বন্ধুর ভালবাসার কষ্ট

কষ্ট (জুন ২০১১)

Sujon Das
  • ১৫
  • 0
  • ১৩
২০০৪ সালের ঘটনা, আমার এক বন্ধু রাজু, সে ছিল খুবই ভাল ছাত্র তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সে একটি মেয়েকে ভালবাসত, মেয়েটির নাম নীলা। সে ছিল প্রভাবশালী এবং বড়লোক ঘরের মেয়ে। তারা দুজনে একসঙ্গে একি স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ত। রাজু নীলাকে ভালবাসত টিকি, কিন্তু কোনদিন সে মুখ খুলে নীলাকে সে কথা বলতে পারেনি। তাই সে একদিন একটি চিঠির মাধ্যমে নীলাকে তার ভালবাসার কথা জানানোর জন্য একটি চিঠি লিখল। চিঠির ভাষা ছিল খুবই মিষ্টি। রাজু চিঠিটি অন্য একজনের মাধ্যমে নীলাকে দিল। নীলা চিঠিটি পড়ে কোন কিছু বলল না। তাদের এক শিক্ষক ছিল খুবই রাগী, তিনি তাদের ইংরেজি ক্লাস নিতেন। যখন তিনি ক্লাসে এলেন তখন নীলা চিঠিটি ঐ স্যারের কাছে দিল, স্যার চিঠিটি পড়ে রাজুকে ডেকে এনে রুমের বাহিরে নিয়ে গেল এবং বেত এনে একনাগারে ১০০টি বেত মারলেন। স্যার রাজুকে মেরে নিজে হাপিঁয়ে ঊঠলেন। রাজু মার খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্যারের পায়ে জড়িয়ে ধরল, তবু স্যার তাকে ক্ষমা করল না। অন্যদিকে নীলা তা দাড়িয়ে দেখতে লাগল। স্যার রাজুকে মেরে চলে যাওয়ার পর রাজুর অন্যান্য বন্ধুরা নীলা কে বিভিন্ন ভাবে বকাবকি করতে লাগল এবং রাজু ক্লাসে ভাল ছাত্র বলে ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র মিলে নীলাকে অনেক গালিগালাজ করল। নীলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে স্কুল থেকে চলে গেল। আর এদিকে রাজু প্রায় ১২ দিন জ্বরে কষ্ট করল। স্যার রাজুকে ভাল ছাত্র বিধায় দেখতে গেলেন এবং রাজ কে আদর করে আসলেন। এদিকে নীলা তার ভুল বুঝতে পেরে রাজুকে ভালবাসতে শুরু করল। কিন্তু রাজু ১৫ দিন স্কুলে আসতে পারলনা আর রাজু স্কুলে না আসায় নীলাকে ক্লাসে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে হয় এবং সে মনে মনে কষ্ট পেতে শুরু করল। পরে রাজু যেদিন স্কুলে আসল সেদিন নীলা তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে ক্ষমা চাইল। রাজুকে তার ভালবাসার কথা জানাল। তারপর থেকে তারা দুজনে একে অপরকে ভালবাসতে শুরু করল এবং তাদের ভালবাসার সাক্ষী স্বরূপ স্কুলের এক কোণায় অবস্থিত একটি পলাশ ফুল গাছের কোটরে নেইম প্লেইটে বাধাঁইকৃত তাদের দুজনের নাম লিখে রাখল। এভাবে তাদের দুজনের দিন চলতে লাগল। তারা দুজনেই ভাল মার্ক পেয়ে এস.এস.সি পাশ করে ষ্কুল থেকে বেড়িয়ে একি কলেজে ভর্তি হয়ে গেল। তাদের দিন আনন্দেই চলতে লাগল, তারা দুজনেই ২০০৭ সালে এইচ.এস.সি পাশ করল। এইচ.এস.সি পাশ করে তারা অনার্সে ভর্তি হল। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে নীলা কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। নীলার মোবাইলে কর ঢুকছেনা বন্ধ দেখাচ্ছে। নীলা অনেক দিন কলেজে আসছেনা দেখে রাজু তার বাসায় খোঁজ নিতে গেল। রাজু খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারল নীলার লন্ডন প্রবাসী এক খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেছে প্রায় ১২ দিন আগে। আগামী মাসে তারা ৩ তারিখে তারা লন্ডন চলে যাচ্ছে। এই কথা শুনে রাজুর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা হল। সে যেন এই কথা বিশ্বাসই করতে পারছেনা। কারণ নীলার সাথে তার এতদিনের সম্পর্ক অথচ নীলা তাকে এভাবে ঠকালো একটিবার ফোন করেও তার কথা মনে করতে পারেনি এভাবে নীলা তাকে ভুলে গেল। নীলা কী নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করেছে না চাপের মুখে করেছে সে কথাও রাজু জানতে পারল না। তারপর থেকে রাজু নেশা করতে শুরু করল। একদিন আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড যাব বলে মনস্থির করলে আমার এক বন্ধুর পরিচয়ে রাজুর সাথে আমার পরিচয় ঘটে। আমরা দুজনে একি জেলায় একি থানায় বাস করি এই বিধায় আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রাজু বয়সে আমার চেয়ে ৩/৪ বছরের বড় হবে, তারপরও আমরা একেবারে ফ্রি হয়ে যাই। একদিন কথা বলতে বলতে রাজু আর আমার মধ্যে প্রেমের কথা উঠে আসে। সে প্রথমে বরতে চায়নি, কিন্তু আমার পীড়াপীড়িতে সে বরতে বাধ্য হয়। তারপর আমি তার সেই বিষাদময় ঘটনা জানতে পারি। আরও জানতে পারি যে তারা দুজনে এক অপরকে ছেড়ে যাবেনা বলে শপথ বাক্য পাঠ করেছিল। এখনও রাজু সেই শিমুল গাছের তলায় যায় এবং কিছুক্ষণ নীরব মনে বসে থেকে চলে আসে। আমাকে রাজু সেই শিমুল গাছের তলায় নিয়ে গিয়েছিল। দেখে এলাম তাদের সেই ভালবাসার সাক্ষীতে কালের বিপর্যয়ের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে শুনতে পারলাম নীলা তার স্বামীকে নিয়ে দেশে এসেছে মা,বাবার কাছে। তাই গত ১৭-৯-২০১০ তারিখে রাজু আমাকে নিয়ে গেল নীলার সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম নীলা এখন এক কন্যা সন্তানের মা এবং তার স্বামী লন্ডনে এক দুর্ঘটনায় একটি পা পঙ্গু হয়ে গেছে। নীলার সঙ্গে আমাদের দেখা হল, অপরূপ সুন্দর নীলা, তবে রাজুকে দেখে তার চোখে-মুখে ফুটে উঠল এক দুশ্চিন্তার চাপ। রাজু নীলাকে বলল তার নীলার সঙ্গে কিছু কথা আছে। নীলা তাকে বলল আগামী দিন তোমার সাথে আমার কথা হবে। রাজু নীলাকে বলল না থাক, তুমি আগামী শুক্রবারে সেই শিমুল গাছের তলায় ১০ টার দিকে চলে এসো, যেখানে আমাদের ভালবাসার চিহৃ রয়েছে। সেই শুক্রবারে আমিও যাতে সেখানে থাকি সে কথা রাজু আমাকে বলল। শুক্রবারে আমরা সেখানে মিলিত হলাম। রাজু নীলার কাছে জানতে চাইল সে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করেছে কি না? উত্তরে নীলা বলল তার ইচ্ছাতে বিয়ে হয়েছে। এতে রাজু খুব কষ্ট পেল এবং পরবর্তীতে জানতে চাইল রাজু কি অপরাধ করেছিল? উত্তওে সে বলল তাদের দুজনের বিয়ে আগে থেকে ঠিক হয়েছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তা সে রাজুকে বলতে পারেনি। রাজু তাকে বলল রাজু এখনও বিয়ে করেনি কিন্তু নীলা তুমি স্বামী, সন্তান নিয়ে লন্ডন, আমেরিকা ঘুরে বেড়াও। তাদের এই কথোপকথনে আমি সাধারণ দর্শক হিসাবে তা দেখে চললাম। পরে আমি নীলাকে বললাম আপনার এভাবে রাজুকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হয়নি। আপনি রাজুকে ভালবাসেন না বা তাকে বিয়ে করবেন না তা ফোনের মাধ্যমে তাকে বললেই পারতেন, আপনি মোবাইল বন্ধ করে ছিলেন কেন? এতে নীলা বলে আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই, তবে বলে রাখি আমি রাজুকে কোনদিন ভালবাসিনি। আমি সময় কাটানোর জন্য তার সাথে চলাফেরা করেছি, একথা বলে নীলা চলে গেল। নীলার এমন অগ্র কথা শুনে রাজু মাটিতে বসে গেল, রাজুর কষ্টে আমার দু,চোখ বেয়ে জল নেমে আসল। সেদিনি রাজু তাদেও সেই ভালবাসার প্রমাণ কে গাছের কোটর থেকে বের করে হাত দিয়ে মাটি খনন করে তাতে পুথেঁ রাখল। তারপর থেকে রাজু তার নিজস্ব গতিতে চলতে লাগল। আমার সাথে তার মাঝে মাঝে দেখা হয়। তার কষ্টেও কথা মনে করে আমি ও এখন ভালবাসতে ভয় পাই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sujon Das ধন্যবাদ সূর্য ভাই আপনার মূল্যবান বক্ত্যবের জন্য, চেষ্টা করব আপনার কথানুযায়ী চলতে।
Sujon Das ধন্যবাদ শাকিল ভাই আপনার মন্ত্যব উপস্থাপনের জন্য।
সূর্য ঘটনা গতানুগতিক এবং লেখার গাথুনীও বেশি পোক্ত হয়নি। নতুনদের একটা ছাপ লেখায় স্পষ্ট। তবে লেখা যখন শুরু হয়েছে দোষগুলো চলে যাবে। এজন্যতো অবশ্যই পড়ার বিকল্প নেই। ওভারঅল লেখাটাকে মোটামুটি ভাল বলা যায়।
sakil আপনার মাঝে আগামীর একজন ভালো লেখকের সন্ধান পাচ্ছি . আপনার জন্য শুভকামনা রইলো .
Sujon Das ধন্যবাদ, জুয়েল ভাই আপনার মন্ত্যব উপস্থাপনের জন্য। আপনি একজন খাটিঁ প্রেমিক মানুষ, তাই এর এটি বুঝতে পেরেছেন।
এফ, আই , জুয়েল # ঐটা প্রেম ছিল না । তবে প্রেমের মত ছিল । প্রেম আর বিয়া এক জিনিস নয় ।[ হালকা আবেগে উতালা হলে ধরা খাবার যে সম্ভাবনা আছে------ তা এই গল্পে ফুটে উঠেছে ।] = সুন্দর ।।
Sujon Das এই গল্পটি আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা গল্প''বন্ধুর ভালবাসার কষ্ট''আপনাদের কাছে ভাল লাগলে আপনারা অব্যশই ভোট করবেন।
Sujon Das শাহানাজ আপা দোয়া করবেন ভবিষ্যত এ যেন এর চেয়ে ভাল কিছু আপনাদেরকে দিতে পারি।
Sujon Das আজিজ ভাই আপনার মূল্যবান বক্তব্য রাখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর আপনার আশা য়েন বাস্তবে রূপ লাভ করে সে চেষ্টাই করব।
শাহ্‌নাজ আক্তার ভালো ....চেষ্টা চালাতে থাকো I

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪