রিকশা ড্রাইভার

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

মিনহাজুর রহমান জয়
  • ১৯
  • 0
  • ৩৩

\\ এক \\
সবাই তাকে ড্রাইভার মামা বলেই ডাকত। তার আসল নামটা আসলে আমারও জানা নেই। তিনি একজন ড্রাইভার ছিলেন। স্কুলের বাস ড্রাইভার।
ড্রাইভার ছিলেন, এর কারণ হচ্ছে কিছুদিন আগেই বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনি একটি দুর্ঘটনার শিকার হন। কিন্তু এই জিনিসটা আমার লিখতেও খুবই কষ্ট হচ্ছে যে, দুর্ঘটনার কারনে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়।
বর্তমানে তার করার মতো কিছুই নেই। শুধু ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন ড্রাইভার মামা। পরিবারের খুবই করম্নণ অবস্থা। পরিবারে তিনি ছাড়া আর কেউ না থাকলেও একটা বিয়ের বয়সী মেয়ে আছে। নাম শিখা। এবার এইচএসসি পরীৰা দিয়েছে। মামা নিজে হয়তো বা না খেয়ে না পড়ে থাকতে পারবেন কিন্তু তার মেয়েটার কি হবে এই চিনত্দায় তিনি তার মাথাটাকে পুরোপুরি খেয়ে ফেলছেন।

অবশ্য এই দুশ্চিনত্দার মধ্যেও তার মুখে একটা মুচকি হাসি রয়েছে।
মামার মতে এটা হচ্ছে আলস্নাহ্র এক লীলা। আলস্নাহ্ তার ভাগ্য নিয়ে পরীৰা করছেন। মামা বলেন, অনেক মানুষের সাথেই এরকম দুর্ঘটনা হয়। কিন্তু সবার সাথে হয় না। বলতে গেলে দশ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের। তাই অবশ্য একারণে নিজেকে একটু বেশিই ভাগ্যবান মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন আলস্নাহ্ যদি খুশি থাকে তাহলে তিনিও খুশি।

হাসপাতালের বেডের একপাশে বাম পা ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। তার খোজঁখবর নেয়ার মতো মানুষও বলতে গেলে পৃথিবীতে নেই। শুধু বেডের পাশে বসে তার মেয়ে শিখা কাদঁছে আর কাদঁছে। আর মেয়েটার কাঁদা দেখে মামা বলতে লাগল, কান্দিস নারে মা। কান্দিস না। আলস্নায় যা করে ভালার লাইগাই করে।


এমনসময় স্কুলের কিছু বাচ্চারা ফুল নিয়ে মামাকে দেখতে আসে।
এই দৃশ্যটা দেখে অবশ্য মামার মনটা মায়া-মমতায় ভরে উঠে। ভবিষ্যতের সংগ্রামে তার যেই লড়াই, সেটার জন্য অবশ্য তিনি একটু সাহস জুটাতে পারলেন এই বাচ্চাদের মাধ্যমে। শিখাও হয়ত বা একটু সাহস পেয়েছিল আগামীর জন্য।

স্কুলের বাস ড্রাইভার তিনি।
এত বড় দুর্ঘটনা হয়ে গেল আর স্কুল কতর্ৃপৰের কেউ এখনো আসেনি। একথাটা এখনও মামার মাথায় আসেনি। কেননা যদি স্কুল কর্তৃপৰ তাকে কোনোভাবে সাহায্য না করে তাহলে তার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ন অন্ধকার।
শেষপর্যনত্দ একজন আসলো। এসে মামাকে তিনি বললেন, আপনার কি রকম অবস্থা এখন?
এইতো আছি আলস্নার দোয়ায়।
আপনার জন্য তো আমাদের স্কুল ফাউন্ডেশন কিছু ভেবেছে?
কি ভাবছে স্যার?
আপনি যেন আপনার রোজ জুটাতে পারেন সেজন্য স্কুল ফাউন্ডেশন আপনাকে একটা রিকশা দিবে বলে ঠিক করেছে।
স্যার! আমি আমার পা ছাড়া ক্যামনে রিকশা চালামু?
ভয় পাবার কিছুই নেই। আপনাকে ইঞ্জিন চালিত রিকশা। আপনি শুধু সিটে বসে থাকবেন আর চালাবেন।

স্কুল ফাউন্ডেশনের এই সাহায্যটা বেশি সুবিধার মনে হচ্ছিল না মামার। কিন্তু তার রাজী হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো উপায়ও ছিল না। অনত্দত তার মেয়ের জন্য এই কাজটা করতে হবে তাকে।
তা না হলে বাসা ভাড়ার খরচ, খাওয়া-দাওয়ার খরচ, মেয়েকে বিয়ে দেবার খরচ কোথা থেকে যোগাড় করবেন মামা। হয়ত বা নিজেকে রিকশার সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে কিন্তু তাকে করতেই হবে।
যদি মামা এই কাজটা না করেন তাহলে তার জীবনটা সসত্দা আর বেচেঁ থাকা খুবই দামী হয়ে পড়বে।

মামা শুধু বসে বসে দিন গুনছেন কবে তিনি আবারও কাজে নামবেন। এভাবে বসে থাকতে আর তার ভাল লাগে না।
আর রেললাইনের পাশে মামার বসতিতে স্কুলের পৰ থেকে একটা পুরোনো ইঞ্জিন চালিত অটো রিকশা দিয়ে গেল। দেখে মনে হচ্ছে কোনোরকম চালানো যাবে। এখন তার জন্য তো দেড় লাখ টাকার নতুন গাড়ি দেয়া হবে না।
\\ দুই \\
শেষ পর্যনত্দ হাসপাতাল থেকে বের হতে পারলেন তিনি।
এই দুর্ঘটনায় তার অতীতে কামানো প্রায় সব টাকা নি:শেষ হয়ে গেছে।
মামা প্রথম দিনে বাসা থেকে বের হলেন রিকশাটা নিয়ে। অবশ্য প্রথমে প্রথমে রিকশাটার উপরে উঠতে কষ্ট হচ্ছিল। একটা পা আছে বলে প্যাডেলের সাহায্যে রিকশার চালকের সিটে উঠে বসেন তিনি।
ইঞ্জিনের রিকশাগুলোর সুবিধা এটা হচ্ছে এখানে ড্রাইভারকে কোনো শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় না। শুধু মানসিক ভাবে সচেষ্ট থাকলেই রিকশা চালানো যায়। তবে অসুবিধা হচ্ছে এটা বিদু্যতের মাধ্যমে চার্জ দিতে হয়। যার কারণে একদিকে আমাদের দেশে এই রিকশা চালানো ঠিক নয়।

মামার পা নেই বলে সব মানুষ রিকশায় উঠতে চায় না। আবার কেউ কেউ ঠিকই উঠে পড়ে রিকশায়।
দিন শেষে মোটামুটিভাবে তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কামান তিনি।
এই টাকা দিয়ে অবশ্য বাড়ির সব খরচ কোনোরকম ভাবে পূরণ করা যায়।
আর যদি কোনো কারণে মামা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে মনে হয় তাদের সারাদিনে একবেলা আবার কখনো শুধু পানি খেয়েও থাকতে হয়। কেননা তিনি হচ্ছেন এমন শ্রেণীর মানুষ যাদের জন্য সরকারের কাছ থেকে যদি দশহাজার কোটি টাকাও বাজেটে দেয়া হয় তবে সেই টাকা তাদের কাছে পৌছাঁতে পৌছাঁতে দশ পয়সাও থাকে না। আমাদের দেশের ধনীরা শুধু ধনী হচ্ছেন আর আমাদের দেশের গরীবরা আরও গরীব হচ্ছেন।

তিনদিন ধরে জ্বরের কারণে বিছানায় পড়ে আছে ড্রাইভার মামা। কাজ করার মতো কেউ নেই। তাই পরিবারের দুজনই এখন অচল। আর ভাল ডাক্তারের কাছে নিজের চেহারাটাও দেখাতে ৫০০ টাকা লাগে বলে, সাধারণ ফার্মেসীর দোকান থেকে মামুলি ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছেন তিনি। মেয়েকে বললেন, রাতে খাওনের লাইগা চাইল আছে?
আছে। কোনোরকম রাইতের খাওনটা হইব। কিন্তু কালকে?
দেহি কি করি। জ্বরটা যদি একটু কমত তাইলে রিকশাটা লইয়া এখনই বাইর অইয়া যাইতাম।
থাক। থাক। এই শরীর লইয়া আর রিকশা লইয়া বাইর হওয়া লাগতো না।
আমি না গেলে টেকা আইব কইত্তে?
এত টেকা টেকা কর টেকা দিয়া কি করবা?
তোরে বিয়া দিমু। আমার খুব শখ তোরে একবার লাল শাড়িতে দেখবার।
থাক থাক। সময় অইলে দেখবানে। এহন তুমি আরাম কর।

পরদিন সকালেও মামার জ্বর ভাল করে থামেনি। কিন্তু সকালের জন্য একটু চাউল কিনার সামর্থ্য তার এখন নেই। বাধ্য হয়ে বের হতেই হল রিকশাটা নিয়ে।
তাই মামা রিকশা নিয়ে রাসত্দায় বের হয়ে পড়ল যাত্রীর সন্ধানে।

আজকে হঠাৎ করে বৃষ্টি পড়ছে। আবার একটু পর রোদ উঠতেছে। আবার বৃষ্টি পড়তাছে।
কালো আর সাদা মেঘ যেন একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতেছে আজ।
দিনটা কেমন যেন ধূসর ধূসর। রাসত্দায় রিকশাও তেমন নেই। তাই মোটামুটিভাবে ভালই কামাতে পারল মামা। দিনশেষে প্রায় ছয়শ টাকার মতো জমলো তার পকেটে।
কিন্তু পরে রিকশাটা আর ভাল করে চলছিল না। যতটুকু তার ধারনা সম্ভবত ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়েছে। মনে হয় সাড়াতে গেরেজে নিয়ে যাওয়া লাগবে। কিন্তু তাতেও মোটামুটি অনেক খরচ লাগতে পারে।

বাসায় যাবার সময় মাটির ব্যাংক কিনে নিয়ে গেলেন তিনি। মেয়ের সামনে ব্যাংকটা রেখে তার ভিতরে তিনশ টাকা সুন্দরভাবে ভাজঁ করে ফেলে দিলেন। আর মেয়ে শিখা এইটা দেখে বলল,
এইডা কি করতাছো তুমি?
দেহস না ব্যাংকে টেকা ফালাইতাছি।
ব্যাংকে টেকা ফালাইতাছো কেন? টেকা কি বেশি অইয়া গেছে?
বেশি অয় নাই। তবে ভাবতাছি যদি সামনে তোর বিয়া-শাদিতে খরচ করন লাগে তাইলে আমি কি করমু!
তুমি আবার পুরানা পেচাল শুরম্ন করলা। আগে চাইলগুলা দেও। রাইন্দা দেই।

মামা আসার সময় তিন কেজি চাউল আর এক পোয়া ডাউল কিনে নিয়ে আসলো খাবার জন্য
মনে হয় দু-তিনপর আজকে একটু ভাল খাবার খেতে পারবে বাবা আর মেয়ে।
\\ তিন \\
রাতে খেতে পারায় ভালই ঘুম হয়েছে দুজনের।
আজকে একদম ফযরের আযানের সাথে সাথে রিক্শা নিয়ে বের হয়ে পড়ল মামা।
মনে হয় এখন জ্বরটা আর নেই।

মাসখানেক এভাবেই সারাদিন পরিশ্রম করার মধ্যে চলে গেল তার। আজকে ফযরের আযানের খুব আগেই রিকশাটা নিয়ে বের হয়ে গেল তার। মামার এখন রাতে ঘুম হয়না। কেমন যেন মনে হয় তার জীবনের একটা অসম্পূর্ন কাজ সম্পূর্ণ করা বাকি। তার দুর্বল কাঁধে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দায়িত্বের বোঝাটা রাখা। এজন্য আজকাল অন্ধকারেই রিকশা নিয়ে বের হয়ে যান তিনি।
সারাদিন রিকশা চালাবে বলে ভেবে রেখেছেন তিনি। কিন্তুু দুপুরের দিকে হঠাৎ করে ধপাস করে আওয়াজ হয়ে রিকশাটা বন্ধ হয়ে গেল।

কি করতে হবে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না তিনি। কোনোভাবে রিকশাটা আবার চালু দিতে পারলেও একটু পরে পরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। বন্ধ হওয়া আর চালু হওয়ার মাঝখানেই কোনোরকম ভাবে রিকশাটা নিয়ে গ্যারেজে গেলেন তিনি। ভাবছেন রিকশাটার হয়ত বা কিছু খুটিঁনাটি ঠিক করলেই আবার তিনি রাসত্দায় বের হতে পারবেন।
গ্যারেজের মালিক জসীম খুবই একটা খারাপ মানুষ। অন্যের জিনিসকে সবসময় নিজের ব্যবহারের জিনিস মনে করতেন তিনি। আর তার গ্যারেজে যেই রিকশাওয়ালারা রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতো তারাও খুবই বিপাকের মধ্যে কাজ করতেন। কেননা জসীম একজন সন্ত্রাসী ধরনের মানুষ ছিলেন। প্রায় ছয়বারের মতো সময় তিনি পুলিশ ষ্টেশনের হাজতে থেকে এসেছেন। অবশ্য প্রত্যেকবারেই তার পরিবারের মানুষেরা বিশ হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন জসীমকে।

রিকশা নিয়ে গ্যারেজে ঢুকতেই জসীম মামাকে বললেন, কি অইছে? এই ভাঙ্গা রিকশার আবার কি অইলো?
মামা জবাব দিল, মনে অয় রিকশাটার ভিতরে ইঞ্জিনে বৃষ্টির পানি ঢুইকা গেছে। একটু ওয়াস করলেই ঠিক অইয়া যাইব।
কি করন লাগব হেইডা আমারে বুঝাইতে আইয়ো না মিয়া। রিকশা থুইয়া যাও। কালকে লইয়া যাইয়ো নে।
কালকা কেন? রিকশাতো ঠিক করা ঘন্টাখানেকের ব্যাপার।
তাইলে তোমার রিকশা তুমিই ঠিক কর গিয়া। আমাগোরে মাফ কর।

না চাইলেও জসীমের গ্যারেজে রিকশাটা দিতে হল তাকে। কারণ এই ছোট এলাকায় জসীমের গ্যারেজ ছাড়া অন্য কোনো গ্যারেজ নাই।

পরেরদিন যখন ড্রাইভার মামা রিকশা নিতে আসলেন জসীম তাকে দেখে বললেন, কি মিয়া তুমি কইলা ইঞ্জিনে খালি পানি ঢুকছে। আমি তো দেখলাম পুরা ইঞ্জিনটাই বাতিল অইয়া গেছে।
কি কন আপনে! এই ইঞ্জিন আবার বাতিল অয় ক্যামনে? আমি তো নিজেই দেখলাম রিকশার ইঞ্জিনটা ঠিক আছে। আপনে আমার রিকশা ফেরত দেন। আপনেরে দিয়া আমার রিকশা ঠিক করান লাগব না।
কি অইছে! তোমার রিকশায় নতুন ইঞ্জিন লাগাইছি। হেইডার খরচপাতি দেওন লাগব না।
আপনেরে আমি কইছি ইঞ্জিন লাগাইবার। আমি গরিব মানুষ। নতুন ইঞ্জিন লাগানের মত খরচ আমার কাছে নাই।
আমি কিছু জানি না মিয়া। ইঞ্জিনের খরচ মাত্র আট হাজার টাকা। যেদিন দিবা ঐদিন আইয়া রিকশা লইয়া যাইবা। আর না পারলে রিকশার কথা ভুইলা যাও।

মামা গ্যারেজ থেকে যখন বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন তার চোখ দুটো কেমন যেন লাল টকটকে ছিল। তখন গ্যারেজের এক রিকশাওয়ালা মামাকে ডাক দিয়ে বললেন সব সত্যি ঘটনা।
আসলে রিকশার ইঞ্জিনের কিছুই হয় নাই। জসীম এসব কথা তাকে বলেছে যাতে সে এসুযোগে কিছু টাকা নিতে পারে। অবশ্য এই রিকশাওয়ালার সাথে একবার এরকম ঘটনা ঘটেছে।
ইদের ছুটিতে একবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় তিনদিন ঢাকার বাইরে ছিল সে। কিন্তু গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরলে জসীম তিনদিনের রিকশার ভাড়া চায় চারশ পঞ্চাশ টাকা। কারণ সে তিনদিন রিকশা ভাড়া নেয়নি বলে এই তিনদিন তার রিকশা অকেজো অবস্থায় পরেছিল।
কিন্তু অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ নেই এই রিকশা সমাজে।

\\ চার \\

বাসায় মনটা অনেক খারাপ করে ফিরলেও গিয়ে দেখে পাশের গ্রামের মকবুল মিয়া তার বসতিতে এসে বসে আছে। মামা তাকে দেখে অবশ্য চিনতে দেরি করলেন না।
মকবুল মিয়াকে দেখে মামা একটু আশ্চর্য হলেও বাড়িতে মেহমান আসলে যে একটু হাসিমুখে কথা বলতে হয় তা তিনি ভুলেননি। কারন তিনি জানতেন, কারো সাথে হাসিমুখে সাৰাৎ বিনিময় করাও একটা ইবাদাত।

তাই তিনি মকবুল মিয়াকে দেখে বললেন, সালাম নেন। আপনে হঠাৎ কইরা আমার গরিবখানায়?
আসলাম তোমার সাথে একটু জরম্নরি কথা বলতে।
কন। কি কইবার আইছেন।
দেখো মিয়া তোমার লগে তো যেই দুঘর্টনা হইলো তারপর তুমি তো যেই পরিশ্রম করতাছো তা তো আমরা সবাই দেখতাছি। কিন্তু তোমার বাড়িতে একটা বিয়ার-বয়সী কইন্যা আছে। তো ওর বিয়াশাদির ব্যাপারে কি কিছু ভাবছো?
হ। ভাবতাছি। একটা ভালা পোলা পাইলে মাইয়ার হাতটা তার হাতেই দিয়া দিতাম।
তো আর দেরি কইরো না মিয়া। আমাগো লোকাল পাবলিক বাসের ড্রাইভারটা আছে না মৃদুল ওর লগে বিয়া দিয়া দাও। কথা বিশ্বাস কর তোমার মাইয়া অনেক শানত্দিতে থাকব।
কথা তো ঠিকই কইলেন। কিন্তু একবার মা মরা মাইয়াটারে জিগাইয়া নিলে ভালা অইতো।
আইচ্ছা। আজকা আমি যাই কালকা আবার আমু নে। তবে হ নাকি না হেইযা কইয়া দিও।

ড্রাইভার মামা তার মেয়েকে এই সম্বন্ধের কথা বললে সে রাজী হয়। এতে অবশ্য খুশি হয় মামা। কারণ মৃদুল ছেলেটার রোজগার মাসে ভালই। সেখানে গেলে সম্ভবত মেয়েটা ভালই থাকবে। কিন্তু বিয়ের ব্যাপার। একটু খরচপাতি তো করা লাগবই। আবার রিকশাটাও জসীমের গ্যারেজে।
মকবুল মিয়া পরের দিন সকালে আসলে তাকে সম্মতির জানিয়ে দেয় মামা। আর বিয়ের তারিখটা ছয়দিন পর শুক্রবারে পাকা করা হয়।

মকবুল মিয়ারে বিদায় করে দেয়ার পর মামা গেল জসীমের গ্যারেজে। সেখানে গিয়া জসীমকে বলল, দেহেন আমার ইঞ্জিন লাগানের মতো টেকা-পয়সা নাই। আমার মাইয়ার বিয়া। আমার রিকশা চালানি খুবই দরকার।
অ। আমার খরচ-পাতি না দিয়া তুমি মাইয়ারে বিয়া দিতাছো। আগে আমার আট হাজার টাকা দিয়া লও।
আপনে বুঝতাছেন না কে? আমার রোজগার না থাকলে আমি আপনের ইঞ্জিনের খরচ আর আমার মাইয়ার বিয়ার খরচ কইত্তে দিমু।
এতই যহন রোজগার লাগে তাইলে গ্যারেজের রিকশাগুলা ভাড়া নিয়া চালা। দিনের ভাড়া তো আর বেশি না মাত্র দেড়শ টেকা।

সেখান থেকে চুপচাপ বের হয়ে গেল মামা। তার মেয়ে অবশ্য এই সম্পর্কে কিছুই জানত না। অবশ্য তাকে কিছু জানানোও ঠিক হত না মামার।
এখন মামার করার মতো কিছুই নেই। সামনের দিনগুলো হঠাৎ যেন কালো মেঘের মতো ঢেকে গেল।

আজকে দুদিন যাবৎ তার রোজগার নেই। ছয়দিন বাদেই মেয়ের বিয়ে। কোথা থেকে মেয়ের বিয়ে দিবেন। একটা বিয়ের খরচ কমপৰে আট থেকে দশ হাজার টাকা পরবে। আর মামার মতো মানুষের জন্য আট-দশ হাজার টাকা শুধু আট-দশ হাজার টাকা নয়। তাদের কাছে এই পরিমাণ হচ্ছে আট-দশ হাজার কোটি টাকা।

তিনি শুধু ভাবছিলেন এখন কি করা যায়। রিকশা তো তাকে চালাতেই হবে। কিন্তু রিকশা পাবেন কোথা থেকে। তখন করিম নামে এক রিকশাওয়ালা মারা যাবার কারণে তার অটোরিক্শাটা অনেক দিন যাবৎ তার পরিবারের কাছে পরে ছিল। তাই তার মেয়ে লামমিম মামাকে এসে বলে যাতে তিনি এই রিকশাটা ভাড়া নিয়ে চালায়। দিনের ভাড়া একশ টাকা দিলেই হবে।

কিন্তু মামা অসম্মতি প্রকাশ করলেন। কারণ অন্যের কাছে পরাধীন হিসেবে থাকা তার পছন্দ নয়। তিনি কারো কাছে মাথা নত করতে রাজী নন। তিনি তার রিকশা ফেরত আনবেন বলে ভাবছেন।
যত খরচই হোক না কেন মামা তবুও অন্যের রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাবেন না।
\\ পাঁচ \\

বাসায় গিয়ে তার মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে ফেললেন। টাকা বের হল আটহাজার একশ। ভাবছিলেন এই টাকা দিয়ে তার রিকশাটা ফেরত আনবেন। কিন্তু যদি তিনি তার রিকশা ফেরত আনেন তাহলে তিনি তার মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না। কেননা এই টাকা তিনি মাত্র এক জায়গায় খাটাতে পারবেন।

এই বিষয়টা নিয়ে তিনি খুব দুশ্চিনত্দায় ছিলেন। যদি তিনি তার রিকশা ফেরত না নিয়ে আসেন তাহলে তার রোজগার থাকবে না। খাবার জুটাবেন কোথা থেকে। আর রিকশা আনতে গেলে মেয়ের বিয়ে দিবেন কি দিয়ে। তার জন্যও টাকার প্রয়োজন।

এতৰণে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল শিখা। সে এসে তার বাবাকে বলল, বাবা আমার বিয়া দেওন লাগব না।
মামার জবাব ছিল, চুপ থাক। আমি এহনও বাইচা আছি। তুই চিনত্দা করিস না।
কিন্তু বাবা......।
কথা শেষ করার আগেই ওকে থামিয়ে দিল ড্রাইভার মামা।

মামা ঠিক করলেন তার মেয়েকে বিয়ে দিবেন তিনি। বিয়ের আয়োজনে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কোনো কমতি রাখলেন না তিনি। আট হাজার টাকাই খরচ করে দিলেন তিনি। আর পকেটে রেখে নিলেন শুধু একশ টাকার একটা নোট।
মেয়ের বিয়েতে পোলাও খাওয়ানোর ৰমতা না থাকলেও বেশি করে খিচুড়ি রাধাঁনোর ব্যবস্থা করলেন তিনি।

মেয়ে বিদায়ের একটু আগে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন তিনি। অবশেষে তাকে খুঁেজ পাওয়া গেল।
মেয়ের বিদায়ে খুবই ভালভাবে অংশ নিলেন তিনি। বিদায়ের সময় তার মেয়েটা তার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলেও মামা বুঝতে পেরেছিলেন মেয়েটা কি বলতে চায়। সে বলতে চায় এখন তার বাবা কিভাবে তার রোজগার জুটাবে।

মেয়েকে বিদায় করে দিয়ে মনটা একটু খারাপ করে থাকলেন তিনি। অনেক পরে ঘুমোতে গেলেন। বাড়িটা আজ অনেক খালি খালি লাগছে। সকালে উঠে আবার রিকশা নিয়ে বের হতে হবে। মামা যখন বিদায়ের আগে উধাও ছিলেন তখন তিনি গিয়ে করিম রিকশাওয়ালার মেয়ে লামমিমের সাথে দেখা করে বলে দিয়ে আসেন কালকে থেকে তার রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাবেন তিনি।
তিনি তাকিয়ে আছেন শুধু সামনের জীবনের দিকে। হয়ত বা কখনো তার রিকশাটা ফেরত আনতে পারবেন তিনি।

রাতে বিছানায় নিজের মাথাটা রাখার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি। আজ যেন তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তার স্বসত্দি স্বসত্দি অনুভব হচ্ছে । তিনি যেন তার জীবনের সব কাজ শেষ করে এসেছেন। তার কাধঁ থেকে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী দায়িত্বের বোঝাটা যেন আজ আর নেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক খুব সুন্দর আর ভালো লাগলো গল্পটা....অনেকের মত আমিও শুভ কামনা জানাচ্ছি আর অভিনন্দন....মনে হচ্ছে একজন ভালো লেখক সৃষ্টি হচ্ছে...
সেলিনা ইসলাম প্রথমেই স্বাগতম এই ভুবনে -বাবার সাথে থেকে লেখায় হাতে খড়ি বেশ দাপটের সাথেই নেয়া হয়েছে তা গল্প পড়েই বুঝে গেলাম। সবার লেখা পড়ার পাশাপাশি নিজেকেও লিখতে হবে এবং পড়তে হবে। আগামীর একজন পরিপক্ক লেখক হয়ে উঠার প্রত্যাশায় অনেক অনেক শুভকামনা ।
এশরার লতিফ ভালো লাগলো , অনেক শুভকামনা । আমি জানতাম না যে এখন ঢাকায় যন্ত্র চালিত রিক্সা আছে ।
আপনাকে আমি দাওআত দিলাম,,, একদিন বেড়াতে আসবেন....আর ধন্যবাদ,,,
আশিক বিন রহিম abeg-purno akti golpo.vhalo laglo kobi
শুভ রাহমান গল্প টা ভালো হয়েছে. কিন্তু গল্প বলার ঢং তাতে মনোযোগী হতে হবে...
তান্নি গল্পের বর্ণনা সত্যি মুগ্ধ হবার মতো, অনেক ভালো লেগেছে, কিছু জায়গাই পড়তে একটু অসুবিধা হলেও কাহিনীর সাবলীলতার কাছে অসুবিধাটা নিতান্তই গৌণ মনে হয়েছে, আপনি মনে হয় লেখাটা অভ্র কনভার্টার এ কনভার্ট করে তারপর দিয়েছেন, বন্ধু হিসেবে ছোট্ট একটা পরামর্শ, আপনি sutonnyMJতে লেখা টাইপ করে তবে জমা দিবেন,এতে বানান সংক্রান্ত ত্রুটি গুলো মুটামুটি ঠিক হবে. অনেক অনেক শুভকামনা রইলো, নিয়মিত লেখা যেন পাই কবি!
মামুন ম. আজিজ মোটামুটি পড়ে মনে হচ্ছে ..তুমি লেখা ছেড়না..নিয়মিত লিখতে থাক...
প্রিয়ম অনেক অনেক সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন , ভালো লাগলো অনেক অনেক |
সূর্য ভাইস্তা তোমার একটা বিপদ কি জানো? আমরা আম গাছের কাছে পাকা রসালো আমই চাই হা হা হা। বাবার সাথে পাল্লা দেয়া চাই একেবারে রেল লাইনের মতো কোথাও এক ইঞ্চি সরে গেলে চলবে না। গল্পটা ভাল লেগেছে তবে কিছু জায়গায় বর্ণনায় আরেকটু ঘষামাজা দরকার ছিল। সব শেষে "বাপকা বেটা" হওয়ার দোয়া রইল।

১৬ আগষ্ট - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪