সমর বাগচী । গেছে নিজের গ্রামে । খুব কষ্ট করে । যে রকম চেহারা তাতে কষ্ট হওয়ারই কথা । মোটা সোটা একেবারে ফুটবলের মতো । এই সময়ে তাদের স্কুলে শীতের ছুটি পড়েছে । সমর রাতে খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে । গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে । অনেক সময়ে রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে সমর । আর সকালে আটটা-ন'টা পর্যন্ত কুম্ভকর্ণ হয়ে থাকে । ওদের গ্রামে এক ছেলে আছে । কালু । তার সাথে সমরের চির শত্রুতা । যখনই দেখা হয় তখনই ঝগড়া , মারামারি , কথা কাটাকাটি ইত্যাদি হয় । এবার একদিন তার সাথে দেখা । কালু তো দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিল । সমরও দ্রুত বেগে ওই স্থান ত্যাগ করল । আবার একদিন দেখা । কালু মুখ ঘুরিয়ে নিতে যাচ্ছিল তখনই সমর বলল, "দাঁড়া । আর কতদিন মুখ ঘুরিয়ে নিবি । এর একটা সমাধান আজকে করতে হবে ।" "তাহলে একটা শর্ত আছে ।" "কী ?" "একটা খেলা হবে । তাতে যদি তুই পাস হোস তাহলে তোর সঙ্গে বন্ধুত্ব । যদি ফেল তাহলে আজীবন শত্রুতা ।" "ঠিক আছে । কিন্তু খেলাটা কী ?" "খেলাটা হল এই যে -এই ভরা শীতের এক সকালে তোদের পাশের বাড়ির নীলাঞ্জন বাবুদের খেজুর গাছে চড়ে রস চুরি করতে হবে । আমিও তোর সাথে যাব । যদি ধরা পড়ে যাস তাহলে তুই ফেল । আর যদি চুরি করতে পারিস তাহলে পাস । " "ঠিক আছে ।" "তবে কাল সকালেই । সকাল পাঁচটায় চলে আসবি । আমিও চলে আসব ।" পর দিন ভোর চারটায় উঠে পড়ল সমর । গুটিগুটি পায়ে গরম পোশাক পরে বেরিয়ে পড়ল সে । সব ঠিক ঠাক করে বাইরে এসে দেখে সদর দরজায় তালা । চাবি মা-র কাছে আছে । নিতে গেলেই জেনে যাবে । বাইরে কালু দাঁড়িয়ে । মনে হয় টপকেই যেতে হবে । কিন্তু সমরের যা চেহারা তাতে সদর দরজা টপকানো মানে হিমালয় পার হওয়া । কিন্তু তাহলে সমর কী করবে ? বাইরে থেকে কালু বলল, "তালাটা ভেঙে দে ।" "তালা ভাঙব ? না না । বাবা খুব মারবেন ।" "আরে কিচ্ছু হবে না ।" "কিন্তু কী দিয়ে ভাঙব ?" “বাগানের ধারে দেখ একটা হাতুড়ি আছে সেটা নে ।" "ওটা আমাদের ঠাকুরদার । ওটা নিলে ঠাকুরদা খুব বকবেন । তিনি খুব রাগী।" "কিচ্ছু হবে না । নির্ভয়ে কাজ কর ।" সমরও তাই করল । বাগানের ধারে রাখা বড়ো হাতুড়িটা অনেক কষ্টে নিয়ে এনে সজোরে সদর দরজার বড়ো তালায় আঘাত করল সমর । একঘায়ে হল না। আরও এক ঘা দিতে তালা ভাঙল । কিন্তু শীতের রাত বলে কেউ জাগে নি । সমর দরজা খুলল । 'ক্যাঁচ' করে একটা শব্দ হল । বাইরে বেরিয়ে এসে কালুকে বলল, "চল ।" নীলাঞ্জন বাবুর বিরাট বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়ালো তারা । এ দরজায়ও তালা ! কালুর কিছু বলার আগেই সমর বলল, "এবার আর আমি তালা ভাঙতে পারব না ।" "আমি যে তাই বলতে যাচ্ছিলাম ।" "আমি কিন্তু ভাঙব না ।" "আহা ! তুই না ভাঙলে দরজা টপকাতে হবে ।" "না না , তা আমি পারব না ।" "তালা ভাঙ নয় তো টপকে যা । যেকোনো একটা ।" "কোনো যখন উপায় নেই তাহলে আমি তালা ভাঙছি । কিন্তু কী দিয়ে ?" "কাছাকাছি দেখ কোনো পাথর আছে নাকি ?" দুজনে পাথর খুঁজতে লাগল । সমর একটা বড়ো আকারের পাথর খুঁজে পেল । তা দিয়েই তালায় সজোরে নিক্ষেপ করল । এ তালা সমরের বাড়ির তালার চেয়ে খারাপ । এক ঘা খেয়ে ভাঙে গেল । দরজাটি ঠেলে ঢুকে পড়ল তারা । নীলাঞ্জন বাবুর বাড়ির সামনে বিরাট এক প্রস্থ বাগান । তারই এক কোণে আছে খেজুর গাছ । আবছা আলোতেও তারা খেজুর গাছটিকে দেখতে পেল । খেজুর গাছে একটা হাঁড়ি বাঁধা । তাতেই আছে খেজুর রস । সেটাই হল টার্গেট । সমর খেজুর গাছের নীচে গেল কালুকে দড়ি চাইল । কালু দড়িটা দিল । সমর গাছের সাথে নিজেকে বেঁধে নিল । তারপর একটু একটু করে উপরে উঠতে লাগল । প্রায় অর্ধেকটা উঠে থামল সে । হাঁপাতে লাগল । ধীরে ধীরে হাঁড়ির কাছে পৌঁছে গেল । খুব কষ্টে হাঁপাতে হাঁপাতে এই মোটা শরীরে আনন্দে চাঁদ ধরার মত চিৎকার করল । নীচে কালু - চুপ কর , চুপ কর । আর উঠতেই যা সময় নিলি ভোর হয়ে এল । তাড়াতাড়ি কর । এই তাড়াতাড়ি করতে হাঁড়িটা নামাতে গিয়ে পর পর তিনটে হাঁড়িই নিচে পড়ে গেল । আর ভূমিকম্পের মত খুব শব্দ হল । আর নীলাঞ্জন বাবুর বাড়ির একটি ঘরে আলো জ্বলতে দেখা গেল । এই সেরেছে ! নিমেষের মধ্যে সেখান থেকে পগার-পার হয়ে গেল সমর আর কালু । দরজার বাইরে বেরিয়ে তারা হাওয়া । কালু আর সমর যে যার নিজের বাড়ি চলে গেল । সমর আবার নিজের বাড়ি গিয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়ল নিঃশব্দে । আর শুতেই তৎক্ষণাৎ ঘুম । সেই দিন সকালে আটটার দিকে সমরের ঘুম ভাঙল । ঘুম থেকে উঠে শোনে বাইরে শোরগোল চলছে । বাইরে বেরিয়ে দেখে, তাদের সদর দরজার সামনে বাড়ির সবাই এবং আরও অনেকজন মিলে জটলা পাকিয়েছে । কাছে গিয়ে দেখে সবাই বলছে যে কাল রাতে নাকি চোর এসেছিল । নীলাঞ্জন বাবুদের বাড়িতেও নাকি চোর এসেছিল । কিন্তু চোর তার কোনো চিহ্ন রেখে যায় নি । শুধু ভরা খেজুর রসের হাঁড়ি ভাঙা । সকলে বড়ো চিন্তিত । সবাই বলছে পুলিশে ফোন করবে । অনেকে বলছে নিজেরাই যাচাই করে নেবে । সমর ভাবছে ,"আজকে , তাহলে আমার হয়ে গেল ।" কিছুক্ষণ ধরে কথাবার্তার পর সমরের ঠাকুরদা আসল প্রশ্নটা করলেন,"কারোর কি কিছু চুরি গেছে ?" সবাই এবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল । সবাই এতক্ষণ ধরে জটলা করছিল কিন্তু কারোর মাথায় এই প্রশ্নটা এল না যে কারোর কিছু চুরি গেছে কি না ? সবাই খালি ভাবছিল যে চোরকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায় । কিন্তু শাস্তিটা কেন দেবে তা কেউ ভাবেনি । সবাই মুখ নিচু করেই রইল । কিছুক্ষণ পরে সবাই প্রায় মিলে বলল,"না ।" নিরঞ্জন বাবু বললেন,"তাহলে ত ঝগড়া মিটে গেল । কিছুই না চুরি গিয়ে থাকলে এত ঝগড়া করার মানেটা কি ? সব কিছুর সমাধান হয়ে গেছে এখন সবাই বাড়ি চল ।" সমরের ঠাকুরদা সবার চেয়ে বয়সে বড়ো তাই তার কথা সবাই মানতে বাধ্য হল । সমর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল -"যাক , একদিন কাটল ।" কিন্তু কালু ! বুকের মধ্যে বন্ধুত্বের ছেঁড়া কাটাটা বিঁধেই রইল । জেদি কালু আজও গ্রামে । সমরের উপর রাগ পুষে রেখেছে সময়ে অসময়ে তা ই উগরে দেয় । সমর কিন্তু গ্রামে গেলেই কালুকে খুব কাছে চায় । কিন্তু কালু .........?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
সুন্দর শিশুতোষ গল্প...খুব ভালো লাগলো...ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ছে....
সুমন
সমর-কালুর মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার গল্পটা পাইনি বলে কেন দূরত্ব তা ঠাহর করতে পারি নি। কালু কেন সমরকে রস চুরিতে সফল হলে বন্ধুত্ব গাঢ় হবে এই সুত্র ধরতে কষ্ট হল। গাথুনি, বুনন ভাল লেগেছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।