সূর্য, পৃথিবী ও মানুষেরা

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

আহমাদ মুকুল
  • ৬৫
  • 0
তুমি তো বসুন্ধরা, সর্বংসহা- কেন তোমার এই বিচলিত ভাব? পৃথিবীকে সূর্য়ের জিজ্ঞাসা।
-বিচলিত নই, একটু উদাস! বেশ একা একা লাগে আজ। ধরণীর উত্তর।- দেখো বন্ধু, ছয়শ’ কোটি মানুষ বয়ে চলেছি, খাবার জোগাচ্ছি, ওরা নিজেরা করছে হানাহানি, অথচ কেউ একটি বার নীচে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখে না একবার- কেমন আছে তাদের বসুধা মা’টি?
- হা হা হা…তাই কি? সবার নজর উপরে! ভেবো না সুখে হাসছি। বল প্রিয়ে, তোমার সন্তানেরা দূরে থাক, তুমি কি একটিবার মুখ তুলে তাকাও এই রবি’র পানে?
- দিনমণি, প্রাণনাথ আমার, আলো তাপ সব তুমি দাও। দাও প্রাণশক্তি, বাড়াও জীবনী, তবুও চোখ ঝলসে যাওয়ার ভয়ে একটিবার তাকাই না তোমার দিকে। অক্ষমতা ক্ষমা কর, অবতার মোর- কাঁপা কন্ঠে ধরিত্রীর উত্তর।

একটু ফিঁকে হয়ে আবার উজ্জ্বল রূপ নেয়, সলাজ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে দিবাকর। ছোট্ট একটা সৌরঝড় হয়ত বয়ে গেল সেখানে, পুড়ল কয়েক ট্রিলিয়ন ঘন কি.মি হিলিয়াম গ্যাস।
জীবন-চক্রের দুই পুরোধা গ্লানিতে ভোগে। গর্ব অহঙ্কার যাঁদের সাজে, তাঁরা নীরবে চেয়ে দেখে মিথ্যে অহমিকার লড়াই। আত্মশ্লাঘায় ভোগে একমুখী উপকারভোগী সৃষ্টিকূল।

কোলাহলে তাদের নজর অন্য দিকে ফেরে। দুজনেই কান পাতে, নজর পড়ে মেঘের দেশে-

……………………………………………………………………………………
বাষ্পকণাদের কানাকানি। -দেখ দেখ, কোন ক্ষেত থেকে যেন উঠে এসেছে, গা থেকে এখনও মাটির গন্ধ যায়নি….। মাত্রই মেঘের ঘরে ঢোকা পর্বতকণাকে নিয়ে মুখ টিপে হাসে বাকীরা। নিরীহ বাস্প-জলবিন্দু আড়ালে মুখ লুকায় লাজে।

বড়াই চলছে। সাগরবিন্দু বলে- আমি এসেছি নীল সাগর থেকে…সাগর দেখেছিস কখনো?
নদীবিন্দু বলে- তুইতো বিশুদ্ধ নস, গায়ে নোনা মাখা।
- দুর বোকা, অর্বাচীন, আমরা তো বাস্পীভুত কণা, আমরা কি কোন পিছুটান নিয়ে আসি, নিঁখুত H2O আমি, জানিস না সেটা? সাগরবিন্দুর সগর্ব উচ্চারণ।

- তুইতো ভালই রসায়ন জানিস! তোর জন্ম কোথায়, রাখিস সে খবর? নদীর জলে সাগর পোরে, আমি প্রতিভূ সেই নদীর ।

পর্বত জলকণা চুপ করে শোনে বিজ্ঞ জনের আলাপ। আর ভাবে, কত তুচ্ছ আমি! বার বার মন ফিরে যায়, একলা ফেলে আসা মৃত্তিকা বন্ধুর কাছে। তার ডাকেই ঘর ছেড়েছিল পাহাড় থেকে খসে পড়া মৃত্তিকা। নদীতে ভাসতে ভাসতে রুদ্ধ জলস্রোতে আটকা পড়েছিল দু’জন। আজ মৃত্তিকা পড়ে আছে একলা বালুচরে।

তর্ক লড়াই চলতেই থাকে। মুখ টিপে হাসে রোদ, যে তাদের এখানে আসার প্রভাবক। আর হাসে বায়ু, যে তাদের বাহক।

শরম ভেঙে মুখ খোলে পর্বতকণা, ভাই চল লড়াই থামাই। রোদের তাপে শুষ্ক হয়ে আমরা আজ মেঘের দেশে। এ তো আমাদের ক্ষণিকের ঘর। যেখানে ছিলাম, সেখানেই যাবো ফিরে। কী লাভ এখানে, মিথ্যে বড়াইয়ে?

হৈ চৈ শোরে ঘুম ভাঙে মেঘের। আড়মোড়া দিয়ে ওঠে। গুরু গুরু আওয়াজে গলা-খাকারি দেয়, আলোর ঝিলিক মেরে দেখে কোন উৎসবে আছে সব, ভূতলের বাসিন্দাদল?
- চল, বাছারা ওদের ভিজিয়ে দিয়ে আসি।
মেঘের ডাকে নীচে তাকায় সবাই। সাম্য সৌহার্দ্রের ঈদ মর্ত্যভূমে। দল বেধে নামে জলকণার দল। একদল একজোট হয়ে নামে বৃষ্টি!

……………………………………………………………………………………………………
উৎসবে অসময়ের বৃষ্টির হানা। হুল্লোর হুটোপুটি পণ্ড হয় মেলা। সামান্য জোটবদ্ধ আঘাতে ছিন্ন হয় মানুষের শত পরিকল্পণা!

শুদ্ধ হাসিতে মুখ ভরে বায়ু আর মেঘের। উদ্বেলিত হয় বাতাবরণ! ভাবে, তাদের জল-সন্তানেরা বিভেদ ভুলে কত সহজে হয় একজোট!
সূর্য সকরুণ দৃষ্টিতে দেখে মেদিনীর কাল মুখ। সামান্য এই আঘাতে তার সন্তানেরা ছন্নছাড়া। দু’জনেই ভাবে- আপন স্বার্থে দৃঢ় মজবুত মাটির মানুষগুলো যদি সমাজের স্বার্থে একমত একপথ হতো কোনদিন! উৎসবের আনন্দ ধারণ করত বুকে, সারাটি বছর থাকত মিলেমিশে। আর একটু কৃতজ্ঞতা দেখাত প্রকৃতিকে।

আলোড়িত হতে যায় পৃথ্বিহৃদয়! -থামো, শান্ত হও বসুমতি…ভূমিকম্প সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যাবে তোমার উপরের উদ্ভিদ, যত প্রাণী! অস্তগামী সূর্য়ের আহবান, আর গোধূলির আবীরমাখা আদরের সৌর-ছোঁয়াতে শান্ত হয় পৃথিবী। বিদায় নেয় সূর্য…আবার দেখা হবে-এই প্রতীক্ষায় চোখ দু’টি বোজে, আপাত আঁধার ঘনায় চারিদিকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমাদ মুকুল চিন্তার খোরাক দিতে পেরে ভাল লাগছে। দাশনিক কনসেপ্ট না বলে আপেক্ষিক ভাবনা বলাই বোধহয় ভাল।... আসলেই তাই ‘এলেমেলো’ না ভাবতে পারলে কল্পণা ঠিক জমে না। আর ‘ওদের’ কথা বুঝতে গেলে ঠিকঠাক ভাবনায় থাকা চলেও না। তোমার মনযোগী পাঠ সবসময়ই মুগ্ধ করে আমাকে, তোমার লেখা যেভাবে করে। ভাল থেক, আর আমাদের জন্য লিখ, প্রজ্ঞা মৌসুমী।
আহমাদ মুকুল আপনার ভাল লাগা জেনে আরো লেখার উৎসাহ পাচ্ছি, ম্যারিনা সীমা।
প্রজ্ঞা মৌসুমী হুম এলোমেলো চিন্তাভাবনাই বটে, তা নাহলে কি সূর্যকে অবতার বলে! "গর্ব অহঙ্কার যাঁদের সাজে" কি! গর্ব অহঙ্কার সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারো সাজে নাকি? শরীয়তবিরোধী আলাপ-সালাপ! কপাল কুচকে না; হাসিমুখে বলতে হচ্ছে এই আলাপটা/ দার্শনিক কনসেপ্ট আমার ভালো লেগে গেলো। বিন্দুদ্বয়ের ঝগড়াঝাটি আরো বেশি ভালো লাগল। আপনার কাছেই সবাই কথা বলার স্বাধীনতা পায়। সত্যিই আমরা "একমুখী উপকারভোগী।" সমাজ-পৃথিবীর স্বার্থ দেখার সময় কোথায়? আত্ন-স্বার্থতে মানব জীবন পার করে দিচ্ছি। শেষের দিকের কথাগুলো বোধটাকে নাড়িয়ে দিল। চমতকার লিখেছেন।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা মুকুল ভাই আপনার গল্প গুলো সবসময় অন্যরকম সুন্দর হয় । এটাও তাই । প্রকৃতির সব সদস্যকে হাজির করেছেন । গল্পের মেসেজ টা অভিনব কায়দায় দিয়েছেন । সবাই এটা পারেনা আপনি পেরেছেন ।খুব ভাল ভাবেই ।
আহমাদ মুকুল মন্তব্যের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা, কামাল।
kamal khan অসাধারণ গল্প। খুব ভাল লাগল।
আহমাদ মুকুল প্রিয় সেলিনা, খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করলেন। ভাল লাগল আপনার অনুভূতি জানতে পেরে।
সেলিনা ইসলাম সত্যি লজ্জাকর , প্রকৃতি একজোট হয়ে মানুষের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে , " শিক্ষা নেউ আমাদের কাছ থেকে ,এবার থামাও তোমাদের বৈরীতা " "আপন স্বার্থে দৃঢ় মজবুত মাটির মানুষগুলো যদি সমাজের স্বার্থে একমত একপথ হতো কোনদিন! উৎসবের আনন্দ ধারণ করত বুকে, সারাটি বছর থাকত মিলেমিশে। আর একটু কৃতজ্ঞতা দেখাত প্রকৃতিকে।" অসাধারন গল্প এভাবে কখনো ভাবা হয়নি , অনেক ভাবনার ফসল নিঃসন্দেহে ! শুভকামনা
আহমাদ মুকুল ধুর...শাহনাজ বেশী বেশী বলেন, লজ্জায় ফেলে দেন ! যাই হোক, সীমাহীন কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।
শাহ্‌নাজ আক্তার ফাটাফাটি লিখা ,, যদি ও অনেক দেরী করে পড়তে আসলাম ,, কিন্ত জালা টা মিটে গেল আমার লিখাটি পড়ে এত গভীর শব্দ চয়ন , কিভাবে লিখেন আপনি ,,, অনবদ্য অসাধারণ ................

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪