তুষানল ও একটি মেয়ের কালো ছায়া

ঈর্ষা (জানুয়ারী ২০১৩)

তাপসকিরণ রায়
  • ২৩
  • ২৭
(ঈর্ষার বিষয় ভিত্তিক ভৌতিক গল্প)

থমথমে রাত নেমে এলো।অরুণা ও জটিলদের আলোকিত ঘরের চার পাশটা যেন আলোর পিপাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!চৌরাস্তার কোনে ওদের তিনতলা বাড়িটা আজ স্তব্ধতা নিয়ে পড়ে আছে।
অরুণার মন মাঝে মাঝে ভয়ে শিউরে শিউরে উঠছিল।এই তো আজ সকালের ঘটনা।মহুয়ার দেহ রাস্তার পাশটায় মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল!রক্তে চার দিক ভেসে যাচ্ছিল।আশপাশের লোকদের ভিড় জমে গিয়েছিল।মহুয়ার উবুড় হয়ে পড়ে থাকা মুখ,মাথা ফেটে গিয়ে--মুখটা রক্ত জমাট মাংস পিণ্ডের মত মনে হচ্ছিল।মহুয়ার চেহারা দেখা মাত্র অরুণা প্রথমে ভয়ার্ত চীৎকার দিয়ে উঠেছিল--তারপর অনেক অনেক কেঁদেছে সে।
আজের রাত তাই বড় থমথমে রাত।মহুয়া আত্মহত্যা করেছে--ওদের ছাদ থেকেই কাল রাতে ও নীচে ঝাঁপ দিয়ে ছিল নিশ্চয়!ওর দেহ প্রায় পঞ্চাশ ফুট নীচে রাস্তায় গিয়ে পড়েছিল।
রাত ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।জটিলের মনেও ভয় লেগে ছিল--শত হলেও অতৃপ্ত আত্মা।এমনি স্বাভাবিক মৃত্যুর বাড়িতেও দু চার দিন নিথর নিস্তব্ধতা ঘিরে থাকে।
আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল অরুণা ও জটিল।অফিস যাওয়া হয় নি।নানান ঝামেলা--থানা-পুলিশ,মর্গ,এ সব নিয়ে দিন ভর ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ওদের।রাতে আজ বোধ হয় নীরবতার ভাব ভাঙতেই ওরা কিছুটা সরব হবার চেষ্টা করছিল।এক সময় দৈহিক ইচ্ছেগুলি ওদের মাথা চাড়া দিয়ে উঠে আসলো।জটিল অরুণাকে কাছে টেনে চুমু খাচ্ছিল--দাম্পত্য জীবনের রাতের খেলার শুরুর পর্ব শুরু হতে চলেছিল।ঠিক এমনি সময়,খটাস,করে একটা আওয়াজ হল,স্তব্ধতা ভেঙ্গে সে আওয়াজ উভয়ের কানকে হঠাৎ সজাগ করে দিল।অরুণা প্রথমটায় জটিলের কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল,আর পরক্ষণেই ভয়ের মন নিয়ে জটিলকে আঁকড়ে ধরল। জটিলের মনেও ভয় ঢুকে গিয়েছিল--সে নিজেকে সামলে নিয়ে চীৎকার করে বলে উঠলো,কে?কে ওখানে??
অরুণা ভয়ে ভয়ে জানলার দিকে তাকাল,বাইরের জ্বলে থাকা জোরাল আলোটাও মনে হোল বড় ম্লান,আবছা অন্ধকারের মতই আলো ছড়াচ্ছিল--তারপর অরুণা দেখল,হ্যাঁ,সে স্পষ্ট দেখল--কালো,কালো একটা ছায়া জানলা থেকে সরে গেল।ও ভয়ে চাপা স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,কে?জানালার কাছে কে দাঁড়িয়ে?অরুণার কণ্ঠ বড় অস্পষ্ট ও কাটা কাটা লাগছিল--নিঃসন্দেহে এটা ওর ভয়ের কারণেই হবে।জটিল তাকাল জানলার দিকে--আধ ফাঁকা জানলার কপাটের বাইরে ওর মনে হল--কালো একটা ছায়া --যেন কোন নারী মূর্তির ছায়া--চকিতে সরে গেল!...
*** *** ***
এবার কাহিনীর শুরুতে আসা যাকঃ
প্রতিদিনের মত আজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল মহুয়া।অন্য কোন দিকে ওর ভ্রুক্ষেপ নেই।চোখের পলক যেন পড়ছিল না!শরীর ঈষৎ উত্তেজনায় ও শিহরণে ভরে উঠছিল।জালনার যেটুকু ফাঁক ফোঁকর নিয়ে ও তাকিয়ে ছিল সে টুকু দিয়ে তার নজরে আসছিল, ওর শরীর কামনায় শিহরিত হয়ে উঠছিল।
অরুণা দির খোলা খোলা শরীরের নগ্ন প্রদেশের দৃশ্য মহুয়ার চোখের সামনে বারবার নড়ে চড়ে বিভিন্ন মুদ্রায় উজাগর হয়ে যাচ্ছিল।জটিল দার পুরুষোচিত রোমশ দেহ কয়েক বার এপাশ ওপাশ,ওপর নীচে হতে দেখল।এক প্রাপ্ত বয়স্ক চিত্র মহুয়া চোখ ফেড়ে ফেড়ে দেখতে থাকলো।আর তার দেহ ও মনের কোন অন্তঃস্থল থেকে এক পিচ্ছিল ভাবনা ক্রমশ: তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইল--সে সঙ্গে অন্য আর এক দিক থেকে আরও এক ভাবনা ওর দেহকে ধীরে ধীরে কঠোর করে দিতে চাইছিল।না পাওয়ার এক ব্যথা কুণ্ডলী পাকিয়ে ওকে যেন গ্রাস করতে লাগলো!এক সময় ওর সম্বিত ফিরল,বুঝতে পারল ওর এখান থেকে সরে যাবার সময় এসেছে--ঘরের ভিতরের দৃশ্যপট এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। নাটকের উত্তপ্ত দৃশ্য প্রায় সমাপ্ত--এখনি যবনিকার পতন ঘটবে।
জানালার পাশ থেকে সরে গেল মহুয়া।বেশ কিছুটা দূরত্বে গিয়ে নিজের শ্লথ ভাবকে দূর করার চেষ্টা করল।যখন দেহের অস্থিরতা স্বাভাবিকতায় নেমে এলো তখন তার বুকের ঠিক মাঝখানটাতে কেউ যেন তীব্র খোঁচা মারল।ও নিজের মধ্যে থেকেই বুঝতে পারল—হ্যাঁ যেন ধারালো একটা আলপিন তার হৃদপিণ্ডে,খচ করে কেউ ঢুকিয়ে দিল।তীব্র ব্যথা অনুভব করতে লাগলো ও।ওর শরীরে বাইরে থেকে কোন অস্থির,দুর্লক্ষণ প্রকাশ পেল না।হৃদয়ের মধ্যে সেই আলপিনের ক্ষত থেকে দুষ্ট ব্যথা ওর সারা দেহে ক্রমশ: ছড়িয়ে যাচ্ছিল--ভালো ভাবে সে ব্যথা সে অনুভব করতে পারছিল।মুহূর্তের মধ্যে তার মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো।
ঠিক এমনি হয় মহুয়ার--দু তিন দিন পরপর ঠিক সন্ধের পর এমনি সময়টায় এই ব্যথা,এই আলপিন ফোটানোর ব্যথা বুকে বিঁধে যাবার পরই সমস্ত শরীর জুড়ে ছড়িয়ে যেতে থাকে,তারপর ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে!
সে জানলার ফাঁকের দৃশ্য নতুন দেখছে না।অরুণা দির সঙ্গে জটিল দার বিয়ে হবার পর থেকে প্রায়ই এমনি দৃশ্য ও জানলার ফাঁক দিয়ে দেখে আসছে। শুরুতে ওর গায়ে সামান্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়,তার পর বুকে হঠাৎ পিন ফোঁটার যন্ত্রণা--সে যন্ত্রণা সারা গায়ে ছড়িয়ে যায়!মহুয়া জানে না যে এটা ওর কি ধরনের রোগ?কোন মানসিক রোগ নয় তো?ঈর্ষা রাগ মনের মধ্যে পুষে রাখতে রাখতে এমনটা হয় নি তো?এমনি ভাবনার সাথে সাথে ওর শরীর মন তলে তলে কেমন যেন জ্বালা করে উঠলো।চোখ দুটো নিজের অজান্তেই কি জ্বলে উঠলো ওর!
মহুয়ার এখন হঠাৎ মনে পড়ে গেল,ঘরের সব কাজ ওর হয়ে গেছে,ওকে ঘরে যেতে হবে।চারিদিকে সন্ধ্যের অন্ধকার নেমে আসছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সে অরুণা দিকে বলেছে,আমি যাচ্ছি,অরুণা দি!কিন্তু যায় নি।সে জানে এসময় অরুণা দি আর জটিল দার ভাব বিনিময় হয়,ভালোবাসার ভাষা তাদের শরীর থেকে ফুটে উঠতে থাকে!
আসলে মহুয়া অরুণাদের মেডসার্ভেন্ট,আদৌ ঝি চাকর ধরনের নয়,বরং তার চে অনেক উঁচু দরের কিছু!
ঘরের সমস্ত কাজ করে মহুয়া--মাসে সে পাঁচ হাজার টাকা ময়না যে পায়!ওর ঠাটবাট অনেক আলাদা।রোজ পরিষ্কার পরিপাটি সেজে গুজে কাজে আসে।ঘরের এঁটো বাসনকোসন মাজা থেকে শুরু করে রান্নাবান্না,কাপড়চোপড় কাঁচা,শুকনো কাপড় জামা শেষে গোছগাছ করে তুলে রাখা।এ ছাড়া ঘর দোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে রাখা,এমন কি খাটের পাতা বিছানার চাদর বালিশের ওয়ার পাল্টানো থেকে শুরু করে ঘরের দরজা জানালার পর্দাগুলি পাল্টানোও তারই কাজ।
এমনিতে মহুয়া বেশ বিশ্বাসী।আজ সাত বছর ধরে কাজ করছে ও।ঘরের কুটোটাও বলতে গেলে নাড়ে না অরুণা!সে বলতে পারবে না যে মহুয়ার কাজে কোন ত্রুটি আছে,বরং অরুণা সব সময় ওর প্রশংসাই করে।
একে বারে বোন না হলেও মহুয়াকে অনেকটা বোনের মতই দেখে অরুণা।আর মহুয়া?তার মনে সে রকম ভাবনা আসে কৈ?সেও তো তার মতই একটা মেয়ে—অরুণা দি চাইলে তো তাকে আরও স্বচ্ছন্দ দিতে পারত?আর বোন বলে আরও একটু কাছে টেনে নিতে পাড়ত না কি?ও জানে অরুণা আসলে ওকে মনে মনে ঈর্ষা করে!কারণ ওর রূপের কাছে অরুণার রূপ কিছুই নয়।হ্যাঁ,পাশের বাড়ির করুণাও বলেন,তোমাদের দেখলে কেউ বলবে না গো যে তোমরা এক মায়ের পেটের বোন নও!মহুয়া দেখতে শুনতে তো কোন অংশে কম নয়!
আত্মীয় না হলেও অন্তত ওপরে ওপরে এই সাত বছরের মধ্যে উভয়ের মধ্যে অনেক নিকট বন্ধন এসেছে বলা যায়।অনেক সময় তৃতীয় ব্যক্তির ভ্রম হয় যে কে ঘরের মালকিন--অরুণা না মহুয়া--যারা জানে তারা জানে।
মহুয়া ডেকে উঠলো,অরুণা দি কাছে এস তো,তোমার চুল বড় অগোছালো হয়ে গেছে।এই নিয়ে তুমি সারা দিনের অফিস সেরে আসলে?
অরুণা দি আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো,নিজেকে দেখে বলে উঠলো,না,তেমন খারাপ না--তবু তুই যখন বলছিস,বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসলো অরুণা।তার পেছনের টুলেই মহুয়া বসে তার চুল বেঁধে দিতে লাগলো।
মহুয়া দেখেছে অরুণার থেকে সে অনেক বেশী সুন্দরী।ড্রেস ও প্রসাধনের চাকচিক্য বাদ না দিলেও তা অনায়াসেই সব লোকের চোখে ধরা পড়ত।কিন্তু কি হবে তাতে?মহুয়া কোন মত মেট্রিক পাশ করেছে--আর অরুণা সে তো ইঞ্জিনিয়ারিং পাস--কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে নাকি পড়েছে।একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করে।প্রতি মাসে লাখ টাকার মত তার পেমেন্ট!
শিক্ষা আর বাপের পয়সায় সব কিছু হতে পারে,আজ যদি মহুয়ার বাব-মার পয়সা থাকত তবে অরুণার চে আরও আরও ভালো অবস্থা হতে পারত তার!কিন্তু তা হবার নয়--এই মেয়ের অরুণার নোকর হয়েই সারা জীবন কাটাতে হবে।কোথায় যেন মনে মনে ঈর্ষার বীজ বুনে যেতে থাকে মহুয়ার মধ্যে।
তারপর বেশ ক বছর কেটে গেল।মহুয়ার ঈর্ষা ক্রমে ক্রমে জমা হয়ে যেতে থাকলো বুকের গভীরে।সে ভাব আরও বেড়ে গেল যখন এক দিন অরুণা তার অফিসের জটিল দাকে বিয়ে করে নিলো।বিয়ের আগে অনেকবার জটিল এসেছে অরুণার ঘরে—ছেলেটি হ্যান্ডসাম,বেশ চৌকস চেহারার—হাসি খুশি—সহজেই সবাইকে সে আপন করে নিতে পারে।
মহুয়া তলে তলে পরীক্ষা করে নিয়েছিল।না ভালো ছেলে,মহুয়ার ডাকে সারা দেয় নি।এই ত ওদের বিয়ের ক মাস আগের ঘটনা। কিছু কাজে অরুণা কারো ঘরে গিয়ে ছিল।জটিল একলা ছিল ঘরে।মহুয়া হঠাৎ সাপ,সাপ বলে চীৎকার করে উঠেছিল। ছুটে এসেছিল জটিল,মহুয়াকে ভয়ে কুঁকড়ে থাকতে দেখে বলে ছিল, কোথায়, কোথায়,সাপ?
--আমার খুব ভয় করছে,জটিল দা!
মহুয়া ভয়ের ভান করে কাঁদছিল।জটিল তার কাছে যেতেই যেন ভীষণ ভয় পেয়েছে ভান করে সে জটিলকে জড়িয়ে ধরেছিল। হঠাৎ এমনি ঘটে যাবার পর বিহ্বল জটিল নিজেকে যখন ছাড়াতে গেল তখন মহুয়ার ভীষণ রাগ হচ্ছিল।বিনা দ্বিধায় সে জটিলের গালে চুমুর পর চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে ছিল।আজ বলতে পারবে না মহুয়া সে দিন তার ঘাড়ে কোন ভূত চেপে ছিল কি না!
এরপর মহুয়ার রাগ গিয়ে পড়ল অরুণার ওপর--ও যেন মনে মনে জ্বলে পুড়ে যেতে লাগল।
একবার ভেবেও ছিল অরুণার খাবারে সে বিষ মিশিয়ে দেবে—কিন্তু পারে নি!তবে এখন একটা যন্ত্রণা ওকে কুড়ে কুড়ে খায়—যখন বুকের মাঝে পিন ফুটে যাবার মত অনুভব হয় তখন ওর মনে ঈর্ষার সাপ যেন প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে ধরে!অরুণাকে তখনই মেরে ফেলে তার রাজত্ব অধিকার করে নিতে খুব,খুব ইচ্ছে হয় ওর!
জটিলের সব কিছু বুঝতে সামান্য সময় লেগে গিয়েছিল।ও নিজেকে ছাড়াবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।মহুয়া ক্রমশ:পাল্টে যাচ্ছিল--জটিলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে ছিল,আমি তো তোমার শালী হব--আমায় কি তোমার কিছুই দেবার নেই!দিদি থেকে আমি তো অনেক বেশী সুন্দর জটিল দা!
জটিল নিজেকে ঝটকা মেরে মহুয়ার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছিল।তার চোখে মুখে ফুটে উঠে ছিল নিঃস্পৃহ এক ভাবনা।
--তুমি এমনটা তা জানতাম না--ছিঃ ছিঃ, তোমার দিদি জানতে পারলে--
--দিদি জানার আগে আমিও কিন্তু আপনার ব্যাপারে অনেক কিছু বানিয়ে বলে দিতে পারি!উচ্ছল ভাবে হেসে উঠেছিল মহুয়া।তার শরীর দুলে দুলে উঠছিল--চোখের লাল শিরাগুলি জেগে উঠেছিল।অস্থিরতা নিয়ে আবার সে এগিয়ে গেল জটিলের দিকে, আর ওর কিছু বলা কওয়ার আগেই ও বুঝতে পারল বুকের সেই তীব্র ব্যথাটার কথা,ও আঁতকে উঠলো--নিজেই নিজের বুক জাপটে ধরে প্রচণ্ড ব্যথায় মাটিতে বসে গেল।
জটিল সে সব জানতে পারল না--সে মহুয়ার কোন নতুন অভিনয় ভেবে ত্রস্তে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
মাথা টনটন করছিল মহুয়ার--ব্যথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছিল সমস্ত শরীরে--তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক পেয়ালা নীল বিষ--সে বিষের ওপরে ভাসছিল চায়ের প্রলেপ--তারই গভীরে তার মিশিয়ে দেওয়া নীল রঙ্গের ভয়ঙ্কর বিষ।সে নিশ্চয়ই একদিন অরুণাকে মেরে ফেলতে পারবে--নিশ্চয় এক দিন ওই চায়ের বিষ অরুণার মৃত্যুর কারণ ঘটবে।জটিল দাকে যে তার চাই...তার উষ্ণ দেহ সে কোন মতেই পেতে দেবে না অরুণাকে--কিছুতেই না।।এ ধরনের ভাবনাগুলি অনেক দিন ধরেই বাসা বেঁধেছে মহুয়ার বুকের ভেতরে।ও যখন স্বাভাবিক মস্তিষ্কে থাকে তখন বুঝতে পারে এমনটা তার পক্ষে কোন দিনও করা সম্ভব হবে না।
জটিল ভদ্র,শিক্ষিত ছেলে।ও বাপ মা ঘর বাড়ি হারা--একা পড়ে থাকে এক ভাড়া বাড়িতে।সে অরুণার অফিসেই কাজ করে--কোম্পানির জুনিয়র একজিকিউটিভ ম্যানেজার--অরুণা থেকে ও বেশী ময়না পায়।প্রথমে বন্ধুত্ব--তার থেকে ধীরে ধীরে ভালবাসা গড়ে উঠেছে উভয়ের মধ্যে।ওরা ঠিক করেছে শিগগিরি বিয়ে করবে--রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করবে।
সে দিনের মহুয়ার ঘটনাটা বলবে বলবে করেও জটিল অরুণাকে বলতে পারে নি।তবে এ ব্যাপারে অরুণাকে কিছুটা হিন্ট সে দিয়েছে।মহুয়ার চলন বলন তাকানোর ভাব ভালো না--এমনি অপ্রত্যক্ষ কথায় অরুণাকে বোঝাতে চেয়েছিল জটিল।অরুণা মানে নি--অথবা মানতে চায়নি--কারণ ও তো আজ অনেক বছর ধরে মহুয়াকে দেখছে।
একদিন বিয়ে হয়ে গেল অরুণা ও জটিলের। মহুয়ার বুকের ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হল। ঠিক এমনি এক দিনের কথা।যথারীতি মহুয়া সারা দিনের কাজকর্ম সেরে নিজের ঘরের দিকে রওনা হল।তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।জটিল ও অরুণাদের এ সময়টা বড় আপন--রোজের নিরালা একান্তের জীবন শুরু হয়।ওরা জানে সারা দিনের কাজের পর মহুয়া এখন চলে গেছে। ওরা তাই ভালবাসার আলিঙ্গনে নিজেদের তখন হারাতে চলেছে...
মহুয়ার মাথায় তখন কিলবিল পোকাগুলি সজাগ হয়ে ওঠে--কোন নাটকের নায়িকার দৃশ্যে নিজেকে সাজিয়ে সেও মনে মনে নিপীড়িত হতে থাকে জটিল দার উষ্ণ দেহ বেষ্টনীতে।
সেদিন ও তাই হল,সে পা টিপে টিপে আবার ফিরে এলো অরুণা ও জটিল দার ঘরের সামনে।ও দেখল আজ অনেকটা হাঁ করা জানলার পাট--খোলা পড়ে আছে।তা হলে কি করবে?ওর উপস্থিতি তো ওরা টের পেয়ে যাবে!সে দূরত্ব নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো।সামান্য শব্দ ছাড়া আর কিছুই সে টের পাচ্ছিল না।মনে মনে ও রাগ হচ্ছিল।ওর নিজের ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠছে--কেন--কেন--কেন--তুই এত হীন,তুই এত দীন!তুই চাইলে তো পারিস তোর জীবন থেকে অরুণাকে সরিয়ে দিতে?...জঘন্য চিন্তাগুলি কুরে কুরে তাকে খাচ্ছিল।ও আস্তে আস্তে সিঁড়ি ধরে ছাদে চলে গেল।প্রচণ্ড ঈর্ষা জমে জমে হিংসায় আর সেই হিংসা ওর মনে জিঘাংসা ভরে দিতে লাগলো।
অন্ধকার ছাদ।রোজ আসতে হয় মহুয়াকে এখানে।কাপড়চোপড় মেলে শুকিয়ে নিয়ে যেতে হয় ঘরে।এখন অন্ধকার--চাঁদ চুইয়ে চুইয়ে একটু একটু আলো ছাদের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে ওখানে চাপ চাপ অন্ধকার ঘিরে আছে। হঠাৎ মনে হল আগুন,মহুয়ার মাথায় আগুন জ্বলছে মনে হল,মনে হল,এখুনি কোন বড় একটা ছুড়ি নিয়ে গিয়ে অরুণার বুকে বসিয়ে দেয়... আর তারই সঙ্গে সঙ্গে ঘ্যাঁচ,করে মনে হল ধারালো সেই পিন মহুয়ার বুকে কেউ ফুঁড়িয়ে দিচ্ছে।অন্য দিন থেকে আজের পিনটা যেন অনেক বড়--অনেক লম্বা--একটু একটু করে যন্ত্রণা দিতে দিতে ওর বুকে ঢুকে যাচ্ছে।মহুয়া যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো। বুকের মাঝে তার অসম্ভব ব্যথা...সে ছাদের রেলিং ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবার ধীর গতিতে ব্যথা তার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে--কুঁকড়ে যাচ্ছিল ওর দেহ।চোখ দুটো কেমন ঘোলাটে আর লাল হয়ে গিয়েছিল।আঃ,এই তো মহুয়ার জীবন, ব্যথাময় জীবন...প্রতিদিনের বিষাক্ত জ্বালাময় জীবন...সে যেন আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছে ...অরুণাকে সে মারতে পারে নি--আর পারবেও না--এ জীবনে তার দ্বারা আর কিছুই করা হল না... ছাদের এই রহস্যময় আলোর দিকে তাকিয়ে নিজের মনে ও হাসতে লাগলো...এক সময় পাগলের মত হেসে উঠলো সে... হাসছে হাসছে,হাসতে হাসতেই মহুয়া উঠে দাঁড়ালো ছাদের রেলিঙের ওপর।আর এক সময় কিছু বোঝা না বোঝার মাঝেই তার দেহটা ঝুঁকে পড়লো ছাদের বাইরের দিকে—আর সঙ্গে সঙ্গে ওর পা দুটো সরে গেল রেলিং থেকে,হঠাৎ ও ছাদ থেকে প্রায় পঞ্চাশ ফিট নীচের রাস্তায় গিয়ে পড়ল।একটা ক্লান্ত চীৎকার ধ্বনিত হল চারি দিকে...কয়েক বার গোঙানির আওয়াজ বের হল ওর মুখ থেকে--তরতাজা রক্তের মাঝ খানে এক সময় স্থির হয়ে গেল মহুয়ার দেহ।
*** *** ***
ঠিক সে দিন রাতে ঘটল সেই ঘটনাটা--জানলার পাশ থেকে কে যেন সরে গেল আবছা অন্ধকারে--চেনা গেল না কে সে--শুধু কালো একটা মেয়ের ছায়ামূর্তি সরে গেল যেন!অরুণা ও জটিল দুজনের চোখেই তা ধরা পড়লো।জটিলের মনে সামান্য ভয় থাকলেও সে উঠে দাঁড়ালো।তাকে দেখতে হবে বাইরে কে আছে--চোরটোর বা অন্য কিছু!
অরুণা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,আমি তোমার সঙ্গে যাব,তুমি একা বেরিও না।দুজনে ধীর পায়ে ঘর পার করে বারান্দায় বেরিয়ে এলো।বারান্দার আলোয় যতদূর চোখ যায় কিছুই তাদের নজরে পড়ল না—শুধু সামনের প্রাচীর ঘেরা ফুল বাগান নজরে এলো--এখন তাতে গাছপালা কিছুই নেই।প্রায় দেড় দু শ গজ দূরে সদর দরজার গেট দেখা যাচ্ছিল।লোহার বড় গেট।গেট সংলগ্ন ছোট একটা ঘর--যেখানে দারোয়ান রাত ভর জেগে থেকে পাহারা দেয়।ওরা এগিয়ে গেল সদর দরজার দিকে,দেখল,গেট বন্ধ।জটিল আজ সন্ধ্যার পরে এসে ভেতর থেকে গেট তালা বন্ধ করে দিয়ে ছিল।সাধারণ ভাবে গেটের দরজা বন্ধ,খোলার ব্যবস্থা সাময়িক ভাবে গেটের বাইরে ও ভেতরে দু দিক থেকেই আছে।মহুয়া যখন তখন বাইরে থেকে আংটা ঘুরিয়ে গেট খুলতে কিম্বা বন্ধ করতে পারত।রাত নটার আগে নাইট গার্ড আসে না।
--কে জানে আজ গার্ড আসবে কি না!অরুণা বলে উঠলো।
--এ ঘটনার পর হয়তো ও আজ নাও আসতে পারে,জটিল বলল।
রাত নটার কাছাকাছি--ওরা ডাইনিং রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে রাতের খাবার সেরে নিলো।মনে মনে আতংকের ছায়া উভয়ের চোখে মুখেই ধরা পড়ছিল।খেয়ে দেয়ে এঁটো বাসনকোসনগুলি অরুণা আর সরাল না,যদিও সে জানে মহুয়া আর আসবে না--দু এক দিন ঘরের সব কাজ ওকেই করতে হবে--অন্তত আর একজন কাজের লোক না পাওয়া পর্যন্ত।
রাতে টুকটাক কাজ সেরে উভয়ে বিছানায় গিয়ে শুল।কেবল বারান্দার লাইট জ্বলছিল--ওটা রাত ভর জ্বালাই থাকে।বেড রুমের আলো নিভিয়ে দিল জটিল।চৌকিদার এখনও আসে নি।ও আসলে জানান দেয়--অন্তত ডাক হাঁক দিয়ে ওর উপস্থিতি জানিয়ে দেয়।
অন্ধকার ঘর।উভয়ের শরীরের মধ্যে ভয়ের ছোঁয়া লেগে আছে।দু জনেই ওরা চুপ চাপ শুয়ে আছে--পরস্পরের অনেকটা কাছাকাছি হয়ে।আপাতত ওদের মনে অন্য কোন ভাবনা নেই--বারবার মহুয়ার কথাই মনে এসে জুড়ে বসছিল।ওর মৃত বীভৎস চেহারাটা ওদের মনের ভেতর বারবার ভেসে উঠছিল।আর এমনি সময় খুটখাট,কোন শব্দ ওদের কানে এলো।কান পেতে শুনল অরুণা,হ্যাঁ,ডাইনিং হলে শব্দ হচ্ছে--এবার স্পষ্ট ব্যাপারটা বোঝা গেল।মনে হচ্ছে ডাইনিং হলের এঁটো বাসনকোসন কেউ গুটিয়ে নিচ্ছে--এবার ক্যাঁচ,করে হালকা দরজা খোলার মত শব্দ,কারো পায়ের হালকা চলার আওয়াজ হল।অরুণা ভয়ে জটিলকে জড়িয়ে ধরল।জটিল কুঁকড়ে শুয়ে থাকলো--ওরা বুঝতে পেরেছে যে এ মহুয়ার অতৃপ্ত আত্মা ছাড়া আর কেউ নয়।
--কে,কে ওখানে?চীৎকার করল জটিল--ইচ্ছে করেই সে মনে জোর আনার জন্যে গলার সমস্ত জোর নিয়ে ডেকে উঠলো, বাহাদুর!বাহাদুর!!নেই,নাইট গার্ড,বাহাদুর আজ আসে নি,তবু উঠতে তো হয়,দেখতে হবে সত্যি অলৌকিক কিছু কি না!এমন তো নয় চোরের চুরির পূর্ব প্রস্তুতি এটা!
খাট থেকে নেমে দাঁড়ালো জটিল।পাশের আলমারি থেকে টর্চ বের করে নিলো,আর বহু দিন থেকে পড়ে থাকা দু হাত লম্বা রুলটা নিয়ে ধীর গতিতে হাঁটা দিল বাইরের দিকে।
অরুণা বাইরে তখনও শব্দ শুনতে পারছে--কল ঘরে সে স্পষ্ট বাসন মাজার আওয়াজ পাচ্ছে! ঠিক যেমন মহুয়ার বাসনকোসন মাজার আওয়াজ হত ঠিক তেমনি!
আরুনা--জটিল,বলে ডেকে উঠলো,সে ডাক জটিলের কান পর্যন্ত পৌঁছল না।জটিল তখন ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেছে।অরুণা তার শরীর চাদর মুড়ি দিয়ে ঢেকে নিলো।ভয়ে সে চোখ মুখও ঢেকে নিলো চাদরের তলায়।
জটিল বারান্দায় কাউকে দেখল না--ওর কানে এলো কলঘরে কল খুলে কেউ বাসন মাজছে!ও ভয়ে ভয়ে পা টিপেটিপে এগিয়ে গেল কল ঘরের দিকে।কলঘরের অন্ধকার দরজা তখন ভেজানো ছিল।হঠাৎ কলঘরের দরজা ঠেলে টর্চ ফেলল সে।কৈ কিছুই তো নেই?কল বন্ধ করা--বাসনকোসন কিছুই নেই সেখানে--তবে? এবার তার মনে ভয় প্রবেশ করছিল—ওর মনে হল বাইরে থাকা আর তার পক্ষে নিরাপদ নয়।ও হনহন করে চলছিল শোয়ার ঘরের দিকে।কিন্তু কে ওখানে দাঁড়িয়ে?ওই সিঁড়ির ঘরের কাছেই কেউ দাঁড়িয়ে না?স্পষ্ট নজর দেবার চেষ্টা করল জটিল।এ কি মহুয়া--আবছা আলো ছায়ায় পরিষ্কার ও দেখতে পেল,মহুয়া, তার মায়াবী চোখ নিয়ে যেন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!জটিলের নাকে সুন্দর একটা গন্ধ আসতে লাগলো।ও যেন ক্রমশ: নিজের সত্তা হারিয়ে ফেলতে থাকলো। মহুয়া ছাদের সিঁড়ি ধরে খুব ধীরে ধীরে ওপরে উঠে যাচ্ছিল।আর বারবার জটিলের দিতে মোহিনী চোখে তাকাচ্ছিল।
যেন জ্ঞান হারা জটিল পা পা ফেলে অনুসরণ করছিল মহুয়াকে। ও তার নিজ সত্তা হারিয়ে ফেলেছে।মহুয়ার পেছনে পেছনে ছাদে উঠে এসেছে।ওর শরীরের গতি ক্রমশ: শ্লথ হয়ে আসছিল।আর এমনি সময় তার হাত থেকে টর্চটা,ঠাস,একটা শব্দ হয়ে নীচে পড়ে গেল।জটিল হঠাৎ যেন তার চেতনা ফিরে পেল।আর তখনই রূপচ্ছটা ছড়ানো মহুয়ার মোহিত দেহটা যেন ছিঁড়ে ছিঁড়ে যেতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।চারিদিকে শন শন শব্দ নিয়ে হাওয়া বইছিল--সেই হওয়ার মধ্যে থেকে জটিল শুনতে পেল মেয়েলি এক সুরেলা কণ্ঠ--যেন বাতাসে ভেসে আসছে--জটিল দা, আমি তোমায় ভালোবাসি,আমি তোমায় পেতে চাই--আমি অরুণাকে কিছুতেই বাঁচতে দেব না...কাঁপছিল শব্দগুলি--কেঁপে কেঁপে, কেটে কেটে বাতাসে ভর করে সে গুলি ভেসে গুঞ্জনের মত শোনাচ্ছিল।জটিল তখন দ্রুত পায়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে নেমে যাচ্ছে--প্রায় ছুটতে ছুটতে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ল সে।ধপাস, করে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল—ও তাড়াতাড়ি করে ছিটকিনি লাগিয়ে দিল।ও ঘরের লাইট জ্বালিয়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো।দেখল অরুণা শুয়ে আছে--ওর সমস্ত দেহ চাদরে মোড়া।জটিল অরুণার মুখের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে দেখল তার চোখ আধ বোজা--নিশ্চয় ঘুমে ওর চোখ লেগে এসেছে--ও তন্দ্রায় রয়েছে।জটিল আর দেরী না করে অরুণার এক পাশের চাদর টেনে নিয়ে এক চাদরের ভেতর শুয়ে পড়ল।
কিছু সময় মাত্র কেটেছে--অরুণা বারবার চমকে চমকে উঠছিল--জটিল বুঝতে পারল ঘুমের মধ্যেও বেচারা ভয়ের রেশ কাটাতে পারছে না।অরুণা এবার নড়েচড়ে উঠলো।এবার জটিল দেখল অরুণা ওর বুকে মাথা রেখেছে।ওকে ধীরে ধীরে জড়িয়ে ধরছে-অরুণা চুমু খাচ্ছে ওকে!এ কি!এত ভয়ের পরিবেশের মধ্যেও কি করে অরুণার কাম ভাবনা জেগে উঠছে!কিন্তু জটিলের তো ভয়ের ভাবনা ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছুই মনে আসছে না!
অরুণা চুমু খাচ্ছে জটিলকে--গভীর ভাবে--বড় নিবির ভাবে--চুম্বন আলিঙ্গনে জটিলের শরীর আর স্থির থাকতে পারছে না—আস্তে আস্তে ওর দেহ সজাগ হয়ে উঠছিল--অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এক সময় সাড়া দিয়ে উঠলো জটিলের--ভয়ের স্মৃতি যেন মুহূর্তের জন্যে ওর মন থেকে মুছে গেল।সক্রিয় অরুণার ছলা কলায় সে আর চুপ করে থাকতে পারল না।ওরা দুজনেই যেন মহা সঙ্গমের পথে এগিয়ে গেল...
এখন নিবৃত্তি এসেছে।শ্লথ শরীর নিয়ে সবে মাত্র জটিল বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিয়েছে।ঠিক তক্ষনি—হা...হা...হা...প্রচণ্ড হাসির শব্দ ঘরে আছড়ে পড়ল--ঘরের আলোয় জটিল অরুণার দিকে চমকে তাকাল।অরুণা,হ্যাঁ অরুণাই তো হাসছে, হা...হা...হা... প্রবল শক্তি নিয়ে সে হেসে চলেছে--তারপর হাসি থামল।অরুণা তার অদ্ভুত ঠিকরে পড়া মৃত্যু চোখের চাহনি নিয়ে বিছানায় উঠে বসলো--চীৎকার করে বলে উঠল,আমি অরুণার বদলা নিয়েছি--ওর কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে পেরেছি--তোমায় আমি পেয়েছি জটিল দা!তুমি আমায় ভালবেসেছ--তুমি আমার সাথে রাত্রি বাস করেছ--হা...হা...হা..।
হঠাৎ স্তব্ধতা নেমে এলো,অরুণা বিছানা থেকে নেমে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেল।মুহূর্ত সময় পরেই অরুণার দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।জটিল হতবাক--হতবুদ্ধির মত কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে থাকলো।তারপর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ছুটে গেল ও।দেখল বারান্দার মেঝেতে অরুণা পড়ে আছে।চুপ চাপ পড়ে আছে ও।ও যেন এই মাত্র ঘুমের ঘোর কাটিয়ে উঠলো! জটিলকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে বলে উঠলো,আমি এখানে কেন?
সমাপ্ত





আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া ভালবাসা , ঈর্ষা আর ভয় মিলে বেশ জমজমাত কাহিনী । জটিল নামটা আমিও একটি কবিতায় ব্যবহার করেছি তবে এই গল্পে নামটি একটু কেমন যেন লাগলো । মহুয়া , অরুনার পাশে জটিল কেমন যেন লাগে । ঈর্ষা সংখ্যার জন্য একদম পারফেক্ট গল্প তবে একটু বেশি দেহ নির্ভর ।
নীলকণ্ঠ অরণি কয়েকটা কথা বলব প্রথমতঃ গল্পটার থিম বেশ কমন হলেও আপনি "ইন্টারেস্টিং" ভাবেই উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণটা পড়ে মনে হয়েছে অযথা বড় করেছেন। চাইলেই ছোট গল্পের রেশ রেখে দিতে পারতেন, রহস্যময়তা বাড়াতে পারতেন। মাঝখানের পরের পার্টটা কিছুটা শিশুতোষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয়তঃ ভালোবাসাকে আপনি শুধু দেহের খেলায় বন্দি করেছেন। এটা মোটেই ভালো লাগেনি। ছোটোখাটো আরও অনেক বিষয় আনতে পারতেন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। "অরুণা" হুট করেই অফিসের বস কে বিয়ে করে নিয়ে আসলো, আর "মহুয়া" তাদের দেহের খেলা দেখতে দেখতেই "জটিল" কে ভালোবেসে ফেলল? ভালোবাসা পাওয়া, জয় করা এসবই কি শুধু রাত্রি যাপন করার সাফল্যের ওপর নির্ভর করে? খুবই স্থুল ধারনা। তৃতীয়তঃ গল্পটা পড়ে সামান্য ভয়ও পাইনাই।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩
আপনার খুলে মন্তব্য করাটা ভালো লাগলো।তবে এটা বলব--অনেক কাহিনী বাস্তবতার নজিরেও অবাস্তবতা এসে পড়তে পারে--এখানে মহুয়া মানসিক অসুস্থ ছিল।তার ভাবনাগুলি সাধারণের আলাদা ছিল।আর এ কথা স্বীকার করতেই হবে--আপনাকে সন্তুষ্ট করতে না পারা আমার লেখার ত্রুটি বৈ কি !
ভালো লাগেনি ২৯ জানুয়ারী, ২০১৩
পন্ডিত মাহী বেশ লাগলো গল্পটি... সুন্দর লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৩
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# অত্যন্ত জটিল একটি কাহিনী দাদা, খুব ভালো লাগলো। ভয়ে এখনো গা ছমছম করছে।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১৩
শাহ আকরাম রিয়াদ তাপস দা,গল্পটি নিঃসন্দেহে ভয়ানক রোমহর্ষক গল্প। ভাল লাগল গা ছম ছম জাগানো গল্পটি পড়ে। আজ রাতে ঘুমের বারোটা বাজে কিনা দেখা যাক! শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১৩
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অনেক ভাল লাগল। ধন্যবাদ দাদা ।
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১৩
মোঃ আক্তারুজ্জামান চরিত্র চিত্রণ আর বিষয়বস্তুর বিবরণ দারুন হয়েছে| ভৌতিক গল্প- প্রথম দিকটায় আমার বার বার মনে হয়েছে এই বুঝি মহুয়ার মৃত্যু রহস্য আবিস্কার করতে কিরিটি রায় এসে হাজির হলো বলে! অনেক দিন পর ড: নিহার রন্জনকেও মনে পড়ে গেল| অনেক অনেক ভালো লাগলো গল্পটি, শুভ কামনা লেখকের প্রতি|
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন .................জটিল কিন্তু চমতকার একটা গল্প। ভাল লেগেছে।শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩
নিলাঞ্জনা নীল মারাত্মক ঘোর লাগা গল্প
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৩
আহমেদ সাবের ঈর্ষার পটভুমিকায় চমৎকার একটা ভৌতিক গল্প। ভালো লাগলো গল্পটা।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৩

৩০ সেপ্টেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী