ঊড়ো রিক্সা

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (সেপ্টেম্বর ২০১৪)

জান্নাতুল ফেরদৌস
সকাল ছয়টা। তিন মিনিট ধরে ধীরে দাঁত ব্রাশ করার সময় নেই। ঘসঘস করে দ্রুত দাঁত ব্রাশ করছি আর ভাবছি আমার দাদা নিমের ডাল দিয়ে দাঁতন করতো আর বাবা আলমের এক নং পচা টুথপাউডার দিয়ে দাঁত মাজতো। বিজ্ঞানের উন্নতি ও বিজ্ঞাপনের বদৌলতে বাজারে বহুগুণের টুথপেস্ট ও মাউথ ওয়াস আছে। তারপরও আমাদের বহু দাঁতের সমস্যা।
চোখেমুখে পানি দিয়ে ছুটলাম রান্নাঘরে। হাতে সময় কম। মেয়েকে নিয়ে পৌণে সাতটার আগে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। টিফিন ও নাস্তা তৈরি করার পর তৈরি করতে হবে মেয়েকে ও নিজেকে। মেয়ে বার বার বলতে থাকে----আম্মু তুমি রেডিতো? আর আমি উচ্চস্বরে বলতে থাকি----জলদি কর। জলদি কর। জুতা আর মোজা পরা হয়েছেতো ? টিফিন নাও। মনে করে ওয়াটার পট নাও ইত্যাদি ইত্যাদি। স্কুলের জন্য মেয়ের চুলে ঝুটি কর নয় তো বেণী। প্রতিদিন সকালে অনেকটা সময় চলে যায় মেয়ের ঝুটি আর বেণীর পেছনে। ঝুটি একটা উপরেতো আরেকটা নিচে । বেণী একটা টাইট হলে অপরটা লুজ।আমার রেডি মানে শুধু জামা বদলানো ।
আমি যখন ছোট ছিলাম আমার মাকে প্রতিদিন বলতে শুনেছি,----রোজ রোজ এতগুলো রুটি বানাতে আর ভালো লাগে না। মাঝে মধ্যে ভাত খেলে কি হয়? আমরা প্রতিদিন বাসি ভাত খেয়েছি।গরমের সময় পান্তা আর শীতে কড়কড়া ভাত । রুটি হত শবেবরাতে,কোরবানের ঈদে আর হাঁসের মাংস রান্না হলে । বাবা উত্তর দিত ----- রুটি খেতে সময় লাগেনা । তাছাড়া ভাত খেলে অফিসে ঘুম ঘুম লাগে ।
আর আমাদের ভাই- বোনদের কাছে সকাল বেলা রুটির সঙ্গে আলু ভাজা ও ডিম ভাজা ছিল খুব প্রিয় খাবার । স্কুলের টিফিনে ও আমরা রুটি আলু ভাজি নিতাম । এখন আমার মেয়ের টিফিনে দিতে হয় ফ্রেঞ্চফ্রাই, চিকেনফ্রাই, চিকেন- নাগেট, স্যান্ডুইজ বা বার্গার। মা মেয়ের নাস্তা কর্ণফ্লেক্স আর চা- বিস্কুট ।এতেই বাজে সাড়ে ছ’ টা ।
দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাড়াই ।চারপাশ তখনো নিরব ।খুব একটা গাড়ি চলাচল শুরু হয় নি। স্কুলের গেইটে পৌঁছাইলেই শুনি ক্লাস শুরুর ঘণ্টা। প্রতিদিন আমি লেইট। আমাকে বিদায় জানানোর পরিবর্তে মেয়ে চোখ রাঙিয়ে,গাল ফুলিয়ে ক্লাসে ঢুকে। চারপাশে তাকালে দেখি অনেক মা সেজেগুজে স্কুলে এসেছে। চোখে মোটা করে কাজল টানা। আর্টিস্টকভাবে ঠোঁটে লিপস্টক দেয়া। চুল হাজার খানেক ক্লিপ দিয়ে পরিপাটি করে বাঁধা। তারা কতো ভোরে উঠেন জানি না, শুধু জানি আমার পক্ষে এর চেয়ে ভোরে ওঠা সম্ভব না। এখন রাতের অর্ধেকটা যায় কিছু একটা লেখার চেষ্টায়।যদি ও মাথা থেকে তেমন কোন লেখা বের হয় না আর কখনো- সখনো কিছু বরুলে ও তা পাঠের অযোগ্য। তবু ও লেখার নেশায় অর্ধেক রাত শেষ ।তাই খুব ভোরে কখনই উঠতে পারি না। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মেয়েরা এমন লিপস্টক পেয়েছে যা ঠোঁটে দিয়ে কাউকে চুমু দিলে লেগে যায় না। কাঁদলে কাজল গলে যায় না। এমনকি ফেইস-ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলেও চোখ মুখের মেকআপ উঠে না। একদিন মেক আপ করলে কমপক্ষে তিনদিন রাখতে পারবেন। যদি না আপনি বিশেষ পদ্ধতিতে মেকআপ না উঠান। তবুও মেকআপ করা আমার কাছে সময়ের অপচয় মনে হয়।
মেকআপে ঢাকা চেহারা থেকে এবার দৃষ্টি দিই রিক্সাওয়ালার দিকে। বাসায় ফিরতে হবে। মাঝ বয়সী মোটা মানুষ আমি। চোখ খুজচ্ছে শত্তিশালী রিক্সাওয়ালা । আপনি রিক্সায় চড়ে যখন কোন রিক্সাওয়ালাকে বলবেন----ভাই আমার পরীক্ষা বা অফিসে তাড়া আছে। তুমি একটু জোরে চালাও।
দেখবেন সে খুব ধীরে রিক্সা চালাচ্ছে। যদি বলেন – --- জোরে চালানোর দরকার নেই। তুমি দেখেশুনে আস্তে আস্তে চালাও।
তখন সে এত জোরে চালাবে যে গর্তে পড়ে অনেক সময় রিক্সা উল্টে যায়। রিক্সায় দাঁড়িয়ে এত জোরে পেডেল করতে থাকবে আপনার মনে হবে বিমানে বসে আছেন। খোলা মেলা বিমান। হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছেন।
যারা চট্টগ্রাম থাকেন তারা জানেন এখানকার রাস্তা উঁচু নিচু। রিক্সাওয়ালা চাইলেই জোরে চালিয়ে পাহাড়ের উঁচু রাস্তায় উঠতে পারবে না। বাওয়া স্কুল থেকে নাসিরাবাদ সোসাইটি খুব দূরে না। আট-দশ মিনিটের পথ। তবুও শিল্পকলার জ্যাম, গোলপাহাড়ের মোড় ও প্রবর্তকের মোড় পার হতে বেশ সময় লাগে। তাই দখে শুনে একটা ব্যাটারি চালিত রিক্সা নিলাম।
পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ তবুও রিক্সাওয়ালা দুপা গুছিয়ে আয়েশ করে ব্র্যাক আর হর্ণ ধরে বসে থাকে। শহরে নতুন এই রাক্সা আসাতে অনেক রিক্সাওয়ালা জানেনা ব্র্যাক নিয়ন্ত্রণ করতে। প্রতিদিন ঘটছে অনেক অঘটন। সাহস সঞ্চয় করে ব্যাটারি চালিত রিক্সায় উঠে বসলাম। আমার মতো মোটা যারা নিশ্চয় রিক্সায় উঠার সময় একবার হলে ও ভাবেন রিক্সা আরেকটু নিচু হলে কি ক্ষতি হতো? সিএনজির দরজা এতো ছোট কেন?
রিক্সার হুড ফেলে ভালোভাবে বসলাম। রিক্সাওয়ালা বাটন চাপল আর রিক্সা চলতে শুরু করল। রিক্সাওয়ালা প্যান্ট-শার্ট পড়ে মাথায় ক্যাপ দিয়ে দুপা ঝুলিয়ে বসে আছে আর রিক্সা চলছে। রিক্সা ও রিক্সাওয়ালার এমন উন্নতি দেখে রিক্সায় বসে রিক্সা নিয়ে কল্পনা রাজ্যে ডুব দিলাম। রিক্সার বাটন চাপা হল রিক্সা সঙ্গে সঙ্গে উপরে উঠতে শুরু করেছে অর্থাৎ রিক্সা শূণ্যে চলছে। রাস্তায় কার,বাস,টেক্সি ও টেম্পু। রাস্তা থেকে পঞ্চাশ-ষাট ফুট উপর দিয়ে চলছে রিক্সা। রাস্তায় যানজট নেই, সময়ের অপচয় হচ্ছে না। আহা কি শান্তি
চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতে করতে গোল পাহাড়ের মোরে চলে এসেছি। রিক্সা একটি গাড়ির সাথে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খেলো আর আমি চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম পথচারি এক ভদ্রলোকের গায়ের উপর। লোকটি-----বাবাগো মাগো বলে চিৎকার করছে আর রিক্সাওয়ালার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। থতমত খেয়ে উঠে দাড়ালাম। লোকটির কাতরানো দেখে বুঝলাম সত্তর কেজির চাপে তার হাঁড়-মাংসের অবস্থা কেরোসিন। ষোড়শি বা অষ্টাদশী বালিকা যদি এমন করে পাখির মতো উড়ে এসে তার গায়ে পরতো তাহলে হয়তো ভদ্রলোক মনে মনে খুশিই হতেন। বহু কষ্টে দাড়িয়ে লোকটি আমার দিকে এমন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তাতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মনে মনে সে আমাকে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ ধোলাই দিচ্ছে।
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি জামা ছিঁড়ে গেছে , শরীরের কয়েক জায়গার চামড়া উঠে গেছে। তাতে বুঝলাম বিজ্ঞান নিয়ে কল্পনা করা আমার সাধ্যের বাহিরে। আমি শুধু এইটুকু স্বপ্ন দেখতে পারি বিজ্ঞান মানুষের শুধু উপকার করবে ক্ষতি নয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক প্রতিদিনের চেনা জানা জায়গাগুলোর চোখের সামনে এমন বাস্তব ছবি গল্পে পেয়ে খুব ভালো লাগছে...গোল পাহাড় মোরে যা ঘটলো তা মনে হচ্ছে আমার চোখের সামনে...ভালো লাগলো গল্প...কিছুটা আনন্দও পেলাম...ধন্যবাদ....
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
জান্নাতুল ফেরদৌস ওয়াহিদ ভাই ,ইমদাদ ভাই,শহীদুল হক ও বিপ্লব ভাইকে অনেক ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানাই ।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন বিজ্ঞানকে দোষ দেবেন না! আমরা জোড়াতালির 'বিশেষ জ্ঞানের' যান বাহন কাজে লাগিয়ে পুলকিত হতে চাই, জোড়িতালির বাহনে যাত্রাও তো জোড়াতালি ধরনের হবে, নাকি? তবে লিখেছেন সুন্দর। ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম দারুণ তথ্য দিলেন । আমাদের এক কলিগের স্ত্রী এই উড়ন্ত রিক্সার কবলে পড়ে চিরতরে পংগু হয়ে গেছেন । এরকম একটা অনিরাপদ যানবাহনের অনুমোতি যারা দিয়েছে , তাদের আগে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত ।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু চমৎকার ভাবনার লেখা। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
সহিদুল হক valo laga janalam vote-er madhyome, onek suvo kamona, aamar kobitay amontron
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
মোজাম্মেল কবির কঠিন বাস্তবতার মাঝে ছোট্ট একটু কল্পনা... এক দিন হয়তো তাও সত্যি হবে। মজা পেলাম -ষোড়শি বা অষ্টাদশী বালিকা যদি এমন করে পাখির মতো উড়ে এসে তার গায়ে পরতো তাহলে হয়তো ভদ্রলোক মনে মনে খুশিই হতেন... শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন আপা।
ভালো লাগেনি ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
শামীম খান চমৎকার মধ্যবিত্ত সকাল । ব্যস্ততা , সে তো থাকবেই । বর্ণনা দারুন । পড়তে পড়তে হেসেছি । ভাল লাগলো আপু । ভাল থাকবেন ।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

১৮ সেপ্টেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪