মধু ডাকাত

ভোর (মে ২০১৩)

এনামুল হক টগর
  • 0
মানুষের জীবনের ভেতর আর একটা জীবন্ত মানুষ হেঁটে যায়। নিজে নিজে কথা বলে! দূরবর্তী ফসলের মাঠ, বিধ্বস্ত নগর, নদী আর পাহাড় দেখে। এক প্রতারকের ভেতর মধু ডাকাত জেগে থাকে। ভালো নাম সৈকত লিটন মধু। প্রতারক বলে সবাই তাকে মধু ডাকাত বলে ডাকে। পেশায় সে শিক্ষক।
১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লিটল ম্যাগাজিন উৎসব হবে। শীর্ষ দুইজন লেখককে পঁচিশ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
মধু ডাকাত পাবনা এসেছে লেখক সাইদের খোঁজে। সাইদ নিউ মার্কেটে বসে চা খাচ্ছে এমন সময় মধু ডাকাতের সাথে তার দেখা। মধু ডাকাত সাইদকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।
সাইদ বুঝতে পারে না কি হয়েছে। সাইদ ভাই, সাইদ ভাই বলে ডাকতে থাকে । মধু ডাকাত বলে আপনি শ্রেষ্ঠ লেখক নির্বাচিত হয়েছেন। আর সাথে একটি ক্রেস্ট এবং পঁচিশ হাজার টাকা পাবেন। সাইদের তৃষিত বেদনার হৃদয়ে কিছুটা শান্তির বাতাস এসে লাগে। বিস্মিত উল্লাসের আনন্দ, কাউকে সে বুঝতে দিলনা। অতৃপ্তির রাজ্যে বীজের নতুন অঙ্কুর প্রশমিত পেয়ালাকে ভরে দিল।
সাইদ মনে মনে ভাবলো দীর্ঘ দিন ভালো কিছু খাইনা। সন্তানকে ভালো জামা-কাপড় দিতে পারিনা। কয়েক দিন আগে ছেলে পল্টু তার কাছ থেকে বার্গার খেতে চেয়ে ছিল টাকার অভাবে কিনে দিতে পারেনি। এবার টাকা পেলে সে নিজেও ভালো কিছু খাবে, সন্তানকে জামা কাপড় কিনে দেবে সাথে একটি বার্গার। ছেলের জন্য আনবে।
তার উপলধ্বির ভাগ্য যেন আজ জেগে উঠেছে। অন্তরের গোপন সৌন্দর্য আলো ছড়াচ্ছে। সাইদ, সৈকত লিটন মধুর দিকে নীরবে তাকিয়ে বললো ভালো আছেন। আমার জন্য আপনি এতোটা ভাবেন। মধু ডাকাত বললো ভাববো না মানে ? আপনার সুপারিশের জন্য আমার চাকুরীর প্রমোশন হয়েছে আর আমি আপনার কথা ভাববো না। আমি তো অই পুরুষ্কার কমিটির সদস্য। আমার সুপারিশের কারণেই তো আপনাকে পুরুষ্কার দেবে।
সাইদ বললো আপনাকে ধন্যবাদ
মধু ডাকাত বললো তবে আসছেন তো পুরস্কার নিতে ? সাইদ বললো অবশ্যই আসবো। আপনি তো আমার সংসারের বিষয় জানেন। আজ সকালেও ঘরে খাওয়ার ছিলনা। ছেলেটি না খেয়ে স্কুলে গেছে। কয়েক বছর ধরে দুইট পুরনো শাড়ি সেলাই করে স্ত্রী পড়ছে। আর আমি টাকা নিতে যাবো না।
এই ভাবে পুরস্কারের মাধ্যমে টাকা আসলে তবেই আমার পরিবার আর আমি পেট ভরে খেতে পারবো তারপর লিখতে পারবো।
কথাগুলো বলতে বলতে সাইদ বলে মধু ভাই চা খান। মধু ডাকাত বললো কিছুক্ষণ আগেই চা খেয়েছি এখন আর চা খাবো না।
এই বলে মধু ডাকাত বললো কিছুক্ষণের মধ্যে আমার বাস ছেড়ে যাবে, আপনি ঠিক সময়মত মতো রাজশাহীতে আসবেন কিন্তু। মধুর কথা শেষ হলে সাইদ বাড়ির পথে হাঁটতে থাকে আর ভাবতে থাকে, যে দোকানদার কয়েক দিন হলো আমাকে আর বাঁকীতে চাউল ডাউল ময়দা মসলা কিছুই দেয় না।
আজ দোকানদারকে টাকার কথা খুলে বলবো টাকার পাওয়ার কথা শুনলে আবশ্যই দোকানদার বাঁকী দেবে। চিন্তার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে সাইদ আকাশের দিকে তাকায় এবং দেখে আসমান এক অসীমের মধ্যে খেলা করছে যার অন্ধকারে ক্রোধ শক্তি ধ্বংসের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
ক্ষণস্থায়ী জীবন অতীতের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। রঙধনু স্বর্গ থেকে নতুন ভোর বেলা সাইদকে ডাকছে। মুহুর্তে সাইদের চোখে অশ্র“ বর্ষণ অশোভনীয় করে তুলেছে। তারপর সাইদ মাটির দিকে তাকায় আর পুনরায় হেঁটে যায় বাড়ির দিকে। দোকানদার টাকার জন্য সাইদের বাড়িতে এসেছে। সাইদ তাকে বুঝিয়ে বলে- ছেলেটা ভালো বলে আবার সে দোকানে ফিরে যায়।
কয়েক দিন পরে সাইদ, সৈকত লিটন মধুকে ফোন করে বললো ভাই আমার পুরস্কারের খবর কি ? সব ঠিক আছে তো ? মধু ডাকাত বললো- বলেন কি ? আমি এই পুরস্কার কমিটির সদস্য আর আপনার খবর ঠিক থাকবে না অবশ্যই ঠিক থাকবে।
আগামী ১৩ মার্চ বিকেলে আপনার পুরুষ্কার দেওয়া হবে। সাইদের বুকে আরো বেশী সাহস আসলো। এভাবে দিন যেতে যেতে সময় ফুরালো আগামীকাল ১৩ মার্চ সাইদ রাজশাহী যাবে পুরস্কার নিতে।
দেশের অবস্থা ভালো না। তাই মধু ডাকাত জাহিদ আর শফিককে পাঠিয়েছে সাইদকে সাথে নিয়ে যেতে। রাত্রির ট্রেনে রাজশাহী যেতে হবে সকাল আটটা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে এবং পরের দিন ১৪ মার্চ বিকেলে সাইদকে পুরুষ্কার দেওয়া হবে।
সাইদ দেরী না করে দোকানদার ভাইকে বুঝিয়ে এক হাজার টাকা নেয় এবং এই টাকা আগামী ১৪ মার্চ বিকেলে এসে তাকে এই এক হাজার টাকার সাথে আরো চব্বিশ হাজার টাকার লোন পরিশোধ করবে।
সাইদ, শফিক আর জাহিদ সন্ধ্যায় চাটমোহর ষ্টেশনে গিয়ে পৌছায়। সময় মতো ট্রেন ছেড়ে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ঈশ্বরদী ষ্টেশনে গিয়ে পৌছায়। ঈশ্বরদী ষ্টেশনে হতে ট্রেন গাড়ী একঘন্টা দেরীতে ছাড়বে জানতে পারলে সাইদ শফিক জাহিদ শিল্পি সেতু আর নীলাঞ্জনা নাস্তার জন্য নেমে হোটেলে যায়।
বিস্ময় ভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্রেনটি ছেড়ে গেল। ফলে ট্রেনে উঠতে সবাই ব্যর্থ হয়। রাত দশটার দিকে একটি মালগাড়ী আসলে সবাই রাজশাহীর উদ্দ্যেশ্যে উক্ত ট্রেনে উঠে পড়ে। আস্তে আস্তে মালগাড়ী যেতে থাকে। রাত বারটার দিকে আব্দুলপুর ষ্টেশনে পৌছায়। এমন সময় ইদ্রিস সাইদকে ফোন করলো কতদূর। সাইদ বললো প্রথম ট্রেনে যেতে ব্যর্থ হয়েছি, পরে একটি মালগাড়ীতে উঠেছি।
ইদ্রিস বলল কি মালগাড়ীতে উঠেছেন যদি প্রসাব পায়খানার দরকার হয় তবে কি করবেন। সাইদ বললো প্রচন্ড প্রসাব পেয়েছে কি করবো বুঝতে পারছিনা। ইদ্রিস বললো জানালা দিয়ে সেরে নিন।
ধীরে ধীরে রাত শেষ হতে লাগলো সাইদ তার দল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ষ্টেশনে নামলো। শেষ রাতের নির্মল বাতাস সবাইকে মুগ্ধ করলো। আলোর শিখার মতো জ্বল জ্বল নক্ষত্রগুলো সূর্যের আভায় সাদা হয়ে আসমানে মিশে যেতে লাগলো। বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ থেকে আযানের পবিত্র সুর ভেসে আসতে লাগলো।
সাইদসহ সবাই জুবেরি হলে গিয়ে উঠলো এবং হাত মুখ ধুয়ে কিছুটা বিশ্রাম করে নাস্তা শেষ করলো। তারপর প্যারিস রোডের পাশে শহীদুল্লাহহলের সামনে লিটল ম্যাগাজিনের মেলায় গিয়ে অন্যান্য সবার সাথে স্বাক্ষাত করলো। এক পর্যায়ে মধু ডাকাতের সাথে দেখা হলো। মধু ডাকাত দৌড়ে এসে সাইদকে জড়িয়ে ধরে এবং বলে ভালো আছেন ? সাইদ বলে বেশ ভালো পুরুষ্কারের সাথে টাকাটা পেলে আরো ভালো থাকবো।
ঢাকা থেকে কবি নার্গিস এসেছে সাইদের সাথে সময় দিতে। কবিতা শুনাচ্ছে সাইদকে। নার্গিসের কবিতা শুনে সে মুগ্ধ হয়। সারাদিন ঘুরে রাতে সে জুবেরিতে বিশ্রামের জন্য যায় এবং খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুমের ভেতর এক দুঃস্বপ্ন তাকে ডাকে। বন্দী খাঁচার ভেতর মানুষের বিবেক রঙ বদলাচ্ছে। আর সে প্রতিবিম্বের ভেতর সাইদ নিজের ছবি দেখছে ! সভ্যতার আঁধার থেকে এক শিকারী ছুটে আসছে গরীবের ধন কেড়ে নিতে।
শোভন উল্লাসে সুন্দরী রমনীরা মস্তিষ্কের দর্শন দিয়ে শিল্পের ছবি আঁকছে। স্বপ্নের রাত শেষে বিশ্ববিদ্যালয় জেগে উঠলো। আজ নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে পুরষ্কার দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সাইদকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সাইদের পুর্বে একটি বই উৎসর্গ করা নিয়ে।
মধু ডাকাত সাইদের রাজনীতির বিষয় নিয়ে গোপনে লিটল ম্যাগাজিন মেলা পুরুষ্কার বোর্ডকে জানায়।
এতে সবাই বিষণœ হয় যে সাইদকে নিয়ে, মধু ডাকাত গর্ব করেছিল সেই সাইদ যেন পুরষ্কার না পায় তার চুড়ান্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। মধু ডাকাত সাইদকে কিছু বুঝতে দিলনা। কিন্তু সাইদের বিবেকের ভেতর এক অদৃশ্য কালো রেখা উদগ্রীব করে তুললো। বিবেক সাইদকে মনে করিয়ে দিলো কিছু না কিছু হয়েছে।
ঘাতকের উল্লাসের ভেতর নিষ্ঠুর গৌরবের শাসক রাজমুকুট থেকে ধ্বংসের সংঘাত দিল। অবিশ্বাসী এক ক্রোধের ক্রুশ গভীর যন্ত্রনাকে ক্ষত বিক্ষত করলো। পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছে।
কমিটির সদস্য মামুন সাহেব রাগ করে বের হয়ে গেলো। সাইদকে বলে গেলো সব দুই নম্বর দিয়ে ভরা আমি চলে গেলাম। মেলায় যারা অংশ গ্রহণ করেছে তাদের সবাইকে কাঠের বাঁকানো ক্রেষ্ট দিল সাইদকেও দিল। পরবর্তীতে পুরুষ্কারের জন্য শীর্ষ লেখকের নাম ঘোষণা করে আর নাম ঘোষনার সাথে সাথে নতুন ক্রেষ্ট ও টাকা দেয়। নাম ডাকা শুরু হলে সাইদ দাঁড়িয়ে পড়ে এই বুঝি আমার নাম ডাকবে কিন্তু ডাকেনা।
অন্য লেখকের নাম ডাকে তখন সাইদ বসে পড়ে।
আবার নাম ডাকা শুরু হলে সাইদ উঠে দাঁড়ায় এই বুঝি আমার নাম ডাকা হবে কিন্তু তখনও তার নাম ডাকে না। বিস্ময় জগত বিস্ময় মানুষ আর তার কর্ম। চিন্তার গভীর দূরবর্তী থেকে করুণার দুঃখ এসে ভালোবাসাকে আঘাত করে।
সাইদ উঠে দাঁড়িয়েছে তার নামে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। ছেঁড়া বেহালার মতো তার শরীরটা কাঁপছে এক কঠিন বাস্তবতার সময় তার সামনে। অপরিপক্ক চিন্তা তার প্রত্যাশাকে ভেঙে দিয়েছে ছন্দহীন সঙ্গীতের মতো সুরহারা অদ্ভূত এক অন্তর। সাইদ ষ্টেশনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে সামনে দুখিনী রাত নতুন ভোরকে জাগিয়ে তুলবে অহংকার ভরা সূর্যের তীক্ষè আলো দিয়ে।
দূর-দৃষ্টিজাত মৌলিক চিন্তা দিয়ে ভবিষ্যতকে তাকিয়ে দেখছে সাইদ। ষ্টেশনে গাড়ী এসেছে। সাইদ গাড়ীতে উঠতেই মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। ছেলে পল্টু ফোন করেছে। বাবা বার্গার কিনেছো। সাইদ বললো বাবা আমি বাড়িতে ফিরে আসছি। বাবার এ রকম কম্পিত কন্ঠ পল্টু কোনদিন শুনেনি। তারপর আশায় জেগে আছে একটি বার্গার নিয়ে বাবা হয়তো বাড়িতে ফিরবে।
ষ্টেশন থেকে গাড়ী হুইসিল দিয়ে চলতে আরম্ভ করলো। সাইদ চুপচাপ সিটে বসে আছে। আজ তার দলের কেউ তার সাথে যাচ্ছে না। সাইদ পুরুষ্কার না পাওয়ায় যার যার মতো ইচ্ছাকৃত পথে সবাই চলে যাচ্ছে।
গাড়ীর ধস ধস শব্দে চলমান গতির সাথে পৃথিবী ক্রমেই আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে। শ্বেতশুভ্র নিষ্পাপ ফুলে নীচে কাঁটাগুলো তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার আগুন জ্বালিয়ে। এক দুঃখ ভরা স্মৃতির শহর পেছনে ফেলে সাইদ চলে যাচ্ছে, বেদনার ছিন্ন ভিন্ন শরীর নিয়ে।
তার আতœার ভেতর এক বহমান কান্নার ছোট নদী তাকে ডাকছে। যৌবনের ব্যাকুলতা আজ হারিয়ে গেছে। ক্রমেই আঁধারের সাথে সে ট্রেন গাড়ীর ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে এবং স্বপ্নের ভেতর আরবের এক বিখ্যাত গায়কের জীবনকথা মনে পড়ে।
গায়ক ছোট বেলা থেকে ভালো গান গাইতো এবং যৌবনে সে বিখ্যাত গায়ক হয়ে ওঠেছিল। গান গেয়ে যে অর্থ উপার্জন করতো যা দিয়ে সে তার জীবন ও পরিবার চালাতো। ধীরে ধীরে গায়ক বৃদ্ধ হতে লাগলো। তখন তার গান আর কেউ শুনতে চায়না। সে কারণে তার উপার্জন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেলো এবং সে-ও তার পরিবার অনাহারে দিন কাটাতে লাগলো।
এভাবে গায়ক জীবনের কাছে হেরে যেতে লাগলো। জীবন ও জীবনের ঐশ্বর্যের পুরস্কার তাকে দুঃখ দিতে লাগলো। হৃদয় থেকে আনন্দ মুছে যেতে লাগলো। তার সত্তার ভেতর বেদনার অশ্র“দানা বাঁধলো। যে সুর মানুষের আতœাকে ব্যাকুল করেছে তা আজ সবই ব্যর্থ হয়ে গেলো।
তাই গায়ক ভাবলো এখন থেকে সে মানুষকে আর গান শুনাবে না। গভীর রাতে সে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে আতœার দরদ দিয়ে গান শুনাবে। মৃত্যুকে তো আর কেউ ধরে রাখতে পারবেনা।
এখন দুঃখ আর আনন্দ উভ্য়ই আমাকে সমান ক্লান্ত করে। রাত গভীর হতে থাকে গায়ক দূরপথে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে এক নির্জন কবরস্থানে গিয়ে পৌছায়। এখন গভীর রাত পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়েছে। এক শূণ্য স্থির অন্বেষণে। পাশাপশি পূর্ব পুরুষরা ঘুমিয়ে আছে।
আল্লাহর সাধনায় গায়ক গান শুরু করলো। তার নিরন্তর হৃদয়ের ভেতর থেকে প্রভুর প্রেম জেগে উঠছে, অবগুষ্ঠণ রহস্য উম্মোচন করে। মৃত্যু দিয়ে প্রজা যেন মহারাজার সাথে মিলন ঘটাবে প্রজ্ঞার এক উৎফুল্ল অন্তর দিয়ে।
হাওয়ার ভেতর সে খেলা করে নিগুঢ় গুপ্ত প্রেমে। নীরব নদী পাহাড় মাঠ পেরিয়ে আল্লাহ যেন শুনতে পেল তার সাধনার গান। মহাজ্ঞানী ভবিষ্যত দ্রষ্টা গায়কের প্রতি সন্তুষ্ট হলো এবং তিনি তার অনুগ্রহ দান করলো এবং সাথে সাথে হযরত ওমর (রাঃ) গভীর রাতে অই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় সে গায়ককে দেখতে পায় এবং তার কাছে এগিয়ে যায়।
গায়ক হযরত ওমর (রাঃ)কে সব খুলে বললেন এবং গায়কের কথা গুলো শুনে তাকে বায়তুলমাল থেকে প্রতিমাসে জীবন যাপনের জন্য ভাতাদির ব্যবস্থা করে দিলেন। রাতে ট্রেন গাড়ী এসে ঈশ্বরদী ষ্টেশনে দাঁড়ালো। ততক্ষণে সাইদের ঘুম ভেঙে গেছে। ট্রেন গাড়ী থেকে নেমে সে বাসে উঠে পাবনা শহরে এসে পৌছায়।
শহরের খাওয়ার দোকানগুলো তখনও খোলা ছিল। অনেক মানুষ তাদের কর্ম শেষ করে সন্তানের জন্য বার্গার, বিস্কুটসহ অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ খাওয়ার দোকান দেখে সাইদের বার্গারের কথা মনে পড়ে গেলো। পল্টু তার প্রিয় সন্তান সে বাবার কাছ থেকে বার্গার খেতে চেয়েছিল। কিন্তু সাইদের পকেটে বার্গার ক্রয়ের মতো টাকা নেই।
রাত গভীর হওয়ায় পল্টু মায়ের বুকের ভেতর আবছা ঘুমে নীরব নিশ্চুপ হয়ে যায়। মা পল্টুকে বলছে তোর বাবা অবশ্যই তোর জন্য বার্গার নিয়ে আসবে। আমার অনেক দিনের পুরাতন কাপড়গুলো পরিবর্তন হবে। আগামী কাল দোকানদারের বাকী টাকা শোধ হয়ে যাবে। দোকান থেকে আবার নতুন করে আমাদের বাকী দেবে। আমরা বেশ কয়েক মাস আরামে খেতে পারবো।
কথাগুলো বলতে বলতে মা আর সন্তান ঘুমিয়ে পড়ে। চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার। নৈঃশব্দের ভেতর জীবন আর মৃত্যুরা খেলা করছে। প্রেমের পূর্ণতা নিয়ে উপর থেকে কে যেন ডাকছে। তাই সসীম ছুটে যাচ্ছে অসীমের পানে। মধুর আহার্য নিদ্রাকে ভেঙে! সাইদ পথ ভুলে নিজের বাড়ি ছেড়ে অনেক দূর চলে গেছে। বুঝতে পারেনি কতদূর গেলে সে বাড়ি পাবে। এক সময় পদ্মা নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়ালে সাইদ বুঝতে পারে অনেক পথ পেরিয়ে এসেছি, আমাকে ফিরে যেতে হবে।
আঁধার শেষে আস্তে আস্তে প্রভাত জেগে ওঠছে অসুন্দর স্বপ্নগুলো সাইদকে জাড়িয়ে ধরে, জন্ম জন্মান্তের এক তৃষ্ণাতুর ক্ষুধা। ধীরে ধীরে সাইদ বাড়ির গেটে গিয়ে দাঁড়ায় স্ত্রী আর সন্তান তখনো অনাহারী শরীর নিয়ে অস্পষ্ট ঘুমিয়ে আছে।
অন্ধত্বের মধ্যে থেকে দিনের দুঃখ আর ক্ষুধাগুলো জেগে উঠছে, বধির চেতনাহীন অনুশোচনায়। সাইদ ডাকছে পল্টু পল্টু, কিন্তু পল্টু ঘুমিয়ে আছে। এক সময় বাবার কথায় পল্টুর ঘুম ভেঙে যায়। পল্টু বলে বাবা বাবা বার্গার এনেছো।
সাইদের সামনে নির্বাক যুক্তি শেষ সামনে এক বাস্তব। ভালোবাসা মমতা জেগে উঠলো। সর্বময় সন্তানের প্রতি আর্শিবাদের হাত তুলতেই সাইদের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে অশ্র“ গড়িয়ে পড়লো। দূর থেকে সন্তান বার্গারের আশায় ছুটে আসছে বাবা বাবা, সাইদ সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বললো। মানুষের জন্য লিখে লাভ কি বাবা ? দেশের জন্য সমাজের জন্য আর স্বাধীনতার জন্য অনেক লিখেছি কিন্তু দুবেলা পেট ভরে ভাত জোটেনী। যদি বেঁচে থাকি তবে এখন থেকে আল্লাহর জন্য লিখবো। যিনি আগে পিঁছে মানুষের রেজেক পৌঁছে দেয়। একদিন আমি তুমি আর তোমার মা যেখানে ফিরে যাবো। যেখানে আল্লাহর ফেরেস্তা আমাদের জন্য অনেক বার্গার হাতে নিয়ে অপেক্ষা করবে। কথাগুলো বলতে বলতে সাইদ সন্তানকে জড়িয়ে ধরলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য লেখরাই শুধু নয় সমাজে সহজ সরল সব মানুষরাই এভাবে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত, এ ধারাটা হয়তো ধ্বংসের আগ পর্যন্তই থেকে যাবে। ভালো লাগলো গল্প।
এশরার লতিফ প্রতিভাবান মানুষেরা সমাজের অন্ত:সারশূন্য ক্ষমতাবানদের দ্বারা কিভাবে হেয় হতে পারেন তার একটি রূপ দেখলাম এই গল্পে। ভালো লাগলো।
তাপসকিরণ রায় বাস্তবের ছোঁয়ায় লেখা সাবলীল একটি গল্প।ভালো লাগলো লেখাটি।
ছালেক আহমদ শায়েস্থা । অপরিপক্ক চিন্তা তার প্রত্যাশাকে ভেঙে দিয়েছে ছন্দহীন সঙ্গীতের মতো সুরহারা অদ্ভূত এক অন্তর। ভাল লিখেছেন ভাই, ভোট করে গেলাম।
রফিক আল জায়েদ বাস্তব একটি প্রতিচ্ছবি অঙ্কিত হয়েছে গল্পে। ভাল লাগল।

২১ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৯৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী