এক
এতদিন এ বিষয়টা কেবল রাজীবই জানতো । অন্য কেউ নয় । কিন্তু এখন আর তা হবার নয় । এবার নির্ঘাত ধরা খেয়েছে সে চামেলী নামের টগবগে মেয়েটির সূক্ষ্ম বুদ্ধির জ্বালে। চা বাংলোর রাজীব মানে ছোট বাবুর বাসায় রান্না বান্নার কাজ করে চামেলী । বাবুর বাড়ীতে রান্নার কাজ করার সময় প্রায় প্রতিদিনই সে তাঁর পিচ্চি ভাইটাকে সাথে কোরে আনে । আবার কোনদিন একা ! চা বাগানের মেয়ে সে। সাপখোপ দেখেই ভয় ডর লাগে না তাঁর আর মানুষ তো কোন ছাড় ! কিন্তু মানুষও যে অনেক সময় হিংস্র প্রাণী পশুদের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয় , সেই বেড়ে ওঠা উঠতি বয়সে একবারেই বুঝতে পারেনি চামেলী !
মা মরা মেয়ে সে ,ঘরে সৎ মা কেইবা শিখাবে এতশত । নিজের মা বেঁচে থাকলে হয়তো বা - যুবতী বয়সের চামেলীকে চা বাবুদের ঘরে রান্না বান্নার কাজে পাঠাতো না সে। কিন্তু সৎ মা বলে কথা । সেইই চামেলীর বাবাকে বারে বারে প্ররোচিত কোরে তাঁকে বাগান বাড়ীতে বাবুর রান্নার কাজে পাঠিয়েছে । সৎ মার কাছ থেকে অনেকদিন হয় গালমন্দ খেয়ে খেয়ে রান্না বান্নার কাজটা ভালো মতেই শিখেছে চামেলী। প্রতি মাসের শুরুতে চামেলীর সৎ মা হাসতে হাসতে বাবুর কাছ থেকে মজুরীর বেশ খানিক টাকাটা এসে নিয়ে যায় । তবে চামেলী তাঁর মায়ের কাছ থেকে ফি মাসেই পঞ্চাশ একশ টাকার ভাগ বসায় । বলে -আমার মজুরী আর আমাকে ন দিবি । চামেলীর গলার ধারে সৎ মা আর বেশী তেড়ীবেড়ি কোরতে পারে না । সেই টাকা দিয়ে চামেলী তাঁর শখের এটা ওটা কেনে । ছোট ভাইটার বাহানা মেটায় !
সৎ মা প্রায়শঃ তাকে ভয় দেখায় ; বলে , ওই রকম জোয়ান মরদের ঘড়ে কাজ করিস , আশপাশের মানুষজন তো তর বাপকে এটাউটা বলে। তর অখানে কাজ বন্দ করার কথা বলি দিছে তর বাপ !
না , না মা বাবাকে ডরাতে মানা কর । ছুট বাবুর মতো মানুষই হয় না । যেমন সোন্দর চিহারা তেমন সোন্দর স্বভাব । আসলে অনেকদিন হয় কাজ করতে করতে চামেলীর তাঁর ছোট বাবুর উপর কেমন জানি একটা মায়া পড়ে গেছে । একদিনও ছোট বাবুকে না দেখলে শান্তি পায় না সে । ছুট বাবুর টিলায় কাজ না কোরতে গেলে , তাঁকে চক্ষের দেখা হারাবে সে , তা কিছুতেই মানতে পারে না চামেলী !
বাবুও চামেলীকে খুব ভালবাসে । একদিন সে না এলে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেয় , কি হোল তার । কোন কোন দিন শহরে গেলে , বন্দর থেকে চামেলীর জন্য নানা জাতের মিঠাই কিনে আনে । বাবু জানে চামেলী মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসে । ফুলতোলা বাহারী শাড়ী চুড়ি মালা এসব আনতেও ভোলে না সে । চামেলী বাপের ভয়ে বাড়ীতে এসব নিয়ে যায় না, ছোট বাবুর ডেরায় লুকিয়ে রাখে ।
কোন কোন দিন বাবু তাঁকে ভালবেসে বলে- কই চামেলী এবারের কেনা শাড়ীটা তো আমাকে পরে দেখালি না , তোকে কেমন মানাচ্ছে । ভালো লাগেনি বুঝি ?
চামেলী তাঁর চিক্কন শরীরটা দুলিয়ে খিল খিল কোরে হেসে হেসে বলে - রাম রাম বাবু সেকথা জিভে আনাও পাপ । তুমার কুন জিনিস আমার না পচ্ছন্দের বাবু । তারপর পাশের ঘরে ঢুকে নিজের বাড়ী থেকে পড়ে আসা শাড়ী ব্লাঊজ খুলে বাবুর দেয়া উপহারগুলো হেসে হেসে এক এক কোরে পড়ে আর সামনের লম্বাটে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের কৃষ্ণ কালো সুন্দর মুখটা বারে বারে দেখে । চোখে লাগায় পুরু করে কালো কাজল । কপালে মেরুন টিপ । ইচ্ছে কোরেও কি ভেবে সিন্দুরেরও হাল্কা ছোঁয়া লাগায় । তারপর লজ্জায় লাল লাল হয়ে ভীরু ভীরু পায়ে ছোট বাবুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় !
যেদিন যেদিন ছোট বাবু তাঁকে কিছু না কিছু কিনে দিবে , সেই সেই দিনই বাবু তাঁকে নির্ঘাত এমন কোরে ডাকবে তা জানে চামেলী ।
কিন্তু হঠাৎ কোরেই ক্যামন যেন এক নুতুন খেলা শুরু হয়েছে বাবুর ! ছোট বাবু বলে এর নাম ভালবাসা ! কাউকে ভালবাসলে এমন করেই নাকি কাছে আসতে হয় ! ছোট বাবুর সেই দেহ মন উজার কোরে দেয়া ভালবাসার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না চামেলী । কোন কোন দিন বাবু তাঁকে আদর কোরে বুকে টেনে খোঁপায় কাঠাল চাপা পড়িয়ে দেয়। তারপর ভালবাসা আর ভালবাসায় উতলা কোরে দেয় তাঁর দেহ মন। বলে -তোর ভয় কি চামেলী , তোকে আমি বিয়ে কোরে ঘরে তুলব । এবার দেশে যেয়ে মাকে বোলবই বোলব তোর কথা । তোকে আমি কত ভালবাসি ,সে কথাই ।
চামেলী সরল মনে তাঁর ছোটবাবুর সব কথা বিশ্বাস করে । আর বাবুর ঘরের বহু হওয়ার স্বপন দেখতে দেখতে আরও নিবিড় কোরে বুকের মধ্যে তাঁকে জড়িয়ে ধরে !
দুই
চামেলী আমার বউ আসছে রে ঘরে , চামেলী শুনিয়ে শুনিয়ে রাজীব তাঁর শোবার ঘরের ওপাশ থেকে জোরে জোরে সেদিন বলি না বলি কোরে সত্য কথাটা বলেই ফেলে ।
প্রথমে চামেলী ভেবেছিল বাবু তাঁর সাথে ঠাট্টা করছে । তাঁকে মিছেমিছি ভয় দেখাচ্ছে । কিন্তু না, বাবু তাঁকে তাঁর সুন্দরী নতুন বউয়ের অনেক অনেক ছবি দেখায় । লাল বেনারসি আর জড়োয়ার মোড়া । পাশে হাসি হাসি মুখ ছোট বাবু !
চামেলীর ছবি দেখা শেষ হোলে , বাবু তাঁকে ধীর গলায় বললো , মাকে অনেক কোরে বলেছিলাম রে তোর কথা । মা কানেই তুললো না। কেবল বললো , তাই কি হয় ? তেলে আর জলে কি মেশে ? বলেই সে চামেলীর দু’হাত ধরে মিনতি মাখা সুরে বলে- তুই দুঃখ পাস না চামেলী । আমি তোর বিয়ের জন্য তোর বাবাকে অনেক টাকা দেব । তা দিয়ে তোর বাপ তোর জন্য দামী শাড়ী , গয়না কিনে দেবে । তারপর একটা জোয়ান ভালো ছেলে দেখে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে !
আমার আবার বিয়ে ? এক ঝটকায় বাবুর হাতটা টেনে ফেলে চামেলী বলে , আমার আবার নতুন কোরে কিসের বিয়া গো বাবু ! আমার ত তুমার সাথে মনে মনে বিয়া হয়া গেছে বহুত দিন আগেই !
রাজীব প্রমাদ গোনে মনে মনে । সে বেশ ভালো করেই জানে , এই মুহূর্তটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর । এটা সামাল দিতে পারলেই আর সব ঠিক হয়ে যাবে ।
সেদিন আর বাবুর ঘরে কোন কাজ করতে পারে না চামেলী। বাবু না খেয়ে থাকবে । মনে মনে সেসব ভেবে কষ্ট হোল বটে তাঁর , ভারী দুঃখ আর অভিমান বুকে সে পায়ে পায়ে বাবুকে না বলেই বাংলোটা ছেড়ে চলে এল !
পথে যেতে যেতে কেবলি মনে হোতে লাগলো তাঁর -এতই তুচ্ছ সে । আসলে বাবুর কাছে তাঁর কোন দাম নাই । সে কেবল তাঁর সুন্দর শরীরটা নিয়ে খেলেছে এতদিন ! আসলে বাবুকে বাহির থাকে সে যা ভেবে বসেছিল আদতে সে তা নয় । একটা আস্ত শয়তান ! কিন্তুক , ভগবান যাকে এত সুন্দর কোরে পাঠাইছে ভবে , সে এত শয়তান হয় কি কোরে , চামেলী ভেবে পায় না !
তিন
কিন্তু এরপর যা ঘটলো –তার জন্য কোনমতেই প্রস্তুত ছিল না রাজীব !
বেশ কয়েকদিন পর চামেলী এসে ধীর গলায় তাঁকে জানালো যে সে অন্তঃসত্ত্বা । বাবুর সন্তান তাঁর পেটে ।
কি , কি বললি , বলেই রাজীব ভয়ে ভয়ে আড় চোখে চামেলীর দিকে তাকায় । না , মিথ্যে বলার মেয়ে সে নয় । আর এ ক’দিনেই চলন বলন আর আচাড় আচড়নের ভারী পরিবর্তন হোয়েছে তাঁর । মেয়েটির কালো অথচ সিগ্ধ সুন্দর মুখটা জুড়ে একটা রুঢ় অবজ্ঞার ভাষা । শরীর জুড়ে সর্বনাশা ক্রোধ । কি ব্যাপার চামেলী কি তাঁকে মারতে এসেছে নাকি ? ভয়ে ভয়ে চামেলীর কাছ থেকে দশ হাত পিছিয়ে যায় রাজীব !
এক্ষণে রাজীব বেশ বুঝতেই পারে চামেলীর জ্বালে ধরা পড়েছে সে । ইচ্ছে কোরেই চামেলী যে এ জ্বালটা পাতেনি তাই বা বোলবে কে ?
চামেলী রাগ ভুলে ছোটবাবুর সুন্দর মুখটার দিকে এক পলকে চেয়ে থাকে । এবার নির্ঘাত বাবুর মন গলবে , নিজের ছিলে বুলে কথা !
চামেলী ধরা গলায় রাজীবকে বলতে থাকে - বাবু তর বড় বিবি থাকে থাকুক । এই চামেলী তাঁর কুনদিন মন্দ চাইবে না । তুই কেবল আমায় তাঁর সতীন নামটা দে। তুর এই পেটের ছিলের বাপের নামটার জন্যি তা খুব দরকার বাবু !
চা বাগানের কুলি কামিনদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা । ভাগ্য বটে আমাদের চামেলী বেটির । ছোট বাবুর বহু হোতে চলছে সে । বাবুর ছেইলে তার পেটত ।
চামেলীর বাপ এসে রাতভর হাত জোর করে ছোট বাবুর সামনে বসে থাকে । একটাই মিনতি তাঁর – চামেলীকে তুই ঘরের ব হু কোরে নে বাবু সাব । সারাজীবন মুই তুর কিনা গোলাম হয়া থাকবো !
রাজীব গলা উঁচিয়ে বলে – মাথা খারাপ হোয়ে গেছে তোর । ঘরে আমার নতুন বউ আছে । তারপর কি ভেবে চামেলীর বুড়া বাপ রাজনের মাথা হাতরিয়ে বলে , মনে করে নে এটা একটা নিছক দুর্ঘটনা । আর তোর মেয়েও তো ধোয়া তুলসী পাতা নয় । তারও তো সায় ছিল এতে।
-এক হাতে তালি বাজে না বাবু ঢের জানি , তুই না চাইলে আমার অত ছুট দুধের মিয়া কি -----
রাজনের কথা শেষ করতে দেয় না রাজীব । ভারী স্বরে বলে - শোন তার চেয়ে ভালো তুই একটা রফা কর । এমন ঘটনা তো চা বাগানে এই প্রথম নয় । হামেশাই ঘটে। বল , কি চাস তুই ?
-কিছু না , তোকেই চায় বাবু আমার বেটী । ওঁর সাথে বেঈমানী করিস না । ভগবান সইবে না ।
- পাগল হয়েছিস তুই । শোন , আমার কথা শোন । আগে শহরের ডাক্তারের কাছে চেয়ে চামেলীর পেটের বাচ্চাটা তাড়াতাড়ি নষ্ট করে ফেলে দে । যা টাকা লাগে আমি তোকে দেব !
পরদিন চামেলী সৎ মা এসে কাড়ি খানিক টাকা আঁচলে বেঁধে ছোট বাবুর কুটিরের ঢাল বেয়ে মনের আনন্দে নীচে নামতে থাকে ! আগে তাঁর নিজের পেটের মেয়ে রুক্মিণীর বিয়া । তারপর চামেলী । জাতপাত যাওয়া মেয়ে মানুষের ভালো বিয়া দেওয়া এতই সুজা- মনে মনে বলতে থাকে সে।
শহরের ডাক্তারের চেম্বারে বাচ্চা নষ্ট করতে গিয়ে চামেলী মারা গেল !
চা পাড়ার কুলি কামিনরা কানাঘুষা করলো ছোট বাবুই চামেলীর সৎ মাকে দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলেছে । তাই রাজীবকে আবারও কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালতে হোল চামেলীর সৎ মা কপিলার মুখ বন্ধ করতে!
চার
চামেলী মারা যাবার কয়েকমাস বাদে রাজীব তাঁর বিয়ে করা অপূর্ব সুন্দরী বউকে নিয়ে এসেছে চা বাগানের বাংলোতে । চা বাগানের কুলি কামিন বউ ঝিরা দূর থেকে তাঁকে দেখে আর নিজেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে , এই না হলে কি আর সাহেব ঘরের বউ ! যারা যারা এতদিন চামেলীকে ভালবাসতো , তাঁরা মাথা নাড়িয়ে বলে – না না , মিছা কথা , মুগোর চামেলীও ত কুম শুন্দর ছিল না । কালোর কি রঙ নাই রে ? কিন্তুক কপাল ! কপালে নাই তাঁর তাই সাহেব ঘরের বহু হতে পারে নাই ।
টিলার উপর চা বাগানের এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজারের মস্ত বাংলো । চারদিকে বয় বেয়ারা । শাহানার বলতে গেলে কিছুই করতে হয় না । বিকেলে রাজীব ফেরার আগে সে পরিপাটি হোয়ে সাজগোজ করে । তারপর বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে বসে হুমায়ুনের উপন্যাস পড়ে । রাজীবের গাড়ীর হর্নটা শোনা গেলেই সে হাসতে হাসতে চঞ্চল পায়ে সামনের চিলতে বাগানটায় এসে দাঁড়ায় । কাঁঠাল চাপার গাছের নীচে পড়ে থাকা হলুদ হলুদ সুগন্ধী চাঁপা ফুল, তা মাথা নীচু কোরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুলে তুলে আঁচলে ভরে !
নাহ , রাজীব আসে নাই । এক্ষুনি শহরে তাঁর যেতে হবে। ফিরতে রাত হবে । ফোনের লাইন না পাওয়ায় সেই কথা বোলতেই সে পাঠিয়েছে গাড়ীর ড্রাইভারকে ।
শাহানার বড় অভিমান হয় । নিজে একটু এলে কি ক্ষতি হোত তাঁর ! আসলে প্রায় এক বছর হয় এই কোলাহল মুক্ত জনবিহীন পরিবেশে থাকতে থাকতে সে বড়ই হাপিয়ে উঠেছে । বিয়ের পর পর নিজেকে চা বাগানের ম্যানেজারের বউ মনে করে যে তৃপ্তি পেত এখন তাঁর বিন্দুমাত্র অনুভব করে না সে । এ ক্যামন অদ্ভুত একটা জীবন । আশে পাশে কথা বোলবার মতো , দেখা করার মতো তেমন কোন মানুষ নেই ।
- এই দিদি , কি কর গো তুমি । ফুল কুড়াও । ভালো । দাও , তুমার খুপায় আমি একটা বাহারী ফুল
প ড়ায় দেই , একটা রিনিঝিনি মেয়েলী গলার অচেনা একটি মেয়ে শাহানাকে কথাগুলো বলে!
- কে , কে ? তুমি কে ? সচকিত ভঙ্গীতে শাহানা প্রশ্ন করে !
- আমি গো দিদি , এই ধরে লাও তুমার সতীন ! দাও ফুল্টা পড়ায় দেই । বলে সন্ধ্যার আলো আঁধারীতে অচেনা যুবতীটি শাহানার দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে থাকে ।
ঠিক স্পষ্ট কোরে মেয়েটিকে দেখতে পারে না শাহানা তবে সে যে কালোর মাঝেও অপরূপ সুন্দরী তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারে সে !
কিন্তু মেয়েটি তাঁকে তার সতীন বলছে ক্যান ? ভাবতে গিয়েই মনটা কেমন একটু খচ খচ কোরে উঠে । সতীন ? রান্নার রাধুণী বুড়িটা প্রায় রোজই কি যেন বলতে চায় তাঁকে । আবার পরক্ষণেই কি ভেবে কথা ফিরিয়ে নেয় সে । কি বোলতে চায় সে? রাজীবকে বিষয়টা বলাতে সেদিন সে খুব রাগ করেছে । উল্টা ঝিটাকে বেশ বকা ঝকা কোরে বিদায় দেয়ার ভয় দেখিয়েছে !
- সতীন ?
- হাঁ গো দিদি , সতীন । এই নিজের মাথার দিব্যি কেটে বলছি গো । তুমার সতীন হই গো দিদি । ইচ্ছা করলে দশজনের কাছে পুছতে পারো । ত তুমার স্বামী খুব খারাপ মানুষ গো দিদি । তুমার ভালর জন্যই কইছি । এই দ্যাখো আমার সারা শরীরটা জুড়ে ক্যামন বিষের বড়ী !
রাজীবের গাড়ীর পরিচিত হর্নটা শোনা যায় । শিথিল শরীর আর মনটা নিয়ে তা দূর থেকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখতে থাকে শাহানা । অচেনা সেই মেয়েটি তখনও সেই কাঁঠাল চাপা গাছের নীচে !
স্বামী কাছে এলে , তাঁকে প্রায় অপ্রস্তুত করেই শাহানা হঠাৎ করেই তাঁর হাতটা শক্ত কোরে ধরে বলে , সত্যি কোরে বলতো তুমি কি আমাকে বিয়ে করার আগে এখানে আর একটা বিয়ে করেছিলে ?
এই কথাটুকু বলতে গিয়ে শাহানা মনে মনে বারে বারে কামনা করে - না বলুক রাজীব । না বলুক । না ! না ! উল্টো তাঁকে এই আজেবাজে প্রশ্ন করার জন্য গাল মন্দ করুক সে । যেভাবে সে কুলী কামিনদের সাথে মাঝে মধ্যে রেগে উঠে ঠিক তেমনি করে তাঁকে সে বকা ঝকা করুক। কিছুই মনে করবে না সে । বুঝে নেবে স্বামীর সামনে তাঁকে নিয়ে এই মন্দ কথাটা বলার শাস্তি এটাই । এমন মধুর শাস্তিই সে চায় এক্ষণে রাজীবের কাছ থেকে !
কিন্তু রাজীব শাহানার সেসব কথার উত্তর দেয়ার আগেই কাঁঠাল চাপার গন্ধ বুকে , সেই অচেনা সুন্দরী তরুণীটি হুট কোরে কোথা থেকে যেন উড়ে এসে জুড়ে বসে তাঁদের স্বামী স্ত্রি দুজনার মাঝে ।
- আমি সতীন হই না বাবুজি তর বউয়ের ? এই চামেলী তর বউয়ের সতীন নয় বাবুজি । উয়ারে বুঝা , আমি তর কি লাগি । বলেই নিঝুম চারপাশটা ভেদ কোরে খিল খিল , খিলখিল করে হাসতে থাকে চামেলী । স-----তী------ন । তুয়ার স—তী—ন গো দিদি !
শাহানার কথার উত্তর দেয়ার আগেই চোখের সামনে মূর্তিমান চামেলীকে দেখতে পেয়ে ভয় তরাশে সংজ্ঞা হারায় রাজীব ! কেবলই থেকে থেকে শোনা যায় তাঁর অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর - চা--------তুই ? চামেলী --- তুই ?
চামেলী , চামেলী – জোরে জোরে ডাকতে থাকে শাহানা !
কোন উত্তর ভেসে আসে না ।
কেবলি একটা কালো বিড়াল ঘৃণা মেশানো দু ‘চোখে তাঁকে দূর টিলার জঙ্গলের ফাঁক থেকে চেয়ে দেখতে থাকে ! দেখতেই থাকে !