বুকে ছুরী, মুখে হাসি, চোখে নেই জল

বাবা দিবস (জুলাই ২০১৪)

জাতিস্মর
  • 0
  • 0
  • ৫৭
গত দুইদিন বেশ অনেক সমস্যার ধকল সামলাতে হচ্ছে। সব কিছু অনেক বেশি ওলট পালট লাগছে। খাওয়া দাওয়া উঠেছে চুলোয়। দুই দিন বাসায় যাচ্ছিনা। বাউ সন্তান ছাড়া। আমার এক TINNY বন্ধু জন (বর্তমানে আমার ব্যাবসায়িক কাজের সহকর্মীও বটে) আমার মানসিক অবস্থা দেখে চেষ্টা করছে যথাসম্ভব সাহায্য করার। তাই আজ সন্ধায় ওর বাসায় আসলে পরে আমাকে খুব বেকায়দা কিছু কথার প্যাঁচে ফেলে বিশেষ কোন এক জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করে ফেলে। রাস্তায় বের হয়ে রিকশা ঠিক করার সময়ও আমাকে রাস্তার অপর পারে দাড় করিয়ে রাখে। যেন আমি কোন মতে বুঝতে না পারি যে কোথায় যাচ্ছি। পারিপার্শ্বিক ঝামেলার কারনে আগ্রহও বেশ কম। উঠে পড়লাম রিকশায়। গন্তব্বে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে বুঝতে পারলাম গন্তব্য। আজিমপুর কবরস্থান। বেশ বিরক্ত হয়ে গেলেও প্রকাশ করলাম না। আমার এই মানসিক অবস্থা আমার ছোট ছেলেকে একদমই বুঝতে দিতে চাইনা। আর জন-এর ধারনা আমার ছেলের কাছে গেলে আমার মন ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। অবাক বিষয় হোলও তাই। ছেলের (ফেরদৌস) কবরের সামনে দাড়িয়ে অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে ফেললাম। এখন আমি অনেক বড়। চোখের জল ফেলতে গেলে কেমন যেন লজ্জা লাগে। তাই চোখ বন্ধ করে আমার ছেলের উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছুক্ষণ প্রার্থনা করলাম। প্রার্থনা শেষে চোখ বন্ধ করেই ছেলের সাথে কথা বলা শুরু করলাম। আমার কাজিন গায়িকা "কৃষ্ণকলির" "সাতকাহন" গানের একটা লাইন ছিল " বুকে ছুরী মুখে হাসি, চোখে নেই জল "। আমার অবস্থা তখন তাই। বোন আমার একটা লাইন বোধ হয় আমার জন্নেই লিখেছে। চোখ বন্ধ করে ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে বার বার ইচ্ছে করছিল ওই মাটির ওপরেই শুয়ে পড়ি। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে রেখে সারারাত আজ ছেলের কবরের উপর কাটিয়ে দেই। ছেলেটা আমার সেই জন্মের পর থেকেই একা একা বাবা, মা, ভাই ছাড়া আরেক জগতে বড় হচ্ছে। ওরও নিশ্চই দুই দিকে দুই হাত দিয়ে, এক হাতে মা আর এক হাতে বাবাকে আর ভাই কে নিয়ে ঘুমতে ইচ্ছে করে। যেমন ওর বড় ভাই রাইয়ান করে। আমি পারিনি। বাস্তবতা আমাকে মশা আর পোকা মাকড়ের কথা মনে করিয়ে দিলো। তাতে কষ্ট বেড়ে গেলো আরও বহুগুন। আমার ছেলেকেতো আমি সেই পোকামাকড়ের ভেতরেই রেখে এসেছি। ওরাতো এখন আমার ছেলের বন্ধু বোধ হয়। চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসলো। মুছলামনা। জন আছে। দেখে ফেললে দুর্বল ভাববে। তাঁর চেয়ে ওই পানি অন্ধকারেই গড়াক। অন্ধকারতো অনেক কিছুর সাক্ষী। না হয় আরেকবার সাক্ষী হল। ছেলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। কবরের পাশ থেকে যখন হেঁটে চলে আসছি তখন মনে হল ছেলে আমার আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। বলছে, বাবা আর কিছুক্ষণ থাকোনা প্লিজ। যেমন করে আমার মা বলে। আমার হাতে মোবাইল ছিল। আস্তে করে মোবাইল দুটো পেছনের পকেটে রেখে দিলাম। তারপর খালি হাত দুটো পেছনে দিয়ে ছেলেকে বললাম, বাবা...আমার হাত দুটো ধরে হাঁট। অনেকক্ষণ ছেলেটা আমার হাত ধরে হাঁটল। তারপর বাস্তবতা মেনে নিয়ে সেও আস্তে আস্তে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো ওর ঘরে। আমি কয়েকবার পেছনে ফেরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ফিরিনি। ছেলেটা নিশ্চই ফিরেছে। বাবাকে এতো কাছে পেয়ে তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে আর সে একবারও বাবাকে ফিরে দেখবে না তাই কি হয়?

পৃথিবীতে এতো কষ্ট থাকতে আমি কেন আমার সন্তান হারানোর কষ্টে আছি? প্রশ্ন আছে। কিন্তু উত্তর দেবার জন্য কেউ বা কিছু নেই। আর উত্তর খুজবনা। আমার ছেলের সাথে দ্রুত দেখা হবার অপেক্ষায় থাকবো। তাতেও সমস্যা। ওর বড় ভাই রাইয়ান আবার শক্ত করে বলে দিয়েছে, আমকে ছেড়ে তুমি কিন্তু ভাইয়ার কাছে এখন যেতে পারবেনা। আচ্ছা আমি যখন আমার ছেলেকে ওই জগতে দেখবো, তখন ও কত বড় হবে? ওর বড় হওয়া কি এই পৃথিবীর নিয়মে হবে? আমি কি ওকে চিন্তে পারবো? অবশ্যই পারবো। এই যে আজকে আমি আমার ছেলেকে দেখলাম। কি ডাগর চোখ আর কালো চুল। চোখের বাঁদরামি ঠিক আমার আর রাইয়ানের মতো। বাবা, এত্ত এত্ত সরি। আমি তোকে একদম সময় দেইনা। তবুও সব সময় তুই কিন্তু আমার সাথেই থাকিস। বাবা আমার, এই জগতটা বড় নিষ্ঠুর। এখানে থাকতে থাকতে আমিও তাই হয়ে গেছি। তারপরেও তোর জন্য একটা গোপন উপত্যকা রেখেছি। সবুজ গাছ আর ঘাসে ঢাকা উপত্যকা। ভালবাসার। এখানে তুই, আমি, তোর মা আর ভাই শুধু ভালবাসার গল্প করবো।

আর লিখতে পারছিনা। লিখতে গেলে পড়তে হয়। ঝাপসা চোখে পড়া যায়না। সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি আমার এই লেখাটার নামের জন্য। “বুকে ছুরী, মুখে হাসি, চোখে নেই জল”। আমার চোখে জল এসেছে। অনেক জল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪