মেয়ে

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

জাতিস্মর
  • ২৩
  • ৩৯
খেলা খেলা খেলা,
জীবনটাতো পথের প্রান্তে,
রঙ জমানো মেলা...
ছেলেবেলায় পড়েছিলাম। মানে বুঝলাম এখন। মানে খুব শক্ত। কাউকে বোঝানোর মতো জ্ঞানে কমতি আছে আমার। কিন্তু মুশকিল অন্য জায়গায়। জ্ঞানে কমতি থাকলেও আমার উপলব্ধিতে তেমন কমতি নেই। তাই বহুবছর পরে অনেক অনেক কষ্টের আর ব্যাথার উপলব্ধি আমাকে মারাত্মক আহত করছে। অনেককেই দুঃখিত বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারিনা। দীর্ঘদিন সমাজে থাকতে থাকতে আমি তো সেই তথাকথিত সমাজের একটা দুর্লভ অংশে পরিণত হয়েছি। যে অংশ আমাকে দুঃখিত বলতে বাধা দেয়। সামাজিক জীব হিসেবে পারিবারিক দায়বদ্ধতাও একটা শক্ত কারন। এতকিছুর মাঝেও সেই পুরনো বুনো স্বভাবটা আমাকে দেখি আবার সাহস দিচ্ছে সাংঘাতিক কিছু একটা করার জন্য। কিন্তু আমি জানি আসলে কৈশোরের মতো এখন আর কিছু আমি সাহস করে করতে পারবনা। কারন আমাকে অনেক কষ্ট করে হিসেবি হতে শিখতে হয়েছে। তাই খুব হিসেব করে কিছু ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, যে ব্যাথাগুলো নিজের অজান্তে দিয়েছি তাঁর জন্যে।
মেয়ে
তোমার কথা খুব মনে হয় ছোট্ট মেয়ে। না, প্রেমানুভুতি থেকে নয়। মফস্বলের খোলামেলা পারিবারিক বন্ধনের সংস্কার আমাকে শুধুমাত্র অনুমতি দেয় আমার সহধর্মিণীর/পরিবারের প্রতি আন্তরিক বিশ্বস্ততার। এবং আমি মনে প্রানে সেটা লালন করি। তোমার কথা শুধু মনে হয় তোমার কৈশোরের অবাক্ত কষ্টগুলোর মর্মযাতনা অনুভব করার সময়। আমার কৈশোরের কোন এক জন্মদিনে আমার বাম হাতের জামার হাতায় তুমি আটকে দিয়েছিলে ছোট্ট একটা টেডি বিয়ার। সেই ছোট্ট টেডি বিয়ারের জামায় আরও ছোট্ট করে লেখা ছিল তোমার প্রানের আকুতি। আমি জানি এই কাজটা করতে তোমাকে দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। আমিতো যে কেউ না যে তুমি আমাকে আমার সামনেই সাহস করে আরতি দেবে।
আমাকে ভালো যেমন বাসতে তেমনি ভয়ও করতে। সেই ভয়কে জয় করে তুমি তাই তোমার বাড়ির সিঁড়িতে দাড়িয়ে যখন আমাকে তোমার উপহার দিয়েছিলে আমি না করতে পারিনি। আমি কিন্তু সেই মুহূর্তেই কিছু একটা দেখেছিলাম তোমার চোখে। মেয়ে, আমি ভীষণ ভিতু। আরও বেশি সামাজিক। তোমাকে বা তোমার পরিবারকে ছোট করা আমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা। কারনটা তো তুমিও জান, তাইনা?
তাই আমি সেই মুহূর্ত থেকে আরও সাবধান হয়ে গেলাম। তুমি ছোট্ট হলেও একেবারে এতো ছোট্ট ছিলেনা। ওই বয়সটাই ছিল ভুল করবার। আমি চাইনি তুমি কোন ভুল করো। তাই খুব সাবধানে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি তোমার কাছ থেকে। তোমার পরিবারের কাছ থেকে। এরপর থেকে কখনো তোমার সাথে কথা হলে চেষ্টা করেছি অল্প কথায় কাজ সারতে। সামনা সামনি অবশ্য কথা হতো কম। বেশিরভাগ সময় ফোনে। তুমি যে কতবার কতভাবে আমাকে তোমার বাসায় আসতে বলতে তাঁর কোন হিসাব নেই। আমার যে কখনো দ্বিতীয় চিন্তা মাথায় আসেনি তা না। সৎভাবে বললে অনেকবার এসেছিল। কিন্তু ওইযে আমি সামাজিক জীব। প্রশ্রয় দেইনি। তোমার আকুতি আমি আমার ভেতরে সবসময় বুঝেছি কিন্তু অন্য কাউকে বুঝতে দেইনি। । তোমাকেতো অবশ্যই না।
তুমিযে কতরাত অসম্ভাব কষ্টে পার করেছো তার হিসাব হয়তো তুমি এখন আর মনে রাখনি। তোমার সব কাছের বন্ধুরাই তোমার এই একতরফা ভালবাসার কথা জানত। তাইতো কতবছর পরেও তোমার সে রকম খুব কাছের এক বন্ধু এক অনুষ্ঠানে আমার সাথে পরিচিত হওয়ার পর খুব অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করেছিল, “আপনিই সেই ... ভাইয়া”। অভিনয়ে খুব একটা কাঁচা না আমি। নিপুন অভিনয়ে আমি উঠে গিয়েছিলাম সেই আসর থেকে। তোমার বন্ধুর সেই চোখের ভাষা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল তোমার কষ্টের দিনগুলো আরো একবার।
তুমি কিন্তু আর কোন চেষ্টা করনি সরাসরি আমাকে কিছু বলবার। অথবা চেষ্টা করলেও অবিরত নিজেকে গুটিয়ে রাখার কারনে হয়তবা বুঝতে পারিনি। ধিরে ধিরে আমি জড়িয়ে পরলাম জীবন যুদ্ধে। জড়িয়ে পরলাম নিজেও এক অসম প্রেমে। অসম এই অর্থে যে, সমতা ছিলনা আমার আর আমার তার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পারিপার্শ্বিকতায়। তাই তৈরি হল অনেক ধরনের প্রতিকূলতা। সমস্ত প্রতিকূলতা দূরে সরিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত রুপ দিতে পারলাম আমদের সম্পর্কের। গুনি জনেরা বলেন যে, “যাকে তুমি ভালোবাসো তাঁকে কখনও বিয়ে করোনা, যে তোমাকে ভালবাসে তাঁকে বিয়ে করো”। গুনেজনেরা খুব চমৎকার কথা বলে গেছেন আর সাথে রেখে গেছেন এক ধাঁধা। ধরো, আমি তোমাকে ভালবাসি, সেই হিসেবে তোমাকে আমার বিয়ে করা উচিৎ হবেনা। আবার, যেহেতু তুমি আমাকে অসম্ভাব ভালোবাসো তাই আমার উচিৎ হবে তোমাকে বিয়ে করা। এই ধাঁধায় আমরা পড়ে গেলাম। আমি আর আমার সহধর্মিণী।
বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে আমার যে কোন এক ঘরোয়া (বিয়ে সম্পর্কিত) অনুষ্ঠানে তুমি এসেছিলে। সত্যি বলতে কি, আমি চাইনি তুমি আসো। কিন্তু তুমি এসেছিলে। সেই সময় তোমার অনুভুতি কি ছিল আমি জানিনা। কিন্তু ব্যাথা ভরা তোমার চোখের সেই দৃষ্টি আমি আজও ভুলিনি। ভোলা কি সম্ভব?
মেয়ে এখন তুমি ভীষণ বড়। আমি কিন্তু এই বড় তোমাকে কিছু বলিনি। এতক্ষণ যা বলেছি তা সেই ছোট্ট তোমাকে। আমি নিজের কাছে অনেক পরিস্কার। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বকে প্রশ্ন করলে কখনই নিজেকে অপরাধী মনে হয়নি। তারপরেও সেই ছোট্ট তোমার যত বড় কষ্টগুলো তাতো নিজের অজান্তেই আমরি তৈরি। হয়তো আমার কিশোর বয়সের কোন এক অজানা ব্যাবহার মুগ্ধ করেছিল তোমাকে। ওই বয়সটাতো ছিল মুগ্ধ হওয়ার। আমিও ছিলাম উড়নচণ্ডী। আমি লক্ষ্য করেছি, মেয়েরা কেন যেন উড়নচণ্ডী ছেলেদেরকেই বেশি পছন্দ করে। আসলে তোমরা খুব বেশি আবেগি। আবেগের কারনেই তোমরা নিজেদেরকে হয়তো একটা সান্তনা দিতে বা দাঁও যে, এই উড়নচণ্ডী ছেলেটাকে বোধহয় আমি ছাড়া আর কেউ ভালো করতে পারবেনা। আমি ছাড়া এই ছেলেটার আর কোন আশা নেই। আমিই বোধহয় এই ছেলেটাকে সবচেয়ে ভালো বুঝি।
আসলেই কি তাই? হয়তোবা, হয়তোবা না। হয়তোবা তোমার মতো কত আবেগি ছোট্ট মেয়েরা অনেক বড় বড় উড়নচণ্ডীকে কান ধরে টেনে নিয়ে এসেছে সামাজিক গণ্ডির ভেতর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাই মেয়েদের এই ব্যাপারে সফলতা অনেক। প্রায় আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু কেউ কি একবারও ভাবেনা যে, “ওই ছেলেটাকেতো আমি ভালবেসেছিলাম তাঁর সেই উড়নচণ্ডী স্বভাবের জন্য। যদি তাঁকে গণ্ডির ভেতরেই আনতে হবে তবে কেন আমি গণ্ডির ভেতর আবদ্ধ কাউকে পছন্দ করলাম না। যে সতন্ত্রতার জন্য আমার ভালোবাসা, আমি কি করে ধিরে ধিরে সেই সতন্ত্র সত্তাকে একটা অতি সাধারণ আবয়বে রুপান্তারিত করলাম? যে ছেলেটাকে মোটামুটি ময়লা জিন্সের শার্ট আর প্যান্টে আমার কাছে লাগত অসাধারন, সেই ছেলেটাকেই এখন কিভাবে আমি সেই পোষাকে জনসম্মুখে দেখলে লজ্জা পাই? যে ছেলেটার হঠাৎ হঠাৎ সব আজগুবি কাজে আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম, এখন কি করে তাঁকে আমি অসম্ভব গম্ভীর আর ওজনওয়ালা কাজেই শুধুমাত্র উদ্বুদ্ধ করি? কোথায় আমার সেই পাগল পাগল ভালোবাসা?“হায়রে বোকা ছেলে, এতদিন ছিলি তুই অসাধারণ মানুষ। আজ তুই শুধুই মানুষ। কেনরে পাগল, তুই পাগলামিটা ধরে রাখতে পারলিনা?
এই এত্তগুলো প্রশ্ন কিন্তু তোমার কাছে নয়। শুধুই মনের ব্যাথা। তাও খুব সীমিত আকারে। আমি এখন গণ্ডির মানুষ। সেই আগের মতো সবকিছু আর বড় করে দেখতে বা ভাবতে পারিনা। আর পারিনা আজগুবি সব কাজ করতে। এখনও ইচ্ছে হয়- “রিকশায় করে যাওয়ার সময় কোন এক বন্ধুর হাতের গীটারে, হঠাৎ কোন সুরে পাগল হওয়া উড়ু উড়ু মনে সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে পাগলা নৃত্য।এখনো আছেসেই ইচ্ছে। তবে পূরণ করতে গেলে কত বাধা। সামাজিক, পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক কত কত......।
তুমিও এখন সাধারণ নারী। দুই সাধারণে কাটাকাটি। তবুও হয়তো কোন এক নির্জন একাকী রাতে কোন কারন ছাড়াই মনে পড়লো আমার কথা। টুক করে হেসে ফেললে। ভাবলে, “কি বোকাই না ছিলাম?” তারপরেও হয়তো বুকের কোন এক অজানা জায়গায় যেখানে তোমার ছোট্ট মনটা খুব যত্নে লুকিয়ে রেখেছে আমার কৈশোরকে, তুমি ছোট্ট একটা ধাক্কা খেলে। হয়তোবা একটু কষ্টের অনুভুতি। নিজের অজান্তেই হয়তোবা একটা দীর্ঘশ্বাস। মেয়ে, তোমার সেই ব্যাথার দীর্ঘশ্বাসের জন্য বহু বছর পরে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তুমি তোমাদেরকে নিয়ে ভালো থেকো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ সুন্দর গল্প .
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
রিক্তা রিচি খুব ভালো লাগলো .
মনজুরুল ইসলাম simple expression with touchable feeling from practical life.is it excuse from mistake, hidden distance for better present or hidden powerful existing and evergreen love ?
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৫
শেখ শরফুদ্দীন মীম খেলা খেলা খেলা, জীবনটাতো পথের প্রান্তে, রঙ জমানো মেলা... । আমার ছোট্ট কবিতাটুকু সময় করে পড়বেন।
এনামুল হক টগর ভাল লেগেেছে
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১৫
মাইদুল আলম সিদ্দিকী শুভকামনা রইল...
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৫
মোজাম্মেল কবির সেরা বাক্য -কেনরে পাগল, তুই পাগলামিটা ধরে রাখতে পারলিনা?... কোথায় যেন একটু জড়তা ছিলো। মন খুলে সব টুকু নির্যাস লেখায় ঢেলে দেয়ার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা আছে আপনার... তবে পুরোটাই বলতে হবে... মনে কিছুই ধরে রাখা যাবেনা। খুব ভালো লেগেছে এই জন্য যে আপনি যা বলেননি তা আমি বুঝে নিয়েছি... শুভ কামনা রইলো। সাথে পাওনা...
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৫
মামুন ম. আজিজ সুন্দ রবাক্য চয়ন..
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৫
আশিক বিন রহিম ভালো
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৫
ধীমান বসাক ভাল লেগেেছে ।
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৫

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪