প্রেম

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

মোঃ মোজাহারুল ইসলাম শাওন
  • ৩২
আমি তখন নতুন তরুণ ডাক্তার। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ শেষ করে গাইনিতে অনারারী ট্রেনিং করছি। আমাদের সময় মেডিসিন ৬ মাস এবং ৬ মাস গাইনি বা সার্জারিতে ৬ মাস ইন্টার্নী করার নিয়ম ছিল। আমি সার্জারি ও মেডিসিন করেছিলাম, কিন্তু গাইনিতে ট্রেনিং ছাড়া অসম্পূর্ণ চিকিৎসক মনে হচ্ছিল। সে জন্য বিনাবেতনে গাইনিতে এই প্রশিক্ষণ নেয়া। আমার গাইনির ৬ মাস ট্রেনিং এর শেষ দিকে গাইনি আউট ডোরে বসে রুগী দেখছিলাম। রুগী দেখা প্রায় শেষ দিকে আমি উঠে নাস্তা খেতে যাব বলে দাঁড়িয়েছি,এমন সময় দুইজন ব্যক্তি একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ক্লান্ত আমি তাদের সমস্যা শোনার জন্য আবার বসে পড়লাম।

‘বলুন, আমি আপনাদের কি সাহায্য করব !’ বললাম আমি।
পুরুষ লোকটি বলে উঠলেন,‘আমাদের একটু সময় লাগবে। যদি সময় নিয়ে দেখেন।'
মহিলাটি বলে উঠলেন,'আমাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আপনাকে সময় দিয়ে দেখতে হবে।'
আমি নড়ে চড়ে বসলাম। বেশ মজা পাচ্ছিলাম।দুইজনকে বেশ রসিক মানুষ মনে হচ্ছিল। আমি আমাদের এক বেয়ারাকে ডেকে ৬ টি পুরী ও ৩ কাপ চা আনতে বললাম। ওনাদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললাম,‘বেশ ধকল গেছে, একটু নাস্তা খেয়ে আপনাদের দেখি?'
উনারা বেশ খুশিই হলেন।

পুরুষ লোকটি এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,‘আপনার বাড়ি কৈ?’
আমি বললাম,‘বাড়ি তো নাই,তবে আমি হোস্টেলে থাকি। আর আপনি যদি গ্রামের বাড়ি কোথায় জানতে চান, তাহলে উত্তর হলঃ ‘বগুড়া’।
‘আপনাদের বাড়ি কৈ?'আমার পালটা প্রশ্ন !
পুরুষ লোকটি হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমাদের বাড়ি ফরিদপুরে ছিল । এখন গোপালগঞ্জে।'
আমি বললাম, ‘তা ঢাকায় কি চিকিৎসার জন্য এসেছেন, না অন্য কাজে?'
লোকটি বললেন,'না চিকিৎসার জন্য এসেছি। এর আগে বরিশাল মেডিকেল এ চিকিৎসা করিয়েছি,পি জি হাসপাতালেও করিয়েছি। ভালো হই নাই তো। এবার এখানে এসেছি জীবনের শেষ চিকিৎসা নিতে !'
এইবার আমি ঘামতে শুরু করলাম। ব্যাটা বলে কি? পাশের রুমে আর এস আপাও এতক্ষনে চলে গেছেন। এমন জটিল রোগের রুগিকে আমি কি চিকিৎসা দিব?
এমন সময় খাবার চলে এলো। মহিলা অনেক বলার পর ১ টি পুরী খেলেন,তবে চা খান না বলে,খেলেন না। আমি একটি পুরী ও চা বেয়ারাকে দিলাম। বাকিগুলো দুই জনে শেষ করলাম।


৯০ দশকের প্রথম দিকের কথা, নতুন ডাঃ বলে মনে অনেক তাগদ। আর মানুষকে সেবা দেওয়ার প্রবল ইচ্ছে। খাওয়া শেষ হলে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,'আপা, বসুন এবং বলেন আপনার কি সমস্যা?'
উনি বললেন,'আমি না আপনার ভাই কে বলেন ! '
আমি আবার বিপদে পড়লাম। গাইনি আউট ডোরে পুরুষ রুগী? মহাঝামেলায় পড়লাম মনে হচ্ছে !আমি এবার পুরুষ লোকটির দিকে তাকিয়ে বললাম,'কে রুগী বলেন তো !'
উনি আমার দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,'আসলে আমরা কেউ রুগিনা, আবার দুই জনেই রুগী !'বেশ রহস্য করেই বললেন মনে হল।
আমি বললাম,'ভাই,এইটা গাইনি আউট ডোর,এখানে মহিলা রুগী দেখা হয়।
উনি বললেন,'মহিলাতো আছেই !'
আমি বুঝলাম,ঝামেলায় জড়িয়ে যাচ্ছি,কখন উঠতে পারব,আল্লাহই জানেন। একটু বিরক্তি নিয়ে বললাম,'আউট ডোর বন্ধ হয়ে যাবে, বলেন তো আপনাদের কি সমস্যা? কেন ঢাকায় এসেছেন ?'

পুরুষ লোকটি এবার সহজ সরল ভাবে হাসতে হাসতে বলল,'ভাই,আমরা বিয়ে করেছি ১২ বৎসর। কিন্তু কোন সুখবর নাই।'
আমি বললাম,'সুখবর মানে?'
মহিলা বললেন,'আমাদের কোন সন্তান নাই, যে !'
এইবার বুঝলাম আসলে উনারা Primary Sterilityতে ভুগছেন। বললাম,'কোন কিছু ব্যবহার করেন?'উনারা একসাথে মাথা নাড়লেন,না বুঝালেন !
আমি বললাম,'আগে কখনো কিছু ব্যবহার করেছেন? বা কোন বাচ্চা কি নষ্ট করেছেন?'
আবারো দুজনেই একসাথে মাথা নাড়লেন, যাতে আমি বুঝলাম না।

আমি দুজনকে পরীক্ষা করলাম। ব্লাড প্রেসার ও অন্যান্য যেটুকু আমরা সাধারনতঃ দেখি। কোন সমস্যা মনে হল না। দুই জনের ব্লাড প্রেসার ভালো,স্বাভাবিক। আমি বললাম,'আগের ডাঃ দেখিয়েছেন,কোন কাগজ আছে?'
উনারা আবারো মাথা এদিকওদিক নারলেন। এবার আমি আলাদা স্লিপে উনাদের দুজনের জন্য কিছু টেস্ট লিখেদিয়ে বললাম,'কাল সকালে এসে পরীক্ষা গুলো করিয়ে আমাকে রিপোর্ট দেখাবেন।'
লোকটি আমার হাত থেকে স্লিপ দুইটা হাতে নিলেন। বউএর দিকে তাকালেন,এর পর আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,'ভাই আপনি নিশ্চয়,ভিডিআরএল,সুগার,ব্লাড গ্রুপ,টিপিএইচএ এইসব পরীক্ষা দিয়েছেন? এসব না করালে কি আমাদের চিকিৎসা করা যাবেনা?'
আমি বললাম,'কিন্তু টেস্ট ছাড়া তো আপনাদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। আপনাদের চিকিৎসা নিতে গেলে এসব পরীক্ষা করতেই হবে। যেখানেই চিকিৎসা নেন।'
পুরুষ লোকটি হেসে উঠলেন। বললেন,'ভাই পরীক্ষা ছাড়া কি কোন উপায় নাই?'
আমি সরাসরি বলতে পারতাম,না। কিন্তু কি মনে করে বললাম,'কেন আপনারা কি রক্ত দিতে ভয় পান? আরে আমিতো ডাঃ হয়েও এ পর্যন্ত ১৬ ব্যাগ রক্ত দান করেছি। ভয়ের কিছু নাই !'
মহিলা এতক্ষন চুপ করেই ছিলেন। উনার মুখ ছিল কিছুটা বিমর্ষ। কিন্তু এইবার সুন্দরহাসি দিয়ে বলে উঠলেন,'ভাই,অনেক দূর থেকে এসছি। পরীক্ষা ছাড়া আমাদের যদি চিকিৎসা দিতেন...'
এইবার আমি বললাম,'আপনাদের সমস্যা কিন্তু জটিল।পরীক্ষা ছাড়া আমি কেমনে চিকিৎসা দিব? আমাকে তো আগে বের করতে হবে আপনাদের আসলেই কোন সমস্যা আছে কিনা। থাকলে কার সমস্যা?'
এইবার লোকটি তাঁর গিন্নীকে বললেন,'রানু,চল যাই। তুমি শুধু শুধু ঢাকায় এলে। বলেছিলাম না, ডাঃ রা শুধু শুধু টেস্ট ছাড়া চিকিৎসা দিবেন না !'মহিলাটি বাধ্য ও বিনয়ের সাথে চেয়ার থেকে উঠে পড়ল এবং দুই জনেই দরোজার দিকে এগুতে থাকল।

আমি বলে উঠলাম,'শুনুন, আপনাদের কি সমস্যা টেস্ট করাতে,বললেন না কিন্তু !'
লোকটি ফিরে এসে আবার চেয়ারে বসতে বসতে বলল,'ডাঃ সাহেব,আপনি ব্যস্ত মানুষ। সময় হবে? যদি সময় হয় তবে মিনিট ৫ সময় দেন। অনেক দূর থেকে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম!'
আমি হাসতে হাসতে বললাম,'গোপালগঞ্জের লোক তো এমন হবার কথা না। সাহসী হবার কথা। রক্ত দিতে ভয় পেলে কেন চলবে? যে দেশে বঙ্গবন্ধুর মত নেতার জম্ম,সেদেশে এমন ভীতু লোক কি মানা যায়?'
রানু আপা বলে উঠলেন,'না, না ! আমরা রক্ত দিতে ভয় পাই না। আপনার ভাই অন্য কিছু ভাবেন।'
আমরা ভাই সাহেবের দিকে তাকালাম!

ভাইসাহেব এবার হাসি দিয়ে পরিবেশ হাল্কা করলেন। আউট ডোর ফাঁকা হয়ে গেছে। তালা লাগানোর জন্য বেয়ারা তালা খুলে রেডি করে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমি বেয়ারাকে বললাম,'তুমি তালা খুলে রেখে চলে যাও। আমি নিজেই তালা দিয়ে দিব।' বেয়ারা আমার টেবিলে দুইটি খোলা তালা রেখে চলে গেলো।
এইবার আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে বললাম,'সিগারেট এ অভ্যাস আছে? '
লোকটি বললেন,'না,জীবনেও কোন নেশাপান করিনাই।'
আমি বললাম,'তাহলে আমি কি একটা সিগারেট খেতে পারি?'
রানু আপাই আগে বলে উঠলেন,'খান।'
আমি একটি লন্ডন ৫৫৫ সিগারেট পকেট থেকে বের করে ধরালাম। চুপ চাপ ৩ টি টান দিয়ে বললাম,'বলুন,কি বলতে চান!'

লোকটি বলতে শুরু করলেনঃ
ভাই,আমার নাম হাসান। প্রায় ৭ বৎসর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে আপনার ভাবিকে সকলের মতের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জের মহুকুমা কোর্টে নোটারী করে বিয়ে করেছি সেই ১৯৭৯ সালে। ওর পৃথিবী খুব ছোট। আমি ছাড়া কেউ নাই। আমার জন্য ও বাবা, মা, ভাইবোন সবকিছু ছেড়েছে। আমাকে ও পাগলের মত ভালোবাসে। ভাই, আপনি কি বিয়ে করেছেন? যদি না করেন তো বুঝবেন না;একজন নারীর ভালোবাসা না পেলে জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। বলে একটু থামলেন।

আমি হাসান সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে খেয়াল করিনি। এইবার উনি থামায় মুখ নামিয়ে দেখি রানুআপা উনার সার্টের আস্তিন ধরে টানছেন।
আমি রানুর দিকে তাকিয়ে বললাম,'নিশ্চয় মিথ্যা বলছে?'
রানুঃ না,উনি মিথ্যা বলেন না।
আমিঃ তাহলে উনার জামা টানছেন কেন? বলতে দিতে চাচ্ছেন না?
রানুঃ না,ঠিক তা নয়।
আমিঃ তাহলে কি?
রানুঃ আমার বাবার চেয়ে ও আরও অনেক বড় লোকের ছেলে। ওর বাবা একজন খুব নামকরা উকিল ছিলেন। কিন্তু ও এমন ভাবে বলে যেন,ও খুব ফকির গোত্রীয় কেউ। আমার জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে এখন এক প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার। শুধু আমাকে ছেড়ে গেলেই কিন্তু ওর জমিদারি ফেরত পাবেন। ও বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। কিন্তু দেখেন, কি চেহারা হয়েছে ! রানুর চোখের কোন জলে ভরে উঠেছে।
গিন্নীর ধরা গলা শুনে এবার হাসান সাহেব মুখ খুললেনঃ দেখলেন ভাই। নিজে কিন্তু আরও বড়লোকের মেয়ে। আমার দুঃখের সাথে এসে চেহারা কী করেছেন,বলা যাবে না। আমি যখন ওকে আমার ঘরে আনি তখন আমি সত্যি বলছি ঘর কেন,উঠানেও আলো লাগতো না।'
রানুঃ ইস,তোমার ছবি কি নাই ঘরে? কেমন ছিলে মনে নাই। নায়করাজ রাজ্জাক ফেল !

আমি ওনাদের খুনসুটি বেশ উপভোগ করছিলাম। আবার একটি সিগারেট ধরালাম। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললামঃ কিন্তু টেস্ট করাতে কি সমস্যা,তা কিন্তু কেউ বলছেন না।
হাসান ও রানু এক সাথেই বলে উঠলেনঃ কোন সমস্যা নাই। কিন্তু...
আমি বললামঃ আরে ভাই, আপনারা আসলেই ভেজালে লোক। কিন্তু কি সেইটাই তো জানতে চাচ্ছি !
হাসান সাহেব বউএর দিকে তাকিয়ে বললেনঃ রানু,চল যাই! ডাঃ সাহেব বিরক্ত হচ্ছেন !
আমি বললামঃ বিরক্ত হয়েছি বলেছি নাকি। কিন্তু সবাই চলে গেছে। ঘর বন্ধ করে যেতে হবে। দুপুরের খাবার খেতে হবে না !
রানু আপা বলে উঠলঃ আজ আমাদের সাথে খাবেন?
হাসান বললেনঃ তাহলে বলি শুনুন। তাড়াতাড়ি শেষ করব। ৫ মিনিট।
উনি শুরু করতে যাবেন এমন সময় রানু বললেনঃ থাক না। চল যাই।
হাসান সাহেব বলে উঠলেনঃ আচ্ছা বলেই যাই।
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম !

হাসান সাহেব বলতে শুরু করলেনঃ
ভাই, এই যে প্রেম করে ওকে নিঃস্ব করে ঘরে আনলাম। দুই বেলা ঠিক মত ভাত জোটে না। মাছ মাংস খুব বেশী কিনতে পারিনা। কিন্তু আমকে ও পাগলের মত ভালো বাসে।
আমি অনিচ্ছা সত্যেও বলে উঠলামঃ আপনি কি ভালবাসেন না?
হাসান সাহেবঃ বাসি। তবে ওর মত পারিনা।
রানু আপা ফোড়ন কেটে বলে উঠলঃ ইশ,উনি যে কত্ত পাগল তা কেউ না বুঝুক,আমিতো বুঝি !
হাসান সাহেব আবার শুরু করলেনঃ ‘ভাই, রক্ত দিতে ভয় পাইনে। ছোট বেলায় ৩ তিনবার হাত পা ভেঙ্গেছি। শেষবারে বরিশাল মেডিকেলে ২ ব্যাগ রক্ত দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছে। আপনার আপাও একবার পিছলে পরে মাথা ফাটিয়েছিল। সেবার উনার ২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। আমাদের দুজনের রক্ত গরুর রক্ত। বি পজেটিভ। রক্ত দিতে আমাদের কোন ভয় নাই। সমস্যা অন্যখানে।

আমি এইবার বললামঃ সেই টুকুই আমি জানতে চাই। যদি বলেন তো কৃতার্থ হই! আমি আপনাকে আর বেশী সময়য় দিতে পারব না।
টেস্ট ছাড়া আপনাদের চিকিৎসা সম্ভব না।
হাসান সাহেবঃ জানি। এ পর্যন্ত রানুর কারণে বড় ছোট কমপক্ষে ২০ জন ডাঃ দেখিয়েছি। প্রথম প্রথম একা যেতাম। কিন্তু সবাই দুজনকে একসাথে আসতে বলে । টেস্ট দেয়। আপনি যা দিয়েছেন,এগুলোই দেয়। আমার এখন মুখস্ত হয়ে গেছে । আপনারা কি কি টেস্ট দিবেন, সব জানি। কিন্তু টেস্ট করাই না। ভাববেন, তাহলে এভাবে ডাঃ দেখাই কেন? মন মানে না। যখন ও রাতে একা একা বাড়িতে থাকে সেই কথা ভাবি, তখন চলে আসি। অনেক কষ্ট করা এই টাকা খরচ করে ডাঃ দেখাই। ডাঃ সব শুনে প্রেসক্রিপশনে এই টেস্ট গুলো লেখে। কিন্তু কেউ করাই না।

নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে আমি রেগে উঠে বললামঃ আরে ভাই, কেন করান না? সেইটাই তো জানতে চাই !
রানু আপা মুখ খুললেন বললেনঃ ডাঃ ভাই, উনি বলতে পারবেন না। উনার মনে খুব কষ্ট,আমি বলছি।'
আমার দিকে তাকিয়ে রানু আপা বলা শুরু করলেনঃ আসলে উনি আমাকে খুব ভালোবাসেন। পরীক্ষা যত দিন না করাবো; ততদিন আমাদের কার মাঝে সমস্যা ... ... তা কেউ জানিনা। আমি ভাবি আমার,ও ভাবে,ওর। কিন্তু পরীক্ষা করালে তো বের হয়ে যাবে, কার ভিতর সমস্যা... ...ঠিক না?
আমি বললামঃ হ্যা, ঠিক। কিন্তু সেইটা না বেড় করলে চিকিৎসা দিব কাকে, কেমনে?
হাসান সাহেব এইবার বললেনঃ ধরুন,আমার ভিতর সমস্যা ধরা খাইল। তাহলে এই ১২ বৎসর আমি এই নিরীহ নিস্পাপ আমার প্রেমের রানী কে যে কষ্ট দিয়েছি তাঁর কি হবে?
সাথে সাথেই রানু আপা বলে উঠলেনঃ আর সমস্যা যদি আমার ভিতর ধরা খায়। তাহলে এই ১২ বৎসর আমি এই পীরের মত নিরীহ পাগল প্রেমিক মানুষকে কত ঠকিয়েছি,তার হিসাব করতে পারবেন? কত কষ্ট আমি তাকে দিয়েছি,বলুন !
আমি কি বলব,কাকে কি বলব? কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দুইজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম!

আমার এই হতবিহ্বল চেহারা দেখেই কিনা বা মনের অব্যক্ত কথা বলার সুযোগ পেয়েই কিনা জানিনা; দুইজনেই প্রায় একসাথে বলে উঠলেনঃ সেই জন্য আমরা টেস্ট করাতে রাজি নই। তারচেয়ে যতদিন টেস্ট না করাবো তত দিন আমি জানি আমার সমস্যা,ওকে ঠকাচ্ছি। এই ঠকানোর বিষয় মাথায় এলেই ওকে খুব ভালোবাসি,ভালবাসতে ইচ্ছে করে। পাগলের মত ভালোবাসা, বুঝলেন ! ভালোবাসার চেয়ে দুনিয়ায় কি কিছু বড় আছে,ডাঃ সাহেব?

দুইজনের একসাথে, এক রকম শব্দ দিয়ে, এক বাক্য বলা দেখে মনে হচ্ছিল উনারা আমার রুগী নন। উনারা বেইলি রোডের মহিলা নাট্যমঞ্চের এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কপোত -কপতি। যারা শুধুই ভালবাসতে জানে,পুড়তে জানে। পোড়াতে চায় না,হয়ত জানেও না ,কিভাবে প্রেমিককে পোড়াতে হয়! ওদের ভালোবাসার অভিধানে হারানোর সুর নাই,বিরহের বেসুরো গান নাই। নাই সতিনাথ, আছে শুধুই মান্নাদে আর হৈমন্তী শুক্লার মোহনীয় সুরের ঝংকার !

আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কোন কিছু ভাবার আগেই, সামনে দাঁড়ানো প্রেমের জীবন্ত দুই পূজারীকে জড়িয়ে ধরলাম। ভুলেই গেলাম ওরা আমার রুগী হিসাবে এসেছিল। ভুলেই গেলাম যে আজকেই ওদের সাথে পরিচয় হাসপাতালের রোগী দেখার ঘরে।
হাসতে হাসতে বললামঃ যান,বাড়ি যান,টেস্ট করার কোন দরকার নাই। যাদের এত্ত ভালোবাসা অন্তরে,তাদের পরবর্তী প্রজম্ম নিয়ে ভাবার দরকার নাই। যান এক্ষুনি বাড়ি যান।

বলেই ওনাদের প্রায় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অসমাপ্ত সুমন খুব সুন্দর লাগল।
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু বেশ চমৎকার লিখেছেন, শুভকামনা...
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ধন্যবাদ, সান্তু
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু সামনে দাঁড়ানো প্রেমের জীবন্ত দুই পূজারীকে জড়িয়ে ধরলাম। ভুলেই গেলাম ওরা আমার রুগী হিসাবে এসেছিল। চমৎকার গল্প। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
এশরার লতিফ সাবলীল ভাষায় লেখা সুন্দর গল্প। গল্পে প্রচুর হিউমার আছে, অনেকদিন পর সৈয়দ মুজতবা আলী ধাঁচের একটা লেখা পেলাম।
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
আমার লেখার উপাদানে এই হিউমার আনার একটা চেষ্টা থাকে থিক,কিন্তু যার নামের পাশে আমার নাম ভেবেছেন; টা কোনদিন সম্ভম নয়। মুজতবা আলী অনলি ওয়ান পিস। ধন্যবাদ ভাই।
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মোজাহারুল ইসলাম শাওন গল্প কবিতা সাহিত্য পত্রিকার ফেব্রুয়ারি১৪ সংখ্যায়... আমার প্রেমের গল্প।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
আপনাকে অভিনন্দন। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

২৯ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী