মায়ের কষ্টের প্রতিদান সম্ভব নয়

মা (মে ২০১১)

মিজানুর রহমান রানা
  • ৪৩
  • 0
  • ৬২
সকাল বেলায় ঘুম ভাঙল কিসের শব্দে যেন। ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম, আমার স্ত্রী রীমার রুক্ষ্ম মূর্তি। চোখে-মুখে প্রচণ্ড রাগ। যেন রবীন্দ্রনাথের রুক্মিণী চরিত্র আমার সামনে হাজির হয়েছে। আমি চোখ-মুখ কচলিয়ে উঠে বসলাম। বললাম, "কী হয়েছে গো? ডাকাত পড়েছে নাকি?"
"হাঁ যা, আজ ডাকাতই পড়বে ঘরে বলে দিলাম। কী পেয়েছ তুমি? আমি সারাদিন কষ্ট করে এ সংসার সামলাই আরও উনি কি-না সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে বলেন 'কী হয়েছে গো?' যতসব ন্যাকামি আরকি!" কথাগুলো বলেই রীমা কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজতে থাকে। যেনো কারো সাথে ফাইট করতে যাচ্ছে।
আমি না বোঝার ভাণ করে গাধার মতো বললাম, "কেউ তোমাকে কিছু বলেছে নাকি? এতো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছো কেন?"
"জ্বলে উঠবো না তো কী করবো? ঘরে না আছে তেল, না আছে বেগুণ। আজ চার/পাঁচদিন কী দিয়ে সংসার চালাই সেটার কি কোনো খোঁজ-খবর নিয়েছো? সংসার চালাতে যে কী কষ্ট সেটা তো তুমি বুঝবে না। তুমি তো সারাদিন পত্রিকার কাজ, লেখালেখি আর দুনিয়ার যতো সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত থাকো। বাসার হাঁড়ির খবর কে নেয়? আমি আর পারবো না বাবা। তোমার সংসার তুমিই সামলাও। আমি আজই বাচ্চাগুলো নিয়ে চলে যাবো।" রাগে গজগজ করতে করতে বলতে থাকে রীমা।
"মেয়ে মানুষের এতো রাগ ভালো নয় রীমা। তা তুমি যাবে কোথায়?" আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছি।
"যেদিকে দু'চোখ যায় সেদিকে। নিজের পেটের জন্য কোনো চিন্তা নেই। সামান্য পড়ালেখা তো করেছি। কোথাও চাকুরী জুটিয়ে নিতে পারবো।'' চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু পড়তে লাগলো তার।
"দেখো রীমা, এগুলো সব মেয়ে মানুষেরই কমন ডায়লগ।" আমি বলতে লাগলাম। "আমার মা-ও আমার বাবাকে দেখতাম এগুলো বলতো। কিন্তু কোনোদিন আমার বাবাকে ছেড়ে কোথাও একদিন গিয়ে বেড়াতে পারেনি।"
"ঠিক আছে তোমার মাকে এনেই তোমার সংসারে রাখো। আমি চলে যাচ্ছি।"

সত্যি সত্যিই সেদিন রীমা চলে গেলো সন্তানদের নিয়ে তার বাবার বাড়িতে। আমার প্রচণ্ড অভিমান হলো। আমি মাকে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে এলাম। মা গ্রামে একেলা থাকেন। ছোট ভাই থাকে চট্টগ্রাম, আমি এই পোড়া শহরে, আর আপা থাকেন স্বামী সন্তান নিয়ে দেশের বাইরে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মা একেলা। মাঝে মাঝে রোগে ভোগেন। ছোট ভাই আর আপা সম্পদশালী হওয়ায় তারাই মাকে টাকা-পয়সা দেন। আমি অথর্ব নুন আনতে পান্তা শেষ বলে মাকে তেমন একটা দেখভাল করতে পারি না। ভাবছি এখন একটা সুযোগ পাওয়া গেলো। মায়ের কিছুটা সেবাযত্ন করা যাবে।
মা এসেছেন কয়েকদিন হলো। আমি সারাদিন কাজেকর্মে বাইরে থাকি। মা বাসায় থাকেন, রান্নাবান্না করেন। আমি রাতে এসে খাই। মায়ের সাথে গল্প করি। মায়ের ঝুলিতে যেনো হাজার বছরের গল্প জমে আছে, ফুঁড়ায় না। একটার পর একটা গল্প বের করে আমাকে শোনান। তবে তাঁর সব গল্পই সত্যিকার কাহিনী। যেমন পাশের বাড়ির মেয়েটা ওই বাড়ির ছেলের সাথে ভেগে গেছে, অমুকের ঘরে ডাকাতি হয়েছিলো সোনাদানা মোবাইল টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে, অমুক কাকা মারা গেছেন স্ট্রোক করে, অমুক ভাই তিন-চারটা বিয়ে করেছে। বৌটা কালো কিন্তু কথাবার্তা চালচলনে খুব ভালো, অমুকের ছেলে বিদেশ গিয়ে প্রচুর অর্থ রোজগার করে বাড়ির অবস্থা পাল্টিয়ে ফেলেছে, পাশের বাড়ির সামুদের মা-বউ মিলে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি মারামারি হয়, শ্যামা মাস্টারের মেয়েগুলো সব ভালো ভালো যায়গায় বিয়ে হয়েছে। মাস্টারের ছোট মেয়ে সোনালী এখন কানাডায় স্বামী নিয়ে আছে। যাবার আগে স্ক্যান্ডাল সৃষ্টি করে। মা মজা করে সেইসব স্ক্যান্ডাল আমার কাছে বয়ান করেন।
আমি কিছুটা শুনি আবার কিছুটা শোনার ভাণ করি। মাঝে মাঝে স্ত্রী রীমার কাছে ফোন দেই কিন্তু সে ধরে না। আমার ৭ বছরের কন্যা সন্তান তাসনিম ফোন ধরে। এরপর দেড় বছরের ছেলে সন্তান স্বপ্নিল ফোনে 'আব্বু' 'আব্বু' বলে। ও আর বেশি বলতে পারে না, এইটুকুই তার সম্বল হয়েছে মাত্র। তাসনিম বলে, আব্বু আমরা আবার কবে বাসায় ফিরে যাবো? আমি উত্তর না দিয়ে রীমাকে ফোন দিতে বলি, কিন্তু রীমা কথা বলে না।
একদিন রীমা ফোন করে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। আমি বলি, কী হয়েছে? কাঁদছ কেন? সে কোনো কথা বলতে পারে না। তাসনিম ফোন ধরে বলে, আব্বু আজ না স্বপ্নিল বাবু খাট থেকে পড়ে ঠোঁট কেটে ফেলেছে। তাকে আম্মু হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।
আমি সাথে সাথে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি জরুরি বিভাগে ওরা স্বপ্নিলকে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার স্বপ্নিলের ঠোটে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন। পাশে রীমা বসে কাঁদছে অঝোর ধারায়। আমি স্বপ্নিলকে কোলে তুলে নেই। বলি, আব্বু তোমার কী হয়েছে। সে ইশারায় তার ঠোঁট দেখায়। আমি তাকে আদর করে রীমাকে বলি, "রীমা অনেক হয়েছে এবার বাসায় চলো।"
রীমার কান্না আরো বাড়তে থাকে। সন্তানের প্রতি মায়ের মমত্ববোধ আমাকে আরো ব্যথিত করে তোলে। আমি বুঝতে পারি, আমার মাকে ছেড়ে আমি অনেক দূরে থাকায় আমার মায়ের মনটাও এমনি করে ব্যথিত হয়। সেজন্যেই মা আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করতেন। আমি কিন্তু বুঝতে পারতাম না। আজ বুঝলাম, সন্তানের প্রতি মায়েদের কেন এতো দরদ।
রীমা বাসায় এলো না। সে তার বাবার বাসায়ই চলে গেলো। আমি বাসায় ফিরে এলাম একা। মা জানতে চাইলেন, "বৌমা এলো না কেন?"
বললাম, "সে কয়েকদিন বেড়াবে।"
মা বললেন, "বৌমা তো কখনো তোমাকে ছেড়ে একদিনও থাকেনি, এখন কী হয়েছে?"
"হয়নি কিছুই। মানুষের মন সব সময় তো একরকম থাকে না। মন হলো তরল পদার্থের মতো। রং বদলায়। কখন কোন রং ধারণ করে সে নিজেও জানে না।"
মা হাসলেন। বললেন, "লেখালেখি করতে করতে কিছুটা দার্শনিক টাইপের হয়েছো তুমি। তবে দার্শনিকতা দিয়ে সংসার চলে না। বৌকে ধরে রাখতে হলে সংসারে রোজগার বাড়াতে হয়।"
"মা আমি তো চেষ্টা করি। কিন্তু বর্তমান বাজারের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। আমার আয় আগের মতোই কিন্তু সব জিনিসের দাম হু হু করে বাড়ছে।"
"আমাদের পাশের বাড়ির তাপস তো তেমন একটা পড়ালেখা করেনি। সে তো ভালো রুজি-রোজগার করছে।" মা বললেন।
"সে কী করছো জানেন মা? মালিকের অবর্তমানে সে চুরি করে। আমার বদনসিব যে, বাবা-মা আমাকে চোর, দুর্নীতিবাজ বানায়নি। এগুলো করলে সবই হতো। ঘর থেকে বউ চলে যেতো না।"
মা হাসলেন। আমি বললাম, "হাসছেন কেন মা? এটাই সত্যি কথা। এ সমাজে ভালোভাবে খেয়েদেয়ে বেঁচে থাকতে হলে বর্তমানে আমাদের মতো মানুষদের চুরি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই হয়তো। সৎভাবে আর কতো টাকাই উপার্জন করা যায়?"

মাস তিনেক পরের কথা।
মা কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। পেটে ব্যথা। আমি একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে ঔষধ কিনে দিয়েছি। কিন্তু ব্যথা কমেনি। বরং ক্রমশ ব্যথাটি বাড়ছে।
রাত বারোটা প্রায়। হঠাৎ করেই মা ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। তারপর কাঁদতে লাগলেন। আমি উদগ্রীব হয়ে বললাম, "কী হয়েছে মা?"
"ব্যথা আর সহ্য করতে পারছি না বাবা। অসহ্য ব্যথা।"
আমি বললাম, "মা একটু তেল মালিশ করে দেই? ভালো লাগবে।"
"না-রে বাবা, তেল মালিশে এই ব্যথা মনে হয় ভালো হবে না।" মা কাতর কণ্ঠে বললেন।
তবুও আমি মায়ের পেটে তেল মালিশ করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর মা বললেন, "বাবা, ব্যথা কিছুটা কমেছে।" আমারও ভালো লাগলো মায়ের কিছুটা সেবা করতে পেরে। মাকে বললাম, "মা কিছু খাবে?" মা বললেন, হাঁ যা, খাবো।" আমি মাকে ফ্রিজ থেকে কয়েকটা আপেল কেটে প্লেটে করে সামনে দিলাম। মা তৃপ্তি সহকারে খেলেন। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি সন্তুষ্টচিত্তে। মা বললেন, "বাবা, কি দেখছ এমন করে?"
"মা, আমি ভাবছি ছোটকালে আমি তোমাকে ছাড়া একদণ্ডও থাকতে পারতাম না। কিন্তু এখন পারছি কেমন করে?"
মা একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, "পৃথিবীতে সময়ের প্রয়োজনে মানুষের মনের আবেগ-অনুভূতি বদলাতে থাকে। তখন এমন অনেক কিছুই মানুষ রপ্ত করে নেয়, যা আগে কখনো ভাবেনি। তবে একটা কথা, সবকিছু বদলানো যায়, মা-বাবা ভাই-বোনকে বদলানো যায় না। এরা কখনো পর হয় না।"
"মা, তুমিও তো দেখছি দার্শনিক টাইপের কথা বলছো। তুমি তো লেখালেখি করো না। তাহলে এসব কথা কোথায় পাও?"
মা হাসলেন। বললেন, "বয়স হয়েছে তো! পৃথিবীটা একটা শিক্ষা ক্ষেত্র। এখান থেকে পড়াশোনা ছাড়াই অনেককিছু শেখা যায়।"

পরদিন বিকেলেও আবার মায়ের পেটের ব্যথাটা বাড়লো। আমি অফিসে কাজে ব্যস্ত ছিলাম। মায়ের ফোন এলো। মা বললেন, "বাবা আবার সেই অসহ্য ব্যথা। আর সহ্য করতে পারছি না।"
আমি তাৎক্ষণিক বাসায় চলে এলাম। দেখলাম মা ব্যথায় ছটফট করছেন। আমি মাকে নিয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করালাম। ডাক্তার আমার পরিচিত। তিনি মাকে খুব আগ্রহ করেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালেন। যখন রিপোর্ট তার হাতে এলো তিনি আমাকে ডাকলেন। জানালেন, মায়ের অ্যাপেন্ডিসাইড হয়েছে। জলদি অপারেশন করতে হবে, নতুবা এটি ফেটে গেলে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে।
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। আমি এতো টাকা পাবো কোত্থেকে! যাহোক মাকে এ দুঃসংবাদটি জানালাম না। মা জানতে চাইলেন, রিপোর্টে কী বলা হয়েছে। আমি মাকে বললাম, তেমন কিছু না। সম্ভবত গ্যাস্ট্রিকের জন্যে এমন হয়েছে। কিন্তু মনে মনে চিন্তায় পড়ে গেলাম।
পরদিন রীমার ফোন এলো। সে জানালো, গতকাল সে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, দু'দিন আর টাইম আছে। এর মধ্যে তার গর্ভের বাচ্চা অটোম্যাটিকলি ভূমিষ্ঠ না হলে সিজার করতে হবে।
আমি ভাবলাম আমার জীবনের চরম পরীক্ষার সময় এসেছে। এখন আমার কী হবে? আমি কোন দিকে যাবো? স্ত্রীর সমস্যার সমাধান করবো, না মায়ের? আমার হাতে হাজার দশেক টাকা আছে। এ দিয়ে কারোরই তো সমস্যার সমাধান হবে না। বাকি টাকা আমি পাবো কোত্থেকে? যা হোক আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলাম বার বার। সব সমস্যার সমাধানের মালিক তো মহান আল্লাহ।
পরদিন মায়ের কাছে গেলাম। মায়ের পেটে ব্যথা কমছে না। ডাক্তার ইনজেকশন ঘুমের দিয়েছেন। মা ঘুমাচ্ছে।
আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম। জানতে চাইলাম, মায়ের অপারেশনে কতো টাকা লাগবে? তিনি জানালেন, বিশ হাজার টাকার বেশি লাগবে। রাতে আমার ঘুম এলো না। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম। কী করবো? টাকা কোথায় পাবো? মায়ের তো জলদি অপারেশন দরকার। না হলে মাকে হারাতে হবে। অন্যদিকে মায়ের পেছনে টাকা খরচ করে ফেললে যদি রীমাকে সিজার করতে হয়, তাহলে তো টাকার জন্যে তা' করতে পারবো না। এখন উপায়?
আমি আমার বিবেকের দ্বারস্থ হলাম। তাকে প্রশ্ন করলাম, এ মুহূর্তে কার সমস্যার সমাধান করা আগে জরুরি? আমার বিবেক বললো, তোমার মা আগে। কারণ নবীজী মায়ের অধিকার সম্পর্কে তিনবার বলেছেন। বাবার সম্পর্কে একবার। সেজন্যে মায়ের চিকিৎসা আগে জরুরি। মা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ সম্পদ। স্ত্রীকে হারালে পাওয়া যাবে। কিন্তু মাকে হারালে মা পাওয়া যাবে না।

আমার চোখের সামনে বাল্যকালের কিছু এলোমেলো স্মৃতি ভেসে উঠলো। দেখা গেলো, আমার মা কয়েকটি গাছ বিক্রি করে আমার হোস্টেলে থাকার জন্যে টাকা দিচ্ছেন। একদিন আমি কাউকে না বলে, বড় আপার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম, পরদিন বাড়িতে এসে দেখি মা উঠোনের মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদছেন আর হায়-হুতাশ করছেন। আমাকে কাছে পেয়ে তিনি যেন সাত রাজার ধন হাতে পেলেন। আমাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। বললেন, বাবারে আজ দুইদিন তোকে না পেয়ে কিছুই খাইনি।
আমি পরদিন হাসপাতালে মায়ের কাছে এলাম। মা শুয়ে আছেন। আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম। তাকে দশ হাজার টাকা দিয়ে বললাম সম্ভব হলে আজই অপারেশন করার জন্যে। বাকি টাকা আমি জোগাড় করছি।
পরদিন ছোট ভাইয়ের কাছে ফোন করলাম দ্রুত আসার জন্যে। সে এলো। তখন মায়ের অপারেশন চলছে। সে আমার হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে বললো, ভাইয়া টাকাটা রাখুন। আর যা লাগে আমি দেবো।
আমি বললাম, ''আমি আগেই টাকা ডাক্তারকে দিয়ে দিয়েছি। টাকা লাগবে না। তবুও সে জোর করেই আমার পকেটে দশ হাজার টাকা গুঁজে দিলো।
মায়ের অপারেশন হয়ে গেলো। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর মায়ের জ্ঞান ফিরল। মা এখন সুস্থ। কথাবার্তা বলছেন। ছোট ভাইকে দেখে মায়ের মনটা খুশিতে ভরে গেলো। মা ছোট ভাইয়ের চোখের পানি মুখে বললেন, "দেখছিস শাওন। তোর বড় ভাই অপারেশনের আগেও আমাকে জানায়নি আমার কী হয়েছে। সে বলছে এটা নাকি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। অথচ আমাকে অজ্ঞান করে অপারেশনই করিয়ে ফেললো!"
"আপনাকে বললে হয়তো আপনি নার্ভাস হয়ে যেতেন। তাই বলেনি। এখন কেমন লাগছে?" শাওন বললো।
"আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহুর রহমতে ভালো।" মা উত্তর দিলেন।

এদিকে রীমার ফোন এলো। সে সুসংবাদ জানালো। বললো, কিছুক্ষণ আগেই নরমালি সে পুত্রসন্তান প্রসব করেছে, দেখে আসার জন্যে।
মা ও ছোট ভাই জিজ্ঞেস করলো, বৌমার কী বলেছে? আমি তাদেরকে সংবাদটা জানালাম। মা শয্যায় শুয়ে থেকেও হাসলেন। বললেন, আমি যেতে পারলে এখুনি ছুটে যেতাম। তোমরা দু'ভাই যাও। দেখে আসো আমার নাতিকে।
আমরা ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তান রীমার কোলে। আমি তাকে কোলে নিতে চাইলাম। রীমা বললো, না। দেবো না। এটা তোমার নয়, আমার একার বাচ্চা। তুমি কতো স্বার্থপর। এ সময়ে তুমি কাছে থাকলে না। আমি না হয় অভিমান করেছিলাম। কিন্তু তোমার তো দায়িত্ব ছিলো আমার পাশে থাকা?
আমি মায়ের ঘটনা বিস্তারিত তাকে বললাম। সে বললো, "আমি সুস্থ থাকলে এখনই মাকে দেখতে যেতাম।"
আমি তাকে জানালাম, আমার মা-ও একই কথা বলেছে। আসলে তোমরা মেয়েরা সবাই একই কথা বলো।
রীমা হাসলো। বললো, "আমরা মায়ের জাত তো। তাই আমরা সবাই একই কথা বলি।"

রীমা সন্তানকে আদর করছে। এমন সময় ছেলেটি তার কোলে প্রাকৃতিক কর্ম সেরে ফেললো। কিন্তু তাতে তার কোনো বোধোদয় হলো না।
আমি ভাবতে লাগলাম, আমার মা-ও তো এমনভাবেই আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। কতো দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন। অথচ বড় হয়ে আমি তার কতটুকুই মূল্যায়ন করতে পেরেছি। আমি জানি, সারাজীবনেও মায়ের কষ্টের এই প্রতিদান আমি দিতে পারবো না।
রীমাকে বললাম, "হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কোথায় যাবে? বাপের বাসায়, না নিজের বাসায়?"
"অবশ্যই নিজের বাসায়।" ছোট ভাই শাওন বললো। "ভাবীকে না নিয়ে তো আমি খালি বাসায় যাবো না। দরকার হলে ফিরে চট্টগ্রাম চলে যাবো। তাই না ভাবী?"
"আপনি যখন এসেছেন, তখন তো অবশ্যই যেতে হবে। না গিয়ে আর উপায় আছে? আপনাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে না?" খিলখিল করে হাসতে লাগলো রীমা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা বন্ধু, পাঠক, ভোটার শুভাকাঙ্খিদের প্রতি রইলো শুভাশিষ ও মোবারকবাদ। এছাড়াও আমাকে যারা অনুপ্রাণিত করেছে, ভালোবাসা স্নেহ দানে আবদ্ধ করেছে তাঁদের প্রতি রইলো অশেষ কৃতজ্ঞতা। সবশেষে গল্প-কবিতাকে অনেক কষ্ট, ব্যয় ও পরিশ্রমের ফলাফল সুন্দর আয়োজনের জন্যে থাকলো অফুরন্ত ভালোবাসা।------ মিজানুর রহমান রানা।
মিজানুর রহমান রানা রফিকুজ্জামান রণিসহ সকল মন্তব্যকারীকে অনুপ্রাণিত করার জন্যে মোবারকবাদ। আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য, আলোচনা-সমালোচনায় আমাদের পথচলা ও সাহিত্যচর্চা সহজ হবে। আল্লাহ্ আপনাদের মঙ্গল করুন। -----রানা।
রফিকুজ্জামান রণি সুন্দর করে একটা জীবনের গল্প তুলে ধরেসেন সে জন্য আপনাকে সালাম.
ইমরুল হাসান অত্যন্ত ভালো লাগলো গল্পটি। সৃষ্টিকর্তা ও নবীর পরেই মা-বাবার স্থান। তাকে মাকেই আগে প্রাধান্য দেয়া উচিত। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত।
মিজানুর রহমান রানা মোহা. তাহেরুল ইসলাম ভাই, মানুষের জীবন নিয়েই গল্প হয়। আশেপাশে চারপাশে যা দেখি, শুনি তাই নিয়ে গল্প লিখি। এর মাঝে কল্পনারও আশ্রয় থাকে। ------- রানা
শিশির সিক্ত পল্লব ভাই,কমেন্ট গুলো মুছলেন কেন.....আমি এমনিতেই বলেছিলাম.....আপনি অনেক ভাল মানের লেখক...আপনার লেখার গতিই আলাদা...জয় আপনার একদিন হবেই...আপনার প্রতিটি লেখাই ভাল লেগেছে এবং প্রতিটাতেই ভোট করেছি
মোহা. তাহেরুল ইসলাম ভাই, আপনার পরিচিত কারো জীবন থেকে নেয়া নাকি গল্পটা, বর্ণনা একেবারে প্রাঞ্জল l ভালো লাগলো l ধন্যবাদ l

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪