সুখ-দুঃখ

দুঃখ (অক্টোবর ২০১৫)

মনোয়ার মোকাররম
  • 0
  • ১৮
সব কিছু প্রস্তুত ছিলো।
প্রস্তুত ছিলো যেনো বাইরের আকাশটাও। জানালার পর্দা সরিয়ে কেয়া দেখছে কেমন করে আকাশটা মেঘে ছেয়ে গেলো। মেঘ কেয়ার খুব পছন্দ। মেঘ তার পাখায় করে বৃষ্টি নিয়ে আসে। কেয়ার অধিকারবোধ প্রবল। তার ধারনা সারা পৃথিবীতে বৃষ্টি নামে শুধু তারই জন্যে। এই বৃষ্টি তার নামে যে লিখে দিয়েছে, তার মেঘের মত পাখা নেই। তার আছে আশ্চর্য সম্মোহনী দুটি চোখ। যেদিন কেয়ার চোখে চোখ রেখে সে বলেছিল, পৃথিবীর যত বৃষ্টি আজ থেকে সব তোমার। তার ঘোর লাগা চোখের দিকে তাকিয়ে, প্রবল অধিকারবোধে কেয়া বিশ্বাস করেছিলো, পৃথিবীর সব বৃষ্টি আজ থেকে তারই। পরক্ষনেই সে বলেছিলো, কেয়া, তোমার কিছু বৃষ্টি আমাকে দেবে? কেয়া বলেছিলো, কি করবে তুমি আমার বৃষ্টি নিয়ে? সে বলেছিলো, তোমাকে সাথে নিয়ে আমাদের বৃষ্টিতে ভিজব। সেই থেকে মেঘের সাথে সখ্যতা কেয়ার - বৃষ্টির সাথেও। মেঘ তার আপন, বৃষ্টি তার আপনজন, আরো একজন আপন তার, যে তাকে বৃষ্টি দিয়েছে। আকাশে মেঘ দেখলে, বৃষ্টি নামলে কেয়ার তার বৃষ্টিদাতার কথা মনে পড়ে যায়।
জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই যেনো কোন এক নিপুণ শিল্পী আকাশের বুক থেকে মেঘগুলো এক ঝটকায় সরু তুলির মাথায় মাখিয়ে নিমিষেই কি সুন্দর করে কেয়ার মনের আকাশে একরাশ মেঘ একে দিলো। অথবা কেয়ার বুকে জমে থাকা মেঘের ভাগীদার হতেই আকাশটা নিজে থেকেই তার বুকেও লেপে নিলো কেয়ার মেঘের রঙ। এই মেঘ কি কেয়ার বুকে জমে থাকা মেঘের সহোদর অথবা সহোদরা, যে তার জলীয় বাষ্পে সযতনে ধারন করে আছে কেয়ার দুঃখ। এই মেঘ কি বৃষ্টি নামাবে? যে মেঘে কেয়ার মনে বৃষ্টি নামত, সেই মেঘ আজ শুধুই মেঘ মনে হচ্ছে। এই মেঘের পাখায় বৃষ্টি নেই। হয়তো আছে, কিন্তু সেই বৃষ্টির ফোটায় ফোটায় মিশে থাকবে দুঃখ, কেয়ার মনের দুঃখ। সাদা-কালো মেঘ কি কেয়ার বুকের দুঃখ বয়ে এনেছে আজ, কেয়ার দুঃখ কি বৃষ্টি হয়ে ঝরবে আজ? নাকি আজকের বৃষ্টিটাও সুখের বৃষ্টি, কেয়া কি ভিজবে সেই বৃষ্টিতে তার বৃষ্টিদাতাকে নিয়ে ?
কেয়ার আজ মহা সুখের দিন। সুখ কি দুঃখ বিবর্জিত হয়? যে মেঘ বৃষ্টি নামায়, বৃষ্টিতে মানুষের খরতপ্ত হৃদয় আর্দ্রতা পায়, সেই বৃষ্টিই কখনো কখনো নিয়ে আসে ঝড়, বজ্র। আর্দ্র হৃদয় হয় রক্তিম। আমরা জানি না, কেয়ার মন আর্দ্র নাকি রক্তিম- হয়ত দুটোই। মানুষের মনের কতটুকুই বা আমরা জানি! কেয়ার মনের সবটুকুই কি আমরা জানি! হয়তো জানিনা। কিন্তু এটুকু জানি কেয়ার আজ খুব আনন্দের দিন হওয়ার কথা। কেয়াও হয়তো জানে আজ তার খুব আনন্দের দিন। কিন্তু গোলাপ বিছানো শয্যায় শুয়েও কেউ কেউ পায় কন্টক যন্ত্রনা।
অথচ কিছুক্ষন আগেও আকাশ ছিলো কবুতরের ডানার মত শুভ্র। যখন কেয়া হাত রাখলো তার বৃষ্টি দাতার হাতে, কায়সারের হাতে, তখনো আকাশ ছিলো শিমুল তুলার মতই শুভ্র। কেয়ার এক সময় ইচ্ছে করতো আকাশে শিমুল তুলো হয়ে ভাসবে। কায়সার থাকবে তার সাথে। পাশাপাশি দুই খন্ড তুলো অথবা দুই খণ্ড মেঘ হয়েই উড়ে বেড়াবে তারা। মিশে যাবে আকাশের বাকি সব মেঘের সাথে। অথবা দুটি শুভ্র কবুতর – শুভ্র আকাশের সীমানায় উড়ে বেড়াবে নিজেদের সাম্রাজ্যে। অথচ এখন মনে হচ্ছে, এই বুঝি মেঘ এলো, মেঘ এলো তার পাখায় বৃষ্টি নিয়ে, যে বৃষ্টিতে ভেসে থাকা শিমুল তুলো হয়তো ভিজে যাবে, ভিজে গেলে তারা আর উড়বে না। অথবা দৈবাৎ যদি বজ্র ডাকে, বিজলীর ঝলকানিতে কবুতর গুলি হয়তো পাক খেতে খেতে হবে ভীত সন্ত্রস্ত। তাদের ডানা হয়তো ঝলসে যেতে পারে। তারা হয়তো উড়বার শক্তি হারিয়ে ফেলবে। ভারী মেঘ যেমন ভারসাম্য হারিয়ে নেমে যায় নিচে, তারাও হয়তো পাক খেতে খেতে কোথায় গিয়ে পড়বে কে জানে? বহুদিনের চিরচেনা অভয়ারণ্য আকাশটা, আর মেঘগুলো সব কেয়ার কাছে আজ বহুদিনের অপরিচিত। আর তাই আজকে এই মহা সুখের দিনেও একটা অদৃশ্য দুঃখ নামক যন্ত্রনা তাকে চারদিক থেকে উপহাস করে যাচ্ছে।
জানালার পর্দা ছেড়ে দিতেই ঘরটা কেমন লাইটের কৃত্রিম ম্লান আলোয় এক ধরনের ফ্যাকাশে রূপ ধারন করে। কেয়া একবার চারিদিকে আনমনে চোখ বুলায়। শুধু বাতির রঙ নয়, মেঝেতে শুয়ে থাকা ধূসর কার্পেটের রঙ ফ্যাকাসে, জানালায় ঝুলানো পর্দাগুলোর রঙ ফ্যাকাসে। শুধু ফ্যাকাশে হয় না কেয়ার সাথে কায়সারের প্রথম দিনগুলোর স্মৃতি। অম্লান সেই দিনগুলোর কথা আজো মনে পড়তেই কেমন এক ধরনের সুবাতাস খেলে যায় কেয়ার মনে। সেই আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে চুপচাপ স্বভাবের এক খণ্ড শুভ্র মেঘের সাথে তার দেখা হয়েছিল। দুই খণ্ড মেঘ মিলে তারা ভেসে বেড়াতো, নিজের আকাশে। আর যখন তখন বৃষ্টি ঝরাতো– কথার বৃষ্টি, ভালবাসার বৃষ্টি, অভিমানের বৃষ্টি। এই মান-অভিমানের খেলায় হালকা মেঘের মতই চলছিল তাদের ভেসে চলা, উড়ে চলা। এক খণ্ড শুভ্র মেঘের সাথে আরেক খণ্ড চপল মেঘের বন্ধুত্ব। শুভ্র মেঘ ছেলেটি বরাবরি নীরব, আর চপল মেঘের মত মেয়েটি বরাবরি খুব বেশি সরব, চটপটে আর উৎসাহী। কিন্তু এই দুই মেরুর দুই খণ্ড মেঘ ভাসতে ভাসতে কখন যে এক অন্যের সাথে মিশে গিয়ে একই বর্ণ ধারন করলো তা যেন কেউই বুঝেনি। কিন্তু দুজনের দুই ভিন্ন ঐকতান বা কলতানে তারা যে এক নতুন সিম্ফোনি তৈরী করলো তার সাথে মেঘের রঙ, আর বৃষ্টির দ্যোতোনা মিলে কি এক রূপ ধারন করলো, তার নাম দেবার ক্ষমতা আমাদের নেই। তা শুধুই ভালোবাসা নয়, শুধুই কাছে থাকা নয়, শুধুই অনুভব করা নয়, এই সব কিছুর ঊর্ধে যার পরিমাপ মানুষের গজ-ফিতা দিয়ে করা সম্ভব নয়। তার জন্যে আমাদের মেঘের ভাষা বুঝতে হয়, বৃষ্টির ভাষা বুঝতে হয়। বরাবরই অভিমানী মেয়েটি, এক খণ্ড চপল মেঘ মেয়েটির অভিমান আর উদাসীন শুভ্র মেঘের উদাসীনতায় যে ছোট ছোট, খণ্ড খণ্ড অনিশেঃষ আনন্দ ধারার জন্ম দিত তা শুধুই ভালোবাসা ছিল না।
কেয়ার শখ ছিল বৃষ্টিতে ভিজা। কিন্তু কায়সারের ছিল ঠান্ডার অসুখ। একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই তার ঠান্ডা, জ্বর লেগে কাহিল দশা হয়ে যেতো। তবু কেয়া যখন তার চোখে একরাশ অনুনয় নিয়ে বলতো, একদিন বৃষ্টিতে ভিজলে কি হবে বলো? আমার জন্যে তুমি একটু না হয় কষ্ট করলে? একটু না হয় জ্বর এলোই। পারবে না? সেই চোখের ভাষা অগ্রাহ্য করার মত হৃদয় নিয়ে এখনো কেউ আসে নি পৃথিবীতে। তাই তো কায়সার বৃষ্টিতে ভিজতো। আর বৃষ্টিতে ভিজে পরে এক সপ্তাহের জন্যে বিছানায় পড়ে থাকতো। কেয়ার খুব মায়া হতো। নিজের ভালোবাসার প্রবল অধিকার বোধে শুভ্র মেঘকে কষ্ট দেবার জন্যে অনুশোচনায় তার মন পুড়ত। ভালোবাসার স্বেচ্ছাচারিতায় তার চোখের নদী টলমল করতো।
কেয়ার টলমল নদীতে জোয়ার এলে কায়সারের মনেও কাব্যের বন্যা বইতো। কায়সার কেয়াকে নিয়ে কবিতা লিখত - অসুস্থ শরীরে বিছানায় শুয়ে কবিতা লিখত। কাগজ কলম ছাড়াই। তার মনে ভিতর যে কলম ছিলো সেটি দিয়ে সে লিখত কেয়ার কেয়ার মনের কাগজে।

“তুমি আমি ভালোবাসি যখন তখন নিয়ম ছাড়া কারনে আর অকারনে
তোমার আমার ভালোবাসা পাবে না তো কোথাও কোন ব্যাকরনে”

এই কবিতা পড়ে কেয়ার চোখের টলমল জল তার টোল পড়া গাল বেয়ে বেয়ে নিচে নামত যখন, তখন কায়সারের মনে হত নির্জন পাহাড়ের গা ঘেষে ঘেষে জলের ধারা বইছে। এই ঝর্না ধারার একমাত্র মালিক শুধু সেই। সে চাইলেই তাতে গা ভিজিয়ে নিতে পারে। ডুব দিতে পারে পাহড়ের নিচে জলমগ্ন ভূমিতে। সে চাইলেই সেই জলে ধুয়ে নিতে পারে তার শত সহস্র বছরের বেদনা, দুঃখ, শ্রান্তি।
কেয়া কায়সারের দিকে তাকালো। এখনো সেই কায়সার বিছানায় শুয়ে আছে। ক্লান্ত-শ্রান্ত অভিব্যাক্তি চোখে মুখে। কিন্তু এখন কায়সারের এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হবার কথা। কেননা এই একটু আগে, আকাশে মেঘ জমার আগে, আকাশ যখন ছিল কবুতরের শুভ্র ডানার মত শুভ্র, কিংবা শিমুল তুলোর মত শুভ্র ঠিক সেই সময়টাতে তারা তাদের সম্পর্কের একটি নতুন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তারা এখন স্বামী-স্ত্রী। নিতান্তই ঘরোয়া পরিবেশে এই বৈবাহিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এতকাল যে সম্পর্ক শুধুই তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেটি এখন সামাজিক ভাবে স্বীকৃত। তাদের সম্পর্কের এই সামাজিকীকরন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে হসপিটালের এই ছোট্ট কেবিনে যে রুমের জানালার বাইরে আকাশে সাদা মেঘ আর কালো মেঘের পালাবদলের খেলা আর ভিতরে সাদা ধবধবে মেঘের মত বিছানায় এক খণ্ড কাল মেঘ হয়ে শুয়ে আছে কেয়ার শুভ্র মেঘ কায়সার। এতকাল তারা মেঘের মত উড়ে বেড়িয়েছে একসাথে, এখন তারা চাইলে নিজেরাই ঘর্ষনে ঘর্ষনে বিদ্যুতের ঝলকানিও তৈরী করতে পারে, কোন বাধা নেই। তাদের নিয়মহীন আর ব্যাকরনহীন সম্পর্কের নতুন মাত্রায় তারা আত্মার বন্ধন থেকে একটি সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হলো। কেয়া শক্ত করে কায়সারের হাত ধরে বসে আছে আর শুধু কাদঁছে। কায়সারের শুকনো চোখের কোনেও ঝলমল করছে অশ্রু বিন্দু। গড়িয়ে পড়বে হয়তো এখুনি।
বাইরে বৃষ্টির সুর। সাদা মেঘ গুলো কালো হয়, কালো মেঘ গুলো ভারী হয়। আকাশের বুকে সাদা মেঘ ছাড়া আর কারো জায়গা নেই। আকাশ তার বুকে কালো মেঘ ধরে রাখে না। কালো মেঘ যখন তার সীমা ছাড়ায়, আকাশ তখন কষ্টে বুক বাধে। কালো মেঘকে সে আর তার বুকে রাখতে পারে না। কালো মেঘের বিরহে তার অশ্রু ঝরে।
- কেয়া , বৃষ্টিতে ভিজবে? হঠাৎ কায়সার বলে উঠলো
- তোমার এই শরীরে?
- একদিন বৃষ্টিতে ভিজলে কিছু হবে না ! তুমিইতো বলতে !

বাইরে বৃষ্টির রিনিঝিনি সুর। কান্নার সুর এতো মধুর হয় কি করে কেয়া তা বুঝে না। পরক্ষনেই মনে হয় আনন্দ অশ্রুর সুর মধুরই হবার কথা। কায়সারের মুখের দিকে চেয়েই তার মন বিস্বাদে ভরে যায়। তার কাছে মনে হয় বৃষ্টির সুর বেদনায় পূর্ণ।

হসপিটালের কেবিনে যখন কেয়া আর কায়সার বৃষ্টিতে ভিজার স্বপ্নে বিভোর, তখন ডাঃ মাসুদ কায়সারের পালস দেখছেন। কেয়া অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ডাঃ মাসুদের দিকে। ডাক্তার ম্লান একটা হাসি দিয়ে জানালেন সবকিছু ঠিক আছে। নব দম্পতিকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি চলে যেতে উদ্যত হলেন।
- ডক্টর, আমার আর কয়দিন আয়ু আছে?-কায়সার তার শুকনো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
- ডক্টর একটু চুপ থেকে বললেন, মিস্টার কায়সার, এখন এইসব আলোচনা করার সময় নয়। সময়টাকে উপভোগ করুন।
- প্লিজ ডক্টর!কায়সারের আকুতি।
- কোন কিছুই চুড়ান্ত নয়। মিরাকলস হ্যাপেন।
- যদি মিরাকল না ঘটে, তাহলে ?
- মিরাকলস হ্যাপেন মিঃ কায়সার। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখুন।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে ভিতরেও। কেয়ার চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে। কায়সারের শুকনো চোখের কোনেও ভারী অশ্রু ধারা। তার মনে হলো, মিরাকলস ডু নট হ্যাপেন।
- ডক্টর, আমি কি একটু বৃষ্টিতে ভিজতে পারি।
- নাহ, এই শরীরে আপনার বৃষ্টিতে ভিজা ডক্টর হিসেবে আমি পারমিট করতে পারি না
- কিন্তু ডক্টর, আর যদি ভিজতে না পারি?
- একদিন বৃষ্টিতে ভিজার চেয়ে, ডক্টর হিসেবে আপনার একদিনের আয়ু আমার কাছে বেশী মুল্যবান।
- একবছর বেশী বাচার চাইতে, শেষবারের মতো একদিন কেয়ার সাথে বৃষ্টিতে ভিজা আমার কাছে বেশী মূল্যবান।

ডক্টর মাসুদ চুপ করে রইলেন। কেবিনের বেডের ডানপাশে রাখা কলিং বেল চাপতেই, একজন স্টাফ আসলেন। ডক্টর বললেন, স্যার এবং ম্যাডামকে ছাদে নিয়ে যান।

- এই বৃষ্টিতে ? চোখ কপালে তুলে লোকটি জিজ্ঞেস করলো। শেষ স্টেজের একজন ক্যান্সারের রোগীর বৃষ্টিতে ভিজার ঘটনা সে যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
- হুম, এই বৃষ্টিতেই ! ডক্টর মাসুদ স্ফীতহাস্যে কেয়া আর কায়সারের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলেন।

বাইরে বৃষ্টির মোহ জাগানিয়া সুর। তন্দ্রাচ্ছন্নের মত ছাদের দিকে হাটা ধরল, এক খণ্ড সাদা মেঘ আর এক খণ্ড চপল মেঘ।
সেদিন হসপিটালের ছাদে কায়সার আর কেয়ার আনন্দ অশ্রুজলের সাথে বৃষ্টির জল যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো প্রবল সখ্যতায় তার ঠিক তিন দিন পরেই কায়সারের মৃত্যু হয়।

আর কেয়া, যখনি বৃষ্টি নামে জানালার ধারে বসে আকাশ দেখে। জানালা খুলে দেয় যেন বৃষ্টির ফোটা এসে গায়ে পড়ে। কখনো বা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরে অথবা কায়সারকে ধরার চেষ্টা করে। যতদিন বেঁচে রবে, এভাবেই সে কায়সারকে খুজে নেবে। আর যখন কায়সারের চিহ্ন তার কোলে আসবে তাকে সে কায়সারের সাথে তার শেষবার বৃষ্টিতে ভিজার গল্প শুনাবে। গল্প শুনাবে প্রথম বার বৃষ্টিতে ভিজার। গল্প শুনাবে প্রথম দেখার। আরো কত গল্প জমে আছে তার মনের ভিতর। শুধু সেই অনাগত মানুষটির অপেক্ষা, সব গল্প কথার বৃষ্টি হয়ে ঝরবে। কায়সার আর তার সন্তান – দুই খণ্ড শুভ্র মেঘ তার আকাশে শিমুল তুলোর মত ভেসে বেড়াবে। কিংবা তীব্র বৃষ্টিতে কেয়া যখন জানালা খুলে জানালার পাশে বসে কায়সারকে খুজবে তখন কায়সার বৃষ্টির ছাট হয়ে তার গায়ে এসে লাগবে। কেয়ার পাশে থাকবে কায়সারের উত্তরাধিকার। এক জীবন সুখে কাটিয়ে দেবার জন্যে এর চেয়ে বেশী কিছু কি লাগে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ ভাষার ব্যবহার মনোমুগ্ধকর, দুঃখময় গল্প, অনেক শুভেচ্ছা.
রফিকুল ইসলাম সাগর ভালোলাগার কথা জানিয়ে গেলাম। শুভ কামনা।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ ভালবাসা হয়তো কোন ব্যাকরন মানে না, তাই বলে ডাক্তার কী রুগীকে আত্মহত্যা করার অনুমতি দিতে পারে ? আবেগঘন সুন্দর গল্প ! খুব ভাল লাগল ।
রেজওয়ানা আলী তনিমা সুন্দর গল্প ।শুভেচ্ছা রইলো।
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর গল্প ।।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
Fahmida Bari Bipu অনেকদিন পর গল্প-কবিতা'য় আপনার লেখা পড়লাম। আমি গল্প-কবিতায় নিবন্ধন করার পর আপনিই প্রথম আমাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, সেটা কিন্তু আমি ভুলিনি। আপনার গল্পটা অনেক আবেগঘণ; শেষ লাইনটা পড়ে চোখের কোণে জ্বালা ধরা অনুভূতি হল। ভাল লাগল। ভোট রেখে গেলাম।
এস আই গগণ “তুমি আমি ভালোবাসি যখন তখন নিয়ম ছাড়া কারনে আর অকারনে তোমার আমার ভালোবাসা পাবে না তো কোথাও কোন ব্যাকরনে” কথাটি ভাল লাগলো

১৫ ডিসেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪