আমাদের খেলার মাঠ

আমি (নভেম্বর ২০১৩)

ছন্দদীপ বেরা
আমাদের পাড়ায় আমার মোটামুটি দশ বারো জন বন্ধু আছে । আমি তাদের সঙ্গে নিয়মিত খেলাধুলা করি । আমাকে খেলার জন্য ডেকে নিয়ে যায় । আমরা সবাই চাঁদা তুলে ব্যাট বল কিনে রেখেছি । এমন কি ফুটবলও কেনা আছে । এই সব ফ্ল্যাট বাড়ির পাড়ায় মাঝে মাঝে কেউ কেউ চলে যায় , কেউ আবার নতুন করে আসে । আমাদের মোটামুটি সাত আট জন অনেকদিন থেকে আছি ।
এই রকম একদিন বিকেলবেলা আমরা মাঠে খেলতে গেছি । যে মাঠে খেলি সেখানে প্যান্ডেল বাঁধা চলছে , তাই বিকি দের ঘরের সামনের মাঠটায় আমরা খেলার জন্য উইকেট পুঁতে খেলা শুরু করেছি এমন সময় সন্তুর বাবা তাদের বারান্দা থেকে বলছে – এই ছেলেরা , এখানে খেলবি না । মাঠে যা । আর সন্তু উপরে চলে আয় ।
আমি বললাম – আঙ্কেল , মাঠে পুজোর প্যান্ডেল হচ্ছে ।
- আমি ও সব জানি না । যা সব এখান থেকে । বেরো । আমি কিন্তু নীচে গেলে সব লণ্ডভণ্ড করে দেব ।
আমরা ভয় পেয়ে চলে এলাম । আমাদের সব চেয়ে বড় যে মিতুদা সে বলল – সন্তুর বাবাকে এবার জোর করে পুজো কমিটির সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে তাই ওনার রাগ । কারো উপর ঝাড়তে পারছে না তাই আমাদের দেখাচ্ছে ।
আমরাও তাই ভাবছি এখানে জায়গাটা ছোট । খেলার জন্য ঘরের জানলার কাঁচ ভেঙে যেতে পারে । তাও আঙ্কেল কখন না করেন নি । আজ হঠাৎ ।
আমরা ভাবছি কোথায় খেলি না কি করি । সন্তুও সঙ্গে ছিল । ও ছোট তাই বেশি কিছু বলছে না । আমরাও ওর বাবাকে নিয়ে বেশি কিছু বলি নি । সেদিন ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যে হয়ে এল । আমরা বাড়ি ফিরে এলাম । পুজোর প্রায় একমাসের বেশি বাকি । তারপর প্যান্ডেল খুলতে আরো পনের দিন । এতদিন আমরা খেলব কোথায় ।
এই ভাবনাই মনের মধ্যে ঘুর ঘুর করছিল তাই পড়াতে ভাল মন দিতে পারছিলাম না । তাই দেখে মা বকল – কি রে কি ভাবছিস । কি বলছি শুনতে পারছিস না ।
- মা , শোন না প্যান্ডেল বাঁধা ...... ।
প্যান্ডেলের কথা শুনে মা আবার বকা দিতে শুরু করলেন । আমি আর কিছু না বলে পড়াতে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।
পরদিন আমরা আবার স্কুল থেকে ফিরে জড় হলাম । এদিক ওদিক ঘুরছি । পাশাপাশি ছোট বাচ্চারা ঘুরছে । ফুচকাওয়ালা , আলু-কাবলি , চানা মশলা , আইসক্রিম ওরা সব পর পর দাঁড়িয়ে । বিক্রিও ভাল । আমাদের দেখে ফুচকাওয়ালা বলল – কি দাদারা , খেলছ না ?
আমি ওর কাছে প্রায়ই ফুচকা খাই । ও আমাদের কথা শুনল না কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল । আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল । সেটা আমি সবাইকে বললাম । তাই শুনে মিতুদা – চল চেষ্টা করে দেখি ।
আমাদের পাড়ার পাশেই একটা প্রাইমারী স্কুলের পিছনে জংলা মতন একটা জায়গা আছে । এক রবিবার আমরা দল বেঁধে পরিষ্কার করতে লেগে গেলাম । সে রকম কেউ বাধা দিল না । বাড়িতে আমি কিছু বলিও নি । বড় বড় গাছগুলো থাকল , পুরো জঙ্গল সাফ করতে সপ্তাহ মত লাগল । তারপর আমরা খেলা শুরু করলাম যেদিন সেদিন বাধা কিছু লোক এল সঙ্গে সন্তুর বাবা আর বর্তমান সম্পাদক ।
আমরা যা বুঝলাম , এ জায়গাটা সরকারের না স্কুলের না অন্য কারোর জানা যায় নি । প্রোমোটার অনেকদিন ধরে কব্জা করার চেষ্টায় ছিল । কিন্তু ছেলেরা খেলছে দেখে অনেক চিৎকারের পরও ফিরে যেতে বাধ্য হয় ।
আর আমরা গাছের ফাঁকে ফাঁকে ফিল্ডিং সাজিয়ে , কিংবা বল পাশ দিয়ে দিয়ে আজও ফুটবল ক্রিকেট খেলি । আর এর জন্য আমাকে সবাই এত ভালবাসে যে আমি নিজে নিজে লজ্জা পেয়ে যাই । ভাবি এ আমি আমি তো ?

-০-০-০-০-
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক ভাবি এ আমি আমি তো ? সত্যিই সুন্দর....
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর ।।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ছোট্ট একটা সুন্দর ন্মৃতিচারন। ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
আরাফাত ইসলাম লেখা পড়ে মনে হলো ’বনসাঁই’- এর লিখিত ভার্সন ! অদ্ভুত !! ছোট্ট একটু পরিসরে কি সুন্দর করেই না ফুটিয়ে তুলেছেন !!!
আলমগীর সরকার লিটন লেখা টি পড়ে সেই দিনের স্মৃতির কথা মনে হল আমাদেরো এরকম অবস্থাছিল অনেক শুভকামনা রইল
দীপঙ্কর বেরা বেশ সুন্দর লেখা । ভাল লাগল ।
জাকিয়া জেসমিন যূথী গল্পটা ছোট্ট এবং হঠাত করে শেষ হয়ে গেলেও মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে থাকলো। প্রত্যেক সংখ্যায় লেখা চাই। আর, সবার লেখা পড়ে দেখুন, সমালোচনা ও ভোট প্রদান করুন।

০২ সেপ্টেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৩৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪