যশোরের বেজপাড়ায় আমাদের বাড়ির নাম ছিল 'ফুলবাড়ি'। আমার দাদা কাজী নিজামউদ্দিন এই বাড়ি তৈরি করেছিলেন। ফুলের ব্যবসা করে ভাগ্য খুলেছিল বলে ফুলের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল। দাদা বেঁচে থাকতে আমরা যে কয়জন চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোনের জন্ম হয় তাদের সবার নাম তিনি ফুলের নামে রাখেন। মেয়েদের নাম ফুলের নামে রাখলে বেশ ভালোই হয় কিন্তু ছেলেদের নাম ফুলের নামে রাখলে কিছুটা সমস্যা। আমার নাম টগর। আমার অবশ্য নাম নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু বকুল ভাইয়ের নাম নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল। বকুল ভাই আমার মেজ চাচার ছেলে। 'ফুলবাড়ি'তে আমরা সবাই একসাথে থাকতাম। দোতলা, পুরনো আমলের মোটা মোটা দেয়ালের বাড়ি। এক দঙ্গল মানুষে সারাক্ষণ বাড়িটা গমগম করত।
ছোটবেলায় বকুল ভাই আর আমি এক ঘরে থাকতাম। বকুল ভাই নাম নিয়ে বড় যন্ত্রণা করত।
'ন্যুনতম বুদ্ধিশুদ্ধি থাকলে কেউ কোন ছেলের নাম বকুল রাখে! ছিঃ'
বলেই পিচিক করে থুতু ফেলত। যেন ঘৃণায় তার মুখে থুতু চলে এসেছে।
আমি 'বকুল নাম তো অনেক ছেলেরই থাকে' এইসব বলে সান্ত্বনা দিতাম। নিজের ভাল নামটাও বকুল ভাইয়ের পছন্দ ছিল না। ক্লাস নাইনে এস.এস.সি'র রেজিস্ট্রেশনের সময় নিজের নাম পাল্টিয়ে রাখল 'সৈয়দ মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল'। সৈয়দ বংশের প্রতি বকুল ভাইয়ের দুর্বলতা ছিল। মাঝে মাঝেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলত,
'সৈয়দ বংশের ভাবই আলাদা, বুঝলি। একেবারে ডাইরেক্ট নবীজীর বংশধর।'
নাম পাল্টানোর ব্যাপারটা একসময় বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেল। মেজো চাচা বকুল ভাইয়ের নবীজীর বংশধর হওয়া একেবারেই পছন্দ করলেন না। কী মারটাই না খেল বেচারা বকুল ভাই!
খাঁটি ফুলপ্রেমিক হিসেবে আমার দাদা তাঁর স্ত্রীদের ডাকতেন 'ফুলবেগম' বলে। প্রথম স্ত্রীকে ডাকতেন ফুলবেগম। তিনি মারা যাওয়ার পর দাদা আবার বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকেও ডাকতেন ফুলবেগম বলে। আমাদের ড্রয়িং রুমে দাদা-দাদীর ছবি ছিল। মাঝখানে দাদার ছবি আর তাঁর দুপাশে দুই দাদীর ছবি। ফাইভ সিক্সে পড়ার সময় আমি বলতাম ফুলবেগম-১ আর ফুলবেগম-২। এই ফুলবেগম-১ হল আমার দাদী আর ফুলবেগম-২ হল আমার সৎ দাদী। আমরা ডাকতাম ছোট দাদী।
দাদা মারা যাওয়ার পর আমাদের ফুলের ব্যবসাটা আর চলল না। আমার বাবা-চাচারা তখন আলাদা আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। কেউই তেমন সুবিধা করতে পারেন নি। শুধু বড় চাচা রড-সিমেন্টের ব্যবসা করে মোটামুটি টাকা পয়সা করে ফেললেন। আমার বাবা দিলেন রেডিও টিভি সারাইয়ের দোকান। সারাইয়ের জন্য বেতন দিয়ে লোক রাখতেন। দোকানের নাম 'যশোর বেতার ঘর'। ওটা আগে ছিল শুধু রেডিও সারাইয়ের দোকান। অনেক পরিচিত ছিল বলে বাবা আর নামটা পরিবর্তন করেন নি। তখন আমি বোধহয় থ্রি ফোরে পড়ি।
প্রথম দিকে মোটামুটি ভাল চললেও বাবা পরের দিকে আর সুবিধা করতে পারেন নি। তখন আমি ফাইভে পড়ি। ব্যবসার অবস্থা খারাপ বলে বাবার মন-মেজাজ চরম খারাপ থাকত। রাতে বাসায় এসে আমাকে হাতের কাছে পেলে নানা অজুহাতে মারধোর করতেন। আমি পারতপক্ষে তাঁর আশেপাশে যেতাম না। ভয়ে ভয়ে থাকতাম কখন ডাক পড়ে। মায়ের কাছে যে যাবো সে উপায়ও নেই। আমার মায়ের মাথায় একটু সমস্যা ছিল। লোকে আড়ালে 'পাগল' বলত। এমনিতে তেমন কোন সমস্যা না। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ করে খুব ভয়ংকর হয়ে যেতেন। কাউকে কাছে পেলে আঁচড়ে-কামড়ে একদম রক্তারক্তি কাণ্ড হয়ে যেত। আমি মাকে খুব ভয় পেতাম।
'আমার মা পাগল' ব্যাপারটা আমাকে খুব কষ্ট দিত। কেউ যেন না জানে এইজন্য আমার স্কুলের বন্ধুদের কাউকে বাসায় আনতাম না। তারপরও একদিন হঠাৎ করে তন্ময় বাসায় এসে মাকে দেখে ফেলে। ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে দেখে আমি ওকে অনেক করে বলি যেন ক্লাসের অন্যদের কাউকে না বলে। ও কথা দেয় যে কাউকে বলবে না। এর কিছুদিন পরে দেখি ক্লাসের সবাই জানে যে আমার মা পাগল। আমার কী যে খারাপ লাগত! রাস্তায় হাঁটতে গেলে মনে হত, রাস্তার সব লোকজন বোধহয় জানে যে আমার মা পাগল। আগে আমাদের বাড়িতে বন্ধুরা তেমন কেউ আসতে চাইত না। বন্ধু ছিলই বা কয়জনা! এই ঘটনা জানাজানির পর দেখি সবাই বাড়িতে আসতে চায়। সবারই পাগল দেখার খুব শখ।
আমাদের 'ফুলবাড়ি' আসলে আড়াইতলা। দোতলার ছাদের উপর একটা ঘর সাথে বাথরুম। এই ঘরে থাকতেন ছোট চাচা। ছোট চাচা ফুলবেগম-২ এর একমাত্র সন্তান। তাঁর জন্মের সময়ই ছোট দাদী মারা যান। ছোট চাচা সবসময়ই আমাদের ছোটদের এড়িয়ে চলতেন। তাঁকে কখনো বই পড়া ছাড়া কিছু করতে দেখি নি। বড়দের কাছে শুনতাম ছোট দাদী নাকী তাঁর জন্য অনেক সম্পত্তি রেখে গেছেন। তাই বোধহয় তাঁর তেমন কোন কাজ-কর্ম করার দরকার হত না। ছোট চাচাকে আমরা ছোটরা তেমন পছন্দ করতাম না। কিন্তু একদিনের ঘটনা ছোট চাচাকে আমার অনেক আপন বানিয়ে দিল।
এর আগে আমি পড়াশোনায় কখনোই খুব একটা ভাল ছিলাম না। কিন্তু ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষায় আমি কিভাবে জানি যশোর অঞ্চলে প্রথম হয়ে গেলাম। রেজাল্ট দেখে আমিই অবাক। রেজাল্ট জেনে বিকেলের দিকে বাসায় এসে কি করব কিছুই বুঝতে পারলাম না। কাকে বলব, কিভাবে বলব বুঝতে না পেরে দোতলার সিঁড়িঘরের অন্ধকার একটা জায়গায় বসে থাকলাম। এ সময় ছোট চাচা বাড়িতে থাকেন না। একা একা আমার ভীষণ মন খারাপ লাগছিল। একসময় কাঁদতে শুরু করলাম। সারা পৃথিবীর উপর প্রচণ্ড অভিমান হতে লাগল।
'কিরে টগর, কি হয়েছে?'
মুখ তুলে দেখি ছোট চাচা। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।
'কিছু হয় নি ছোট চাচা', কান্না থামাতে যেয়ে কান্নার দমক আরো বেড়ে গেল। রীতিমত হেঁচকি ওঠা শুরু হয়ে গেল।
'কিছু হয়নি তো কাঁদছিস কেন?'
'বৃত্তিতে ফার্স্ট হয়েছি ছোট চাচা।'
ছোটচাচার বোধহয় কয়েক সেকেন্ড লাগল ব্যাপারটা বুঝে ওঠার জন্য। তারপর আমার পাশে বসে আমার মাথায়, পিঠে হাত বোলাতে লাগলেন।
'আরে বেকুব, এত ভাল রেজাল্ট করলে হা হা করে হাসতে হয়। তা না গাধার মত ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদছিস। নে ওঠ। রেডি হয়ে নে। বাইরে বেরোব।'
'কেন ছোট চাচা?'
'তুই এত ভাল একটা রেজাল্ট করলি, তোকে ট্রীট দিতে হবে না!'
বাইরে যেয়ে আমরা আইসক্রিম, ফুচকা, আরো অনেক হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেললাম। তারপর ছোট চাচা আমাকে কাঁধে নিয়ে পৌর পার্কের লেকের ধার ধরে হেঁটে বেড়ালেন।
'কিরে তুই কত খেয়েছিস!'
'কেন ছোট চাচা?'
'ঐ লিকলিকে শরীরে এত ওজন হয় কি করে! আমার তো মনে হয় খেয়েই ওজন পাঁচ কেজি বাড়িয়ে ফেলেছিস।'
আমি খিল খিল করে হাসি। পাঁচ কেজি বাড়লেও কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। আমার ছোট চাচা অনেক শক্তিশালী। এরপর আমাকে লাইব্রেরীতে নিয়ে বললেন, 'যত খুশি গল্পের বই নে'। শুনে আমার তো মাথা খারাপ হয়ে গেল। আমার মনে আছে, আমি বাইশটা বই নিয়েছিলাম। তারপর ছোট চাচা অনেক মিষ্টি কিনে আমাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। ঢুকেই হই হই করে বাড়ির সবাইকে আমার রেজাল্টের কথা জানাতে লাগলেন। আমার তখন এত লজ্জা লাগছিল যে পারলে জুতার বাক্সে ঢুকে লুকিয়ে পড়ি। সেই দিনের পর থেকে ছোট চাচা আমার শ্রেষ্ঠ মানুষের তালিকায় দুই নম্বরে আছেন।
'ফুলবাড়ি'তে আমি সবচেয়ে পছন্দ করতাম শিউলী আপাকে। শিউলী আপা যে কী সুন্দর! দুধে-আলতা গায়ের রঙের সবচেয়ে পারফেক্ট উদাহরণ হল শিউলী আপা। বড় চাচার মেয়ে। আমি যখন থ্রি-ফোরে পড়ি তখন ঠিক করেছিলাম বড় হয়ে শিউলী আপাকে বিয়ে করব। শিউলী আপা তখন কলেজে পড়ে! বাড়িতে যতক্ষণ থাকতাম শিউলী আপার আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। বশংবদ ভৃত্যের মত ফুট-ফরমায়েশ খাটতাম। শিউলী আপার জন্য কিছু করতে পারলে খুব ভাল লাগত। শিউলী আপার তেঁতুল খেতে ইচ্ছে করছে, তেঁতুল পেড়ে আনতাম; শিউলী আপার চালতার আচার চায়, আচারওয়ালাকে খুঁজে ধরে বেঁধে বাড়িতে নিয়ে আসতাম। এর মাঝে একদিন শিউলী আপা আমার হৃদয় ভেঙে দিয়ে আমাকে দিয়ে নিশান ভাইয়ের কাছে প্রেমপত্র পাঠাল। প্রথমে খুব খারাপ লাগলেও নিশান ভাইয়ের কাছ থেকে চকলেট, আইসক্রিম পেয়ে খুশি মনে কর্তব্য সম্পাদন করে আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ি ফিরে আসতাম। নিশান ভাই তখন বুয়েটে পড়ত। শিউলী আপার খুব ইচ্ছে ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কিন্তু বাসার কেউ রাজী না হওয়ায় তাকে অ্যাডমিশন টেস্টই দিতে দেওয়া হল না। যশোরেই এম.এম. কলেজে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর পড়াশোনা একদম ছেড়ে দিল। এর কিছুদিন পর নিশান ভাইয়ের সাথে শিউলী আপার বিয়ে হয়ে গেল।
ছোটবেলায় আমি খুব ভুতের ভয় পেতাম। একা একা জেগে থাকার ভয়ে বকুল ভাই জেগে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে যেতাম। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়তে হত বলে বকুল ভাইকে জোর করে জাগিয়ে রাখতাম। বকুল ভাই বড্ড ঘুমকাতুরে, চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে যেত। আমি আবার ডেকে দিতাম। শিউলী আপার বিয়ের পর পরই বকুল ভাইরা খুলনা চলে গেল। ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে মেজো চাচা খুলনায় চাকরী নিয়েছিলেন। এরপর আমি খুব একা হয়ে গেলাম। অনেক রাতেই ভুতের ভয়ে ঘুমাতে পারি নি। লাইট জ্বালিয়ে সারা রাত বসে থাকতাম। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ভুতের ভয় কেটে যায়। ঐ সময়টায় আমি কয়েকবার ছোট দাদীকে দেখেছিলাম। ছোট দাদী সবসময়ই ইশারায় কি জানি বলতে চাইতেন। আমি কখনো বুঝতে পারি নি।
আরো কয়েক বছর পর বড় চাচা বাড়িটা ভেঙে নতুন করে বানাতে চাইলেন। বাবার ব্যবসার অবস্থা খারাপ। হাতে টাকা নেই। তিনি জানিয়ে দিলেন তিনি বাড়ি বানাতে পারবেন না। বড় চাচা তখন উঠানের কিছুটা নিয়ে আর বাড়িটার কিছু অংশ ভেঙে নতুন করে বাড়ি বানালেন। এই ভাঙাভাঙির সময় বাড়ির সামনে 'ফুলবাড়ি' লেখার 'ফুল' অংশটা ভেঙে গেল। আমাদের বাড়ির নাম হয়ে গেল শুধু 'বাড়ি'। এর কিছুদিন পর ছোট চাচাও ঢাকা চলে গেলেন।
আমি এখন সরকারী চাকরী করছি। সম্প্রতি কোয়ার্টার পেয়েছি। ভাবছি সামনে মাসে বাবা-মাকে এখানে নিয়ে আসব। তখন হয়ত আমাদের বাড়ির যেটুকু আছে সেটুকুও আর থাকবে না। আমি যখন ছুটিতে যশোরে আসি তখন আমাদের 'ফুলবাড়ি'র দেয়াল ধরে ধরে বাড়িটার সাথে কথা বলি। আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু আমার সত্যিই মনে হয় যে আমাদের বাড়ি আমার কথা বুঝতে পারে। আমি মাঝে মাঝেই এরকম স্বপ্ন দেখি যে আমাদের ফুলবাড়ি আবার আগের মত হয়ে গেছে। বড় চাচি সাত সকালে চিৎকার করে কাক তাড়িয়ে আমাদের কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে, রহিমা বুয়া ভুত দেখে কল পাড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, শিউলী আপা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে, বকুল ভাই তার নাম নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে, সেই হুবহু আমাদের 'ফুলবাড়ি'।
১৬ মার্চ - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী