ইনটেনসিভ ইন্টারভিউ

নববর্ষ (ডিসেম্বর ২০১৩)

Rumana Sobhan Porag
  • ৮২
কোনো কিছুতেই আমার মনে সন্তুষ্টি আসেনা। যাই করি না কেন মনে হয় ঠিক ভাল ভাবে হলনা।পড়ালেখার ক্ষেএেও তাই ঘটল । বিশ্ববিদ্যলয়ের পাঠ চোকানোর বেশ কয়েক বছর পর মনে হলো গবেষণা পদ্ধতিতে আমার জ্ঞান পর্যাপ্ত নয় । আবার শুরু হলো অস্থিরতা। এরই মধ্যে একদিন পত্রিকায় দেখলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুনগত গবেষণা পদ্ধতির উপর দশ দিনের একটি কোর্স করানো হবে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সেই কোর্সে জয়েন করলাম। ভীষন কাজে লেগেছিল সেই রিফ্রেসার ট্রেনিং টি। অনেক কিছুই ভুলতে বসেছিলাম, আবার নতুন করেও অনেক কিছু শিখলাম। গবেষণার খুটিনাটি সব জেনেছি। রিপোর্ট রাইটিং এর সময় কি কি সাবধনতা অবলম্বন করতে হয় সে বিষয় গুলি খুব জোড় দিয়ে শেখানো হলো । বেশি জোড় দেয়া হলো প্লেগিয়ারিজম এর উপর। প্লেগিয়ারিজম হচ্ছে অন্যের ভাবনা, রচনা, যুক্তি, তর্ক স্বীকার না করে নিজের লেখায় ব্যবহার করা।
ট্রেনিং এর একটি অংশ হিসেবে আমাদের নিবীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে বস্তি বাসি একজন মানুষের যাপিত জীবনের কথা তুলে আনবার জন্যে ঢাকা শহরের একটি বস্তিতে পাঠানো হয়েছিল ।সেদিন ছিল ২০০৮ এর অক্টোবরের কোনো এক সকাল । পুরো বস্তিটি ঘুরে বেড়িয়েছি আমি। আমার চেনা পৃথিবীর বাইরে আরেক পৃথিবী। সেখানে তথাকথিত পর্দা প্রথার প্রচলন দেখতে পাইনি। নারী পুরুষ সবাই টি স্টলে বসে চা খাচ্ছে , তর্ক করছে, বস্তি উচ্ছেদ ঠেকানো প্রসংঙ্গে নানান শলা পরামর্শ করছে। শিশুরা স্বাধীন ভাবে ধুলোর মাঝে খেলছে। একদল কৃষকায় তরুনি অতি দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসছে। এরাই আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল করার পোশাক কর্মি। এক ঘন্টার ব্রেকে দুপুরের লাঞ্চ করতে এসেছে। আমি বস্তি বাসি একটি কিশোরী মেয়ের সাথে সক্ষতা করেছিলাম। তাকে নিয়েই ঘুরছিলাম । হঠাৎ দূর থেকে একজন প্রৌঢ়া কে দেখে অবাক হয়েছিলাম আমি। কুচি দিয়ে শাড়ি পড়ে আঁচল দিয়ে পিঠ ঢেকে ছিলেন তিনি। থালা বাসন ধুচ্ছিলেন। অবাক হয়ে দেখছিলাম রক্ষনশীল মধ্যবিত্ত পরিবারের ঐতিহ্যকে ধারণ করা সেই বয়স্ক নারীকে। এই পরিবেশের সাথে তাকে যেন ঠিক মানায়না। যাই হোক ওনার কাছে এগিয়ে গেলাম। স্লামালেকুম দিয়ে ওনাকে আমার আসার উদ্দেশ্য জানালাম। ভ্দ্রমহিলা একদম পোশাকি বাংলায় কথা বলেন। আমাকে তার ঘরে নিয়ে গেলেন। দাওায়ায় বসিয়ে রেখে উনি গল্প করছিলেন আর কচুর মুখির ঝোল রান্না করছিলেন। মনে মনে ভাবছিলাম একবার খেতে বললেই বসে পরব। ওনার ছেলেমেয়েরা তখন সবাই বাসার বাইরে। ওনার স্বামী একজন ট্রাক চালক। দুপুরে খেতে আসেন বাড়িতে। উনি ওনার ছোটবেলার গল্প বলতে শুরু করলেন।

দারোগা বাবার অতি আদরের প্রথম কন্যা সন্তান ছিলাম আমি।আমার কোন শখই অপূর্ন রাখেননি বাবা। মুক্তি যুদ্ধ শুরু হবার কারনে আমার ম্যট্রিক পরীক্ষাটা আটকে গিয়েছিল। সারা দিন সেলাই ফোড়াই করতাম আর মার কাছে বিভিন্ন রান্নার তালিম নিচ্ছিলাম। পরিস্থিতি খারাপ বলে বাবা আমার বিয়ে দেবার জন্য চতূর্দিকে পাত্রের খোজ লাগালেন।আমাকে পয়মন্ত কন্যা বলে সবার কাছে জাহির করতেন। ভাল পাএের খোজে কি যে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন উনি । একদিন হেনাদের বাসায় একজন মুক্তি যোদ্ধা এসেছেন শুনে আমরা বান্ধবিরা তাকে দেখতে গেলাম। আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । তিনি দেখতে তেমন আহামড়ি ছিলেন না। পুরুষের যে সৌন্দর্য দেখে মেয়েরা আকৃষ্ট হয় তার কোনো বৈশিষ্টই তার মধ্যে ছিলনা। কিন্তু তার মুখে দেখেছিলাম পবিএ এক আলো। মনে হচ্ছিল ঐ পারবে দেশকে স্বাধীন করতে। কেন জানি আমি ওকে প্রথম দেখায় ভালবেসে ফেলেছিলাম। ও রকম একজন যোদ্ধার সেবা দাশি হবার জন্য আমার মন প্রান সপে দিয়েছিলাম তখন । তার আর কোনো পরিচয় আমি জানতে চাইনি। মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি আমি ওকেই বিয়ে করব। ওর জন্যে ভীষন ভয় হচ্ছিল। প্রতিদিন ভাবতাম এই বুঝি ওর মৃত্যু সংবাদ এলো। চড়ম অনিশ্চয়তার মাঝে কাটছিল আমাদের যুদ্ধের আর প্রেমের দিনগুলি। একদিকে যুদ্ধ অন্যদিকে পাক আর্মি অফিসারের সুঠাম দেহি খেলোয়ার পুএের সাথে আমার বিয়ের তোরযোর। বাবা ঐ বাড়িতেই আত্মিয়তা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। আমিও প্রতিজ্ঞা করলাম বিয়ে করলে ওকেই বিয়ে করব। দেশ স্বাধীন হলেও আমি পরাধীনতার শেকলে বাধা পরছিলাম। শুরু হলো আমার যুদ্ধ। বেচে থাকার যুদ্ধ। পরিবারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পালিয়ে আসলাম সেই মহান যোদ্ধার সাথে। বাবা মানতে পারলেন না। আমাকে ত্যায্য করলেন। শুরু হলো আমার নতুন যুদ্ধ, ক্ষুধার বিরুদ্ধে দারিদ্রের যুদ্ধ। চলে আসলাম নতুন এক জগতে, এই খানে! জীবন বাজি রেখে যিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন দেশ তাকে ক্ষুধা আর অভাব ছাড়া কিছুই দেয়নি। আমার সুপ্রিয় মুক্তি যোদ্ধা স্বামি পেশায় একজন ড্রাইভার। বাস্তব জীবনে উনি অন্য আরেক মানুষ। সারা দিন গাড়ি চালান আর রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরেন। তিনি পান খেয়ে দাত তরমুজের বিচির মত লাল করে রাখেন। ওনার সারা গায়ে ঘাম আর সিগেরেটের গন্ধে আমার প্রথম প্রথম বমি আসত, এখন ও আসে। যুদ্ধের পর আমি আমার সেই যোদ্ধাকে আর খুজে পাইনি। সময় তার প্রয়োজনে এই ড্রইভার কে মুক্তযোদ্ধা বানিয়েছিল। কিন্তু আমি তো নয় মাসের সেই যোদ্ধা প্রেমিকের জন্য আজও অপেক্ষায় আছি। বিন সুখে দিনের পর দিন সেই মুক্তিযোদ্ধার খোলোসের সাথে নিজের বিরুদ্ধে সংসার করে চলেছি। আমার এই যুদ্ধ তো মা আর শেষ হয়না।
খালাম্মা আরও অনেক কথা বললেন। পরে উনি আমাকে সেই লাল করে রান্না করা কচুর মুখির তরকারি দিয়ে অতি আদর করে খেতে দিয়েছিলেন। ওনার বয়ে নেয়া বেদনার ভার নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। বাড়ি ফিরে দ্রুত ইনডেপ্ট ইন্টারভিউ টি লিখে ফেললাম। পরদিন সকালে ক্লাসে জমা দিতে হবে। পরদিন সকালে ইন্টারভিউ শিট গুলো শাহাদুজ্জামান স্যার জমা নিলেন । সেকেন্ড সেশনে সবার লেখা নিয়ে কথা বললেন । এর পর চোখ সরু করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি তো মনে হচ্ছে গল্প লিখে এনেছেন। সন্দেহ ভরা এক ফালি হাসি তার মুখে ঝুলে ছিল। মনে হল উনি কিছুতেই ঘটনাটি বিশ্বাস করলেন না। উনি আমাকে আবার ডাকলেন। বললেন ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন? বললাম জি নিয়ে যেতে পারব। ঐ দিন বিকেলে সন্ধেহ প্রবন শিক্ষক আমার সাথে ঐ বস্তিতে গেলেন। পুনরায় ঐ মহিলার সব ঘটনা শুনলেন। স্যারের হতভম্ব হয়ে যাওয়া দেখে মনে হলো উনি এতটা আশা করেন নি। যাই হোক আমি ভাল ভাবে সেই কোর্স টি সম্বপ্ন করেছিলাম।

একুশে বইমেলা ২০১২
আজকে মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় এসেছি। বিভিন্ন স্টলে ঘুরছি আর বই দেখছি। মওলা ব্রাদার্স এর স্টলে শাহাদুজ্জামান স্যার এর লেখা চিরকুট বই টি দেখলাম। হাতে তুলে নিয়ে ভেতরের গল্প গুলো দেখছিলাম । হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি গল্পে। গল্পটির নাম ডিসেম্বরের গল্প। পড়ে দেখলাম ঐ দিনের ঘটনাটিকেই তিনি লিখেছেন। মনে পরে গেল সেই খালাম্মর কথা আর রিপোর্ট রাইটিং ক্লাসটির কথা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সাফাত সোয়েব বিস্ময় অবশ্যই..... চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পর ধরা! :P
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৪
সাফাত সোয়েব বিস্ময় Sir er kaj ta kmn holo :/ :P
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪
boroder kaj dekhe ki bissito holen??
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৪

১৯ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪