বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং আমাদের ক্রিকেট খেলা

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

মিজানুর রহমান রানা
  • ৪৮
  • ৩০
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর চলছে আমাদের দেশে। আমরা কোনোদিনও কি ভেবেছি আমাদের দেশেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে? অথচ আমাদের ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের ফলে সেটি বাংলাদেশের মাটিতেই হচ্ছে। একটা-দুটো ম্যাচে বাজেভাবে বাংলাদেশ হারায় অনেকেই গালাগাল করছিলো 'ভীতু বাঙালি বলে'। অথচ আমাদের সোনার ছেলেরা পরপর ইংলিশ ম্যান ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে প্রমাণিত করে দিলো 'আমরাই টাইগার'। আমরা হারতেও জানি আবার বাঘের মতো বিজয়কে ছিনিয়েও আনতে জানি। কারণ 'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি'- সেটা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই বলে গেছেন। আমাদের দোষ কী? তাই বাদল দেখে আমরা ভয় পাবো না। তার কোলেই সূর্য হাসছে বলে আমরাও আমাদের বিজয়ের লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাবো চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্যে। জয় বাংলার জয়, জয় বাংলার সোনার ছেলে টাইগারদের জয়। বিজয় আমাদের হবেই।

ক্রিকেট আমার পছন্দের একটি খেলা। ছোটকাল থেকেই আমি ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী। তাই ক্রিকেট নিয়ে আমার স্মৃতির আয়নায় অনেকগুলো ইমেজ জমে আছে। সেগুলো আজ বলছি।

তখন ১৯৮৯ সাল। আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের স্কুলের সামনেই ছিলো প্রকাণ্ড এক মাঠ। সেই মাঠে আমাদের টিম খেলতো রোজ বিকেলে। আমাদের টিমে আমরা ছাড়াও আমাদের জুনিয়র অনেকে ছিলো। তারা আমাদের কাছ থেকে ক্রিকেট সম্পর্কে এটা সেটা জেনে নিতো। একদিন ক্রিকেট খেলছি। আমি ব্যাট করছি। মাঝে মাঝে ছক্কা হাঁকাচ্ছি। আমার ছক্কা মারা দেখে দর্শক ছেলে-ছোকরারা আনন্দে মশগুল। খেলার শেষে ঘটলো এক অবাক কাণ্ড। আমি খেলা শেষ করে স্কুল মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, এমন সময় আমাদের হোস্টেল সুপার আলী নেওয়াজ স্যার আমাকে ডাকলেন। আলী নেওয়াজ স্যার ছিলেন আমাদের কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। তিনি আমাদের ক্লাসে ইংরেজি গ্রামার পড়াতেন এবং সাথে করে দুটি বেত বা জোড় বেত নিয়ে আসতেন। কেউ পড়া না পারলে তাকে ইচ্ছেমতো রামধোলাই দিতেন যে, বাপের জন্মে আর পড়া মুখস্থ না করে সে কোনোদিন স্কুলে যেতো না।
যাই হোক স্যার আমাকে ডাকার সাথে সাথে আমার হৃদয় কম্পমান হলো। আমি ভাবলাম, হয়তো অসময়ে খেলার জন্যে স্যার আমাকে তিরস্কার অথবা বেত্রাঘাত করবেন। আমি দুরী দুরু বুকে স্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
স্যার বললেন, 'ওই বান্দর তোর সাথের বান্দরগুলো কই?'
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, 'স্যার ওরা মাঠে খেলছে।'
স্যার যেন হুংকার ছাড়লেন, 'ওদের ডাক।'
আমি মাঠে গিয়ে সবাইকে ডেকে স্যারের কাছে নিয়ে এলাম। আমার খেলার সাথীরাও ভয়ে ভয়ে স্যারের কাছে এসে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো।
স্যার আমাকে বললেন, 'তুই একটু আগে মাঠে কী করছিলিরে বান্দর?'
'স্যার খেলছিলাম।'
'কী খেলছিলি?'
'ক্রিকেট স্যার।'
'হুঁ' বলে স্যার একে একে সবার দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, 'একটা বেত নিয়ে আয়।'
আমি ও আমার খেলার সাথীরা তো ভয়ে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হবার জোগার। কারণ যমে ধরলেও নাকি ভুলেভালে ছেড়ে যায়। কিন্তু স্যারে ধরলে একটা বেতের মারও ফস্কায় না। বরং যদি ফস্কে যায়, তাহলে এর বিপরীতে ডাবল ভাগ্যে জোটে।
আমি গিয়ে একটা বেত নিয়ে এলাম। স্যার বেতটা নিয়ে সাপের জিহ্বার মতো নাচাতে নাচাতে আমাদের সামনে এলেন। তারপর আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, 'শুধু একলা একলা ক্রিকেট খেলছিস কেন?'
'স্যার আমরা তো একলা খেলছি না। এগারজন মিলে খেলি। পুরো টিম।'
'হাঁ যা, বুঝেছি। এগারজন সোনার ছেলে মিলে ক্লাস শেষ না হতেই খেলা শুরু তাই না?'
'না স্যার, ক্লাস তো শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তারপরই আমরা খেলতে নামলাম।'
'শোন, তোদের একটা আনন্দের খবর আছে।' স্যার বেতটা টেবিলের ওপর রেখে বললেন, 'এভাবে একেলা নিজেরা নিজেরা খেলে তোদের খেলার উন্নতি হবে না। শোন, টাকা-পয়সা আমি ম্যানেজ করবো, তোরা এবার একটা ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন কর কয়েকটা স্কুলের সাথে। দেখবি এভাবে তোদের খেলার উন্নয়ন হবে।'
আমরা তো বিস্ময়ে হতবাক। বলে কি স্যার। আমি স্যারের সামনে বেতটার দিকে তাকিয়ে বললাম, 'স্যার তাহলে এ বেতটা কেন?'
স্যার বললেন, 'ওই প্রতিযোগিতায় যদি তোদের খেলার উন্নয়ন না হয় তাহলে এই বেতটা তোদের বড়ই কাজ দেবে। বুঝলি? তোদের পিঠেই বেতটা ভাঙবো।'

মাস খানেকের মধ্যেই আয়োজন হলো প্রতিযোগিতার। ৮/১০টি স্কুল যোগ দিয়েছে আমাদের সাথে। একে একে সবার সাথে আমরা প্রতিযোগিতায় জিততে লাগলাম। স্যারও আমাদেরকে মাঝে মাঝে ডেকে এনে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় অর্থ বিতরণ করতেন।
নির্ধারিত দিনে ফাইনাল খেলা। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী স্কুল ছিলো আমাদের গ্রামেরই পাশের একটি স্কুল। খেলা শুরু হলো। ওরা প্রথমে ব্যাট করে পুরো ওভার শেষ করে ১৭৫ রান করলো। এবার আমাদের পালা। আমাদের ব্যাটের শুরুতেই নামলো তাপস সাহা। সে মাত্র ২ রান করেই রান আউট হলো। এরপর এরশাদ নামলো। এরশাদ করলো ১২ রান। এরপর নামলাম আমি। আমি করলাম ২৯ রান। কিন্তু বিধিবাম জোরে বল হাঁকিয়ে ছক্কা করার চিন্তা মাথায় আসতেই মারলাম একটা। বলটা উড়ে গিয়ে বাউন্ডারি এক গজ ভেতরেই ক্যাচ আউট হলো। সেই সাথে আমিও আউট হলাম।
আমাদের সমর্থকদের আনন্দে ভাটা পড়লো। নীরব হয়ে গেলো দর্শকরা। এমন সময় নামলো আমার ছোট ভাই শাওন। সে তেমন একটা ভালো খেলতো না। তাই তাকে নিয়ে আমাদের তেমন একটা চেতনবোধ হলো না। ভাবছিলাম আমরা সম্ভবত হারবোই।
কিন্তু না। যা দেখলাম তাতে রীতিমতো অবাক হবারই কথা। আমার ছোট ভাইটির হাতে যেন আগুনের কুণ্ডলী বইছে। পর পর দুটো ছক্কা মেরেছে সে। দর্শকরা আনন্দে নাচতে নাচতে যেন মাঠের ভেতরে পড়ে যাচ্ছে। একজন দর্শক একশত টাকার একটি নোট হাতে নিয়ে নাচাচ্ছে আর বলছে আর একটা ছক্কা করতে পারলে টাকাটা তোমার পকেটে যাবে।
পরের বলে কোনো রান হলো না। এরপরের বলেও না। কিন্তু হঠাৎ করেই পরের বলটির একটি আওয়াজে দর্শক চমকে উঠলো। সবাই অবাক হয়ে দেখলো সেটি সোজা উড়ে গিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পড়েছে।
মাথার ঘাম তার পায়ে পড়ছে। তবুও সেদিকে খেয়াল নেই। যেন বড় ভাইয়ের রান আউটের প্রতিশোধ নিতেই সে মরিয়া হয়ে ছক্কা হাঁকাচ্ছে।
সেই মুহূর্তেই ১০০ টাকার নোটটি এসে শাওনের পায়ের কাছে পড়লো। এবার শাওন যেনো জ্বলে ওঠলে খেলায়। রানের বন্যা বইয়ে দিতে লাগলো। দর্শকের মনের আকুতি তার হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বল কাছে পেলেই সেটিকে সোজা বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দেয় সে।
দর্শকের সেকি উত্তেজনা। ক্রমে ক্রমে খেলতে খেলতে সেঞ্চুরি পূর্ণ করলো সে এবং আমরাই বিজয়ী হলাম ওই প্রতিযোগিতায়।
ম্যাচ শেষে আলী নেওয়াজ স্যার যেন শাওনকে মাথায় করে তার রুমে নিয়ে এলেন। পেছনে পেছনে উচ্ছ্বসিত বালকরা ইচ্ছেমতো নাচানাচি করছে আনন্দ-উত্তেজনায়। স্যার রুমে আমাদের নিয়ে এসে সবাইকে মুড়ি ও সন্দেশ খেতে দিলেন। তিনি এতোটাই খুশি হয়েছিলেন যে, আমরা যে তার ছাত্র সেটিও তিনি প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন।

স্যার আজ জীবিত নেই, কিন্তু স্যারের সেই অনুপ্রেরণা ও ক্রিকেট ভালোবাসার কথা আমরা কোনোদিনও ভুলবো না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা বিজয়ীদেরকে উষ্ণ অভিনন্দন- রানা
মিজানুর রহমান রানা বিন আরফান, শুকরিয়া আপনাকে। আপনার জীবনও হোক অসাধারণ। মিজানুর রহমান রানা
বিন আরফান. হৃদয় ছুয়ে যায়. অসাধারণ.
মিজানুর রহমান রানা স্বপ্ন এসে ঘুম ভাঙিয়ে যায় ভালোবাসা নাড়া দিয়ে যায় মেঠো পথে ডাকে কোকিল কুহু তবুও বেদনা অন্তহীন মুহুমূহু। ----মিজানুর রহমান রানা
মিজানুর রহমান রানা রওশন জাহান আপনাকে ধন্যবাদ
মিজানুর রহমান রানা প্রিয় শিল্পী যুথিকা বড়–য়া গল্প-কবিতার আসরে আপনার আগমন শুভ হোক। আপনাকে পেয়ে আমরা গর্বিত। মিজানুর রহমান রানা
রওশন জাহান ভালই লাগলো.
যুথিকা Barua খুব সুন্দর লেখা. ভালো লাগলো.
মিজানুর রহমান রানা প্রিয় নাজমুল হাসান, আপনার মন্তব্যকে স্বাগত জানাই। কারণ কোনো কবি-লেখকের কবিতা বা রচনা পাঠ না করেই ‘অসাধারণ’ উক্তি যথাযথ নয়। শুধুমাত্র পাঠ করেই ভালোলাগা ও দুর্বল দিকটি ফুটিয়ে তোলা উচিত বলেই আমি মনে করি। ---------- মিজানুর রহমান রানা।
মিজানুর রহমান রানা Md. Akhteruzzaman আপনের সুভো কামনা

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪