আকাশের অবস্থা আইজ ভালা মনে অয় না , মেঘ করছে। যেকোন সময় বৃষ্টি আইতে পারে। এই সময় আবার অমিত টা কই গেল। অবেলায় কহনো ওরে কাছে পাওন যাইবোনা। এই পুলাডারে নিয়া যে আমি কি করি? সময় নাই আসময় না খালি বিলের কাছারে বইয়া থাকবো। আমিই বা আর কত দিন বাচুম, কত দিন ওরে সামলাইয়া রাখুম?এহন আর পারি না। সলিমরেই কি কমু ও তো কাম লইয়াই থাহে। আর বউডা যে কি করে বুঝিনা বাপু, আমারাও তো সংসার চালাইছি। ঘরের কাম কাইজ কইরা আবার বাইরের হগল দিক সামলাইছি।এহন তো আর পারিনা। কবির ওই ছেরা কই গেলি? দেখনা অমিতটা কই? বিছানায় শুয়ে শুয়ে এভাবেই প্রলাপ বকছিলো শেফালী খাতুন।আশিউর্ধ বয়সে শরীরের জোর কমলেও মুখের জোর এখনো আগের মতই। প্রায় ছয় বছর হলো বেহেশতবাশী স্বামীকে হারিয়ে একাকী জীবন পার করছে। স্বামী হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পেরে পরের মাসেই ষ্ট্রোক করে। সেই থেকে শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে গেছে। তারপর থেকেই বিছানায় কাটিয়ে দিল ছয় বছর।
দুই
গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে শেফালীর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত স্বভাবের ছিলো। বাবার অভাবের সংসার থাকায় খুব বেশি পড়াশুনা করা তার ভাগ্যে জুটেনি। তাই কিশোরী বয়সেই পাশের গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেয় তার বাবা মা। শুরু হয় শেফালীর নতুন জীবন। নববধূ হয়ে শ্বশুরবাড়ী এসেও প্রথম প্রথম তার দুরন্তপনা আগের মতই ছিলো। তারপর দিন যেতেই সংসারের কাজ আর দায় দ্বায়িত্ব সামলাতে গিয়ে নিজের অজান্তেই বদলে যায় শেফালী। এভাবেই দুই বছরের মাথায় শেফালীর কোল আলোকিত করে শাহীন। সংসারের দায় দ্বায়িত্বের সাথে এবার নতুন দ্বায়িত্ব যোগ হল। শাহীনের দেখাশুনা করা, সময় মত খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো। এর পরের বছরেই ঘরে এলো আর একজন নতুন মুখ সলিম। শেফালীর দ্বায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো। দিনের পর দিন সে এতো ব্যস্ত হয়ে গেল নিজের শরীরে প্রতি যত্ন নেওয়াই ভুলে গেল। তবুও সংসারের দ্বায়িত্বে কোন অবহেলা করেনি কখনো। একাই সংসারের সমস্ত কাজ শেষ করে স্বামী, শ্বশুরবাড়ীর সকলের মন যোগিয়ে চলত।
তিন
নানা চড়াই-উতরাই এর মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে শেফালীর সংসার। এরপর একদিন তার বড় ছেলে শাহীনকে বিয়ে করালো। বছর ঘুরতেই শেফালী দাদী হলো। কিন্তু তার দুঃখের দিন শেষ হলো না । অমিতকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো আর বঊকে হারিয়ে শাহীন দেশান্তরী হলো। এবার এক হাতে দুধের শিশু অমিত কে লালন পালন করে অন্য হাতে সংসার সামলে নিলো। তারপর আবার কিছু দিন পর সংসারে সুখের দিন ফিরে এলো। ছোট ছেলে সলিমকে বিয়ে করালো। সংসারে ছন্দ ফিরে এলো, নতুন বউ সাংসারিক কাজকর্ম গোছাত আর শেফালী অমিতকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ঘর আলো করে কবির এলো। বেশ কিছু দিন গেতে না গেতেই শেফালীর জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। জীবন যুদ্ধের সঙ্গী, ভালোবাসার একমাত্র মানুষকে হারালো। প্রানের স্বামীকে হারানোর বেদনা শেফালীর জন্য অসহনীয় হতে লাগলো। তাই মাস ঘুরতেই শেফালী বিছানায় পড়লো। শুরু হলো তার জীবনে নতুন অধ্যায়। একদিকে স্বামী হারানোর বেদনা অন্যদিকে সংসারের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকা। ধীরে ধীরে সলিমের সংসার বাড়তে থাকে , খরচ বাড়তে থাকে। তাই সলিম ও তার বউ মিলে একদিন সিদ্ধান্ত নেয় তারা এই বৃদ্ধা শেফালীর আর অমিতের বোঝা নিতে পারবে না। শেফালীর স্বামীর রেখে যাওয়া সামান্য কিছু জমিতে তার ছোট ছেলে সলিম একাই হাল চাষ করে , তার থেকে কিছু শেফালীকে দেয়। দিনে তিনবেলা সময় মতো খাবার দেওয়ার সময়ও তাদের নেই।যেই শেফালী জীবনের সমস্তটা দিয়ে সংসারের সবার জন্য এতো কিছু করলো , তবে আজ সংসারের এই অবহেলা কেন? কেন শেফালীর এই পরিণতি ?? কেনইবা শেফালী...???
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
কাহিনী জমে উঠতে শুরু করছে আর সে সময়ই সমাপ্তের প্রান্তে। যা হোক ভালো লাগলো। চালিয়ে যান, সামনে আরও ভালো হবে এ আশায় রইলাম। ভোট দিলাম। শুভকামনা ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।