এক রাত অন্ধকার!

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

আহমেদ ইশতিয়াক
  • ১৩
পানি খাবো …
আসলাম সাহেব বিছানায় উঠে বসলেন। পাশের টেবিলে রাখা ল্যাম্প জ্বালালেন। ঘড়ি দেখলেন। তিনটা দশ। জগে পানি নেই। রান্নাঘরে যেতে হবে।
পানি খাবো ...
আনছি তো।

আসলাম সাহেবের গলায় বিরক্তির একটা সূক্ষ্ম ভাব। তিনি নিজেকে সামলে নিলেন। নিচে নামার সময় হাতে বাধিয়ে টেবিলে রাখা গ্লাসটা ফেলে দিলেন।
রুবি কিছু বলল না। অদ্ভুত শব্দে একটা আওয়াজ করে থেমে গেল।
আসলাম সাহেব রুবিকে পানি খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিলেন। তার নিজের ঘুম শেষ। সারারাত চেষ্টা করলেও তিনি এখন আর ঘুমাতে পারবেন না।
একটা সিগারেট নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন আসলাম সাহেব।
রাতের আকাশের রং আর কালো নেই। ফিকে হয়ে আসছে। তিনি বিস্মিত হলেন। এভাবে তো কোনদিন তিনি আকাশ দেখেন নি ! কালো রঙও বুঝি এত সুন্দর হয়!
আসলাম সাহেব গাঢ় বিষাদ বোধ করছেন। আজই রুবির ক্যানসার ধরা পরেছে। ব্যাপার টা শোনার পর থেকেই তিনি খুব একা একা বোধ করছেন। ডাক্তার খুব সাধারণ ভঙ্গিতেই খবরটা দিয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক। তারা দিনরাত মানুষকে দুর্ঘটনার খবর শোনান। এতে তারা অভ্যস্ত।

চিকিৎসার জন্যে আনুমানিক একটা খরচ ডাক্তার দিয়েছেন। বিপত্তিটা এখানেই। এটা হাতে পেয়েই তিনি হাহাকারের ভঙ্গিতে বললেন...
এত টাকা ?
আসলাম সাহেব, আপনার স্ত্রীর ক্যানসার অনেক ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পরেছে। এখান থেকে সম্ভবত কিছু করা যাবে না। তবু চিকিৎসা তো করাতে হবে। তাই না ??
আসলাম সাহেব মাথা নাড়লেন।


সেই তখন থেকেই তিনি গভীর চিন্তায় ডুবে আছেন। টাকার অঙ্ক সত্যিই বিশাল। তার চেয়েও বড় সমস্যা বিষয়টা রুবিকে জানাতে হবে। কিভাবে জানাবেন তা তিনি এখনো বুঝতে পারছেন না।
টাকার সমস্যায় পরলে প্রথমেই মানুষ আত্মীয় স্বজনের কথা মনে করে। তিনিও করলেন। তার অবশ্য বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন আছেন যারা বেশ টাকা পয়সার মালিক। তাদের কারো কাছে বললেই তিনি বেশ খানিকটা ভরসা পাবেন। কিন্ত সঙ্কোচের কারণে বলতে পারছেন না। কোন সময়ই তাদের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ করা হয় নি। এখন বিপদের মুহূর্তে হাত পাততে যেতে হবে। অসম্ভব !

হ্যালো মিঃ আসলাম !
আসলাম সাহেব চমকে তাকালেন। বারান্দায় কেউই নেই।
হাউ আর ইউ ?
আসলাম সাহেব নিজের অজান্তেই উত্তর দিলেন, ভালো। তার কলজে শুকিয়ে গেছে।

মিথ্যা বলছেন কেন? মানুষের সমস্যাই একটা। কারণে অকারণে মিথ্যা বলে। আপনার মুখ হয়ে আছে চিমশে, আর আপনি বলছেন ভালো ?
-আপনি কে ?
একটা চেয়ার নিয়ে আসুন, বসে বসে গল্প করি।

-আপনি কে ?
আহা... আসুন না। বুঝতে পারছি, আপনি ঝামেলায় পরেছেন। আপনাকে একটা সমাধান দিতে পারি। আসুন...

বারান্দায় একটা চেয়ার রাখাই থাকে সবসময়। এখন দেখা যাচ্ছে না। তিনি মেঝেতেই বসে পরলেন। তার মাথা ঝিম ঝিম করছে।
ওখানেই বসুন। আর এত ভয় পাবেন না।
-আপনি কে ?
আপনার বউ এর ক্যান্সার ... টাকার যোগার হয় নাই এখনো ... ঠিক বলছি ?
হু

শুনুন মিঃ আসলাম... টাকা দিয়ে কি হবে? তাকে তো আর বাঁচানো যাবেই না। বেহুদা টাকাগুলো নষ্ট ! তাই না ?
আসলাম সাহেব জবাব দিলেন না। মাথা নিচু করে বসে আছেন।
এক কাজ করলে কেমন হয়? বউ এর গলা টিপে ধরুন... খেল খতম !
আসলাম সাহেব এবার চোখ তুলে তাকালেন। তার চোখ টকটকে লাল !
ভোর হবার এখনো অনেক দেরি আছে... কুইক মিঃ আসলাম... কুইক !!

আসলাম সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালেন। কালো আকাশটাতে অন্ধকার ফিকে হয়ে আসছে। তিনি প্রচণ্ড শব্দে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলেন।

চীৎকারের জন্যেই বোধ হয় রুবি উঠে আসল। টালটামাল পায়ে বারান্দায় এসেই আসলাম সাহেব কে পেছন থেকে খামচে ধরল। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল...
কি হয়েছে তোমার ? এমন করছ কেন ?

আসলাম সাহেব স্ত্রীর দিকে ফিরলেন। বারান্দায় আর কেউই নেই। তিনি বুঝতে পারছেন... এতক্ষন যা ভেবেছেন তা সবই কল্পনা। সে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরল। অন্ধকারের কারণেই রুবি তার চোখ দেখতে পেল না।

আসলাম সাহেবের দুটো হাতই রুবির গলায়... রুবি চোখে ভাষাহীন দৃষ্টি... চারিদিক নিস্তব্ধ ! শুধু কোত্থেকে যেন পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ আসছে। ভোর হচ্ছে...তবু অন্ধকার কাটছে না। অন্ধকার বরং আরেকটু গাঢ় হচ্ছে। পরিবেশে কেমন যেন গুমোট অস্থিরতা !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর চেতনা জাগানিয়া একটি গল্প । ধন্যবাদ ।।
সূর্য ভদ্র সচেতন মানুষ গুলোর এই এক সমস্যা অর্থাভাবে সবসময় নেতিবাচক হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইগোতে ভুগে থাকেন। বিষাদময় সুন্দর গল্প ভালো লাগলো।
ঠিক তাই... ধন্যবাদ ভাই...
জাকিয়া জেসমিন যূথী তিনি বুঝতে পারছেন... এতক্ষন যা ভেবেছেন তা সবই কল্পনা। সে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরল। অন্ধকারের কারণেই রুবি তার চোখ দেখতে পেল না। শেষে এসে "তিনি" আবার "সে" এটা একটা মিসটেক। বাকি সবদিক থেকে বেশ সুন্দর কাহিণী। নতুনত্ব। গল্প কাহিণী নির্বাচনে দক্ষতার পরিচয় পেলাম। শুভকামনা রইলো।
ভুল ধরিয়ে দেবার জন্যে এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ...
তাপসকিরণ রায় গল্পের কাহিনী ভাল লেগেছে-এমনটাও হয়--আসলামকে অনেকটা বিকারগ্রস্ত মনে হল--রাত ভর জাগা,স্ত্রী মৃত্যু পথের যাত্রী,খরচের বড় বোঝা--জাবতীয় কারণে মনের ভারসাম্য তিনি হারিয়ে থাকবেন।লেখাটি ভাল লেগেছে,ভাই!
এশরার লতিফ খুব বিষাদময় গল্প। আসলামের কাজ সমর্থন করছি না। কিন্তু সে তো ওই মুহূর্তে চন্দ্রাহত।
কত কাজ আছে অনিচ্ছায় করে ফেলতে হয়। কি করছি আমরা নিজেরাও জানি না। তবু করি... ধন্যবাদ ভাই...

২৪ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪