রেপ্লিকা

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

মোজাম্মেল কবির
  • ১০

শারদ পূর্ণিমার চাঁদটা তখন ঠিক মাথার উপরে। খুন হওয়ার মিনিট দশেক আগে ফুটপাত ধরে হাটতে হাটতে ফোনে কথা বলেছিলো অনিল। কোলকাতার অনিল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করে বাংলাদেশে। কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলে প্রোডাকশন ম্যানেজারের চাকরী। কারখানা রজেন্দ্রপুর। বাসা উত্তরা চার নাম্বার সেক্টরে। দেশে মা বাবা ছাড়া পরিবারে আর কেউ নেই। বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র। বাবা বছর পাঁচেক ধরে বিছানায়। প্যারালাইজড্। মা এ্যাজমার রোগী। নেহা নামের যে মেয়েটির সাথে বিয়ের কথা পাকা হয়ে আছে সে একই গলিতে থাকে। পূর্বের সম্পর্ক থাকলেও দুই পারিবারের সম্মতিতেই বিয়েটা হচ্ছে।

নেহার সাথেই হাটতে হাটতে কথা হচ্ছিলো অনিলের। অনিলের পরিবারের খোজ খবর সেই রাখে। প্রতিদিন এক দুবার বাসায় এসে অনিলের বাবা মায়ের খোঁজ খবর নেয়। ঠিক মতো অষুধ খাচ্ছে কি না, কোন ট্যাবলেটটা শেষ হয়ে গেলো। শেষ হওয়ার আগেই মায়ের জন্য ইনহেলারটা কিনে বাসায় পৌছে দেয়। এইসব।
ডিসেম্বরের সাতাস তারিখ বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। দেড় মাসের ছুটি পাবে অনিল।
-আগামী কাল তোমার একাউন্টে লাখ দুই টাকা পাঠাচ্ছি। এপাশ থেকে বলছিলো অনিল।
-এতো টাকা কি জন্য? নেহা জানতে চায়।
-আরে লাগবে না? কতো কেনাকাটা আছে! এইসব করবেটা কে শুনি? এতো সময় পাবো? তুমি ছাড়া কে করবে এসব বলো?
-আগে দেশে আসো একসাথে সব কেনাকাটা করা যাবে।
-আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না কাল টাকা যাচ্ছে তোমার একাউন্টে। এখন অন্য কথা বলো। কি করছো এখন তাই বলো?
-চা খাচ্ছি।
-এতো রাতে চা? ঘুমোবে না?
-না ঘুমোবো না। আজ পূর্ণিমা দেখবো।
-আজব ব্যাপার তো!
-কি?
-আমিও চাঁদ দেখবো বলে হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এসেছি। মাথার উপরে চাঁদ মাটিতে দিগন্ত জোড়া কাশফুল। চাঁদের আলোয় কি যে লাগছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না!
-জায়গাটা কোথায়?
-এইতো কাছেই। আমি যে আবাসিক এলাকাটায় থাকি। উত্তরার পাশেই ডিয়াবাড়ী। আন্ডার ডেভলাপিং এরিয়া। বাট, জায়গাটা এখনো ফাঁকা। বিয়ের পর তোমাকে যখন ঢাকায় নিয়ে আসবো দুজনে পূর্ণিমা দেখতে আসবো এখানে।
-তুমি মনেহয় একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছো।
-হুম...
-তুমি না বলেছো সিগারেট ছেড়ে দিবে?
-মিথ্যে বলি নি তো। বিয়ের পর সিগারেট বন্ধ...
-কথা ঠিক থাকবে তো?
-লিখে রাখো।
-আচ্ছা এখন বাসায় যাও। ভোরে অফিসের গাড়ি আসবে।
-যাচ্ছি, তুমি কি ফোন রেখে দিতে চাচ্ছো?
-অনেকক্ষণ হলো ছাদে কথা বলছি তোমার সাথে। নিচে যেতে হবে।
-যাবার আগে সেই কবিতাটা আবৃত্তি করে শোনাবে না?
-কোন কবিতাটা?
-ঐযে - অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে...
- রবি ঠাকুরে...! আচ্ছা শোনাচ্ছি-
অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে
চলবে না।
এবার হৃদয় মাঝে লুকিয়ে বোসো,
কেউ জানবে না, কেউ বলবে না।
বিশ্বে তোমার লুকোচুরি,
দেশ বিদেশে কতই ঘুরি
এবার বলো আমার মনের কোণে
দেবে ধরা, ছলবে না।
আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে
চলবে না...

-ঠিক আছে যাও, আজকের জন্য ছুটি। আর ফার্স্ট আওয়ারেই টাকাটা জমা হবে, যা দরকার তুলে নিও। ভালো থেকো।
-ভালো থেকো।


ঢাকার উত্তরা এলাকায় রাতের বেলা কদিন ধরে পুলিশ রেট দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এদের অনেকেই নাকি ভিজিট ভিসায় বাংলাদেশে এসে বছরের পর বছর ধরে থাকছে। জাল ডলারের ব্যাবসা করছে। কোথাও কোথাও বাঙালীদের মারধরের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। পুলিশ এদের নিয়ে বেশী সিরিয়াস হয়েছে ডিয়াবাড়ীতে এক যুবকের লাশ পাওয়ার পর। স্থানীয় লোকজন সেই রাতে চার পাঁচ জন আফ্রিকানকে মাতাল হয়ে হৈ চৈ করতে দেখেছে বলে পুলিশ জানতে পারে।

বুকে একটা মাত্র ছুরির আঘাত ছিলো। গায়ে ছিলো থ্রি কোয়ার্টার কার্গো প্যান্ট আর একটা নীল রঙ টি-শার্ট। মানি ব্যাগ, আইডি কার্ড কিছুই পাওয়া যায়নি। কালোরা এক প্যাকেট সিগারেটের লোভেও মানুষ খুন করে। এই লোকটির মানিব্যাগে হাজার দুয়েক টাকা ছিলো, টাকা গুলো রেখে লেকের জলে ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে যায়। এরা জানে ফোন সেটের আইএমইআই নাম্বার দিয়ে ট্র্যাকিং করলে ধরা খেতে হয়। সিমকার্ড ফেলে মোবাইল ফোন ব্যাবহারের মতো বোকামি তারা করে না। মানিব্যাগের সাথে ফোনটাও ফেলে দেয় লেকের জলে।
বেনসন সিগারেটের প্যাকেটে বারোটা সিগারেট ছিলো। দামী স্যামসাং ফোনের চাইতে আধ প্যাকেট সিগারেট বেশী দামী। লোকটাকে কাশবনে ফেলে রেখে সিগারেট টানতে টানতে চলে যায় কালো লোক গুলো।

এক দিন পর হাসপাতালের মর্গে থাকা লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। কেরাণীগঞ্জের মাঝি সুবল দাসের ছেলে শংকর দাস এর লাশ এটি। বাবা মর্গে আসে লাশ নিতে, সাথে কাছের আত্মীয় স্বজন। মর্গের ট্রলীতে ঢেকে রাখা লাশের মুখ থেকে সাদা কাপড়টা টানতেই সন্তানের মুখ দেখে জ্ঞান হারায় বাবা। পুত্রের লাশ দেখে সুবল এর হাত পা অবস হয়ে পড়ে যায় মেঝেতে। গালের বাম পাশে শৈশবের কাটা দাগ কপালের মাঝখানে কালো তিল। সে ভুল দেখে থাকলে হয়তো একমাত্র সন্তানটি বেঁচে যেতো। কিন্তু বাবা ভুল দেখছে না। মুখে জল ছিটিয়ে দিলে সুবল আবার চোখ খুলে। জাতিয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সই স্বাক্ষর করে লাশ বুঝে নেয়।

অনিতার বড় দুই ভাই এর আগেও একাধিক বার খুন করার চেষ্টা করেছে শংকরকে। ধনী পরিবারের পাঁচ ভায়ের একমাত্র আদরের ছোটবোন অনিতার সাথে প্রেম ছিলো শংকর এর। ভাইদেরকে বেশ দুর্ধর্ষ হিসেবে জানে এলাকার লোকজন। বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ভায়েরা। দুই ভাই বড় রাজনৈতিক দলের নেতা। তাই বছরের পর বছর প্রভাব কমে না। দুই চারটা খুনের মামলা হজম করা কোন ব্যাপার না। ছোট বোনের বিয়ের কথাবার্তা যখন চলছিলো পরিবারে তখন সাহস করে অনিতা তার মেঝো ভাবীর কাছে সম্পর্কের কথাটা প্রকাশ করে। অনিতা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে বিয়ের আলোচনা থামিয়ে দিতে পারতো। ভুলটা সেখানেই হয়েছে বলে মনে করছে অনিতা।
মাঝির ছেলের সাথে বোনের সম্পর্কের ব্যাপারটা জানাজানি হওয়ার পর ভাইদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে উঠে। অনিতার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়। মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। বাড়ীর বাইরে যাওয়া নিষেধ, এক কথায় গৃহবন্দি। বোনকে কেটে নদীর জলে ভাসিয়ে দিবে কিন্তু মাঝির ছেলের সাথে বিয়ে দিবে না।
শংকর বেকার ছেলে। পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রী করেছে। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস। জীবনে কিছু একটা করবেই। দিন সাতেক ফোন বন্ধ পেয়ে একদিন বিকেলে বাসায় চলে আসে অনিতার সাথে দেখা করতে। ভাগ্যিস ভায়েরা দিনের বেলা কেউ বাসায় ছিলো না। সেই সুযোগে গেটে দাড়িয়ে কথাও হয় মিনিট দশেক। ভালো একটা চাকরী পেলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে ভাইদের কাছে।
এই ছিলো তাদের শেষ কথা। সে দিন শংকর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত দশটার দিকে বাড়ি ফিরছিলো। তখনই তার বাবার ফোন আসে।
-তুই কই আছস বাবা? দুই ঘন্টা ফোন বন্ধ! কই আছিলি?
- বন্ধুর বাসায়, মোবাইলে চার্জ ছিলো না বাবা, ফোন বন্ধ কইরা চার্জ দিলাম। বাসায় ফিরতাছি।
-বাসায় যাওয়া দরকার নাই, তুই এখনই ঘাটে আয়।
-ঘাটের পূর্ব পাশে শেষ মাথায় আমার নৌকা বাধা আছে।
-ঠিক আছে বাবা, আইতাছি।

সন্ধার পর অনিতার পাঁচ ভাই সাথে আরো চার পাঁচজন বাসায় হামলা করে। ঘরের টিভি ফ্রিজ শোকেস সব ধারালো অস্ত্রে ভাঙচুর করে। শংকর এর ঘরের বিছানা আর বুক সেলফে রাখা বইপত্র ঘরের মেঝেতে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়। শংকরকে হাতের কাছে পেলে নিশ্চিত খুন করতো।
ঘাটে বসে পুত্রের অপেক্ষায় অস্থির সময় পার করছে বাবা। দশ মিনিট সময়কে মনে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। এক সময় অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে বাবার কাছে পৌছে শংকর।
-বাবা নৌকায় উঠ।
বাবার কথায় বিনাবাক্যে নৌকায় উঠে বসে। বাবার অস্থিরতা দেখে কিছুটা আঁচ করতে পারে। বাসায় হামলার সব ঘটনা বলার পর বলে -তুই আমার একটা মাত্র পোলা। তোরে খুন হইতে দেখার আগে যেন আমার মরণ হয়।
পুত্রের হাতে বারো হাজার টাকা আর জামা কাপড়ের একটা ব্যাগ তুলে দিয়ে বলে -বাবা তুই ঢাকায় কোন জায়গায় আত্মগোপন কইরা থাক কিছু দিন। চাকরী বাকরী কিছু একটার জন্য চেষ্টা কর। তুই ভালো একটা চাকরী করলে লোকজন নিয়া আমি নিজে যামু বিয়ার প্রস্তাব দিতে। বলতে বলতে বাবার চোখ জলে ভিজে যায়। বাবা, তুই যেদিকে ইচ্ছা চইলা যা কিছু দিনের জন্য। আরেকটা কথা কই বাজান?
-কও বাবা।
-তোর মোবাইল ফোনটা দিবি আমারে?
শংকর চোখ মুছতে মুছতে ফোনটা বাড়িয়ে দেয় বাবার হাতে। বাবা মনের কষ্ট আর আবেগে ফোনটা সাথে সাথে ছুড়ে ফেলে দেয় নদীর জলে। সামনের কয়েক মাস যোগাযোগ করন দরকার নাইরে বাপ। তুই বাইচ্চা থাক, জীবনে বড়হ সুখীহ এইটাই চাই।
আজ ছেলের লাশ নিতে এসে বার বার নিজের একটি ভুলের কথা মনে হচ্ছে, মোবাইল ফোনটা হাতে দিয়ে দিলে হয়তো এমন ক্ষতি নাও হতে পারতো। সন্তানের মৃত মুখটা বার বার ছুয়ে দেখছে আর জ্ঞান হারাচ্ছে সুবল দাস।


খুনের মামলায় অনিতার তিন ভাই আপাতত এলাকায় নাই। বড় ভাই শারিরিক প্রতিবন্ধী। হুইল চেয়ারে বসে সারাদিন বাসাতেই থাকে। শংকর খুন হয়েছে শুনে তিন দিন পাগলের মতো আচরণ করেছে অনিতা। অসুস্থ বড় ভাই অঞ্জন বিয়েশাদী করে নি। বোনটাকে সেই বড় বেশী আদর করে। ভায়ের সেবাযত্ন ছোট বোনটাই করে। নিয়মিত খাবার দেয়া অষুধটা ঠিকমতো খাচ্ছে কি না তার খেয়াল রাখা। জোর করে বাথরুমে নিয়ে গা মেজে গোসল করিয়ে দেয়া সব করতো অনিতা।
বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন হবে বয়স। বোনের সেবা পেয়ে চোখের জল ফেলে বোনকে বলে -আজ মা বেঁচে থাকলে আমার জন্য এতটুকু করতেন কি না জানি নারে বোন। তুই শ্বশুর বাড়ী চলে গেলে আমাকে কে দেখবে? আমি তো বাঁচবো নারে...
-আমার বিয়ে হবে না দাদা... পিছনে দাড়িয়ে ভায়ের মাথায় চিরুনি দিয়ে চুল আঁচরে দিতে দিতে তার চোখ থেকেও দুই ফোটা জল গড়িয়ে ভায়ের মাথায় পড়ে।
এই বোনটিকে আজ তিন দিন না খেয়ে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকতে দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে বোনের ঘরের দরজায় অনেক বার কড়া নাড়লেও কোন সাড়া শব্দ আসছে না ভিতর থেকে। হুইল চেয়ারটা টেনে কাঁচের জানালার ভিতর দুইটা পর্দার ফাঁকে উঁকি দিয়ে দেখতে পায় বোনের লাশ ঝুলে আছে সিলিং ফ্যানের সাথে।


অনিলের টাকাটা নেহার ব্যাংক একাউন্টে পর দিন জমা হয় নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যাচ্ছিলো না সারা দিন। কাজের ব্যাস্ততা থাকলে প্রায়ই ফোন বন্ধ থাকে, তা নিয়ে চিন্তার খুব একটা কারণ ছিলো না। কিন্তু পরিবারের চিন্তা শুরু হতে থাকে পরদিন বিকেলে। টানা দুই দিন ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না অনিলকে। এমন কখনো হয় নি। কখনো দিনের বেলা ফোন বন্ধ থাকলে অফিস থেকে ফিরে রাতে নিজ থেকেই খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।
তিন দিন পর বাসার সবাই খুব অস্থির। কি করা যায় কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না। তখন হুট করে নেহার মাথায় একটা আইডিয়া আসে। অনিলের ফ্যাক্টরি অফিসের একটা ল্যান্ডফোন নাম্বার ছিলো। অনিল বলেছিলো যদি কখনো মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে জরুরী কিছু কথা থাকলে সেখানে যেন কল দেয়। তখন বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটা, এই সময় অফিস চলে। সুপ্রিয়া সাথে সাথে সেই নাম্বারে কল দেয়। ওপাশ থেকে ডিরেক্টর পরিচয়ে জাহাঙ্গীর নামে একজন ভদ্রলোক ফোন রিসিভ করে। -আমি প্রোডাকশন ম্যানেজার অনিল বাবুকে চাচ্ছিলাম। নেহা বলে।
-অনিল বাবু তো আজ তিন দিন হলো অফিসে অনুপস্থিত। তাকে মোবাইল ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
- আচ্ছা এমনটি কি আর কখনো হয়েছে?
-তা হয় নি, আমরা তার কাজের সিনসিয়ারিটির ব্যাপারেও বেশ সন্তুষ্ট ছিলাম। সেই অনুযায়ী তাকে উপযুক্ত বেতনও দেয়া হতো। সে জন্যই তিনি চার বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজ করছিলেন আমাদের সাথে।
-আপনারা কি কিছু ধারণা করতে পারেন সে কোথায় থাকতে পারে?
-আমাদের যা ধারণা সেটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে বলবো এই কাজটি তিনি না করলেও পারতেন। বাড়তি বেতনের চাহিদা থাকলে আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারতেন। কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জয়েন করতে চাইলে সেই ব্যাপারেও আমাদের কোন আপত্তি থাকতো না। আমাদের ধারণা বাড়তি সুযোগ সুবিধার অফার পেয়ে অনিল বাবু অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জয়েন করেছেন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
-আপনার ধারণা ঠিক নাও হতে পারে স্যার। সে এমন কিছু করলে পরিবারের লোকজন অবশ্যই জানতো। কিন্তু আজ তিন দিন হলো আমরাও তাকে ফোনে পাচ্ছি না।
-বলছেন কি! এবার ডিরেক্টর সাহেবের কপালেও ভাঁজ পরলো। মুহুর্তেই তার মাথায় খেলে গেলো, এই সেক্টরে বিদেশী এম্প্লয়ী আর লোকাল এক্সপার্টদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে একটা ক্ষোভ কাজ করে। কোন অঘটন ঘটে থাকলে তার দায়ভার কোম্পানীকেও নিতে হবে। সাথে সাথে তিনি আবার বিনয়ের সাথেই জানতে চাইলেন -আপনি কে বলছেন প্লিজ?
-নেহা আমার নাম। আমি আসলে ওর পরিবারের কেউ না। ডিসেম্বরে আমাদের বিয়ের কথা ঠিক হয়ে আছে। আপনি যদি একটু হেল্প করেন তাহলে আমি বিডিতে আসতে চাইছি।
-অবশ্যই আসবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগীতার ব্যাবস্থা থাকবে আপনার জন্য।
-থ্যাংকইউ স্যার।
নেহার পাসপোর্ট ভিসা রেডি করতে কিছু সময় নিলো। দিন পনেরো চলে গেছে এর মধ্যে। এই কদিন ফোনে চেষ্টা করে একবারও পাওয়া যায়নি অনিলকে।
নেহা ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটা হোটেলে উঠে প্রথমেই অনিল যে বাসায় থাকে সেখানে খোঁজ নেয়। বাড়ীওয়ালা নিজেও অবাক, বাসায় দামী আসবাবপত্র টিভি ফ্রিজ ল্যাপটপ সব কিছু যেভাবে ছিলো সে ভাবেই পড়ে আছে। শুধু মানুষটা নেই। বাড়ীওয়ালা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। মেয়ের বয়সী নেহার পরিচয় জেনে প্রস্তাব করলো -মা তুমি যতোদিন অনিলকে খুঁজে না পাও আমার বাসাতেই থাকতে পারো।
নেহা বাড়িওয়ালার আন্তরিকতায় বেশ খুশী হলো কিন্ত সে হোটেলে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে। বরং একটা ব্যাপারে সাহায্য করলে উপকার হবে বলে জানায়। সে ঢাকার হাসপাতাল গুলোর একটা তালিকা জেনে নেয়। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সম্ভাব্য যে সব হাসপাতালে খোঁজ নেয়া যেতে পারে।
নেহা বিভিন্ন হাসপাতালে পচিশ-ছাব্বিশ সেপ্টেম্বর এর রেজিস্টার ঘেটে অনিল নামে কোনো রোগীর নাম খুঁজে পায় নি। ঢাকা মেডিক্যাল এর রেজিস্টারে একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তির লাশ আসে ডিয়াবাড়ী এলাকা থেকে। কিন্তু একদিন পর সেই ব্যাক্তির পরিবার শংকর নামে তাদের সন্তানের লাশ সনাক্ত করে নিয়ে যায় বলে জানতে পারে।
নেহার মনে যে ভয়টা ছিলো তা অনেকটাই কেটে যায়। পুলিশের রেজিস্টার ঘেটে সে মোটামুটি নিশ্চিত হয় যে আর যাই হোক অনিল বেঁচে আছে। হয়তে কোন বিপদে পড়েছে। যে কোন দিন ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলবে। এই শান্তনা মনে নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় নেহা।


সেদিনও আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। সেদিনও সাদা কাশফুল গুলো চাঁদের আলোয় জ্বলজ্বল করছে ডিয়াবাড়ীতে। আগামীকাল সকালে নেহা দেশে চলে যাবে। তার আগে চাঁদের আলোয় কাশবন দেখার খুব ইচ্ছে জাগে, যে জায়গাটাতে অনিল সেদিন চাঁদ দেখছিলো। গাইডকে সাথে নিয়ে রাত দশটায় একটা ট্যাক্সিক্যাবে সেখানে যায়। অনিলের ফোন নাম্বারে আরেকবার কল দেয় -এই মুহুর্তে কাঙ্খিত নাম্বারে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না... অটো রিপ্লাই আসে। নেহা মনে মনে আবৃত্তি করছে -অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না...


ঠাকুরগাঁ জেলার বড়মাঠে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় বসে আছে একজন যুবক। পকেটে খামে ভরা দুইটা চিঠি। উপরে প্রাপকের ঠিকানা। একটা চিঠি যাবে বাবার কাছে আরেকটা প্রেমিকার কাছে। একটা বেসরকারী এনজিওতে চাকরী হয়েছে। একটু স্বচ্ছলতার অপেক্ষায় আছে। তারপর পারিবারিক ভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। খামের উপরে বাম পাশে প্রেরকের নাম লেখা আছে শংকর।

পাদটীকাঃ
পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের আরেকটা কপি একদিনে পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে অন্য মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়। এই মুহুর্তে আমি যখন গল্প লিখছি পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে কিংবা কাছের অথবা দূরের কোন দেশে, শহরে কিংবা গ্রামে আমার কপি মানুষটি হয়তো একই সময়ে বসে বেহালা বাজাচ্ছে। ঠিক তখন আমার কীবোর্ড থেকে আঙ্গুল সরিয়ে চোখ বন্ধ করে বেহালা শুনতে ইচ্ছে করে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অজয় দেব ভালো লেগেছে ... আপনার কবিতা । আপনার কবিতা অথবা ছোট গল্প রেকড করে আমাকে দিতে পাড়েন আমি ভিডিও বানিয়ে আমার চ্যানেল দেবো ... please click link www.youtube.com/durbinvalobasha যোগাযোগ 01676114538
মোঃ মোখলেছুর রহমান শুধু বলব অসাধারন।শভকামনা রইল।
অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন আপনি।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী শংকরের বাবা তাকে ফোন দিলো ঘাটে যাওয়ার জন্য, সেখানে তার ফোনটি নদীতে ফেলে দিলো। আবার হঠাৎ করে বললেন যে, বাবা থাকতে ছেলের লাশ দেখা........ এখানে একটু প্যাঁচানো ছিল, এ ব্যাপারটাও আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। শেষে শংকরকে মনে করে তার বাবা অন্য একজনের লাশ নিয়ে গেছে। গল্পটা খুব দারুণ হয়েছে, শুভেচ্ছা রইল ভাই.....
ফাহমিদা আপা গল্পের যে সংক্ষেপ লিখেছেন আসলে ঘটনা তাই। অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন।
Fahmida Bari Bipu দীর্ঘদিন পরে লিখলেন। একসময়ে তো মনেই হচ্ছিলো যে, লেখালেখি বুঝি ছেড়েই দিলেন! আপনার গল্পে আবার পূর্বের আমেজ ফিরে পেলাম। মাঝে যে ভাবোদ্দীপক কথায় পাল্লায় ফেলতে শুরু করেছিলেন, তার থেকে এবারে মুক্তি মিলেছে। সেজন্য ধন্যবাদ। গল্পে বেশ রহস্যের জট পাকানো হয়েছে। পাঠককে ধরে রাখার উপাদান ছিল। যেটুকু বুঝেছি, খুন হয়েছে অনিল। শংকরের বাবা ছেলের মনে করে অনিলের লাশ নিয়ে গেছে। এই দুজন রেপ্লিকা। শংকর মারা যায়নি। বুঝ ঠিক আছে তো! গল্পটি গল্প হিসেবে ভালো হয়েছে। তবে সায়েন্স ফিকশন হিসেবে উতরে যেতে হলে আরো কিছু সায়েন্টিফিক উপাদান যুক্ত করতে হতো বলে মনে করছি। শুভকামনা রইলো এবং নিয়মিত উপস্থিতি প্রত্যাশা করছি।
আপনি গল্পটি ঠিক বুঝতে পেরেছেন। বেশ অনেক দিন লেখায় একটা অস্থিরতা ছিলো। এখন তা থেকে বের হতে পেরেছি। আপনি সায়েন্স ফিকশন নিয়ে যে আশংকার কথা বলেছেন তা আমার মাথায়ও ছিল। তবে আগামী সংখ্যায় বেশ ঠাণ্ডা মাথায় লিখেছি। ভালো থাকবেন আপা।
জসিম উদ্দিন আহমেদ অনিলের কী হলো? সালমা আপার মতো আমারো প্রশ্ন, লাশটা কার?
Salma Siddika দারুন গল্প, শেষ পর্যন্ত ভাবছিলাম কি হয় কি হয়? লাশটা আসলে কার? এক্কেবারে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলো। কিন্তু গল্পটাকে ঠিক সায়েন্স ফিকশন বলা যাবে কি?
প্রশ্নটা বেশ কঠিনই লাগছে আমার কাছে। কিছুদিন আগে একটা নিউজে পড়ছিলাম -বায়মেট্রিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে জানা গেছে যে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার পর মানুষের আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন আরেকজনের সাথে মিলে যাচ্ছে। যা আমরা আগে জানতাম ইউনিক হিসাবে। আমার মনে হলো একই ব্যাক্তির দ্বিতীয় কপি কি ধরণের বিপত্তি হতে পারে তা নিয়ে একটা গল্প লেখা।
এশরার লতিফ বহুদিন পর আপনার গল্প পড়লাম। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্য ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। সুন্দর।
অনেক ধন্যবাদ এশরার লতিফ ভাই। এই সংখ্যায় আপনি থাকছেন বুঝতে পারলে প্রস্তুতিটা জোরেশোরে নিতাম। আপনার সামনে টিকে থাকা অনেক কঠিন...

২৫ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী