ভ্রূণ

পরিবার (এপ্রিল ২০১৩)

অলভ্য ঘোষ
  • ১১
  • ১১
ভ্রূণ টা যে কোন গভীরে এখন নিমজ্জিত;
কেউ জানে না । নুনের পুটলি নিয়ে গ্রামের
মাতব্বরেরা বাইরে অপেক্ষা করছে ; যার মধ্যে
আমার বাবও আছে । প্রসবের যন্ত্রণায় ছটকাতে
ছটকাতে মা তবুও চেষ্টা করছে বিগত বছর
গুলোর মত এবার অজ্ঞান না হয়ে যেতে ।
আমি তখন পৃথিবীর জনন ইন্দ্রিয়ের দ্বারে ;
জীবনের আলো নেব বলে ছটফট
করছি ! আমার এই জন্মের বাসনা প্রচণ্ড
যন্ত্রণা দিচ্ছে আমার মাকে । শেষ মেষ আমি
অন্ধকার থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলাম আমার
মায়ের মুখে এখনো স্বস্তি নেই কেন ! দাইমার
মুখে এবার হাসি ফুটেছে । আমি গর্ব করে ভাবছি ;
সার্থক হয়েছে আমার মায়ের জন্ম আমায় জন্ম
দিয়ে । আমার সাত সাতটা দিদি নুনের রূপকথার
পুটলিতে জারিত হবার পরে আমি জন্ম নিতে
চলেছি অষ্টম গর্ভে শ্রী কৃষ্ণের মত । মা এবার
সঞ্জাহীন নয় দাইমাকে বলল -"নিমক ছিটা দো । "
দাইমা এক গাল হেসে আমার মায়ের ফুলের সাথে
আমার নাভির যোগাযোগ ছিন্ন করতে করতে বলল;
-'' বেটিয়া তেরা লেড়কা হুয়া হ্যাঁয় ।"
আমাকে আমার মায়ের পাসে দিয়ে সুসংবাদের
অপেক্ষায় থাকা পুরুষদের মিষ্টি বিলবার সন্দেশ
দিতে গেল দাইমা । আমি তখন বিছানায় হাত পা ছুড়ে
খেলা করছি পৃথিবীর নতুন আলোয় এসে ।
কিন্তু আমার মায়ের মুখে কোন আনন্দনেই । চোখ গুলো
কেমন হিংস্র হয়ে উঠেছে । বিছানা থেকে রক্ত স্নাত শরীরে
কোনক্রমে উঠে দাড়িয়ে আমাকে একটা কুকুরের বাচ্চার
মত ঘেটি ধরে তুলল নির্দয় নিষ্ঠুর রুদ্ধ মূর্তি কালীর মত ।
তার পর বিছানার নিচে থেকে বহু যত্নে লুকিয়ে রাখা
নুনের গামলাটা বার করে তার মধ্যে চেপে ধরল
আমাকে । তার চোখ থেকে দু ফোটা জল শুধু গড়িয়ে
পড়লো ।

তবে মানবী সে নয় আঘাতে আঘাতে ঘোরতর
পাষাণী যেমন টাই হওয়া উচিত ছিল । আমিই
প্রথম পুরুষ মায়ের কাছে যে করুণার প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে
আর্তনাদ করে উঠলাম । আমার মা এতো দিনে করুণা
চেয়ে চেয়ে ঘৃণা করতে শিখেছে ।
আমাকে সে ঘেন্না করছে আমিতো তাদেরি প্রতিনিধি
যারা তাকে শুধুই একটা মানুষ উৎপাদনের যন্ত্র বলে মনে
করে ।
- জিয়ে গা তো ফির সাতায়ে গা ।

পুরুষের দল ছুটেএল আমার কান্না শুনে ;
যার মধ্যে আমার বাব, ঠাকুরদা জ্ঞাতি গুষ্টি আছে ।
দাই মাও এসেছে পেছনে শাঁখ হাতে । ছোট কাকুর
হাতের মিষ্টির হাঁড়িটা তিতকুটে হয়ে গেল । অনেক মেয়ে
মরতে দেখেছে সবাই ; প্রথম এ দেশ দেখল পুরুষের ভ্রূণ
নিকেশ হতে । একটা শঙ্খ ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি আমি শঙ্খ
ধনিটা ছড়িয়ে পড়ছে যুগ যুগ ধরে স্থবির পৃথিবীর বুকে । মা
আমি পুরুষ না হয়ে মানুষ হলাম না কেন ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তাপসকিরণ রায় নতুন ধরনের কবিতা,দীর্ঘ কলেবরের কবিতা--কবিতা থেকে কাহিনীর দিকটা বেশী ফুটেছে।শেষ কয়েকটি লাইন নতুনত্বের দাবী রাখে।কবিকে ধন্যবাদ।
মিলন বনিক সুন্দর কবিতা...ভাব আর বিন্যাসে ভিন্নতা আছে...আর আছে মুগ্ধ করার ম কিছু জাদুকরী প্রতিভা...অনেক শুভ কামনা...
খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ মা আমি পুরুষ না হয়ে মানুষ হলাম না কেন ?......গ।ক। এভাবে অকাতরে এমন রস নিষিক্ত কাব্য ঢেলে দিবে এই প্রত্যাশা ই আমরন। ধন্যবাদ দাদা।
মোঃ কবির হোসেন অলভ্য ঘোষ ভাই আপনার কবিতাটি আমার কাছে ভাল লেগেছে. ধন্যবাদ.
রোদের ছায়া কি বলব ভেবে পাচ্ছি না , কবিতায় বাস্তবতা এত মর্মস্পর্শী ভাবে তুলে আনলেন .সাধুবাদ জানাই আপনার এই প্রতিবাদী লেখনীর ...অনেক শুভেচ্ছা .
এশরার লতিফ নারী বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র উচ্চারণ। ভালো লেগেছে।
এফ, আই , জুয়েল # নারী বৈষম্য ও কন্যা সন্তানকে আতুর ঘরে মেরে ফেলার করুন চিত্র ফুটে উঠেছে । এরসাথে ঘৃনা ও মনোকষ্টের দারুন বর্ননা বিবৃত হয়েছে ।।
সুমন কিছুটা মিশ্র অনুভুতি হচ্ছে। একটা ছেলে সন্তানের জন্য সাত সাতটা মেয়ে.... মায়ের এটাই কি মনোকষ্টের কারণ? নিজ হাতে শিল্পীর শিল্প ধ্বংসের মতো একটা কষ্ট হচ্ছে।

১০ মার্চ - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪