শেষ চিঠির গল্প

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

অন্তর মাশঊদ
  • ৩৬
মা
আমার লেখা এই চিঠি যখন তোমরা পাবে ততদিনে আমি আর এই দুনিয়া ছেড়ে অন্য ভুবনে। মাগো তোমার ছেলে আজ মৃত্যুপথ যাত্রী। মরণব্যাধি কান্সার আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। অনেক আশা নিয়ে তোমরা আমাকে পাঠিয়েছ ঢাকায় পড়াশুনা করতে। ভালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলাম অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত। তখন হঠাৎ আমার জীবনে অপছায়া হয়ে আসলো সে। টানা ৬ মাস সেই অপছায়া আমাকে তার মায়াজালে জড়ানোর অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে গেল। কিন্তু, আমি তার ডাকে সাড়া দেইনি। কারণ, তোমরা আমাকে ঢাকায় পাঠিয়েছ পড়াশুনা করতে। অবশেষে, সে ব্যাবহার করলো সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আত্মহননের পথ। মাগো আমার সাথে তার কখনো দেখা হয়নি কিন্তু সে এতবড় একটা কাজ ঘটিয়ে ফেললো যে আমি ভয়ই পেয়ে গেলাম। অসুস্থ তাকে দেখতে গেলাম তার বাসায়। এ যাত্রা সে বেঁচে গেছে। আমিও তো মানুষ , যে মেয়ে আমাকে না দেখে নিজেকে শেষ করে দিতে পারে তার ভালবাসায় কিভাবে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারি। ঠিক সেদিন থেকে তাকে আমি আমার মন দিয়ে দেই। এভাবে চলতে থাকে টানা ৫ মাস। ওর বাবা-মা ও আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল। খুব ভালই কাটছিল আমার মধুর সম্পর্ক। হঠাৎ ঘটলো অঘটন ধীরে ধীরে সে আমাকে এড়িয়ে চলতে লাগল। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম সে আমার সাথে এমন কেন করছে? সে জানালো, আমি তাকে যেদিন প্রথম ভালবাসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি সেদিন থেকে আমাকে ভালবাসার জালে জড়িয়ে কাঁদাবে বলে প্রতিজ্ঞা করে। যার জন্য সে আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজ করে আমাকে তার জালে জড়ায়। আমি অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমি ওর মা-বাবাকে জানালে তার মা-বাবা জানায় তাদের মেয়ে ছোটবেলা থেকে যা জিদ করেছে তাই পেয়েছে। এবং ওর মানসিক সমস্যা রয়েছে তাই তারা মেয়েকে কিছু বলে না। একদিন আমি ওর সাথে দেখা করতে গেলে সে রেগে যায় এবং বলে আমি যদি আবার এখানে আসি তাহলে সে আত্মহত্যা করবে। ওর বাবা আমাকে দারোয়ান দিয়ে সেদিন বাড়ি থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় আর ওর মা আমাকে ফোন দিয়ে কসম দেয় আমি যেন আর কখনো ওর সামনে না আসি। মাগো কিছুতেই ওকে আমি ভুলতে পারছিলাম। ওর স্মৃতি ভোলার জন্য ধীরে ধীরে আমি জড়িয়ে পড়ি মরণ নেশার জগতে। মা তোমরা আমাকে প্রতি মাসে পড়াশুনার জন্য যে ৮ হাজার টাকা পাঠাও তা দিয়ে আমি এই নালায়েক নেশা করি। অনেক ভেবেছি আমি যা করছি তা ঠিক না। তোমরা কত কষ্ট করে আমাকে টাকা পাঠাতে। মা এখন আমি থাকি তেজগাঁও রেলবস্তিতে সেখানে একটা ঝুপড়ীতে থাকি কারণ এখানে সব নেশার বস্তু সহজলভ্য। আর আমার বন্ধুরা তো আমাকে পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। যদিও এখানে থাকার আরেকটা কারণ আছে সেটা হলো ও এদিক দিয়ে প্রতিদিন দুবার আসা যাওয়া করে। এভাবে কেটে গেলো ২ বছর। মা ২ বছর হল তোমাদের দেখিনা। কিন্তু তোমরা টাকা আমার ঠিক আগের মত পাঠাও যা দিয়ে আমি আজও নেশা করেছি। গত একমাস হল আমার রক্তবমি হয় এখানে বস্তির এক খালা আছে যে আমার রান্না করে দেয় সে আমাকে জোর করে হসপিটালে নিয়ে যায়। দুদিন ছিলাম ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায় আমার লিভার কান্সার হয়েছে, শেষ পর্যায়ে। চিকিৎসা করে কোন লাভ হবেনা। মা তার পর তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমাকে দেখলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে তাই যাবনা। এখানকার খালা বলল তোমাদের কাছে চলে যেতে। কিন্তু আমি যাবনা কারণ তোমরা আমার অসুখের কথা জানলে আমাকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করবে সব কিছু বিক্রি করে। আমি চাই না আমার জন্য তোমরা পথে নামো। তুমি মা এখন কাঁদছ আর মেয়েটিকে অভিশাপ দিচ্ছ। দিওনা মা কারণ আমি ওকে অনেক ভালোবাসি আর ওর ক্ষতি চাই না। মা পারলে তোমার এই অপরাধী ছেলেকে মাফ করে দিও যে তোমাদের দেওয়া উপহার এই জীবনের মূল্যায়ন করেনি।
ইতি তোমার ছেলে
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইদুল আলম সিদ্দিকী ভালো লিখেছেন; চিন্তাটাও সুন্দর...
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৫
শেখ শরফুদ্দীন মীম অন্যরকম ভাবনা। শুভেচ্ছা রইল। আমার ছোট্ট লিখাটুকু সময় করে পড়বেন।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভাই।আমার কবিতা ও গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল।
জুন শুরুটা খুবই ভালো ছিল। ভালো লাগা রেখে গেলাম। আমার পাতায় নিমন্ত্রণ।
সৃজন শারফিনুল আসাধারণ ভোট রইলো,...

২১ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪