড়বে না। আবার পাঠকের সহমর্মিতাও পাওয়া যাবে। কি বলেন? কিন্তু, নাহ, গল্পের শেষে সড়ক দুর্ঘটনা খুবই গতানুগতিক প্লট, পাবলিক খাবে না। ধুর, কি যে করি? আপনাদের কি কোন ধারণা মানে আইডিয়া মাথায় আসছে? আমার তো চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হচ্ছে।
দাঁড়ান। পেয়েছি। এখন এক নতুন হিরোকে আনতে হবে। তারপর তাদের মাঝে ইয়ে করে বিয়ে দিতে হবে। তাহলে সব ল্যাটা চুকে যাবে। কি বলেন? তাহলে গল্পটা শুরু করা যাক। দেখা কে আছে ভরকেন্দ্রে?
-হায়,হায়। এই অসময়ে বৃষ্টি কেন? ভিজে যাচ্ছি তো। এ নিশ্চয়ই এই গল্পের লেখকের কাজ। রোমান্টিক কোন দৃশ্য আনতে চাইলেই এক পশলা বৃষ্টি চাই-ই চাই। ছাতাও তো সাথে আনিনি। ওমা, ব্যাগে ছাতা এল কি করে? সব লেখকের কারসাজি। না জানি আর কি কি লিখে রেখেছে? ওরা চারজন তো অপেক্ষায় আছে, কাজ শেষ করে জলদি যেতে হবে। বলেই অদ্বিতী ছাতা মেলে হাঁটতে লাগলো।
কিছুদূর এগুতেই এক যুবক অদ্বিতীর পথ আগলে দাঁড়াল।
হিরো এসে গিয়েছে, হা হা হা।
-একটু ছাতাটা শেয়ার করবেন? আমি ভিজে যাচ্ছি। আমার আবার ঠান্ডা লাগলে ভীষণ সমস্যা হয়। বলল যুবক।
অদ্বিতী ছাতাটা শেয়ার করতে করতে মনে মনে বলল, আশ্চর্য! আমি এক অচেনা ছেলের সাথে ছাতা শেয়ার করছি। এমনটা কি কখনও করেছি? নির্ঘাত এটা লেখকের কাজ। যদি তাকে কাছে পেতাম...
থাক। বাকি কথা না শোনাই ভালো। মৃত্যুর হুমকি দিলে সমস্যা। কি বলেন?
যুবক বলে উঠলো, বৃষ্টি তো অনেক জোরে শুরু হয়ে গেল।
-তো?
-আমাদের কোন কিছুর আড়ালে যাওয়া উচিৎ। এই ছাতা এই ভারী বর্ষণকে আটকাতে পারবে না।
-আপনার দরকার হলে আপনি যান।
-আপনি অনেক ছেলেমানুষ। আসুন তো। বলেই যুবক অদ্বিতীকে একটা দালানের কার্নিশের নিচে গলির ধারে নিয়ে এল।
অদ্বিতী আড়চোখে যুবককে দেখল, যুবকের চোখে কেমন যেন, মনে হচ্ছে ঘুমে ঢলে পড়ছে। কথাও কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে। নেশাখোরের পূর্ণ আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এই যাহ। আমি কি নায়ককে আনতে গিয়ে খলনায়ক এনে ফেললাম নাকি? কোথাও জোর করে নিয়ে যেয়ে কিছু করে ফেললে তো বাকি চারজন আমাকে আস্ত রাখবে না। কি করি? কি করি? কিছু লোককে আসে-পাশে এনে রাখতে হবে। তাহলে যুবক কিছু করার সাহস পাবে না। আগে নিজের জান বাঁচাই। তারপর অন্যকিছু। দিলাম চায়ের দোকান বসিয়ে। মুহাহাহা।
-আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা হয়ে আসছে। গরম চা হলে মন্দ হতো না। কি বলেন? বলল, যুবক।
-আমি রাস্তার চা খাই না।
-চা খায় কিভাবে? চা তো পান করে। ড্রিংক, ড্রিংক।
-জ্ঞান দেবেন না।
-রাগ করছেন কেন? এক কাপ চা চেখেই দেখুন না? এই পরিবেশে চা মানেই দারুণ কিছু।
চা খেতে খেতে মানে পান করতে করতে অদ্বিতী মনে মনে বলছে, এই চা আমি জীবনেও খেতাম না, মানে পান করতাম না। শালার লেখকই যতো নষ্টের গোড়া। যদি পেতাম...
-আমি এহতেশাম,আপনি?
-অদ্বিতী।
-আমি একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি চাকরি করছি। আপনি?
-ও, তাই নাকি? কি চাকরি করেন?
-আমি এম.ডি হিসেবে কর্মরত। আপনি কি করেন বললেন না তো?
-আমি এম.এসসি করছি। এম.ডিদের আজকাল পায়ে হেঁটে চলতে হয় নাকি? এত গরিব কোম্পানিও আছে নাকি?
-ইয়ে মানে, অতটা গরিব না। এ দেশের বাহিরে আমাদের কোম্পানিটা ২৮টা দেশে শাখা আছে। আমিও দেশের বাহিরে থাকি। দশ বছর পর দেশে এসেছি আমার এক ভার্সিটির শিক্ষকের নিমন্ত্রনে। আনঅফিসিয়াল মিটিং বলে অফিসের কেউ বিমানবন্দরে নিতে আসে নাই। তাই নিজেই একটা ট্যাক্সিতে করে সেখানে যাওয়ার সময় কি যেন হল, দীর্ঘ জার্নির কারণেই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি রাস্তার পাশে, জায়গাটা অচেনা। সেলফোন, মানিব্যাগ কিচ্ছু নেই।
-বুঝেছি, এখন আপনার কিছু সাহায্য লাগবে।
-ইয়েস, ইয়েস।
-কিছু টাকা দিলে যেতে পারবেন।
-ইয়েস, ইয়েস। আপনার সেল নাম্বার দিন। আমি পৌঁছে পাঠিয়ে দেব।
-নেশা করেন বললেই হতো, এত নাটক করার কি দরকার ছিল?
-নো,নো। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।
-এখানে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে, আমি এখন যাব।
-আমাকে শুধু একটা কল করতে দিন। বিদেশে কথা বলা যাবে?
-ওফ! যাবে। নিন।
এহতেশাম কিছুক্ষণ কথা বলে অদ্বিতীকে বলল, স্যারের নাম্বার ওরা মেসেজ করে পাঠিয়ে দিবে একটু পরেই। আরেকটু অপেক্ষা করুন।
অদ্বিতী দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ওকে।
শালার লেখকের বাচ্চা আমাকে এ কোন ঝামেলায় ফেলেছে? যদি তাকে সামনে পাই আস্ত চিবিয়ে খাব।
কে কাকে আস্ত চিবিয়ে খাবে তা একটু পরেই টের পাবেন। কি বলেন, পাঠকেরা। মু হা হা হা।
-এই আপনার কি হয়েছে? আপনি এমন করছেন কেন? অদ্বিতী বলল।
-আমার মাথা ঘুরছে, ভীষণ পেট ব্যথা করছে। চোখে ঝাপসা দেখছি। দয়া করে নাম্বারটায়...
কথা শেষ করার আগেই মুখে ফেনা তুলে এহতেশাম পড়ে গেল। সে তো আর জানে না, ঘুমের মাঝে তার হাতে পুশ করা ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তখনো কেবল শুরু হয়েছে।
অদ্বিতী একটু পরেই দেখল, তার মোবাইলে মেসেজ এসেছে। প্রেরক অচেনা, নাম্বারটা দেশের বাহিরের। বুঝতে বাকি রইলো না, এহতেশাম খুব একটা মিথ্যা কথা বলে নি। লোক জমে গিয়েছে। ইনবক্স ওপেন করার সময় পেল না। বাকি চারজনকে হাসপাতালে আসতে বলে এহতেশামকে নিয়ে সে চলল।
হি! হি! হি! দিয়েছি কেস ফিটিং করে। এবার তুমি কই যাবা অদ্বিতী সুন্দরী? একটা হালকা টুইস্ট দেওয়া গেল। কি বলেন পাঠকরা? দাঁড়ান। দাঁড়ান। এখনও কাহিনী একটু বাকি আছে, যাইয়েন না।
ওটি থেকে ডাক্তার বের হয়ে বললেন, ৪ব্যাগ ও পজেটিভ রক্ত জোগাড় করুন। রক্ত পুরোপুরি বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। মারাত্মক বিষাক্ত নেশার ঘুমের ওষুধ প্রায় লিথাল ডোজে দিয়ে ফেলেছে।
-আমার রক্ত তো ও পজেটিভ। বলল দিলান।
-আমারও। বলল ইখলাস।
-ইয়ে মানে আমারও। বলল উপল চৌধুরী।
-আমারটাও মনে হয় ও পজেটিভ। লেখক নিশ্চয়ই আমার রক্তের গ্রুপ পাল্টে দিয়েছে। বলল মোবারক হোসেন।
ঘটনা আর বাড়িয়ে লাভ নাই। চার জনের রক্তে সেই অচেনা যুবক এহতেশাম। ৩ দিন পর চোখ মেলেই এহতেশাম যা বলল তা হলো, স্যার আপনি?
-আমি দুঃখিত যে এতদিন পর আমার জন্য দেশে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হলো। অদ্বিতী যদি সেদিন মেসেজে নাম্বার পেয়ে আমাকে না জানাত তাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না। বলল এহতেশামের স্যার।
এদিকে অদ্বিতী কি বলছে শুনুন মানে পড়ুন, পরে ইনবক্স ওপেন করে দেখি নাম্বারটা বাবার! লেখকের বাচ্চা আমার বাবাকে প্রফেসর বানায়ে দিল। আর এহতেশামকে বানাল তার গুণধর ছাত্র। রাবিশ প্লট। গু খোর লেখক।
এই মেয়ে দেখি আচ্ছা বজ্জাদ। আমাকে সমানে গালি দিচ্ছে। আমার লেখাকে গালি দিচ্ছে। আমি লেখক বলে আমার কি কোন সম্মান নেই নাকি? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
-স্যার, অদ্বিতী বোরখা পড়েছিল দেখে একেবারেই চিনতে পারি নাই। সেই কবে দেখেছি।
-অনেক বড় গিয়েছে, তাই না বাবা।
-জ্বী, স্যার। অনেক সুন্দরও হয়েছে।
অদ্বিতী দূরে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলছে, এখন আবার আমার বাবাকে পটানো হচ্ছে। সেই ক্লাস এইটে থাকতে ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলে গোলাপ দিয়ে পালাল, এল দশ বছর পর বাহাদুরি দেখাতে। আমি যে এতদিন তার জন্যই অবচেতনভাবে অপেক্ষা করেছি তা কি সে জানে? লেখকও তা জানে না।
ওরে বাপরে। এ দেখি লাইলিদের ফেল করে দিল। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। তাহলে এহতেশামের সাথেই মিল হল অদ্বিতীর। আমিও আমার গল্পের সমাপ্তি পেলাম। কিন্তু বাকি চারজনের কি হবে?
-ধুর, শালার লেখকের জন্য অদ্বিতীকে পেলাম না। রেশমাকে আমার অনেক ভালো লাগে। রেশমাও আমার দিকে মুচকি হাসে। ওকেই বিয়ে করে ফেলব। গুষ্টি কিলাই তোর রোমান্টিক গল্পের। বলল, মোবারক।
-আরে রাখেন মিয়া অদ্বিতী। শিল্পী আমাকে সেই ভার্সিটিতে ওঠার পর থেকেই প্রপোস করতে করতে বেহুশ হয়ে গেল। এই লেখক আমার সাথে মিল দিতে পারে ভেবেই ওকে কিছু বলি নাই। এখন ওর হুশ ফেরাতে হবে। দিলানের উত্তর।
-এইসব বস্তাপচা লেখকদের জন্যই বাজারে আমার লেখাগুলো চলে না। ভেবেছিলাম এই লেখকের লেখায় আমার বইয়ের নাম দিয়ে একটু পাবলিসিটি করব। সেই ভেবে অদ্বিতীর সাথে লাইনও মারলাম, গল্প ফাঁদলাম। কিন্তু এটা কি হল? পাঁচ নাম্বার বইটা মুন্নিকে উৎসর্গ করব, ওর সাথে বেশ ভালো সময় যাচ্ছে। উপল চৌধুরীর জবাব।
-নাহ, হল না। বিয়ের পর বউয়ের সাথেই যা করার করব। এসব লেখকের লেখার উপকরণ হতে আমি আর রাজি নই। অদ্বিতী-ফদিতি বাদ। ইখলাসের সোজাসাপ্টা জবাব।
আর অদ্বিতীর উত্তর, বজ্জাত লেখক। নিজের গল্প নিজেই লিখে নিজেকেই নায়ক বানালো। আবার মুখে কত বড় বড় কথা। হাহ।
ওহ, দুঃখিত পাঠক। বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আমিই এহতেশাম।