তোমারই বিরহে রহিব বিলন

ক্ষোভ (জানুয়ারী ২০১৪)

রিঙ্কু দাস দেবাশীষ
  • ১২
দোস্ত দেখ দেখ এই ছবিটা । এইটাই পারফেক্ট । এই রকম একটা ছবিই আমি অনেক দিন ধরে ম্যাগাজিনের কভার পেজ এর জন্য খুঁজতেছিলাম। এত দিনে পেলাম। দীপ্তর হাত থেকে ছবিটা কেড়ে নেয় ওর বন্ধু। একটা মেয়ের ছবি। পুরু শরীরটা নেই। শুধু মাত্র মুখখানা। মনে হচ্ছে পহেলা বৈশাখের দিনের তোলা ছবি। গালের এক পাশে খুব সুন্দর করে আলপনা আঁকা। মুখ চুলের সাজ দেখেই বুঝা যায় কত সুন্দর আর রুচিশীল একটা মেয়ে। টানাটানা চোখে মোটা করে কাজল টেনে দেয়া। গোলগাল মুখ, আসম্ভব সুন্দর পাতলা ঠোঁটের ভুবন ভুলানো হাসি যে কোন ছেলের হৃদয়ে ঝড় উঠানোর মত। সুন্দর এবং গভীর আবেদন সৃষ্টিকারী চোখ দেখলেই গভীরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। চেহারায় আভিজাত্যের ছোঁয়া । যার ছবি এত সুন্দর সে না জানি কত সুন্দর হবে। দীপ্তের চিৎকারে ওর বন্ধু এই জগতে ফিরে এলো। সে জানায় মেয়েটাকে কখনো দেখেনি কিন্তু মুখে মুখে অনেক চিনে। মেয়েটার নাম মায়া। ক্যাম্পাসের বড় ভাই থেকে শুরু করে ক্লাসমেট সবাই মায়া বলতেই অজ্ঞান। আজ দীপ্তের বন্ধুটি বুঝল কেন সবাই মায়া মায়া করে। দীপ্ত সব শুনে হাসল আর বলল কোনদিন দেখলে মায়ার কথা মনে করিয়ে দিতে। অবশ্য মনে থাকবে এমনি। মায়াকে কোন ছেলে একবার কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখলেই সারা জীবন মনে করে করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলবে। তবে মেয়েটি যেহেতু প্রতিদিন ভার্সিটিতে ক্লাস করতে আসে কাজেই দেখা পাওয়া তেমন কষ্টের হবে না। কথা বলাটাই যত সমস্যা । সব সময় সাথে দুই তিনটা মেয়ে নিয়ে ঘুরে। দেখলে মনে হয় বডি গার্ড বানিয়ে রেখেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা মায়া যা ভাবে থাকে। দীপ্তের ভয় কথা বলতে গিয়ে নিজেই যদি অপমানিত হয়ে ফিরে আসে। দীপ্ত এর বন্ধু পরামর্শ দেয় যদি সে তার ছবিটি মায়াকে উপহার দেয় তাহলে হয়ত এত সুন্দর ছবি পেয়ে বন্ধুত্ব করবে। দীপ্তের এই রকম বাংলা সিনেমার মত কিছু করার ইচ্ছা নেয়। ও খুব ভাল করেই জানে মায়ার মত মেয়েরা এসবে অভিভূত হয় না। এমন কিছু করতে হবে যাতে মেয়েটি নিজে থেকে এসেই ওকে খুঁজে । এই সুযোগ পরে ও বের করে নিবে কিন্তু এই ছবিটিকে ও ম্যাগাজিনের কভার পেজ করবে। ।ওর বন্ধু ছবিটার দিকে অনেকক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপরে জানতে চায় ছবিটা কে উঠিয়েছিল । দীপ্ত একটু চিন্তা করে বলে মনে হচ্ছে তার হাতের ছবি।

ম্যাগাজিনটি বের হয় কিছুদিন পরে। অনেক জনপ্রিয়তা পায় দীপ্ত । ফটোগ্রাফি নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। কভার পেজে মায়ার ছবি দেয়াতে অনেক মেয়ের কাছে সমালোচিতও হয় অনেক। দিপ্ত খুব ভাল করেই জানে ভাল কাজের আলোচনা এবং সমালোচনা থাকবে এতাই স্বাভাবিক। একদিন এক পড়ন্ত বিকালে সারাদিন ক্লাস করে খুব ক্লান্ত হয়ে দীপ্ত লাভ টাওয়ারে বসে গোঁধলি লগ্নের ছবি
উঠাচ্ছে এমন সময় ও ক্যামেরার স্কিনে ও ক্ষণিকের জন্য সেই মায়ার মুখখানা ভেসে উঠতে দেখল। দিপ্ত খুব অবাক হল। আস্তে আস্তে সরে গেল। দীপ্ত ভাবল মনের ভুল । হঠাৎ ও কাঁধে একটা কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করল। ঐই কুসুম কোমল হাতের স্পর্শে ওর সারা শরীর কেঁপে উঠল। দীপ্ত ভয় পেয়ে ঘুরে তাকায়। তাকিয়ে ওর উল্টিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। সাক্ষাৎ ডানাকাটা পরী ওর সামনে দাঁড়ানো। ছবির চেয়ে হাজার হাজার গুন সুন্দর। দীপ্ত কোন কথা খুঁজে পায় না। মায়া নিজে থেকেই বলে কভার পেজটা অনেক সুন্দর হয়েছে। কিন্তু কারো ছবি ব্যাবহার আগে তার অনুমতি নেয়া উচিত। তবে সাধারণত মায়ার ছবি তেমন ভাল আসে না। কথায় আছে সুন্দরীদের ক্যামেরা ফেস তেমন ভাল হয় না। ওর ও তাই, কিন্তু দীপ্তের ছবিটা খুব পছন্দ হয়েছে তাই ওকে দিয়ে কিছু ছবি উঠাতে চায়। দীপ্ত খুব ভাল করেই জানে এই রকম সুযোগ জীবনে আর আসবে না। ছবি উঠাতে উঠাতে যদি নিজের জীবনের ছবি বানিয়ে ফেলা যায় তাহলে মন্দ হয় না। দীপ্ত একবাক্যে রাজি হয়ে গেল।

আস্তে আস্তে দীপ্ত এবং মায়া অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল। দীপ্ত মায়ার প্রেমে পাগল প্রায়। অনেক ভেবে চিনতে ঠিক করে মায়াকে অফার করার। দীপ্ত ভাবে মায়াও ওকে অনেক ভালবাসে। কারণ বেশির ভাগ সময় মায়া দীপ্তের সখ্য কামনা করে। নিজের ক্লাস ফেলে দীপ্তের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারে। দুজনেরই রেজাল্ট মারাত্মক খারাপ হচ্ছে। দীপ্ত ভাল ফটোগ্রাফির কল্যাণে আর মায়া মিডিয়াতে কাজ করার কারণে টিচারদের কথা শুনার হাত থেকে বেঁচে যায়। মায়া তেমন কারো সাথে মিশে না। দীপ্তই ওর সব। মায়া দীপ্ত ছাড়া ভার্সিটি চিন্তাই করতে পারে না। তাই মায়ার লাইফে দীপ্তকে খুব দরকার। দীপ্ত সুন্দর একটা দিন দেখে অনেক গুলো সাদা অর্কিড নিয়ে মায়াকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। মায়া তো আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা। দীপ্ত ভাবল মায়া সবসময়ের মত ভাব নিচ্ছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারল মায়া সিরিয়াস। সে দীপ্তকে জানায় তার প্রতি মায়ার কোন ফিলিংস নায়। সে সমবয়সি কারো সাথে সম্পর্ক করবে না। আর ডাক্তার ছেলে প্রথম পছন্দ। কৃষি ভার্সিটির সবাই ডাক্তার হতে চেয়েছিল। কিন্তু কপালের কারণে কৃষিবিদ হতে হচ্ছে। এমনকি দীপ্তও চায়নি। দীপ্ত কিছু না ভেবে রেগে বলে তাহলে ওর ভাই সামনে বিয়ে করবে এবং ডাক্তার, তার সাথে সম্পর্ক করতে। মায়া ডাক্তার শুনে আগ্রহ দেখায়। দীপ্ত ভাবে মায়া হয়তো দুষ্টামি করেছে। তাই দীপ্ত ওর বড় ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারটি মায়াকে দিয়ে দেয়।
মায়া আর দীপ্তের সম্পর্ক আগের মত চলতে থাকে। দীপ্তের প্রতি আগের চেয়ে অনেক বেশি খেয়াল রাখে একটু বড় বড় ভাব নিয়ে কথা বলে। দীপ্ত ভাবে হয়তো আস্তে আস্তে ওকে ভালবাসতে শুরু করেছে। দিনগুলো চরম কাটছে ওদের। দুই জন একসাথে গ্রুপ স্টাডি করে। পরীক্ষার হলে পাশাপাশি বসে। অবসর সময় দুজন আড্ডা মারে অথবা ফাঁকা ক্লাসের দুই প্রান্তে বসে দুজন দুদিকে মোবাইলে কথা বলে। এর ফলে রেজাল্ট খুব একটা খারাপ হয় না দুজনের। একই ধরণের রেজাল্ট। মায়াদের বাসায় ও আসা যাওয়া শুরু করে সে। মায়াকে অনেক চেঞ্জ মনে হয়। আগের মত দীপ্তর সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করে না। কেমন যেন তেলিয়ে চলে। দীপ্ত ভয় পায় মাঝে মাঝে কারণ অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
একদিন সকালে ক্লাসে এসে মায়া জানায় ও সেইদিন ক্লাস করবে না। ফ্রেন্ডের সাথে বেরুবে। দীপ্ত কিছুই বলে না জানতে ও চায় না কোথায় কার সাথে বের হবে। কারণ ও কখনোই কাউকে প্রশ্ন করে না। বের হয়ে যাওয়ার সময় বলে দেয় রাতে যাতে মনে করে ওদের বাসায় আসে। কেননা আজ ওর ভাইয়ার জন্মদিন সে উপলক্ষে বাসায় পার্টি হবে সব ফ্রেন্ডরা আসবে। মায়া জানাল ওর মনে আছে ব্যাপারটা তাই আসবে কোন সমস্যা নেই।

দীপ্ত ভার্সিটি থেকে বাসায় গিয়ে দেখল মোটামুটি গেস্টরা আস্তে শুরু করেছে। আসলে জন্মদিনের চেয়ে বড় হল ফ্যামিলি মিটিং আর কিছু না। যেহেতু ওর ভাইয়ার জন্মদিন তাই ভাইয়ার রুমটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। কোন বোন না থাকার কারনে এসব গোছানোর কাজটা ছোট বেলা থেকেই দীপ্ত করে। আর ওর একমাত্র ভাইকে অনেক পছন্দ করে বলেই এগুলো করে দেয়া। ওর ভাইয়া ডাক্তার মানুষ রুম গোছানোর তেমন সময়ই পায় না। দীপ্ত সব ঠিকঠাক করে দীর্ঘক্ষণের জন্য একটা শাওয়ার নেয়। বুঝতে পারছে না কেন জানি খুব খারাপ লাগছে। ভাইয়ার জন্মদিনের জন্য কেনা সাদা পাঞ্জাবিটা পরে রেডি হয়ে গিয়ে দেখে মায়া এবং ওর ভাইয়া দুজনে উনার রুমে বসে গল্প করছে। দীপ্ত মায়াকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষণ। মায়া লাল একটা জামদানী শাড়ি পরেছে। ওকে দেখতে অপ্সরী অপ্সরী লাগছিল। অনেক ইচ্ছে হচ্ছিল জড়িয়ে ধরে গিয়ে ভালবাসি বলতে। কিন্তু যেহেতু ওর ভাইয়া বসা তাই সম্ভব না। হঠাৎ ওর ভাইয়ার হাসির শব্দে হুঁশ এলো। দেখল ভাইয়া বলছে ওদের দিকে এরকম হাঁ করে তাকিয়ে আছে কেন। ওদের দুজনকে কি খুব মানাচ্ছে? দীপ্ত এই কথায় খুব রেগে গেল কিন্তু ওদের বুঝতে দিল না কিছুই। ভেবেছিল অনেক ছবি উঠাবে কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়াতে ছবি তোলার মুড নষ্ট হয়ে গেল। কাউকে কিছু না বলে বন্ধুদের সাথে গিয়ে আড্ডা মারতে লাগল।

রাতে সবাই চলে যাওয়ার পরে বার টার দিকে মা দীপ্তর রুমে এল। দীপ্ত খুব অবাক হল। কারণ সাধারণত এই সময়ে মা কখনো ওর রুমে আসে না। দীপ্ত মাকে জিজ্ঞাস করলো কিছু বলবে কিনা। মা জানায় মায়াকে ওনার খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলের বউ করে আনতে চায়। দীপ্ত শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠল। মা জানায় ওর ভাইয়া মায়াকে খুব পছন্দ করে। দীপ্তের কি মতামত জানতে চায়। দীপ্ত কোনভাবেই চোখের জল আটকাতে পারলো না। পিছন ফিরে ঘুরে মাকে না বুঝতে দিয়ে পানি মুছে বলল মায়ার সাথে কথা বলতে। ওর কোন সমস্যা নাই। মা জানায় মায়ার সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে সে নাকি রাজি। দীপ্তের মেজাজ তখন চরমে উঠে যায়। কিছু না বলে শুধু বলল তাহলে তো ওর বলার কিছু নাই। মা খুব টায়ার্ড ছিল তাই ঠিক আছে বলে চলে গেল। মা যাওয়ার সময় দরজার পাশে আরেকটা পায়ের শব্দ শুনল। বুঝতে পারল ওর ভাইয়া। দীপ্তের বুঝতে বাকি রইল না সে ই মাকে ওর কাছে পাঠিয়েছে। কোন রকমে দরজাটা বন্ধ করে চিৎকার করে উঠল। বাথ রুমে ডুকে লুকিং গ্লাসটা এক ঘুষিতে ফাটিয়ে ফেলে। অনেকক্ষণ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থেকে ভেজা শরীর নিয়ে এসে ল্যাপটপের সামনে বসে। কয়েকটা জায়গায় স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে। সারা রাত চেয়ারেই বসে ছিল। সকালে ক্লাসে যাওয়ার পরে সবাই ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতে লাগল। যেই দীপ্ত এত ফিটফাট হয়ে ক্লাসে আসে আজ তার কি অবস্থা। চুল এলোমেলো চোখ টকটকে লাল। যে কেউ দেখে ভয় পাবে আর মনে করবে সারা রাত অনেক ড্রিংক করেছে। দীপ্ত কিছু পাত্তা না দিয়ে লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসল। মায়া ওকে দেখে সামনে আসার সাহস করতে পারে নি। ক্লাস শেষ করে দীপ্ত নিজেই গিয়ে বলল তার সাথে সম্পর্ক করবে না তো দেশে আর ছেলে ছিল না ওর ভাইকে গিয়েই বয় ফ্রেন্ড বানাতে হবে। ওর জন্য ওদের দু ভাইয়ের ওই অনেক ভাল সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। আর পছন্দ করলেই আগে কেন বলেনি তাহলে আজ এই রকম অবস্থা হত না। মায়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল দীপ্ত।

এরপর থেকেই দীপ্ত উঠে পরে লাগল বাইরে চলে যাওয়ার। কারন ওর পক্ষে কোন দিন ও সম্ভব না মায়ার সাথে এক বাসায় থাকার। তার পর থেকে মায়াকে এড়িয়ে চলা শুরু করে। ভার্সিটিতে এটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করা শুরু করে। কিন্তু ওগুলো নিয়ে দীপ্তের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ও জীবন মরণ দিয়ে বাইরে যেতে চেষ্টা করে। মায়া বাসায় আসলে দেখা হলে ও মার সামনে না হলে কথা বলত না দীপ্ত। এদিকে মা ঘটা করে বিয়ের আয়োজন শুরু করে। দীপ্তের দিন গুলো বিষিয়ে উঠে।

প্রায় মাস দুয়েক পরে যখন দীপ্ত দুঃখের অথৈ সাগরে একটু খানি বাঁচার অবলম্বন হাতিয়ে বেড়াচ্ছে তখনই অনেক আগের করা একটা স্কলারশিপ পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়াতে এক টুকরো কাঠ হয়ে। দীপ্ত তখন দেশ ছেড়ে পালাতে পারলে বাঁচে। তাই স্কলারশিপের সুবিধা আসুবিধা না দেখেই যত দ্রুত পারে কাগজ পত্র গুছিয়ে নেয়। মায়া এবং ওর ভাইয়ার বিয়ের দুই দিন আগে ফ্লাইট ঠিক হয়। দীপ্ত অনেক খুশি অন্তত বিয়েতে থাকতে হচ্ছে না। মা খুব চাইল বিয়ের পরে যেতে কিন্তু দীপ্ত মাকে বুঝাল ওর জন্য স্কলারশিপটা এখন বড় । আর যেতেই হবে। মাকে বুঝিয়ে রাজি করে ফেলল। ভাইয়া কিছু বলার সাহস পেল না। দীপ্ত অনেক সুন্দর একটা অ্যালবাম কিনে এনে তাতে ওর আর মায়ার যত মজার ছবি ছিল সব সুন্দর করে সাজিয়ে ওর ভাইয়ার হাতে দিয়ে গেল বিয়ের উপহার হিসেবে মায়াকে দেয়ার জন্য। দীপ্ত খুব ভাল করেই জানে ওর ভাই অ্যালবামটা খুলবে না এবং বিয়ের আগেই মায়ার হাতে দিয়ে দিবে।
ফ্লাইট সকাল বেলা। মা ভাইয়া মায়া তিন জনই ওর সাথে এয়ারপোর্ট এলো। ভাইয়া আর দীপ্ত সারা রাস্তা পাশাপাশি বসে এল কিন্তু কেউ কারো সাথে একটা কথা ও বলল না। অন্য সময় হলে দুই ভাই কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠত। কিন্তু ভাইয়া দীপ্তের সাথে কথা বলতে ভয় পায়।

বিদায় বেলায় মাকে ঝরিয়ে ধরে কাঁদার সুযোগ পেল দীপ্ত। কান্নার যত টুকো না ছিল ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট তার চেয়ে বেশি ছিল এত দিনের জমানো কষ্টের। ভাইয়াকে ও ঝরিয়ে ধরে বিদায় নিল। বেচারা ভাইয়া যদি বুঝত দীপ্ত মায়াকে ভালবাসে তাহলে ওদের মাঝে কোন দিন ই আসত না। মায়াকে ও ফরমালি বিদায় বলল। মায়া নিজে থেকে ওকে টেনে একপাশে নিয়ে গেল। আসম্ভব সুন্দর লাগছিল। বাতাসে চুলগুলো উড়ছিল। সাদা জামদানি পরেছে। মায়া খুব ভাল করেই জানে দীপ্তের সাদা জামদানি অনেক পছন্দ। মায়া বলে তাকে তো বলার সুযোগ দেয় নি। দীপ্ত কে বলে সে জানে কিনা তার ভাইয়া অনেক কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। দীপ্ত জানায় সে তার ভাইয়াকে চিনে মাত্র কয়েক বছর ধরে আর ও সেই ছোট বেলা থেকে চিনে তাই মায়ার চেয়ে ওর ভাইকে অনেক বেশি বুঝে। মায়া এই ব্যাপারে তর্কে গেল না। বলল তার কাছ থেকে পালানোর জন্য, তাকে ভুলে যাওয়ার জন্যই দীপ্ত চলে যাচ্ছে। দীপ্ত মায়াকে বলল তার উপর অনেক রাগ আছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও তো তাকে ভালবাসে। যে মানুষ টাকে নিয়ে নিজে এত বছর ধরে স্বপ্ন দেখে আসছে সকাল বেলা ঘুম থেকে ডেকে দিবে, সবার আগে তার সুন্দর মুখখানি দেখবে, ঝরিয়ে ধরে আদর করবে। কিন্তু যখন দেখবে ওর ভাইয়ার সাথে ওর সব স্বপ্নের বাস্তবতা হচ্ছে তখন সহ্য করা ওর পক্ষে সম্ভব না। আর মায়াকে কিভাবে ভুলে থাকবে। দীপ্তের স্কলারশিপটা ও হয়েছে মায়ার সেই মুখের ছবিটার জন্যই। যার ছবি দিয়ে ওর প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু হবে, যার জন্য এগিয়ে যেতে পারবে, সেই মানুষ থেকে যতই দূরে যাক, যতই পালিয়ে বেড়াক না কেন তাকে ভুলা কোন দিন ও সম্ভব নই। যে তার জীবনের এতকিছু, যাকে এত ভালবাসে তার উপর কোন ক্ষুভ রাগ ধরে রাখা যায় না।

হঠাৎ ঘোষণা করা হল দীপ্তের ফ্লাইট ছাড়ার সময় হয়েছে। ওর মা ও ভাইয়া এগিয়ে এল। দীপ্ত ঘুরে পা বাড়াল। হঠাৎ বুঝতে পারল কেউ একজন ওর হাতটা ধরেছে পিছন থেকে। বুঝল মায়া। ঘুরে খুব বলতে ইচ্ছে হল কেন সারা জীবনের জন্য হাতটি ধরে রাখেনি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া ভালো লিখেছেন । নামের একটি শব্দ মনে হয় ভুল হয়েছে '' বিলন = বিলীন হবে ।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু সুন্দর গল্প, ভালো লিখেছেন। শুভকামনা।
সুমন চমৎকার, গল্পশেষের রেশটা বেশ আবেগী... ভাল লাগল।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪
ঐশিকা বসু শেষটুকুতেই মন ভরে যায়। অসাধারণ।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু ভাল লিখেছেন। শুভকামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৪
এফ, আই , জুয়েল # সুন্দর গল্প ।।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৪
দীপঙ্কর বেরা খুব সুন্দর লেখা । মনে রাখার গল্প ।
মনোয়ার মোকাররম ভালো লাগলো .... শেষ প্যারাটা চমত্কার ...!!

০৮ ডিসেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী