রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারি

বাংলা ভাষা (ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

এনামুল হক টগর
  • ৫৯
আমার মায়ের পবিত্র রক্তের নিগুঢ় মর্মভেদ থেকে
এক মমতাময়ী ভালোবাসার ধ্বনি
ভেসে আসতো আমার কানে,
সে এক মধুময় বর্ণমালার শব্দ।
আমি তখনও পৃথিবীর মাটিতে ভূমিষ্ঠ হইনি,
লুকিয়ে লুকিয়ে মায়ের পবিত্র জঠর থেকে
সেই সুন্দরের গান শুনতাম।
রফিক, শফিক, সালাম, বরকত আর জব্বারের সুরে
আরো আরো অনেক ভাষা শহীদের সুরে,
গোপনে তাদের সাথে আমি কথা বলতাম
আর বাংলা বাংলা বলে মাকে ডাকতাম
তারপর আমি এই প্রিয় দেশের মাটিতে ভূমিষ্ঠ হলাম।
আমার বিবেকবোধ সুখ-দুঃখ গুলো
বিকশিত চেতনায় জাগরণ হতে লাগলো,
আমি স্বদেশের কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম
আমার হৃদপিন্ডের গভীরে বেদনার রক্ত ঝরলো
আমার অন্তর্গত দেহের জমিনে মাটি, অরণ্য
পশু, পাখি নদী মাঠ কেঁদে উঠলো
বিপুল প্রেম দুঃখ বিরহ আর তীব্র যন্ত্রনা।
শুভ্র শেফালীর গন্ধ থেকে তৃষ্ণারা আমাকে ডাকলো
তারপর আমার স্বপ্ন গুলো ঘুরে ফিওে
সামনের দিকে নতুন করে হাঁটতে লাগলো
ইতিহাসের মানচিত্রে আমাদের আকাঙ্খা গুলো সাথে নিয়ে।
শ্রেণীহীন ভেদাভেদ মুক্ত বোধ আর আঁধারের সাথে
আমরা বিক্ষোভে জেগে উঠলাম।
শ্রমময় শ্রমজীবী মহাবিপ্লবের এই দেশে
খুলে গেলো নিভৃত সচেতনতার নতুন দ্বার
দুঃখ গুলো ভেঙে চুরে সুখের মিমাংসায় রক্তাক্ত হলো।
রফিক চন্দ্র সূর্য নক্ষত্রের কাছে কথা দিয়েছিল
শফিক সকাল দুপুর আর রাত্রির কাছে কথা দিয়েছিল
বরকত নতুন শিশু আর প্রবীণ বৃদ্ধের কাছে কথা দিয়েছিল
জব্বার মানুষের বিবেক বোধ জাতি আর
মাটির কাছে কথা দিয়েছিল
কৃষ্ণচুড়া রজনীগন্ধা টগর বকুল আর
অসংখ্য ফুলের কাছে কথা দিয়েছিল আরো
আরো অনেক অনেক ভাষা শহীদেরা।
আমাদের ভাষা হবে বাংলা, আমাদের ভাষা হবে বাংলা,
আমরা বাংলা ভাষা চাই, আমরা বাংলা ভাষা চাই,
তোমরা শিশু কিশোর তরুণ তরুণী বৃদ্ধরা
ভাষার পক্ষে ঘুরে দাঁড়াও।
আমরাও ঘুরে দাঁড়াবো তোমাদের সাথে
যারা আমাদের ভাষাকে দিতে চায়নি
যারা আমাদের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল
সেই শক্র আর শাসকের বিরুদ্ধে।
তারপর আমরা যতটা পারি দেশের জন্য কল্যাণ দেবো
অকল্যাণকে সরিয়ে সরিয়ে হেঁটে যাবো
দুঃখ কষ্ট বেদনা ভাঙা এক নতুন পথে
অভিজ্ঞ ফসল ফলানো সাহসী কিষাণের সাথে
আলো আর আঁধার উভয়কে বুকে নিয়ে
জীবনের শোক তাপ অসংখ্য বেদনা ভুলে
মাটির ক্লান্ত আঁধার ভেদ করে
নতুন শেকড়ে সঞ্চিত আলো দেবো।
জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
যারা হারিয়ে যায় আর ফিরে আসেনা।
সময়ে উদাস নদী দুই কুল ভেঙে হেঁটে যায়,
পুরাতন পৃথিবীর আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে
তাদের গভীর প্রেম আমাদের দেহে লুকিয়ে থাকে
কৃষ্ণচুড়ার জ্যোতির্ময় এক রঙিন আলো।
যার ভালোবাসায় কেঁদে ওঠে পুষ্পের হৃদয়
তার সাথে বেদনার্ত ভাষা শহীদেরা আস্তে আস্তে জেগে ওঠে
সূর্য দীঘল নদীর মায়াবী তীরে
পুনরায় বিপ্লবের নতুন গানে।
অবেলার স্বপ্নের লালিত নিবিড় বাসনার কালো আঁধারকে
ধীরে ধীরে ভেঙে দেয়
তারপর গোপন দহনে ক্লান্ত আলো ছড়ায়
মাঝরাতে ঘুমহীন তরুণ তরুণীরা জেগে ওঠে
তাদের শরীরে জ্বলে আগুন বুনো পাখির উত্তাপ
তখন কারা যেন দুয়ার খুলে ডাকে মা জননী,মা জননী।
ভাষা শহীদের মৃত্যুঞ্জয়ী চোখ আবার ফিরে তাকায়
স্বপ্ন গুলো থমকে দাঁড়ায় নিবিড় নিশিথ রাতে
কষ্টের দহন জ্বালা, জ্বলে ওঠে হৃদয় পটে
আলোর ঠিকানা খোঁজে ফুলের সৌরভ গন্ধে,
এক সময় মুখোশের গভীরে বিবর্ণ শাসক
নিরপরাধ জনতার শরীরে বিষ ঢেলে দেয়
তখন গতিশীল পথ কেঁদে ওঠে দৃষ্টির অন্তরালে
তারপর আগুনে জ্বলে পুড়ে যায়
ভন্ড অভিজাত আমলার অহংকার।
আমাদের সামনের স্বপ্ন আর
আগামী দিন গুলো দাউ দাউ করে।
মানুষের আশার সংসার আর
সাধগুলো পুনরায় ভেঙে যায়
লাল কৃষ্ণচুড়ার গান গেয়ে গেয়ে।
তবুও সাহসী বালক মিছিলে হেঁটে যায়
৮ই ফালগুনে ঝরে যাওয়া নক্ষত্র গুলোর সাথে
জ্বলে ওঠে আলোকিত স্মৃতি সৌধ মিনার
কালো ব্যাজ জাতির বিশাল নিরবতা।
এক সময় দেহের ভাঁজে ভাঁজে আঁধার ভাঙে
দুচোখ থেকে রৌদ্রের আলো বিকাশিত হয়।
তরুণ উল্লাসে ফেটে পড়া যৌবনের গানে
যে পাখি গুলো সারা দিন ডেকে ডেকে
সন্ধ্যায় শিকারীর বুলেটে রক্তাক্ত হলো
তাদের দানে গড়া এই মাতৃত্বের অমূল্য ভাষা
সমুদ্র ঢেউয়ের মতো জনতার বাংলাদেশে ভাসে
দূর দিগন্ত আসমানী রঙের নীচে।
সেই শান্তির সাদা সাদা মেঘ গুলো এখনো ঘুরে বেড়ায়
মাঝে মাঝে গোধুলী সুর্যের আলোতে ওরা লাল হয়ে ওঠে
তখন সমুদ্র গর্জন বাতাসে অশুভ শাসকের শেকড় ভেঙে দেয়
আর জাতিকে ডেকে ডেকে বলে
তোমরা আবার জাগো আবার জাগো
পূর্বাভাস দাও ঘাতকের বিরুদ্ধে
আমরা রফিক আমরা শফিক আমরা জব্বার
আমরা সালাম আমরা বরকত
তোমাদের সাথে আছি তোমাদের সাথে আছি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি ভালো লাগলো|
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
তাপসকিরণ রায় আবেগ প্রবণ কবিতাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো--তবে বড় দীর্ঘ কবিতা।
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মো. ইকবাল হোসেন অনেক লম্বা কবিতা তবু ও ভাল লাগল ।কবিতার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন তোমরা আবার জাগো আবার জাগো....। আবেগপূর্ণ চমৎকার একটা কবিতা। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মিলন বনিক মমতার সমস্ত বোধটুকু দিয়ে লেখা দীর্ঘ কবিতা...ভালো লাগা রেখে গেলাম....শুভ কামনা.....
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ওয়াছিম দুঃখ গুলো ভেঙে চুরে সুখের মিমাংসায় রক্তাক্ত হলো। লাইন টা ভালো লাগলো। কবিতা যখন শুরু হয়েছে তখন কবি মায়ের গর্ভে...... কিন্তু শেষটায় তার রেশটা থাকলো না, হয়তো বড় কবিতা বলে। ভালো হইছে কবিতা খানি।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# অনেক বড় এবং সুন্দর কবিতা। বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
এফ, আই , জুয়েল # বিরাট । বিরাট । বিশাল ভাবনার অনেক লম্বা একটি কবিতা । অনেক সুন্দর । = ৫ দিলাম ।।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

২১ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৯৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪