নাম তার হাসু।তবে হাসতে জানে না।কিন্তু বরাবরই যেন হাসির পাত্র।শৈশব থেকেই হাসু নামটা ছেলেদের না মেয়েদের--এ নিয়ে হাসাহাসি।আর লেখাপড়া শেষে বিয়ের পর নিজের নামের কথা ভুলে গিয়ে সন্তাদের ভবিষৎ গড়ার কাজে লেগে যায়য়।তবু হস্যরসের নিয়তি তার পিছু ছাড়ে না।
এক সুন্দর প্রভাতে অতিথির চিৎকারে হাসুর ঘুম ভাঙে। ব্রাশ সঙ্গে আনেনি বলে দন্তরগারি মাজন দিয়ে দন্ত পরিষ্কার করতে গিয়ে এই বিপত্তি। --হায়!হায়!কী হল।বলে হাসু বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে।অতিথির জুতার কালি মাখা দাঁত দেখে বলে, --ভাবী কিছু মনে করবেন না।নিশ্চই বীরের বাবার কাণ্ড।দাঁতের মাজনের কৌটায় কেউ জুতার কালি রাখে? বাবার বাড়ির দিকের আত্মীয় বলে এবারের মতন হাফ ছেড়ে বাঁচে হাসু।
এরপর কয়েক বছর ভালোই কাটে।ছেলে বীর আজকাল বায়না ধরতে শিখেছে।কোন এক মধ্যাহ্ন ভোজনের পর বীর বোন রানির লাল রঙের নখপালিশ দিয়ে মাকে পুরোনো দিনের নতুন বৌয়ের মতন সাজিয়ে দেয়।এই অবস্থায় কখন যে হাসু ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না। অপরাহ্ণ শ্বশুরালয়ের একজন গণ্যমান্য অতিথির আগমনে হাসুর ঘুম ভাঙে।ভাসুরকে স্বাগত জানায়। --আসসালামু আলাইকুম,ভাই সাহেব।কেমন আাছেন? --ভালো।তোমরা? --ভালো।হাসু জবাব দেয়। --হুম।দেখেই তো বোঝা যাচ্ছ খুব ভালো আছ।বলে আড় চোখে হাসুর মখমণ্ডল নিরীক্ষণ করে। রানির বাবা বাসায় নেই বলে নাস্তার পরিবেশনের সময় ভাসুরের সঙ্গে ভদ্রতা রক্ষার জন্য আলাপ করতে হয়। ভাসুরকে বিদায় দেয়ার আগে কী কাজে হাসু ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়।আয়নায় নিজেকে নতুন বৌয়ের সাজে দেখে লজ্জায় মাথা হেট।ভাসুরকে বিদায় দিতে গিয়ে হাসুর মুখে আর কথা সরে না।
এখানেই অবসান ঘটতে পারত হাসুকে নিয়ে হাসাহাসির পালা।কিন্তু হয় না।মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার আগে রানির এক বান্ধবীর বাসায় বই ফেরত আনতে গিয়ে দেখে সবাই জ্বরে আক্রান্ত।রানির প্রসঙ্গ আসতেই হাসু বলে, --জ্বর খেতে খেতেই রানির আনারস ভালো হয়েছে। হাসুর কথায় হাসিতে সবার জ্বরের কাঁপুনি আরো বেড়ে যায়।
এরপর অনেক বছর কেটে যায়। হাসির হিসেব হাসুর আর রাখা হয় না।মেয়েকে ডাক্তার বানিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে।ছেলেও কিছুদিন পর প্রকৌশলী হবে।জীবনের অপরাহ্ণে এসে হাসুকে কী এক বিষণ্নতায় পেয়ে বসে। সংবাদপত্র পাঠ,টিভিতে সংবাদ শোনা বাদ দিয়েছে কয়েক বছর।এতসব খুন-গুম-অপহরণ-ধর্ষণ-দুর্নীতি-ফরমালিন--আর ভালো লাগে না। তবু চোখ-কান তো বন্ধ রাখা যায় না।কয়েক দিন ধরে কানে একটা কথা ভেসে আসছে, --সমুদ্র বিজয়!সমুদ্র বিজয়!!
একথা শুনে হাসু এক রকম ধরেই নিয়েছে ব্রজেন দাসের মতনই কোন ব্যাপার।তাই ছেলেকে একদিন বলে, --আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে এতবড় সাঁতারু।তা তো আগে জানতাম না। --কী বলছ মা! এটা তো সাঁতার কেটে বিজয় নয়।মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের মামলায় আমরা জিতেছি। বহু বছর পরে হাসুর মুখে হাসে ফুটল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নেমেসিস
সকলের এত্ত এত্ত প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ। তবে আমার ''হাসুর হাসি''লেখাটার জন্য এত মন্তব্য পাব আশা করিনি। যাইহোক,''রাত'' সংখ্যায় প্রকাশিত আমার ''নক্ষত্র খচিত রাত'' কবিতাটি সম্মনিত বিচারক মণ্ডলীর কাছে গিয়ে শূন্য পয়েন্ট পেলেও অখুশি হতাম না। কিন্তু সুপ্রিয় পাঠকদের ভোটের অভাবে সেটি বিজ্ঞ বিচারকদের কাছে পৌঁছাতে পারল না। বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হিসেবে অন্তত এতটুকু জেনেছি যে,সাহিত্যের যেকোনো শাখাই হোক সেখানে একটি অখণ্ড ভাবের প্রকাশ থাকতে হয়। ''নক্ষত্র খচিত রাত'' কবিতায় আমি মানব জীবনের একটা গভীর জীবন-দর্শন অখণ্ডভাবে প্রকাশের প্রয়াস করেছি। পক্ষান্তরে ''রাত''সংখ্যার অনেক কবিতায় দেখলাম কেবল চরণের অন্তমিলের নিরন্তন প্রচেষ্টা। আমি যে খুব ভালো লেখি তা নয়। তবে ''নক্ষত্র খচিত রাত''-এর মতন দ্বিতীয় আর একটি কবিতা কোনদিন লিখতে পারব কিনা জানি না। তাই কিছুটা আহত হয়েছি।
হতাশা খুবই স্বাভাবিক। এরকম অভিজ্ঞতা আমারও আছে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, সর্বদা মন্তব্যের সংখ্যা ও ভোট-সংখ্যা লেখার গুণমান সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয় না, এই ধরণের প্রতিযোগীতার ক্ষেত্রে।অনেকগুলো এক্স ফ্যাক্টর কাজ করে। ফলে যদি দেখেন, আপনার কোন ভাল লেখার চেয়ে অপেক্ষাকৃত মাঝারি মানের লেখা অনেক বেশি মন্তব্য বা ভোট পেয়েছে তাতে অবাক হবেন না।
তবে এই লেখাটি এমাসের প্রদত্ত থিম অনুযায়ী ভালই হয়েছে বলতেই হয়।
অনেক অনেক শুভ কামনা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।