বন্ধু এবং তার কিছু প্রশ্ন

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১৩)

কবি এবং হিমু
আজ কোন গল্প লিখতে যাবো না।এ সংখ্যার যে বিষয় তা নিয়ে লেখার মতো সাহস আমার আজও হয়ে উঠে নি।আজ আমার এক বন্ধুর কথা শুনাবো।এক পাগল বন্ধুর কথা।
কলেজের প্রথম দিনই তার সাথে পরিচয়।দুজনের ডাক নামটা একই ছিল বলে হয়ত বন্ধুত্বটা সহজেই হয়েছিল।তখন কি বুঝতে পেরেছিলাম সেই হবে আমার সব থেকে ভাল বন্ধু।ছাএ হিসেবে ভালই ছিল আবার কিছুটা পাগলও।তার কিছু পাগলামি‍ আজ সবার সাথে শেয়ার করবো বলেই লিখতে বসেছি।
এক দিন কলেজে এক লোকাল পএিকার সাংবাদিক এল।আসছে মহান ভাষা দিবস নিয়ে এ প্রজন্মের কি চিন্তা ভাবনা তাই সে তুলে ধরবে তার পএিকায়।আমার বন্ধুটিকে যখন প্রশ্ন করলো আপনার কি ভাবনা।সে উওরে বলল,আমার কোন ভাবনা নেই।রাতের বেলা অন্যর বাগানের ফুল চুরি করে শহীদের সম্মান জানাতে আমি শহীদ মিনারে কখনও যায়নি।আমি ছাএ তাই ১০টাকা দিয়ে ফুল কেনার মতো সাহস ও দেখাইনি।সাংবাদিকসহ আমরা সবাই অবাক।বলে কি পাগলটা।
কলেজ বন্ধ হলে যখন সিলেট থেকে আমরা পারাবতে করে বাড়ি ফিরতাম।সেদিন সে সকালে এসে হাজির হতো টিকেট কাটার জন্য।টিকেট না কেটে সে কখন ও ট্রেনে চড়েনি।কতবার আমি তাকে না করেছি টিকেট কাটতে।ছাএ ছিলাম বলে ট্রেনে বা বাসে মাগনা বা হাফ ভাড়া দিয়েই চালিয়ে নিতাম।আমি তাকে অনেক বার প্রশ্ন করেছি কি হয় টিকেট না কাটলে?প্রতিবার উওরে সে মুঁচকি হেসেছে।
আমরা বন্ধুরা মাঝে মাঝে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম।কোন কাজ নাই।সারাদিন বাইকে চড়া।বিশ্বরোডে এলেই টোল দেবার ভয়ে পাশের চিপা রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যেতাম।কেবল যে আমরা ফাকি দিতাম তা না।অনেক সিএনজি ও দেখেছি এই রাস্তায় পালিয়ে যেতে।কিন্তু আমার বন্ধুটি,টোল জমা করে তারপর আমাদের সাথে এসে মিলিত হতো।আমরা হাসতাম তার পাগলামী দেখে।
তাকে কখনও রাজনীতি নিয়ে আলাপ করতে দেখিনি কিংবা কোন দলের সাথে জড়িত হতে।সে ছিল তারমতো।কোন কাজে তাকে নিয়ম ভাঙ্গতে দেখিনি।সে ছিল আমার সব থেকে আপন,আমার পাগল বন্ধু।
একদিন স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সে লন্ডন পাড়ি জমালো।আমি ও জীবনের সাথে তাল মিলাতে চলে আসলাম দেশের বাইরে।তারপর থেকে ফেইসবুক আর স্কাইপ দিয়েই যোগাযোগ।
কিছুদিন আগে মধ্যরাতে মোবাইল ফোনটা হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠে।মোবাইলের শব্দে বুকটা কাপতে থাকে।দেশ থেকে কোন খারাপ খবর আসলো না তো।মোবাইল স্কিনে তার নাম্বারটা ভেসে উঠল।রিসিভ করতেই বলল স্কাইপ এ আয় অনেক কথা আছে।প্রিয় বন্ধু বলে কথা।আর আমি তাকে ভাল করেই চিনি তাই কথা না বারিয়ে স্কাইপ অন করলাম।আমার আর আমার পাগল বন্ধুটির আলাপচারিতা ।
রাগ করেছিস?এতো রাতে ঘুম থেকে জাগালাম বলে।
না।কি বলবি,বল।তুই কি কাঁদছিস?
হাঁ।মনের মাঝে আজ অনেক কষ্ট।
কি হয়েছে তোর?বাড়ীর সবাই ভাল তো?
সবাই ভাল।কিছু কথা বলব।মন দিয়ে শোন।
অন্যর বাগানের ফুল চুরি করে শহীদ মিনারে কোন দিন যাইনি।কারন জানতাম সকালেই বাগানের মালিক গালাগালি দিতো শহীদ দিবস নিয়ে।তাই কোনদিন চাইনি শহীদদের গালি শোনাতে।
বিশ্বরোড পাড়ি দেবার সময় নিয়মিত টোল দিয়েছি।মনে মনে ভাবতাম এই টোলের টাকা দিয়ে সরকার আরেকটি বিশ্বরোড বানাবে।
ট্রেনের টিকেট না কেটে ট্রেনে উঠিনি কোনদিন।মনে করতাম এই টাকা দিয়েই তো আবার নতুন কোন রেললাইন তৈরি হবে।একটা দেশের যোগাযোগ যত উন্নত ততই তাড়াতাড়ি দেশটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠে।
কিন্তু না।আমার সেদিনের সেই চিন্তা ভূল ছিল।আমি আসলেই পাগল ছিলাম।
যখন পএিকায় পড়ি বা খবরে শুনি একজন মানুষের কারনে পদ্মা সেতুর অনুদান বন্ধ হয়ে যায়।আবার সেই মানুষটিই পরে দেশপ্রেমিক উপাধী পায় তখন নিজেকে পাগল মনে হয়।
টাকার বস্তাসহ যখন রেল বিভাগের মানুষ ধরা খায় আবার তারাই যখন গাড়ীতে বাংলাদেশের পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় তখন কষ্ট লাগে।আসলেই আমি একটা পাগল ছিলাম।
দেশে নাকি আন্দোলন হচ্ছে।সরকার পতনের আন্দোলন।প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে।তুই কি বলতে পারিস যে যুবকটি আজ দেশের কথা চিন্তা করে দেশটাকে ভালবেসে প্রান দিল।তার এই প্রানের বিনিময়ে কি আমরা পারবো একটা দেশপ্রেমিক সরকার বা দেশ প্রেমিক একটি মন্ত্রীসভা বানাতে।নাকি আবার ও কোন ভন্ড দেশপ্রেমিক দায়িত্ব নিবে দেশটা চালানোর।
আজ আমার অনেক কষ্ট।নিজের দেশের মানুষকে গুলি করে মারার নাম কি দেশপ্রেম?
অন্যর জীবনের বিনিময়ে ক্ষমতায় যাবার নাম কি দেশপ্রেম?
পদ্মা সেতুর টাকা রেলের টাকা চুরি করে খাবার নাম কি দেশপ্রেম?
আজ আমার অনেক কষ্ট।কষ্টটা আরও বেড়ে যায় যখন মনে হয় আমার কাটা টিকেটের টাকাটা,টোল দেবার টাকাটা দেশের কোন কাজে লাগেনি বরং সেই টাকাটা চুরি হয়েছে।তার মানে আমি ও কি তাকে চুরিতে সাহায্য করেছি।
আমি ও আমার বন্ধুর সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁদছি।আর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলছি।আসলেই তো দেশপ্রেমিক কাকে বলে।সেই সব ভন্ড নেতাগুলোকে যারা চুরি করে ও দেশপ্রেমিক উপাধী পায় নাকি আমার পাগল বন্ধুটির মতো দেশের আমজনতা।যারা টিকেট কেটে ট্রেনে চলে,টোল বা কর ফাঁকি দেয় না।নিজের প্রিয় ভাইয়ের লাশে পা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান সাবলীল বর্ণনার অনেক সুন্দর লেখা। বক্তব্যকে মর্মস্পর্শী বললে ভুল বলা হবে না। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩
আপনাকে ও ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩
সূর্য এই পাগলার যুক্তিগুলো শুধু গল্প হয়েই থেকে যাবে। আমার জানামতে কেউই কোন দলের নীতি আদর্শ দেখে তাকে সাপোর্ট করে না। হয় নিজস্ব লাভ অথবা বর্তমানের দলের উপর ক্ষোভ থেকে অপর দলকে ভোট করে, বিরোধীতা করে। যতদিন আমরা এমন অবস্থা থেকে বেরোতে না পারছি চিনি চোর, রেলখোড়, পদ্মাসেতুখোড় অথবা ভাঙ্গা সুটকেস থেকে রেহাই পাবো না। গল্প ভালো লেগেছে।
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩
মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ। টিভি চ্যানেলের টক শো গুলো যেমন আমরা কেবল শুনি তেমনি গল্পগুলো আমরা কেবল পড়ি।এতে নিজেদের মানসিকতার কোন পরিবতন হয় বলে মনে হয় না
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু দারুন একটা শিক্ষনীয় বাস্তবধর্মী গল্প, বেশ ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩
শুভেচ্ছা গ্রহন করুন
ভালো লাগেনি ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩
এফ, আই , জুয়েল # বাস্তবতার আলোকে অনেক শিক্ষনীয় একটি গল্প । অনেক সুন্দর ।।
ভালো লাগেনি ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩
কষ্ট করে আমার দুটি লেখা পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।শুভ কামনা গ্রহন করুন
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩
জায়েদ রশীদ ভাল লাগল। গল্পটি শুধু বিষয়ভিত্তিকই না... শিক্ষামূলকও বটে।
জাকিয়া জেসমিন যূথী মনটা এমনিতেই খারাপ ছিলো, আপনার গল্পটা পড়ে চেপে রাখা কান্নাটা বিস্ফোরিত হলো। আপনার বন্ধুর কাহিনীর ভেতর দিয়ে বাস্তবতা বের হয়ে এলো। আমাদের ধর্মই তো এই যে সঠিক কাজটা করে তাকে আমরা পাগল বলি। কারণ দূর্নীতিতেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। 'খুব ভালো' লিখেছেন।
আপনার অসাধারন মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ,আগামীতে লেখার অনুপ্রেরনা বলে গ্রহন করলাম।
আরাফাত ইসলাম এককথায় অসম্ভব বাস্তবধর্মী ভালো একটা লেখা উপহার দিয়েছেন !!!
ধন্যবাদ,আরাফাত

২৭ জুলাই - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪