একজন ট্রাক চালকের দেশপ্রেম

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১৩)

সাইফুল ইসলাম
  • ১০
  • ১১০
একটি জুট মিলের সামনে দাড়িয়ে আছে একটি পণ্য বোঝাই ট্রাক,
ট্রাক চালক তার হেলপারকে: কুদ্দুস মাল সব ঠিকঠাক মত লোড হয়েছে তো, আমি অফিসে গিয়ে মালের কাগজপত্র নিয়ে এসেছি,
হেলপার: হ্যা ওস্তুাদ সব মাল ঠিকই লোড হয়েছে, দেন গাড়িটা এবার স্ট্রাট দেন,
চালক: হ্যা চল আর দেরি না করে এখনই গাড়ি স্ট্রাট দেয়, (বলে ওরা দুজনে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে চালাতে শুর“ করল)
হেলপার: ওস্তুাদ মাল কি কালই নামাতে হবে, এত জোরে চালাচ্ছেন যে, আগেও তো এই মিল থেকে মাল ভরেছি, এত জোরে কখনও চালাননি তো,
চালক: হ্যা কালই নামাতে হবে, অফিস থেকে বলে দিয়েছে, এখন ঠিক সময়মত ফেরি পেলেই হয়,
ওরা গাজিপুর শহরের একটি জুট মিল থেকে জুট ব্যাগ লোড করেছে, ওদের গাড়িতে থাকা পৌছাতে হবে বেনাপোল স্থল বন্দরে, ওরা পৌছাবার পর এই মাল ভারতে রপ্তানী হবে, বিকাল বেলা ওদের ট্রাক গন্তুব্যের উদ্দেশ্যে চলতে শুর“ করেছে। এখন শীতকাল বেশি রাত হলে ফেরি চলতে পারবে না কুয়াশার জন্য তাই তাড়াতাড়ি ফেরি ঘাটে পৌছাতে হবে, আবার রাতে গাড়িটাও চালাতে হবে দেখেশুনে কারণ কুয়াশার কারনে রাতের বেলা পথঘাট ভাল দেখা যায় না। একটু ভুল হলেই সর্বনাশ। যাই হোক ওরা ছুটে চলেছে গন্তুব্যে উদ্দেশ্যে। ওরা প্রায় রাত দশটার দিকে এসে পৌছালে ফেরি ঘাটে, তখন ঘাটে বেশি গাড়ির সিরিয়াল নেই তবে ফেরিগুলো বেকার দাড়িয়ে আছে, কারণ প্রচন্ড কুয়াষা পড়েছে, কর্তৃপ¶ সাময়ীক সময়ের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ করে রেখেছে দূর্ঘটনা এড়াতে।
ট্রাক চালক: কুদ্দুস তুই গাড়িতে থাক আমি গিয়ে দেখি আসি ফেরি কখন ছাড়বে,
কুদ্দুস: হ ওস্তুাদ যান আমি বসছি, (চালক গাড়ি থেকে নেমে হাটতে শুর“ করল ফেরির টিকিট কাউন্টারের দিকে)
চালক কাউন্টারম্যানকে: ভাই ফেরি কি বন্ধ আছে,
কাউন্টারম্যান: কুয়াসার কারণে বন্ধ আছে, ভোরের দিকে ছাড়তে পারে,
চালক: ঠিক আছে একটা টিকিট দেন আমার ট্রাকের জন্য, (চালক মনির টিকিট নিয়ে চলে গেল গাড়ির কাছে)
ভোর তিনটার দিকে ওরা ওদের ট্রাক ফেরি করে নদি পার করে এপাশে এলো। এরপর আবার ছুটে চলা শুর“ হলো
ফরিদপুর শহর পার হয়ে ওরা একটা বাজারে এসে দাড়াল,
নমির: কুদ্দুস নাম এখান থেকে চা-টা খেয়ে আবার টান দেব,
কুদ্দুস: হ্যা চলেন ওস্তুাদ, (দেশের সব মহাসড়কের দোকানগুলি সাধারণত সারা রাত ধরে খোলা থাকে আর বেচাকেনাই হয় মন্দ না) ওরা দুজনে একটা চায়ের দোকানে বসে চা খেতে শুর“ করল, এমন সময় এক লোক এসে: ভাই এই গাড়ির ড্রাইভার কি আপনি,
মনির: হ্যা আমি, কেন কি,
লোকটা: আপনারা মাল নামাবেন কোথায়, মানে যাবেন কোথায়?
মনির: বেনাপোল যাব, ট্রাকে থাকা মাল ইন্ডিয়ায় যাবে, কেন কি?
লোকটা: তাহলে তো ভালই হলো, আপনি আমার একটা মাল আর একটা লোক নিয়ে যাবেন,
মনির: কিসের মাল, কই টন হবে, ভাড়া কত দিবেন
লোকটা: টন না টন না, অল্প মাল ট্রাকের কেবিনের এককোনায় পড়ে থাকবে, ভাড়া আপনি যা চাবেন তাই দেব, চাইলে চলি­শ-পঞ্চাশও নিতে পারেন
লোকটার কথা শুনে মনিরের মনে সন্দেহ হলো তখন ও বলল: মনে হচ্ছে আপনার মালে ভেজাল আছে, আপনি অন্য কাউকে দেখেন আমি আপনার মাল নেব না,
লোকটা কিছু বলার আগেই মনির কুদ্দুসকে গাড়িতে গিয়ে উঠতে বলল আর নিজে উঠে চালাতে শুর“ করল,
চলতে চলতে কুদ্দুস: ওস্তুাদ ভুল করলেন না, মালটা নিলে কি হতো
মনির: ওই ব্যাটা তুই কি আমার আগে এই লাইনে আইছিস, আমারে শিখাস কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক, তোর চেয়ে ছোট বয়স থেকে আমি ট্রাক চালায়।
কুদ্দুস: না মানে ওস্তুাদ বলছিলাম, মালটা নিলে তো আমাদের ভালই লাভ হতো তাই না, আমরা সারা মাস টিপ খেটেওতো এত কামাতে পারি না, আর মালিককেউ এই টাকার ভাগ দেওয়া লাগত না,
মনির: এত লোভ ভালো না,
কুদ্দুস: ওস্তুাদ আপনাকেই শুধু দেখলাম ধান্দা মারেন না, আর সবাই কিভাবে দুহাতে কামাচ্ছে
মনির: বললাম তো আমার এত লোভ নেই, তোর না পোষালে ওন্য গাড়ি ধরে উঠে পড়, যারা এভাবে অবৈধ পথে পয়সা কামায় তারা কেউ সুখে নেই, দেখবি ওই শালারা একদিন রাস্তুায় পড়ে মরবে কেউ তাকিয়েও দেখেবে না, এদের কারনে দেশটা একেবারে জাহান্নামে পরিণত হচ্ছে। কোথায় গিয়ে সুখ নেই, আচ্ছ তুইই বল সবাই যদি এভাবে দু-নাম্বারি করে পয়সা কামায় তাহলে দেশেটার কি হবে?
কুদ্দুস: না ঠিক আছে আপনি জোরে চালান তা না হলে তো আবার কাল মাল ফেলতে পারব না, আর আপনার দেশটার বারটা বেজে যাবে, সামান্য পয়সার জন্য জিবনের রিক্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এই কুয়াসার মধ্যে আর আমি কিছু বললেই দোষ,
মনির: পেটের দায়ে রাস্তুায় নামিছি, মা বাপ আর বউকে খায়াবো বলে কারও ¶তি করার জন্য নয়,
কুদ্দুস: এতে ¶তিটা কি,
মনির: ওই লোকটা আসলে সোনা পাচারকারী দলের লোক,
কুদ্দুস: বলেনকি ওস্তুাদ,
মনির: সোনা হচ্ছে দেশের দামি সম্পত্তি, এটা বেশি না থাকলে দেশ চলে না, জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাই, আর এই সব শালারা দেশের জিনিস বিদেশের হাতে দিচ্ছে টাকার লোভে, তুথু দেয় ওদের মুখে
কুদ্দুস: আপনি কি ভেবেছেন আপনি ওদের মালটা নেননি বলে কি মালটা পড়ে থাকবে?
মনির: এত কথা না বলে সামনের দিকে ভাল করে তাকা, এখান থেকে রাস্তুায় ঘনঘন বিট আছে, একটাউ যদি ভাল করে টের না পেলে বিরাট বিপদ হতে পারে, লোড গাড়ি চালাচ্ছি সে হুস আছে, টাকার চেয়ে জিবনের দাম মেলা বেশি,
কুদ্দুস: ঠিক আছে ওস্তুাদ,
ওরা চলতে চলতে একটা থানা শহরের কাছে রাস্তুার একজন পুলিশ হাত মারল থামার জন্য,
মনির: এই মেরেছে এ শালা আবার কোথ থেকে আসল, আবার কি ঝামেলা পাতায় কে জানে,
বলে ও গাড়িটা থামাল আর বলল: কি হয়েছে স্যার, দাড়াতে বললেন কেন?
পুলিশ: এই রাস্তুায় এখন যাওয়া যাবে না, কারণ সামেন যে বেইলি ব্রিজটা ছিল তা হঠাৎ ভেঙ্গে গেছে, কাজ চলছে ঘন্টা চারেক সময় লাগবে বুঝেছ, হয় তোমার গাড়িটা এখানে রাখ তা না হলে বাইপাস দিয়ে যাউ,
কথা শুনে মনিরের মাথাঘুরে গেল, চার ঘন্টা মানে তো সকাল ৯টা, তাহলে মাল নামাব কখন, অফিস থেকে যে বলে দিল
মনির: কুদ্দুস আমরা এই শীতে এখানে দাড়িয়ে থাকব না, বাইপাস দিয়ে যাব চল
কুদ্দুস: কি বলছেন ওস্তুাদ, বাইপাসের তো এখনও কাজই শেষ হয়নি, রাস্তুার অবস্থা খুবই খারাপ, ওই রাস্তুা দিয়ে যাওয়া যাবে না,
মনির: বসে থাকলে সময় মত মাল ফেলতে পারব না, অফিসে কি জবাব দেব,
কুদ্দুস: বলবেন পথে বিপদ হয়েছিল, বিপদ হলে আমরা কি করব, আমরা কি পে­ন চালাই নাকি যে ওড়ে যাব, সামনে কিছু পড়বে না?
মনির: তোর এত কথা বলতে বলেছে কে, তুই গাড়িতে চুপ করে বসে থাক, গাড়িটা তো আর তুই চালাচ্ছিস না, চালাচ্ছি তো আমি
কুদ্দুস: ঠিক আছে চলেন,
বলে ওরা একটু পিছিয়ে এসে বাইপাস দিয়ে চালাতে শুর“ করল,
চলতে চলতে হঠাৎ মনিরের মোবাইলটা বেজে উঠল ও ধরে: হ্যা বলো, (ও ভাবছে বাড়ি থেকে ওর বউ ফোন করেছে আসলে ফোনটা করেছে ওর মা)
ওপার থেকে: মনির তুই এখন কনে বাপ,
মানির: ও মা আমি এখন বেনাপোল যাচ্ছি,
মা: এখন কনে আছিস,
মানির: আমি এখন মাগুরা টাউন পার হয়ে যশোরের পথে,
মা: তাহলে এ¶ুনি তুই গাড়ি নিয়ে বাড়ি আয়,
(মনিরের বাড়ি যশোর শহরের খাজুরা বাসস্টান্ড থেকে মাইল পাঁচেক দুরে তবে পাকা রাস্তুা, ট্রাক নিয়ে যাওয়া যায়। আর ওদের বাড়িটাও একেবারে রাস্তুার ধারে)
মানির: কেন এ¶ুনি বাড়ি আসতে হবে কেন, কি হয়েছে?
মা: বউমার শরিরটা খুবই খারাপ এ¶ুণি হাসপাতালে নিয়ে যাতি হবে। না হলে বিপদ হতি পারে, তাড়াতাড়ি আয়।
(মনিরের বউটার সন্তুান সম্ভাবা, ওর প্রসব বেদনা শুর“ হয়েছে, গ্রামের দাই বলেছে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে না নিলে বিপদ হতে পারে, এই কথা শুনে মনিরের মা মনিরকে মোবাইল করে বাড়ি আসতে বলছে)
মানির: তুমি এক কাজ করো হাসানদের বাড়ি গিয়ে ওকে ডেকে নিয়ে ওর ভ্যানে করে তোমার বউমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাউ।
মা: এই হাড় কাঁপানো শীতে হাসান কি যেতে চাবে? তোর গাড়িতো বেশি দুরে নয়, তুই বাড়ি এসে বউমাকে নিয়ে যা না,
মানির: আমি আসতে পারব না, দেরি হবে তার চেয়ে তুমি হাসানকে ডেকে আন, আমার কথা বললি আর আমার বিপদের কথা শুনলি ও ঠিক আসবে,
মা: আচ্ছা ঠিক আছে, তুই সাবধানে আয়,
মানির: ঠিক আছে মা,
(ওদের ট্রাকটা শা শা করে চলছে, প্রচন্ড শীতের দিনে ট্রাক চালাতে একটা সুবিধা আছে তা হচ্ছে ইঞ্জিনের উত্তাপ ওদের দুজনকে বেশ গরম রাখছে),
কুদ্দুস: কে ফোন করেছিল ওস্তুাদ আর আপনাকে মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল মনে হচ্ছে,
মনির: বাড়ির ফোন ছিল, তোর ভাবির শরিরটা খুব খারাপ,
কুদ্দুস: কেন কি হয়েছে ভাবির, খুব খারাপ খবর নাকি?
মনির: আরে ব্যাটা তুই চাচা হতে যাচ্ছিস,
কুদ্দুস: তাই ওস্তুাদ, তাহলে আজ আর আমরা বেনাপোল যাচ্ছি না তাই তো, আর গিলেও বিকেলে,
মনির: তাহলে কি আমরা আবার ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি,
কুদ্দুস: আমি তা বলিনি, ভাবির কথা চিন্তুা করে আপনাকে এখন বাড়ি যাওয়া উচিৎ, আর বাড়িটা তো সামনেই,
মনির: আমার কি করতে হবে তা তোকে বলতে হবে না, ঠিক মত নিজের কাজ কর, সামেন বিট আছে কি দেখ,
কুদ্দুস: তার মানে আপনি এখন বাড়ি যাবেন না,
মনির: না যাব না,
(ওরা ছুটে চলেছে, ফজরের আযানের সময় হয়ে গেছে, ওদের ট্রাক টা তখন যশোর আর মাগুরা শহরের মধ্যবর্তি স্থানে এমন সময় কুয়াসার মধ্যে কুদ্দুস দুজন লোক দেখতে পেল, ও দেখল ওই লোকদুটো হাত নাড়ছে সাহায্যের জন্য)
কুদ্দুস: ওস্তুাদ দাড়ান দাড়ান, মনে হয় দুটো লোক বিপদে পড়েছে,
মনির: কই দেখছি না তো, তুই আবার কি দেখলি?
কুদ্দুস: এখানে রাখেন এই মাত্র আমার ওদের পার হয়ে আসলাম, এত কুয়াসার জন্নি ভাল টের পাওয়া যাচ্ছে না,
(মনির গাড়িটা থামাল আর কুদুস ট্রাক থেকে নেমে একটু পিছনে তাকাতেই দুজন মহিলাকে দেখতে পেল, এবং ওদের সাথে কথা বলে ট্রাকের কাছে আসল)
কুদ্দুস: ওস্তুাদ দুজন মহিলা,
মনির: তো কি হয়েছে,
কুদ্দুস: ওনাদের একটু হাপাতাল পর্যন্তু নিয়ে যেতে বলছে, কারণ একজনের শরির খারাপ
মনির: শরির খারাপ তাউ আবার এই শীতে, কি হয়েছে কি?
কুদ্দুস: আসলে ওরা দজুনে বউ শাশুড়ি, বউটার শরির খারাপ আর কেচটা ভাবির মত বুঝলেন,
(কুদ্দুসের কথা শুনে মনিরের মনটা গলে গেল)
মনির: কোন হাসপাতালে যাবে শুনে দেখ,
কুদ্দুস: গরিব মানুষ আর কনে যাবে, যাবে যশোর সদর হাসপাতালে,
মনির: নে ভিতরে তুলে নে, কেবিনের উপর বসতে দে,
(ওরা ওই দুই মহিলাকে ট্রাকে তুলে নিয়ে আবার ছুটতে শুর“ করল, প্রচন্ড কুয়াসার জন্য ট্রাকটা কিছুটা ধিরে চালাতে হচ্ছে, ওরা যখন যশোর শহরের কাছে পৌছালো তখন প্রায় ভোর, সাধারণত বড় শহরের মধ্যে ট্রাক সহ কিছু যানবাহন ঢুকতে পারে না, শহরের বাইপাস সড়ক দিয়ে শহর প্রদ¶িন করতে হয়। তাই মনির ট্রাকটি শহরের একটি প্রবেশ মুখে থামালো আর বলল, আপনাদের এবার নেমে গিয়ে অন্য কোন গাড়িতে করে হাসপাতালে যেতে হবে, নামেন, পুলিশ ট্রাক শহরের মধ্যে যেতে দেবে না, এই কুদ্দস ওনাদের একটা কিছু ঠিক করে দে,
কথা শুনে কুদ্দুস আর মহিলারা দুজন ট্রাক থেকে নামল, কুদ্দুস অনেক খুজখুজির পরও একটাও কিছু পেল কারণ এই হাড়কাপানো শীতে আর কুয়াসায় গাড়ি চালকরা এখন রোডে আসেনি ভাড়া মারার জন্য,
কুদ্দুস: কোন গাড়ি ঘোড়া তো দেখছি না ওস্তুাদ, কি করব,
মনির: আপনারা এখানে একটু দাড়ালে গাড়ি পাবেন, আমরা যাই
একজন মহিলা কাঁদো কাঁদো শুরে: আমাদের এভাবে ফেলে যেও না বাবা দয়া করে একটু শহরের মধ্যে দিয়ে চল, এত সকালে রাস্তুাইও কোন যাম নেই আর পুলিশ কে আমাদের বিপদের কথা বললে ওরা দয়া না করে পারবে না, হাসপাতালে নিতে দেরি হলে বিরাট বিপদ হতে পারে,
(ওদের অবস্থাটা সত্যিই খুবই খারাপ ছিল, মনির ভাবল কারও বিপদে এগিয়ে আসাটা সত্যিকারের মানুষেরই ধর্ম। আর এজন্য কিছু ঝামেলা হলো হোক, আর ওর বউটারও অবস্থা একই রকম, তখন ও ওদের ট্রাকে আবার তুলে নিয়ে শহরের মধ্য দিয়ে চালাতে শুর“ করল,
কিছু দুর যেতেই পুলিশ এসে হাজির, জরিমানা সহ কেচ দেওয়ার হুমকি সাথে ধমক, তখন মনির পুলিশ কর্মকর্তাদের তার ট্রাকে থাকা ওই প্রসব বেদনাই কাতর মহিলার কথা আর ওকে দ্র“ত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ও শহরের মধ্য দিয়ে এসেছে বলে, এতে পুলিশ কর্মকর্তারা মনিরকে ধমক দেওয়া বন্ধ করে বাহা বা দিয়ে বলে আপনি খুব মানবিক কাজ করেছেন ভাই, আপনি যান শহরের মধ্য দিয়ে যান আমি সব চেক পোস্টে বলে দিচ্ছি কেউ কোন ঝামেলা করবে না,
কথা শুনে মনির ওই দুই মহিলাকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে শহর থেকে বেরিয়ে যশোর বেনাপোল মহাসড়কের চাচড়া নামক স্থানে এসে গাড়াল, তখন সকাল সাড়ে সাতটা, দিনের শুর“ হলেও সূর্যের দেখা নেই, কুয়াসার চাঁদরে মুখটা ঢেকে রেখেছে সে, মনির আর কুদ্দুস চাঁচড়া বাজারের একটা দোকানে বসে হালকা খাবার খেয়ে আবার চলতে শুর“ করল, ওদের গন্তুব্যে পৌছাতে আর ঘন্টা খানেক লাগবে।
ওরা ঘন্টা খানেক ওদের গন্তুব্য স্থল বেনাপোল পৌছালো, তারপর কাস্টম্স এর অনুসাঙ্গিক কাজ সেরে ট্রাক ঢুকালো ভারতীয় বন্দরে, মাল নামিয়ে ওরা ফিরে এলো, এবার বাড়ি ফেরার পালা, এত কাজের মধ্যে মনির তার সন্তুান সম্বাভাবা স্ত্রীর কথা ভুলে গেছে।
(দুপুর হয়ে গেছে ওরা আর একটা ভাড়া ঠিক করে একটা স্থনীয় হোটেলে বসে ভাত খাচ্ছে আর গল্প করছে)
মনির: কুদ্দুস তুই থাক বেনাপোল, এখান থেকে মাল ভরে যশোরে আয়, আমি ওখান থেকে উঠব,
কুদ্দুস: ওহ ও¯—াদ ভাবির কি হয়েছে তা তো বললেন না, খোছ নিয়েছেন,
মনির: ওহ তাই তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, দাড়া বাড়ি ফোন করে দেখি
মনির ওর মোবাইলটা বের করে ফোন দিলে ওর মা ধরে বলল: হ্যালো
কুদ্দুস: হ্যা মা আমি মনির বলছি, র“বি কেমন আছে,
মা: তোর ছেলে হয়েছে বাপ, বউমাউ ভালো আছে,
(কথা শুনে যেন মনিরের সারা রাতের কষ্ট এক নিমিষে ধুয়ে গেল, মনটা একেবারে ভরে উঠল আর মুখে হাসি)
মনির: তাই মা, তোমরা এখন কোন হাসপাতালে
মা: হাসপাতালে না কোন হাসপাতালে না বাড়িতে, আল­াহ দয়ায় কোন বিপদ ছাড়ায় তোর ছেলে দুনিয়ার মুখ দেখেছে, এই নে বউমার সাথে কথা বল,
মনিরের স্ত্রী: তুমি যেন আমার সাথে কথা বলবে না, তোমার কাজ নিয়েই থাক, আমারা তোমার কে,
মনির: আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি এ¶ুনি আসছি আমার ছেলের কাছে, ওকে বলেছ আমার কথা,
মনিরের স্ত্রী: তোমার আসতে দেরি দেখে তোমার ছেলেও রাগ করেছে, কথা বলবে না তোমার সাথে,
মনির: ওরে বাবা এই বয়সে এত রাগ,
মনিরের স্ত্রী: দেখতে হবে তো কার ছেলে, আচ্ছ ঠিক আছে রাখি তুমি তাড়াতি বাড়ি চলে এসো
মনির: ঠিক আছে আসছি, বলে মনির ফোনটা রেখে দিল
কুদ্দুস: আপনার ছেলে হয়েছে ওস্তুাদ, আমি হ্যাব্বি খুশি, চল আজ আর টিপ ভরা নই,
মনির: সারারাত তো তোর কোন কথায় শুনলাম না, ঠিক আছে চল (বলে ওরা ওদের ট্রাকটা এক ফিলিং ষ্টেশনে রেখে বাসে করে বাড়ি রওয়ানা হলো)
কুদ্দুস: ওস্তুাদ আপনাকে একটা কথা জিঞ্জাসা করি, আমার কাল যে টিপ ফরেছিলাম মালটা তো বেশি দামি না পাটের শুতুলি, তাহলে আপনি কেন এত কষ্ট করে আজই মাল নামালেন?
মনির: তোকে কে বলেছে মালটা দামি ছিল না?
কুদ্দুস: এত কি দামি মাল যে তুমি ভাবির শরিরে অবস্থার কথা শুনেও বাড়ি গেলে না, আসলে মাল নামাতে
মনির: শোন তাহলে, আমি যখন অফিসে গিয়েছিলাম কাগজ আনতে তখন ওরা আমাকে বলেছিল এই মালগুলি যাবে ইন্ডিয়াই, কালই যেতে হবে তা না হলে ওদের বিরাট ¶তি হয়ে যাবে, ওরা যে মাল ইন্ডিয়ার দেয় তার অর্ডার ক্যানসিল হয়ে যাবে, চলে যাবে বাইরের দেশে
কুদ্দুস: ওদের অর্ডার ক্যনাসিল হলে আমাদের ¶তি কি, আমরা অন্য ঘর থেকে মাল ভরব চিন্তুা কি, আর তাই বলে তুমি অন্যের কাজের নিজের বউকে এভাবে ফেলে চলে আসবে?
মনির: এভাবে একদিন যদি সব ঘরের মালের অর্ডার ক্যানসিল হয়ে যায় তখন কি হবে? কি করে খাব আমরা, দেশটার কি হবে, সবাই যদি শুধু নিজের সুবিধার কথা চিন্তুা করে তাহলে তো একদিন বিরাট বিপদ হবে, বাইরের দেশে আমাদের দেশ থেকে যে মাল যাই তার উপর নির্ভর করে জিসিন পত্রের দাম, দাম বেড়ে গেলে তো সর্বনাশ, তখন ভাব কি করে চলবে আমাদের? আর একটা কথা বলি তোকে পথে জিবনে কোনদিন বিপদে পড়া মানুষ দেখলে ফেলে যাবি না আর দেশ সমাজের ¶তি করে এমন কোন মাল গাড়িতে নিবি না, তাহলে দেখবি আল­াহর রহমত তোর উপর থেকে উঠে যাবে না কোনদিন,
কুদ্দুস: তা তুমি একা ভালো হলে কি হবে?
মনির: হবে, আজ আমি তোকে বলে যাচ্ছি, কাল তুই আর একজনকে বলবি এভাবে একদিন সবাই ভাল হয়ে যাবে,
কুদ্দুস: তা তুমি ঠিক বলেছো।
ওরা দুজনে মহা আনন্দে বাড়ি দিকে যেতে শুর“ করল।
মনির একজন অশি¶িত ট্রাক চালক হলেও ওর মধ্যে রয়েছে এক বিরাট দেশ্রপ্রেম। ও জিবনের ঝুকি নিয়ে সকল প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে দেশের রপ্তানী পণ্য পৌছে দিয়েছে সঠিক গন্তুব্যে সঠিক সময়ের মধ্যে, এমনকি ও ওর অসুস্থ স্ত্রীর কথাও ভুলে গেছে কাজ আর দেশের কথা ভেবে। আবার পথে পড়ে থাকা বিপদগ্রস্তু মানুষকে ও ফেলে আসেনি, ফেলে এসেছে দেশ আর সমাজের শত্র“দের, অর্থের লোভ ওকে গিলে খেতে পারিনি। এটাই সত্যিকারের দেশপ্রেম। মনিরের মত হাজার ট্রাক চালক পৌছে দিচ্ছে আমাদের অতি দরকারী সব পণ্য সামগ্রি দেশের একপ্রান্তু থেকে অন্য প্রান্তেু দিন রাত না ঘুমিয়ে। হাজার সালাম এই সব চালাক ভাইদের যারা নিজেরা না ঘুমিয়ে আমাদের নিশ্চিত ঘুমের পাহারা দিচ্ছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক আজ আমি তোকে বলে যাচ্ছি, কাল তুই আর একজনকে বলবি এভাবে একদিন সবাই ভাল হয়ে যাবে,..সুন্দর চিন্তা ভাবনা...গল্পটাও সুন্দর...আর একটু যত্ন নিলে আরো ভালো হত...ছোট খাটো ত্রুটিগুলো এড়ানো সম্ভব হত....shuv kamona....
সুমন সুন্দর গল্প, ভাল লাগল।
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর লেখা । ভিন্ন ভাবনার একটাি দারুন বর্ননামূলক গল্প ।।
সূর্য লেখার ভঙ্গি অনেকটা নাটকের মতো হয়েছে। সেটায় আরেকটু উতকর্ষতা আনতে হবে। কাহিনী বিন্যাস অসাধারণ না হলেও আবেগাপ্লুত করার মতোই আর এ কারনেই প্রথম দুটো বাক্য লিখলাম। বুঝতেই পারছেন ঐ দুটো বাক্য লিখার সুযোগ না দিলে গল্পটা অসাধারণ হতো। মনে হচ্ছে আপনি তা পারবেন অবশ্যই।
মনতোষ চন্দ্র দাশ দারুণ লিখেছেন সাইফুল ভাই।খুব ভাল লাগল গল্পটি।শুভেচ্ছা রইল।
কবি এবং হিমু ট্রাক চালকের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।যদি ও জানি তাদের দেশপ্রেম বা সততা সমাজের মানুষের কাছে মূল্য নেই।দেশটা আর দেশের মানুষগুলো আমরা সবাই পরে আছি দালালগুলোর চামচামি করে নিজের পকেট টা ভরার চিন্তায়।
ঠিক বলেছেন ভাই
মোঃ আক্তারুজ্জামান অর্থের লোভ ওকে গিলে খেতে পারেনি- সবার ক্ষেত্রে এরকমই হওয়া চাই। তবেই দেশটা বদলে যাবে। আর হাঁ লেখাটা অনেক জায়গাই আর গল্প থাকেনি নাটকের মত হয়ে গেছে। আমার মনে হয় আপনি লেখার পাশাপাশি যদি নিয়মিত পড়েন তবে এই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যান- এই কামনা।
সোহেল মাহামুদ (অতি ক্ষুদ্র একজন) শিক্ষনীয় গল্প! তবে ব্যাপারটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শেখানো মত হয়ে গেল হয়তো ...! বর্ননায় আরো দক্ষতা আনতে হবে... সাবলীল লিখতে গিয়ে যেন সাদামাটা না হয়ে যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত...
চোখে আঙ্গুল দিয়ে শেখানো জন্য লিখিনি, শুধু দেশের শ্রমজীবী মানুষের মাঝেও দেশপ্রেম আছে সেটা দেখাতে চেয়েচি, আর আপনার বর্ননায় আরো দক্ষতা আনার পরামর্শ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
আরাফাত ইসলাম আসলে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে দেশপ্রেম এর স্বরূপ-টা ভিন্ন ! হয়তো বা আমাদের কাছে সেটা গল্পের বইয়ে বা জাদুঘরের পুরার্কীতির মতো সংরক্ষিত !! বাস্তবতা বিচার করলে অনেকের হয়তো আসল জায়গায় হাত চলে যায় !!! (যথেষ্ট সাবলীল লিখেছেন !)
শিক্ষনীয় গল্প! তবে ব্যাপারটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শেখানো মত হয়ে গেল হয়তো ...! বর্ননায় আরো দক্ষতা আনতে হবে... সাবলীল লিখতে গিয়ে যেন সাদামাটা না হয়ে যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত...
নিঃসন্দেহে ভালো কমেন্ট ! তবে মন্তব্যের ব্যাপারটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শেখানো মত হয়ে গেল হয়তো ...! আরো দক্ষতা আনতে হবে... সাবলীল লিখতে গিয়ে যেন বাহুল্য দোষে দুষ্ট না হয়ে যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত...
ভাই আমি আপনার সাথে ফোনে ক্তহা বলতে চাই, ০১৯১৯১৪৭৪১৯

২৬ আগষ্ট - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪