পরিবর্তন

বৈরিতা (জুন ২০১৫)

হাসনা হেনা
  • ১১
অমিয়-এর সঙ্গে মিথিলার এটা সেটা নিয়ে দ্ব›দ্ব লেগেই থাকে। ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অমিয়-এর সাথে তার প্রায়ই মত বিরোধ দেখা দেয়।এসব নিয়ে অনেক দেন দরবারও হয়েছে যদিও দুজন আলাদা বিভাগের ছাত্র ছাত্রী। মিথিলা বড় লোকের একমাত্র মেয়ে তার চালচলন পোশাক আশাক সবই আলাদা। দামী গাড়ী হাকিয়ে দাপটের সাথে ভার্সিটিতে আসে। আর অমিয়? আদর্শবান প্রফেসর পিতার অতীব সাদামাটা সৎ, মেধাবী ও ব্যক্তিত্ববান সাহসী সন্তান। কোন অসঙ্গত ও অন্যায় কাজকে সায় দিতে শেখেনি সে। অনেকের কাছে প্রিয় হলেও সে অনেকেব কাছেই অপ্রিয় ¯^াভাবিকভাবে। একদিন ইউনিভার্সিটির কড়িডোরে মিথিলার সাথে নিজের অজান্তেই অমিয়-এর ধাক্কা লেগে যায়। মিথিলার সেকি তিরস্কার আর অপমান। অমিয় বার বার বোঝাতে চাইল এতে তার কোন দোষ নেই কিন্তু কে শোনে কার কথা। মিথিলার কথা হল, তাকে অপমান করার জন্যই সে ধাক্কা দিয়েছে। মিথিলার পক্ষ নিয়ে অনেকেই এসে যোগ দিল অমিয়কে অপমান করতে কিন্তু অমিয়-এর পক্ষের যে কেউ ছিল না তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ বলল, অমিয়কে অপমান করার যোগ্যতা অপনার নেই। বড় বড় বাড়ী, দামী দামী গাড়ী থাকলেই ভাল মানুষ হয়না। অমিয়কে অপমান করলে ফলাফল ভাল হবেনা। মিথিলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল, তোমাকে আমি দেখে নেব। তুমি হয়েছ ভদ্র শয়তান। তার পক্ষের সবাই অনেক কথা শোনাল। তার পর কজন শিক্ষক এসে দুজনকে থামিয়ে দিয়ে মিটমাট করে দিল।

কিছুদিন পর মিথিলার গাড়ীতে এক পথচারীর ধাক্কা লেগে আহত হয় । মিথিলা নিজেই ড্রাইভ করছিল। পথচারীরা মিথিলা আর গাড়ী আটকে দিয়ে নানা ভাষায় অপমান করতে লাগল কিন্তু অহংকারী মিথিলা কিছুতেই নিজে দোষ শিকার করতে রাজী নয়। সব দোষ পথচারীর উপর চাপিয়ে বলল, সে দেখে পথ চলবে না, গেঁয়ো কোথাকার, রাস্তাতো গাড়ী চালাবার জন্যই নাকি? পথ ছাড়েন আমার, দেরি হয়ে যাচ্ছে, যত্ত সব ঝামেলা। আমার কি করার আছে। একজন বলল, কার আছে, গাড়ী চাপা দিয়ে আহত করবেন আপনি আর দায় নিব আমরা। ঐ-- পুলিশ ডাকেন। মিষ্টি কথায় কাজ হবেনা। অনেকেই অনেক কথা শোনাতে লাগল। মিথিলার সেই একই কথা তার কি দোষ। অমিয় পাশ দিয়ে যেতেই হৈ চৈ শুনতে পেয়ে এগিয়ে জানতে চাইল কি হয়েছে? সবাই জানাাল এক্সিডেন্ট করেছে। অমিয় ভিড় ঠেলে এগিয়ে দেখল মিথিলার গাড়ীর পাশে একজন বয়স্ক লোক পা ভেঙ্গে পড়ে কোকাচ্ছে আর মিথিলা গাড়ীর ভেতর বসে গজর গজর করছে। উত্তেজিত জনতা এটা সেটা বলতে লাগল। মিথিলা অমিয়কে একবার দেখেই অন্যদিকে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগল, এসছে আমার বারটা বাজাতে, যত্তসব। অমিয় বলল, সেকি, ওনাকে হাসপাতালে না নিয়ে অপনারা এখানে হাঙ্গামা করছেন, এটা কি ঠিক? আগে ওনাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন তারপর যা করার করবেন । অনেকেই অমিয়-এর কথায় একাত্যতা প্রকাশ করল। মিথিলাকে বলল, গাড়ীতে ওকে নিয়ে হাসপাতালে চলুন। এইযে ম্যাডাম,গাড়ীর দরজা খুলুন, ওনাকে হাসপাতালে নিতে হবে।
-অসম্ভব। অন্য গাড়ীতে নিয়ে যান।
- এক্সিডেন্ট করবেন আপনার গাড়ীতে আর ওনাকে নিয়ে যাব অন্য গাড়ীতে? ভাল চানতো গাড়ীর দরজা খুলুন। আরও কয়েকজন চিৎকার করে বলল, পুলিশে খবর দেন, তারপরে বুঝবে ঠেলা। অমিয় বলল, এখন বড়লোকী রেখে ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন যদি বাঁচতে চান। অবশেষে মিথিলা গাড়ীর দরজা খোলে দিল। এরি মধ্যে অমিয়-এর বন্ধু শাফিন এসে সব জেনে বলল, ওর শাস্তি হওয়া উচিৎ। অমিয় তুই চলে আয়। দেখি বড়লোকের বেটি কি করে। অমিয় চুপ করে বলল, নাহ, সে আমাদের ভার্সিিিটর মেয়ে। ওকে বিপদে ফেলে আমরা যেতে পারিনা। আপনারা সবাই যান ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিন। আমরা চাচার সকল দায়িত্ব নিলাম। একজন বলল, আপনার কথায় ছেড়ে দিলাম কিন্তু লোকটার যেন কোন ক্ষতি না হয়। অমিয় বলল, ঠিক আছে ভাই। তারপর আহত লোকটাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেল। পথচারী ২জন তাদের সাথে হাসপাতালে গেল।

অমিয় বন্ধুদের নিয়ে রোগীর পাশে দাঁড়াল। জানতে পারল তার ঢাকায় কেউ নেই, ছেলেকে খুঁজতে ঢাকায় এসেছে। সেই যে তিন বছর আগে ঢাকায় কাজের খোঁজে এসেছে আর ফেরেনি সে। বৃদ্ধের কথা শোনে অমিয়ের ভীষণ মায়া হল। লোকটি কোকাতে কোকাতে বলল, বাবারা, তোমরা কত বালা মানুষ। তোমাগ এই মায়া দেইক্ষা আমার ব্যতা সারাইয়া গেছে। হাজার বছর বাইচ্ছা থাক। আমার পোলাডার খবরডা যদি পাইতাম, অর মা বড় কান্দা কাডি করে। অমিয় বলল, চাচা আপনি কথা বলবেননা। আমরা চেষ্টা করব আপনার ছেলেকে খোঁজে দিতে। এতক্ষণে মিথিলার ছোট খালা আর বাবা এসে পড়েছে। বাবার সেকি আস্ফালন। কেন তার মেয়েকে এখানে আটকে রেখেছে কার এত বড় সাহস। দরকার হয় ক্ষতিপুরণ নিবে। এটা কি ইচ্ছে করে করেছে নাকি আরও কতকি। অমিয় বলল, ইচ্ছে করে করলেতো এতক্ষণে কারাগারে থাকত তবে সাবধানে গাড়ী না চালানোও একটা অপরাধ। মিথিলাও ক্ষেপে গিয়ে বলল, আপনিই সব কিছুর মূলে। আমার প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। এসব বুঝি আমি বুঝিনা। -ঠিক বললেন না। আমি না থাকলে এত ক্ষণে কি অবস্থা হত তা বলতে চাইনা। ছোট খালা এগিয়ে এসে বলল, চুপ কর, লোকটাকে কিভাবে সুস্থ করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তোকে বলেছি কতবার, ড্রাইভার নিয়ে বের হবি। মিথিলার বাবা বলল, পথচারীররাও ইচ্ছে মত রাস্তা পার হয় আর দোষ পড়ে গাড়ীচালকের উপর। অমিয় লোকটির গায়ের উপর কাপড় তুলে দিতে দিতে বলল, লোকটি রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আপনার মেয়ে তার পায়ে গাড়ী উঠিয়ে দিয়েছে।
-তুমি কে?
-আমি অমিয়। মিথিলা মুখ বাঁকা করে বলল, ঐযে তোমাকে বলেছিলামনা, আমাদের ভার্সিটির ঐ ছেলেটা।
-কোন ছেলেটা?

ছোট খালা অময়িরে দকিে তাকয়িে মৃদু হসেে বলল, আরে অময়ি তুম?ি
-জ্বী আন্ট,ি আপন?ি
-আরে আমতিো এতক্ষণ খয়োলই করনি।িছোট খালা সবাইকে থাময়িে দয়িে অময়ি-এর বহু গুণগান বয়ান করল। বহু আগে থকেইে অময়ি-এর পরবিাররে সাথে তার পরচিয় বলতে গলেে ভালই জানা শোনা। একই পাড়ায় বাড়ী ওদরে।

অময়ি আর তার বন্ধু মলিে নজিরে টাকা পয়সা খরচ করে সে লোকটির চকিৎিসা আর দখো শোনা করে সুস্থ্ করে তুলল। ছোট খালাও সাহায্য করছেে অনেক। মাঝে মাঝেই ছোট খালা মিথিলাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে খোঁজ খবর নিয়েছে। মিথিলার বাবাও কিছু টাকা পয়সা দিতে বাধ্য হল। অমিয় আহত লোকটির কেউ ঢাকায় নেই জেনে নিজেই তার সব দায়িত্ব নিল। এমনকি হাসপাতালে রাতও কাটিয়েছে তার সাথে। সে এখন প্রায় সুস্থ। লোকটির কি প্রাণ উজার করা দোয়া অমিয় আর সবার জন্য। তার শুধু একটা দাবী তার ছেলেটাকে যেন খুঁজে দেয়। ওর মা মৃত্যু শয্যায়। এসব দেখে অমিয়-এর প্রতি সকল আক্রোশ মিথিলার মন থেকে ধীরে ধীরে কেমন করে যেন নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকল। মিথিলা ছোট খালার বড় ভক্ত। ছোট খালা মিথিলাকে অনেক কথা শুনিয়েছে তার আচরণের জন্য। অমিয় না থাকলে আরও সমস্যা হত তোর। আর তুই কিনা ওকে অপমান করিস। ও অনেক ভাল ছেলে। কবে ছেলে মানুষী যাবে তোর আরও কতকি। মাঝে মাঝে অমিয়-এর চোখে চোখ পড়ে মিথিলার কিন্তু কি আশ্চর্য যাকে এ কিছু দিন আগেও দেখলে ধক করে মনে আগুন জ্বলে উঠত এখন তাকে দেখলে সেই একই মনে কেমন যেন প্রশান্তির ফল্গু ধারা বয়ে যায়। এ কয় দিনে যেন কত আপন মনে হয় অমিয়কে। এখন সেধে সেধেই অমিয়-এর সাথে কথা বলে মিথিলা। ইনিয়ে বিনিয়ে ক্ষমা চায় সে। অমিয় শুধু বলে আপনি ভুল বুঝতে পেরেছেন এতেই আমি খুশি। কিন্তু খুব একটা কথা বলতে চায় না সে। মিথিলা বুঝতে পারে অমিয় মিথিলাকে এড়িয়ে যায় এতে সে মর্মাহত হয়। অমিয় কখন যেন মিথিলার অন্তরের উর্বর জমিনে ভালবাসার বীজ বপণ করেছে সে তা বুঝতে পারেনি। যাকে একবারেই সহ্য করতে পারত না কি করে কখন সে অমিয় অলখে অবাধে জায়গা করে নিয়েছে মিথিলার ¯^প্নের পৃথিবীতে তা ভেবে মিথিলা অবাক হয় কিন্তু অমিয় তা বোঝেও না বোঝার ভান করে এটা তার মোটেও সহ্য হচ্ছেনা।


অমিয় ইউনিভাসিটির লণে বসে বন্ধু শাফিনের সাথে গল্প করছিল এরি মধ্যে মিথিলার বান্ধবী মৃদুলা এসে বলল, অমিয় ভাই, মিথিলা আপনাকে খুঁজছে। অমিয় আর শাফিন চাওয়াচাওয়ি করল তারপর শাফিন বলল, বড়লোকের মেয়ে খুঁজছে কেন? মৃদুলা বিরক্তি নিয়ে বলল, আপনাকে খুঁজছেনা, আপনি চুপ থাকেন।
-আমাকে খুঁজলেও লাভ হত না, অহংকারী মানুষ আমরা পছন্দ করিনা। যান, যেয়ে বলেন যাবে না; প্রয়োজন হলে নিজে এসে যেন কথা বলে। মৃদুলা ক্ষেপে গিয়ে বলল, আপনি খুব বেশী কথা বলেন. গায়ে পড়ে কথা বলা আপনার একটা বাজে অভ্যাস।
-আরে যান, যান, বহু অপমান করেছেন আমাদেরকে। দুজনের কথা কাটাকাটির মাঝখানে অমিয় বলল, তোরা থামতো। এসব এখন টেনে এনে লাভ কি। ঝামেলা বাড়াসনে। মৃদুলা, যেয়ে বলেন কিছু বলার থাকলে এখানে আসতে। মৃদুলা গজর গজর করতে করতে চলে গেল। শাফিন বলল, ও---হ্ম, ওনার কথা উনার কাছে যেয়ে শুনতে হবে। সখ কত! তুই যাবি না, দরকার হয় ও নিজেই আসবে। সব জায়গায় বড়লোকী।
-হয়েছে, হয়েছে, এবার থাম।
-একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস? মিথিলা ম্যাডাম কেমন বদলে যাচ্ছে। চালচলন, পোশাক আশাক, কথা বার্তা সবকিছু। আমার কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে। তোর প্রেমে পড়েছে নাকি? অমিয় উঠতে উঠতে বলল, কি জানি, যার ব্যাপার তাকে যেয়ে জিজ্ঞেস কর। চল্ ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। কিছুদূর এগুতেই মিথিলা আর মৃদুলার সাথে দেখা। শাফিন অমিয়কে ধাক্কা দিয়ে বলল, এই যে খুঁজছে তোকে। মৃদুলা বলল, অমিয় ভাই, ওনাকে একটু যেতে বলুন আপনার সাথে একটু কথা আছে। অমিয় মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ও থাকলে সমস্যা নেই। মৃদুলা কড়া গলায় বলল, আছে, উনার সামনে বলা যাবেনা। বাবারে বাবা, একবারে, আঠার মত লেগে থাকে আপনার পেছনে। শাফিন ক্ষেপে যেয়ে বলল, আপনার সমস্যা কি? বড় বেশী পটর পটর করে। অমিয় থামিয়ে দিয়ে বলল, চুপ কর, তুই যা, আমি আসছি। শাফিন যেতে যেতে বলল, ফাঁদে পড়িস না আবার। অমিয় বলল, বলুন কি বলবেন, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। মিথিলা আমতা আমতা করে বলল, আগামী কাল আমার জন্মদিন, আপনি আসবেন। ছোট খালা বলেছে আপনাকে দাওয়াত করতে।
-দুঃখিত, আমি যেতে পারবনা, আমার একটু কাজ আছে।
-নাহ্ আপনাকে আসতেই হবে।
-আমার কাজটা একটু জরুরী, ঐযে চাচা আছেন্,া তার বর্ণনা মত একটি ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, দেখি এটা এ চাচার ছেলে কিনা। এটুকু করাতো মানুষ হিসাবে আমাদের উচিৎ; কি বলেন?। একটা মাত্র ছেলে। গরীব মানুষ। মিথিলা অমিয়কে নিরবে মুগ্ধ চোখে অপলক দেখল । মৃদুলা বলল, কিচ্ছু হবেনা, রাতে অনুষ্ঠান। অবশ্যই আসবেন।
-কোন মতেই সম্ভব না, আমার অনেক কাজ, আসি। অমিয় পা বাড়াতেই মৃদুলা বলল, অমিয় ভাই আপনি কি মানুষের মন বোঝেন না? আপনি না এত ভাল মানুষ তবে মানুষকে এত কষ্ট দেন কি করে। মিথিলা ম্লান মুখে অমিয়-এর দিকে তাকিয়ে বলল, প্লিজ আসবেন।
-আমি কাউকে কষ্ট দেই না, কেউ ইচ্ছে করে কষ্ট পেলে আমার কিচ্ছু করার নেই। আসি।
ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরতেই রাস্তায় শিথিলার ছোট খালার সঙ্গে দেখা। অমিয় ভাবল পাশ কেটে যাবে কিন্তু তা আর হলনা কিছুদূর থাকতেই জোর গলায় ডাকল। অমিয় কাছে এসে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল। খালা বলল, কি ব্যাপার, আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছিলে? অমিয় মৃদু হেসে বলল, বাসায় আসেন।
-নাহ, একটু হাঁটাহাঁটি করছি। শরীরের ওজন বেড়ে গেছে। তুমি আগামীকাল আমার বাসায় এস তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।
-নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। আন্টি, মা আপনাকে বাসায় যেতে বলেছে।
-যাব, আমিওতো ব্যস্ত থাকি। অমিয়, তোমাকে একটা কথা বলি; কিছু মনে করনা। মিথিলা আমার বোনের মেয়ে হলেও আমার বন্ধুর মত। ও সবকিছু শেয়ার করে আমার সাথে। তুমিতো জান আমি প্রগতিশীল মানুষ, বাস্তবতাকে সহজভাবে দেখার চেষ্টা করি।
-জী জানি। এইজন্যই আপনাকে আমার এত পছন্দ।
-মিথিলাকে তুমি সহজভাবে নিতে পারছনা তাইনা?
-নাহ্,সেটা না। ওর এখন অনেক পরিবর্তন। আগের মত নেই সে।
-হে--,তুমি কি জান এ পরিবর্তন কার কারণে?
-জী নাহ।
-তোমার জন্য। আমার মনে হয় তোমাকে ও খুব পছন্দ করে।
-আমিতো জানতাম ও আমাকে মোটেও পছন্দ করেনা। ছোট খালা হেসে বলল, আমিওতো তাই জানতাম। ও যে তোমার কথা বলত তা আমি জানতাম না। মনে করেছি অন্য কারুর কথা। শুন, কাল বিকেলে আমার বাসায় আসবে।
-দেখি। খালা যেতে যেতে বলল, নাহ্, অবশ্যই আসবে। না হয় রাগ করব।

পরদিন অমিয় ছোট খালার দরজায় নক করতেই মিথিলা দরজা খুলল। অমিয়-এর চোখে পড়তেই অমিয় বলল, আন্টি আছে?
-আছে। আসুন। ভেতরে ঢুকতেই ছোট খালার সাথে দেখা, সালাম দিয়ে অমিয় বসল। ছোট খালা বলল, আমি খুব খুশি হয়েছি তুমি এসেছ। মিথিলা বলছিল তুমি আসবেনা। কিরে, আমার কথা ঠিক? মিথিলা কোন কথা না বলে ম্লান চোখে অমিয়ের চোখের দিকে তাকাল। এই প্রথম মিথিলার আকুতি ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে অমিয়ের কেমন যেন মায়া হল। ছোটখালা বলল, দেখছ মিথিলা কেমন মলিন হয়ে গেছে। বস্, অমিয়ের সাথে কথা বল। ছোট খালা চলে গেল। অমিয় চুপচাপ বসে রইল। মিথিলা বলল, আপনি এখনও আমাকে ক্ষমা করেননি?
-করেছি।
-আমারতো তা মনে হয়না। নইলে আমাকে এমন এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?
-এড়িয়ে গেলাম কখন? আচ্ছা আন্টি আমাকে আসতে বলেছেন কেন?
-ছোট খালা জানে। আচ্ছা আমি কি খুব খারাপ?
-এসব কথা কেন? আমি কি তা বলেছি নাকি? তবে আপনার চিন্তা আর আমার চিন্তা আলাদা।
-এখন থেকে আমার আর আপনার চিন্তা এক হয়ে যাবে। আপনি যদি আমাকে অবহেলা করেন তবে আমি মরে যাব।
-মিথিলা, আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। আপনি যে প্রাচূর্য্যরে মধ্যে বড় হয়েছেন। আমার সঙ্গে অপনাকে মানাবেনা।
-সেটা আমি বুঝব।
-অমিয় দাঁড়াতে দঁড়াতে বলল, আন্টিকে ডাকেন, আমার একটু তাড়া আছে। উঠতে হবে।
-ছোট খালা আপনাকে খাওয়াবে বলে অনেক অয়োজন করেছে, এখন মেটেও যাওয়া যাবেনা।
-না, না আমার খেয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভব না। এরি মধ্যে ছোট খালা ্এসে বলল, বস, না খেয়ে কোন মতেই যেতে পারবেনা।
-আমার কাজ আছে। অমিয় কোনমতেই বের হতে পারলনা।

মিথিলার অকৃত্রিম গভীর ভালবাসা ব্যাক্তিত্ববান অমিয়কে এক সময় জয় করে নিল। ভালবাসার বিমল বিশুদ্ধ স্পর্সে শত্রæতা হয়ে গেল ¯^র্গীয় অনুভূতি। এ কথা ভেবে মিথিলা নিজেই অবাক হয় কেমন করে এমন হল। অমিয় লেখা পড়া শেষ করে ভাল একটি চাকরিও পেয়ে গেল। ছোট খালা মিথিলার বাবার সাথে অমিয় আর মিথিলার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল সে। তার কথা হল কি আছে ঐ অধ্যাপকের; আমার মেয়েকে পুত্র বধু করার। ভাল একটা শাড়ীওতো কিনে দেয়ার সাধ্যে নাই। এ হয়না। আমার মেয়েকে গাড়ী বাড়ীওয়ালার কাছে বিয়ে দেব। সুশিক্ষিতা ছোট খালা বলল, ওদের যা আছে তা মূল্য দেয়ার মানুষ নাই। অর্থবিত্তকে সব মনে করেন বলেই মানুষ উপেক্ষিত হয়। মিথিলা যাকে পছন্দ করে তার সাথে বিয়ে দেয়াই মঙ্গল। অমিয়ের মধ্যে যা আছে তার মূল্য দেবার মূল্যবোধ আপনার নেই। মিথিলার বাবা রেগে যেয়ে বলল, তোমার যত্তসব বেকডেটেড কথা। আমি আমার মেয়ের ভাল চাই। নীতি কথা দিয়ে পেট ভরেনা। এমন কত দেখেছি।
-দেখার মত করে দেখেননিতো, তাই চিনতে পারেননি। যাক আপনার মেয়েটা অবশেষে পথ পরিবর্তন করেছে। শুভ লক্ষণ। তার ভাল চাইলে অমিয়ের সাথেই মিথিলার বিয়ে দেন। শেষ অবধি ভালবাসার জয় হল। দুই পরিবারের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এক সময় বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল।

মা বিয়ের কার্ড দেখছিল। এরি মধ্যে মিথিলা বাহির থেকে ফিরে ঘরে ঢোকে দরজা বন্ধ করে দিল। মা কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিয়ে বের হওয়ার জন্য বলে গেলেন কিন্তু বের হল না। ছোট খালা এসে মিথিলার খোঁজ নিল। মা বলল, বাহির থেকে এসে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। ছোট খালা বলল, ঘুমাচ্ছে নাকি?
-কি জানি, কিছুই জানিনা। এমনতো করে না কখনও, একটু দেখতো। ছোট খালার সঙ্গে মিথিলার বন্ধুর মত সম্পর্ক, সব কিছুই শেয়ার করে। ছোট খালা দরজা ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগল। একটু পর মিথিলা দরজা খোলে দিয়ে বিছানায় আবার উপড় হয়ে শূয়ে পড়ল। বিষয়টি ছোট খালার ভাল লাগল না। ছোট খালাকে দেখলে লাফিয়ে উঠে কিন্তু আজ এমন করল কেন? ছোট খালা মিথিলাকে টেনে তুলে বসাল। মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে, কাঁদছিস নাকি? কি হয়েছে? খালা বার বার প্রশ্ন করে কি হয়েছে জানতে চেষ্টা করছে। মিথিলা বলল, কি আর হবে, মনটা ভাল নেই।
কেন ভাল নেই? কি হয়েছে? এমন করিস না, বল আমাকে, কয়দিন পর বিয়ে, এখন তোর খুশির সময়। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমি আছি না, নো চিন্তা ডো ফূর্তি। কি--- তোর বাবা কি আবার সমস্যা করছে নাকি? করলে আমাকে বল, দেখবি কেমন বকা দিই। আরে অমিয় কত মার্জিত, শি¶িত মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন সৎ ছেলে, এমন ছেলে কয়টা পাওয়া যায়। মিথিলা চোখ মুছতে মুছতে বলল, বাবা কিছু বলেনি, অমিয় বলেছে এ বিয়ে হবেনা। খালা অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, হোয়াট? কেন? এরি মধ্যে মা এসে পাশে বসে কি হয়েছে জানতে চাইল। ছোট খালা এটা সেটা বলে কথা ঘুরিয়ে বলল, আপা, তোমার হাতের আলুর চপ খেতে ইচ্ছে করছে,একটু কষ্ট করে বানাও না। মা বলল, মিথিলার কি হয়েছে, কিরে মা চোখ মুখ এমন ফুলে আছে কেন, কেঁদেছিস নাকি? এমন করে দরজা বন্ধ করে আছিস কেন? মন খারাপ কেন? খালা মিথিলার মাকে এক রকম জোর করেই এখান থেকে সরিয়ে দিল।

মিথিলার মা-বাবা কেউই মিথিলার কষ্ট সইতে পারে না। মেয়ের কিছু হলেই দুজন অস্থির হয়ে উঠে। একমাত্র সন্তান সে। ছোট খালা চাইলেন, ওদেরকে না জানিয়ে এর একটা সমাধান করতে। বাবা একবারেই রাজী ছিলনা। অনেক বিত্ত বৈভব ওদের, অমিয়দের এত কিছু নেই কিন্তু শি¶িত খান্দানী পরিবার। অমিয়-এর বাবা সরকারী কলেজের অধ্যাপক। ঢাকায় একটি তিন তলা বাড়ী আছে। ওরা দুই ভাই বোন। খুব ছিমছাম সুন্দর আদর্শ পরিবার। এই পরিবারে প্রাচূর্য্য নেই কিন্তু সুখ আছে। সুখের জন্য আসলে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়না। মানুষ অনেক কিছুর মাঝে সুখ খুঁজতে গিয়ে অন্যের জন্য দুঃখ তৈরী করে। মানুষ বোঝেনা এ সুখের মাঝেও দুঃখ লুকিয়ে থাকে। অমিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে সরকারী অফিসে জুনিয়র অফিসার পদে আছেন। চারিদিকে ভেজাল, দূনীতি হানাহানি তাকে ভাবায়। যারা ভাবার কথা সবার আগে, তারা যেন দেখেও দেখেনা। যে যেমন সুযোগ পাচ্ছে লুফে নিচ্ছে। এতো চলতে দেয়া যায়না। অমিয় কয়েকজনকে নিয়ে একটি সংগঠন করেছে সততার প¶ে লড়াই করার জন্য।
অফিসে থাকতেই ছোট খালার ফোন এসেছে তিন চার বার। জানতে চাইছে কি সমস্যা? ছোট খালাকে সোজাসুজি বলে দিয়েছে এ বিয়ে হবেনা।
অমিয় অফিস থেকে ফিরেই ফুটপাত দিয়ে হাটতে লাগলো। ফুটপাতের ঝুপড়ি ঘরের পাশ ঘেঁষে হাটতে হাটতে ভাবল, ওরাওতো আমাদের মত মানুষ, কত না কষ্ট করে। বেঁচে আছে শুধু। অথচ কারু কারু প্রাচূর্য্যরে অভাব নেই। কেন এমন? অমিয় মাঝে মাঝে ওদের সাথে কথা বলে । আজও ঝুপড়ি ঘরের পাশে এসে তাদের সাথে কথা বলল। এরি মধ্যে আবার ফোন বাজল ছোট খালার। অমিয় সালাম দিয়ে ফোন রিসিভ করল। ছোট খালা খুব রেগে রেগে বলল, অমিয় তোমাকে দেখেই আমাদের মেয়েটাকে দিতে রাজী হয়েছি, আমার জন্যই এ বিয়েটা ঠিক হয়েছিল, তুমি আমার সম্মানকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে চাইছ, কি এমন হল যে তুমি মিথিলাকে কষ্ট দিচ্ছ। অমিয় বলল, ছোট খালা, রাস্তায় কথা বলতে চাই না। পরে কথা বলব। ছোট খালা বলল, আমি তোমাদের বাসায় আসছি, কোথাও যাবেনা ।

অমিয় বাসায় না আসতেই ছোট খালা বাসায় এসে হাজির। ছোট খালাকে দেখে সবাই খুশি হল কিন্তু ছোট খালা খুশি হল না। খালাকে এমন বিষণœ দেখে অমিয়-এর মা জিজ্ঞেষ করল কি আপা, মনটা ভাল নেই? ছোট খালা গম্ভীর ¯^রে বলল, ভাল থাকতে দিলেন কোথায় আপনারা। ছোট খালা সব খুলে বলল, এ শোনে বাবা সহ সবাই হাসল, মা বলল, ও মনে হয় তামাশা করছে।
- মোটেও তামাশা নয়। মিথিলার সাথে এ নিয়ে ঝগড়া হয়েছে কিন্তু কি কারণ তা বলেনি শুধু বলেছে পরে বলবে। কয়দিন ধরে ফোনও ধরছিলনা। রাস্তায় দেখা। মেয়েটা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এরি মধ্যে অমিয় এসে সালাম দিয়ে বসল। বাবা বলল, কিরে, কি শুনছি? এ বিয়ে নাকি হবেনা বলেছিস? কে তোকে এ সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। মা বলল, ঠাট্রা করছিস নাকি?
- না ঠিকই বলেছি। ছোট খালা রেগে বলল, এটা খেলা নাকি। কি কারণ সেটা আগে বল? তোমাকে আমি সবার চেয়ে আলাদা ভেবেছিলাম।
- সবার চেয়ে আলাদা বলেই এটা করতে আমি বাধ্য হয়েছি।
- তুমি মেয়েটাকে মারতে চাও? ওযে তোমাকে কত ভালবাসে তা তুমি জান? আমাকে অসম্মান করতে চাও? কি এমন হয়েছে যে তুমি এত বড় সিদ্ধান্ত নিলে? বাবা মা দুজনেই বলল, ওর কথায় হবে নাকি, আপনি ভাববেন না। এ বিয়ে হবে।
- আমি বিয়ে করব, আমার কথায়ই হবে। বাবা-মা দুজনে রেগে বলল, ছেলেকে অনেক কথা শোনাল। এমন ভাবে তুই বলতে পারলি? তবে প্রেম করলি কেন?
- হয়ে গেছে। ছোট বোন সারথি বলল, কি হয়েছে বল। এ কি শুনছি।
- মিথিলার বাবা দূর্নীতিবাজ যাদেরকে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি। আমরা এসব ঘুষ দূর্নীতি বন্ধ করতে একটি সংগঠন করেছি। আমরা এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। সবাই হা করে অমিয়-এর দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর ছোটখালা বলল, কি করেছে ?
- উনি জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়। এসব ভদ্র বেশী দূর্নীতিবাজ লোকদের জন্য কেউ কেউ ফুটপাতে দিন কাটায় আর কেউ কেউ ওদের অধিকার কেড়ে প্রাচূর্য গড়ে, এসব চলতে দেয়া যায়না। বাবা নরম গলায় বলল, তোরা কজনে আর কি করতে পারবি? তাছাড়া তোরা কিভাবে প্রমাণ করবি যে ওরা ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ। প্রমাণ ছাড়া কিছুই করতে পারবি না।
- প্রমাণ নিয়ে এগুবো।
- কিন্তু মেয়েটার দোষ কি? ও কাঁদবে কেন?
- ও দূনীতিবাজ পিতার পক্ষে। তাছাড়া ও অনেক প্রাচূর্য্যরে মধ্যে বড় হয়েছে, আমরা এতকিছু কোথা থেকে দেব। ছোট খালা বলল, ওর বাবার অপরাধের শাস্তিতো তুমি ওকে দিতে পারনা অমিয়। তাছাড়া তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে ওর বাবা দূনীতিবাজ?
- তার প্রমাণ কয়দিন পরেই পাবেন।
- এতে মিথিলার কি দোষ?
- দোষ হল, ওরাও এ প্রাচুয্যের উৎস জেনেও প্রতিবাদ করেনি।
বাবা বলল, আমিও মন থেকে ওদেরকে ঘৃণা করি ওদের লুটপাটের জন্যই, কেউ খেয়ে মরে কেউ না খেয়ে মরে।
অমিয় বলল, আমিও মিথিলাকে ভালবাসি কিন্তু ও ওসবকে সমর্থন করে, বলে অনেকেইতো করে, সরকারী পয়সা খাবেইতো। খালা বলল, আমি জানি তুমি নীতিবান এজন্য তোমাকে আমি খুব পছন্দ করি। কিন্তু বাবা, সবাইতো এসব করছে।
- সবাই করছে তা ঠিক নয়। বলুন অনেকেই করছে।
Ñ তুমি কি করতে পারবে?
- চেষ্টাতো করতে পারব। মিথিলা প্রাচুর্য্যরে মধ্যে বড় হয়েছে। আমি চুরি করে তাকে তা দিতে পারব না। আমাকে মাফ করবেন। ও কয়দিন পর বলবে,তুমি ঘর জামাই হও। তোমার বেতনে সংসার চলছেনা। আমি তা কখনও মানতে পারবনা। সারথি বলল, ভাইয়া, মিথিলা আপা সব জেনেইতো তোকে ভালবাসে। সব ঠিক হওয়ার পর এখন এসব বলে লাভ নেই।
-লাভ ক্ষতি জানিনা, যা করা উচিৎ আমি তা’ই করছি।


ছোট খালা ফিরে কারণ বললে বাবা রেগে যেয়ে অমিয়কে নানা উপহাস করল। দুই পয়সার মাষ্টারের ছেলে তার কত বাহানা। শুধু আমার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আমি রাজী হয়েছি। মেয়েকে বলল, ছোটলোকটাকে ভুলে যা, নীতিবান কত দেখলাম, আমিতো চাইনি বিয়ে দিতে। তোকে অনেক বড় ঘরে বিয়ে দেব। ছোট খালা বলল, এত লাফালাফি করবেন না। তাইতো বলি এত কিছু কিভাবে সম্ভব। মিথিলার বাবা আত্ম পক্ষ সমর্থন করল। কোন মতেই নিজেকে দূর্নীতিবাজ বলতে রাজী নয়। মেয়ের বিয়ে এমন ঘরে না হলেই ভাল এই তার মন্তব্য। বিয়ে না হতেই আমার সাথে শত্রæতা শুরু করেছে; বিয়ের পরে না জানি কি করে। মিথিলার মা বলল, মেয়ের দিকটা বিবেচনা করতে হবে। ওর সুখই আমাদের সুখ। বাবা জোর গলায় বলল, সেজন্যইতো এমন একটা অভাবী ছোটলোকের ঘরে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছি। কি সাহস, আমাকে দূর্নীতিবাজ বলে। মা যেতে যেতে বলল, আপনি কি, সেটা আপনি আপনার নিজকে প্রশ্ন করুন।

ছোট খালা মিমাংসা করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। দুই পরিবারের মধ্যে চলল আলাপ আলোচনা কিন্তু কিছুই হচ্ছেনা। তাই মিথিলাকে নিয়ে অমিয়-এর অফিসে হাজির। অমিয় খালাকে সালাম দিয়ে বসতে বলল, মিথিলা রাগে দুখে ¤্রয়িমান। অমিয় আড় চোখে একবার মিথিলাকে দেখল তারপর পাশে বন্ধু শুভকে বলল, কি তোর কাজ কতদূর?
Ñ প্রায় শেষ। খালা বলল, তোমার সাথে কথা ছিল।
- জী বলুন।
-শুধু তোমার সাথে বলতে চাই।
-সমস্যা নাই, ও সব জানে। মিথিলা বলল, তুমি একটা প্রতারক। তুমি আমার বাবার সাথে শত্রæতা শুরু করেছ। আসলে তুমি আমাকে মোটেও ভালবাস না। সরকারী টাকা খায়না এ দুনিয়ায় কয়টা মানুষ আছে? ঘুষ না খেলে পেটে ভাত জুটবেনা। তাছাড়া প্রমাণ কি আমার বাবা দূর্নীতি করছে?
- প্রমাণ আছে। অপেক্ষা কর।
-আমি মরে গিয়ে প্রমাণ করব আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। হু হু করে কাঁদতে লাগল মিথিলা। খালা বলল, পাগলামী কর না অমিয়। আমাদের একটা সম্মান আছে।
-আমাকে ভালবাসলে আমার মত হতে হবে। তোমার বাবা কি ধরণের অপরাধ করে তা কয়দিন পরই বুঝতে পারবে। আর আমার বন্ধু এসবের সাক্ষী। বন্ধু বলল, আমরা একটা সংগঠন করেছি সব ধরণের দূর্নীতির প্রতিবাদ করার জন্য এবং জনগণকে সচেতন করার জন্য। মিথিলা বলল, আমার বাবা যদি করেও থাকে এতে আমার কি দোষ?
- কারণ তুমি এসব সাদরে গ্রহণ করছ এবং সানন্দে ভোগ করছ। তুমি জানতে তোমার বাবা কত টাকা বেতন পান। কেমন করে এতসব হল তা কিন্তু কখনও জানতে চাওনি এতসব হচ্ছে কি করে। অমিয় বলল, এসব মার্জিত চোরদেরকে সামাজিক ভাবে নিষিদ্ধ করা উচিৎ, ঘৃণা করা উচিৎ। ওদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা উচিৎ।

বাবা আমিয়-এর জন্য গর্ব বোধ করে, এই প্রথম এমন একটি প্রতিবাদের কৌশল সে অবলম্বন করেছে কিন্তু এখন কি হবে সবারই ভাবনা এ বিষয় নিয়ে। ছোট খালাও অমিয়-এর এ প্রতিবাদের প্রশংসা করছে। মনে মনে ভাবে ঘরে ঘরে যদি এমনই মানুষের জন্ম হত। সারথি ও মা অমিয়কে বোঝাতে চেষ্টা করল কিন্তু সে নিরব রইল। বাবা আবার একমাত্র মেয়ের কষ্ট সইতে পারে না। যতই আস্ফালন করুক না কেন, বুঝতে পেরেছে মেয়ের প্রেম বড় শক্ত। বুঝতে পারল, উনি যা করছে তা ঘৃণা করার মানুষ এখনও এ পৃথিবীতে আছে, এ সবকিছুর একমাত্র উত্তরাধিকারী এ মেয়ে জেনেও ছেলেটি তা ত্যাগ করতে এতটুকু দ্বিধা করছে না।

পরদিন অফিসে যেয়েই মিথিলার বাবা আকাশ থেকে পড়ল। দূর্নীতির অভিযোগে সে সাসপেন্ড এবং তার নামে মামলা হয়েছে। অমিয়-এর বন্ধু শুভ এসব ফাঁস করেছে কারণ সেও কোন কাজে এসে হয়রাণী হয়েছিল।
এখন মিথিলার পরিবারে সংকট। মিথিলা বুঝতে পারল, সুখের মাঝেও দুঃখ লুকিয়ে থাকে। আসলে অমিয়ই ঠিক।

মিথিলা ছুটে গেল অমিয়-এর অফিসে। অমিয় বলল, বস, কেমন আছ? কেঁদে ফেলল মিথিলা, চোখ মুছতে মুছতে বলল, তুমিই ঠিক অমিয়, আমাকে কষ্ট দিওনা। প্লিজ। অমিয় স্মিত হেসে বলল, তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য এসব করিনি, করেছি শুভ পরিবর্তনের জন্য। সকলের চেতনায় শুদ্ধতার জন্ম হউক আর সে শুদ্ধ আলো ছড়িয়ে পড়–ক চারিদিকে। আলোকিত হউক সবার আঁধারে ঢাকা ¯^ার্থপর অন্তর। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। মিথিলা বলল, এখন থেকে আমিও তোমাদের সঙ্গে থাকব।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ আপনার লেখা পড়লাম। সুন্দর গল্প ।শুভেচ্ছা-----------
খুশি করার জন্য প্রশংসা ক্রছেন কি না জানিনা তবে গঠনমূলক সমালোচনা আর খুশি হব। ধন্যবাদ।
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক বেশ ভালো লাগলো পড়ে । ভোট রইলো । রইলো শুভেচ্ছাও ।
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য।
তাপস চট্টোপাধ্যায় khub bhalo laglo. amar pataye amantran.
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য।
হুমায়ূন কবির ভাল লাগল ভোট রইল। আমার গল্পে আমন্ত্রন।
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি মিথিলা ছুটে গেল অমিয়-এর অফিসে। অমিয় বলল, বস, কেমন আছ? কেঁদে ফেলল মিথিলা, চোখ মুছতে মুছতে বলল, তুমিই ঠিক অমিয়, আমাকে কষ্ট দিওনা। প্লিজ। অমিয় স্মিত হেসে বলল, তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য এসব করিনি, করেছি শুভ পরিবর্তনের জন্য। ......./// শিক্ষনীয় গল্প তবে ব্যাখার প্রয়োজনে গল্পের পরিসর বেরেছে যার কোনো দরকার ছিলোনা। ভালো লেগেছে......ধন্যবাদ হস্নাহেনাকে.........
ম্নতব্য- এর জন্য ধন্যবাদ। ব্যাখ্যা গল্পের অলংকার । আমি মনে করি ব্যাখ্যা গল্পকে সমৃদ্ধ করে। শুভ কামনা রইল।
শামীম খান সুন্দর গল্প । ভোট রইল ।
ফয়সল সৈয়দ আপনার গল্পের থিম খুব ভাল লেগেছে ।
Fahmida Bari Bipu আপনার লেখা পড়লাম। ভোট রইল।
এমএআর শায়েল লেখাগুলো গল্প কবিতায় পাঠানোর সময় ইউনিকোডে লিখে পাঠাবেন। তবে আপলোড করার সময় বানান ভাঙবে না। কিছু জায়গা ভেঙ্গে গেছে। কিছু বানান ভুল হয়েছে। হয়তো এটা আপনার দোষ নয়। সব মিলিয়ে ভাল লাগল, ভোটও রইল।
Thank you so much for your advice. I can't write in Bengali. I don't know what is problem. Which words are wrong if you mentioned then I would be benefited.
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা রপাফ্র জন্য।

০৫ এপ্রিল - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪