এ যুগের তালেব মাস্টার

শিক্ষা / শিক্ষক (নভেম্বর ২০১৫)

নেমেসিস
  • ১০
  • ১৪
শিক্ষকতা মহান পেশা—কোথায় যেন শুনেছিলেন তিনি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাই লেগে গেলেন মহত্ত্ব অর্জনের জন্য যে ধাপগুলো পার করতে হয় সেই কাজে। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভালো ফলাফল করে তার মত অনেককে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে। দীর্ঘ সাত-আট বছর ধরে নিরন্তর তপস্যা করে চলেন মহৎ পেশার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে। অবশেষে একদিন পৌঁছে যান স্বপ্নের জগতে। বিদ্যালয়ের কচি মুখগুলো দেখে মনটা আনন্দে ভরে যায়। তাই রবীন্দ্রনাথের বাতিওয়ালার মত ঘরে ঘরে বাতিজালিয়ে যান অবিরাম--বাতি জ্বালছেন....জ্বালছেন.... কিন্তু কে জানত বাতির নিচেই অন্ধকার!

কবি আশরাফ সিদ্দিকীর তালেব মাস্টারের মত নিজের ঘরেই আজ বাতি জ্বলে না। শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল তো দূরের কথা;সেই তালেব মাস্টার কিংবা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিচার গল্পের গিরীনের মত যোগ্য সম্ভানটুকু পান না। তাই এযুগের তালেব মাস্টাররা স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় ছটফট করেন।

-স্যার আপনাকে সালাম দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের পিয়ন এসে তাড়া দেয়।
কিন্তু শফিক সাহেবকে একটুও বিচলিত মনে হল না। তার ধরনটাই এমন। খুব ঠাণ্ডা মাথার মানুষ।কোনো কিছু নিয়ে সহজে বিচলিত হন না। অবয়ব দেখে বয়স অনুমান করবার চেষ্টা করাও বৃথা। মাথা ভর্তি কালো কুচকুচে চুল। মুখে স্মিত হাসি। চোখে নেই চিরাচরিত মোটা ফ্রেমের চশমা। সবকিছুই বেশ সহজভাবে গ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও তার সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক।

-আসসালামু আলাইকুম স্যার। বলে শফিক সাহেব প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করেন।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম। বসেন শফিক সাহেব।
-নাফিসকে কী আপনি কিছু বলেছেন?
-কেন? শফিক সাহেব পাল্টা প্রশ্ন করেন।
-তার অভিভাবক আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
-অভিযোগ! শফিক সাহেব বিস্মিত না হয়ে পারেন না।
যে শিক্ষার্থীদের ভালোবেসে—তাদের কথা ভেবে ভেবে সংসার পর্যন্ত করেন নি তারাই কিনা...নাহ তিনি কোনো কিছুই হিসেব মেলাতে পারছেন না।
-দিনকাল যা পড়েছে –আর যেসব একতরফা নীতিমালা করা হচ্ছে তাতে ওদের সঙে একটু হিসেব করে কথা বলবেন। প্রধান শিক্ষকের কথায় সম্বিত ফিরে পান।
-সেজন্য কী ওরা আগুনে ঝাঁপ দিতে চাইলে হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে থাকব? কিছুই বলব না! আমরা তো ওদের শত্রু নই।
-হ্যাঁ। তাই ত ভাবছি—যাদের বাবা-মা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় তারাই বড় হয়ে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, বাবা-মাকে খুন পর্যন্ত করছে।
-পরীক্ষার আগে তো আমি সব সময়ই ওদের বলি যে, চুরি করা যেমন অন্যায়—কারও খাতা দেখে লেখাও তেমনি অন্যায়। কাজেই নিজে যততুকু জানো তাই লিখবে। কাউকে চোর বলার তো প্রশ্নই আসে না। আর কোনো শিক্ষার্থীর সঙে তো আমার ব্যক্তিগত কিংবা জমিজমা নিয়ে বিরোধ নেই।
-সে আমি জানি। আপনার ওপর আমার আস্থা আছে। কিন্তু বসেরও তো বস থাকে বলতে বলতে একটি হলুদ খাম শফিক সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দেন প্রধান শিক্ষক।

দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি কোনদিন কারণ দর্শানোর নোটিশ পাননি। কিন্তু তা নিয়ে তার ভাবনা নয়---ভাবনা কারণ দর্শানোর কারণ নিয়ে। আজ এত বছর পর নিজেকে খুব নিসঙ্গ মনে হল। এক গ্লাস পানি খেয়ে নিস্তেজ শরীরটাকে এলিয়ে দিলেন বিছানার ওপর।

পরদিন সকালে ক্লাসের ঘন্টা বেজে চলছে। কিন্তু শফিক সাহেবের দেখা নেই। তিনি কখনোই আসতে দেরি করেন না। আর আজ ঘন্টা বাজার পরেও পৌঁছাননি। তিনি হয়তোবা অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন---সেই অনন্ত যাত্রা কবে শেষ হবে কারাও জানা নেই।
কেবল ঘন্টা বেজে চলছে ---ঢং ঢং ঢং...

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন সে দেশে জজ সাহেবদের কোন কোন জন রেজাল্টের নম্বর ঘসেমেজে বাড়িয়ে চাকরী নেয় সেদেশে সৎ মাস্টাররা থাকে কী করে? ভাল লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
এশরার লতিফ ভালো লাগলো গল্পটি। শুভেচ্ছা রইলো।
মোজাম্মেল কবির ভালো লেগেছে গল্প। আপনি এতো ছোট করে লিখেন কেনো?
Fahmida Bari Bipu অনেকদিন পরে আসলেন। নিয়মিত দেখা হলে ভাল লাগে। অনেক ভাল লাগল আপনার লেখা। শুভেচ্ছা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর আমাকে মনে রখার জন্য কৃতজ্ঞতা। আসলে সংসার-চাকরি-লেখাপড়া নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে ব্লগে বসার সুযোগ হয় না। ভালো থাকবেন।
হাবিব রহমান ছোট পরিসরে ভাল গল্প
হুমায়ূন কবির সুন্দর গোছানো, বর্তমান সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
দীপঙ্কর বেরা বেশ । ভাল লাগল ।
এস আই গগণ লেখনীটা গোছান, আরও একটু টানলে হয়তো লম্বা হতো, পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।
নিরীক্ষাধর্মী মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এটা আসলে ৪/৫ বছর আগে লেখা একটা প্রবন্ধের গল্পরূপ। কিন্তু ব্যস্ততার করণে সম্পূর্ণ গল্পটি কম্পোজ করতে পারিনি।
শামীম খান বক্তব্য পরিষ্কার । লেখনী সাবলীল । কিন্তু কম দিলেন মনে হয়েছে । পাঠকের আরও কিছু পাওয়ার ছিল আপনার কাছে । ভোট কিন্তু কম দিলাম না । শুভ কামনা রইল ।
অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ। আসলে গল্প-কবিতা ডট কমে আমি এ পর্যন্ত যতগুলো গল্প দিয়েছি---সব গুলোই মূল গল্পের সার-সংক্ষেপ। কারণ একটাই সংসার-চকরি-লেখাপড়া সামলে কম্পোজ করার সময় হয় না। তবু আপনাদের চমৎকর মন্তব্যে উৎসাহ পাই--এজন্যই লেখা। ভালো থাকবন।

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪