এবং একটি মেয়ের গল্প

বৃষ্টি (আগষ্ট ২০১২)

নীল নীলাজ্জনা
  • ১৫
আজ ক’দিন ধরেই দেখছি মেয়েটাকে এই পার্কে বেঞ্চের এক কোণায় বসে থাকতে। প্রথমে ভেবেছিলাম কারও জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে, কিন্তু না । আর পার্কে একা একা কেউ কমই আসে। তারপর আবার মেয়ে মানুষ। কারণ পার্কে সবাই বন্ধু বান্ধব অথবা প্রেমিক প্রেমিকা আরো অনেকে আসে। অবশ্য আমিও একা একাই আসি। কিন্তু আমি তো আসি সময় কাটানোর জন্য। বেকার মানুষ কাজ কর্ম নেই এখানে এসে ঘুরে বেড়ায়। এখানে কত রকমের মানুষ দেখা যায়। কত রকমের মানুষের আচরণ দেখতে বেশ ভালোই লাগে। আর এভাবেই সময়টা কেটে যায়। কিন্তু ঐ মেয়েটার কি কাজ! ও কি আমার মতো এখানে সময় কাটাতে এসেছে? নাকি অন্য কোন ধান্দা আছে মেয়েটার। কিন্তু ও তো কারো সাথে কথাও বলে না, চুপচাপ বসে থাকে একই জায়গায়।

আমি আসার ঘণ্টা খানেক পরেই মেয়েটা আসে। কেমন যেন এখানে আসাটা আমার নেশা হয়ে গেছে। গত তিন মাসের মধ্যে গুনে হয়তো তিন থেকে চার দিন এখানে আসা হয় নাই। আর এই তিন মাসের মধ্যেই কত রকম মানুষকে দেখলাম। কিন্তু এই মেয়েটাকে আমার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত মনে হচ্ছে। চোখে মুখে সব সময় একটা ভয় ভয় ভাব কাজ করে। কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। আর কখনও কখনও চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে ক’ ফোটা জল।

আমার খুব কৌতূহল মেয়েটার সাথে কথা বলার। কিন্তু কিভাবে বলল, এরকম একটা মেয়ের সাথে। কথা বলতে গিয়ে যদি কোন ঝামেলায় পড়ি। ওর তো কোন খারাপ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। অথবা আমাকে যদি ভুল বোঝে। আর এই বয়সে একটা মেয়ে? আঠার উনিশ হবে হয়তো বয়স। আর দেখতে শুনতেও খারাপ না। না নিজের কৌতূহলকে আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না। যা হয় হবে সে পরে দেখা যাবে। আমি এক পা দু পা করে মেয়েটার কাছে গেলাম। মেয়েটি আমাকে দেখে ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে বসলো। আমি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য বললাম-ভয় পেওনা, আমি কী তোমার এখানে বসতে পারি। মেয়েটি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো কেন? আমি কোন ভনিতা না করেই বললাম আসলো আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চায়। আর তুমি যদি বলতে না চাও-তাহলে আমি চলে যাব। এই বলে আমি চুপ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়েটি মাথা নিচু করে থেকে কিছুক্ষণ পরে বললো-বলুন। তাহলে আমি এখানে বসি। মেয়েটির পাশে কাগজে মোড়ানো কি যেন একটা ছিল, সেটা সে তার কোলের উপর রেখে হাত দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করলো। আমি ওদিকে তাকিয়ে বসতে বসতে বললাম-ওটা কী? মেয়েটা নির্দ্বিধায় বললো ছুরি। আমি একটু চমকে গেলাম-ছুরি! হ্যাঁ, আমি বললাম ছুরি কেন? মেয়েটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো-নিজেকে বাঁচানোর জন্য। এখানে তো খারাপ লোকের অভাব নেই। কিন্তু তুমি এখানে প্রতিদিন আসো কেন? তোমার বাড়ি কোথায়? আর কেনইবা তুমি প্রতিদিন এখানে এসে বসে থাকো। মেয়েটি এবার অন্য দিকে তাকিয়ে বললো-নিজেকে বাঁচানোর জন্য। মেয়েটির কথায় আমার কেমন যেন সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। কী বলছে মেয়েটা। কি সমস্যা তোমার আমাকে কী বলা যায়। মেয়েটা আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো-আপনাকে বলে আমার কী লাভ। হ্যাঁ আমি জানি তোমার কোন লাভ নেই। কিন্তু তারপরও আমার খুব জানার ইচ্ছা।

তারপরও অনেকক্ষণ দু’জনই চুপচাপ বসে রইলাম। এর পর মেয়েটি বলতে শুরু করলো। আমার যখন আট বছর বয়স তখন আমার মা মারা যায়। আমার কোন ভাই বোন নেই, আমি মা বাবার একমাত্র সমত্মান। আমার বাবা ছোট খাটো একটা চাকুরী করতো। আমাদের তিন জনের বেশ ভালোই চলে যেত। কিন্তু মা মারা যাবার পর থেকে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। বাবা আসেত্ম আসেত্ম পাল্টে যেতে লাগলেন। একদিন এক মহিলাকে নিয়ে এসে বললো-উনি নাকি আমার নতুন মা। তবে আমি তাকে কোনদিনও মা বলে ডাকি নি। নানা অনিয়মের কারণে বাবার চাকুরিটাও চলে গেলো। সংসারে অভাব নেমে এলো। সংসারে এটা নেই ওটা নেই এই নিয়ে প্রায়ই ঐ মহিলার সাথে বাবার ঝগড়া লেগে থাকতো, এমন কী কোন কোন দিন মারামারিও হয়ে যেত। আর আমার সাথে তো কখনো ভালো ব্যবহার করতেন না। সেজন্য পড়াশুনাটাও আর করা হলো না। তবে বাবার সামনে তেমন কিছু বলতে পারতো না। আর এভাবেই কাটকে লাগলো আমাদের দিন। আর কিছুদিন আগে বাবা রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। কোথায় গেছে আমি জানি না। তারপর থেকে আমার উপর অত্যাচার বেড়ে যেতে লাগলো। অনেকদিন ধরেই ঐ মহিলা বাবা বাইরে গেলে বিভিন্ন ধরনের লোক নিয়ে আসতো। আর আমি কিছু বললেই আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখাতো। বলে তোর বাপকে যদি বলিস, তাহলে জানে মেরে ফেলবো। ভয়ে আমি কিছুই বলিনি বাবাকে। কিন্তু এই ক’দিন ধরেই সে আমাকে...
কথাটা বলেই মেয়েটা কাঁদতে লাগলো। মেয়েটির কথা শুনে আমি একেবারে হতবাক হয়ে গেলাম-মেয়েটার প্রতি কেমন যেন একটা মায়া জন্মে গেল আমার। আমি জিজ্ঞাসা করলাম তারপর কী হলো? মেয়েটি কান্না থামিয়ে আবার বলতে শুরু করলো-আর ক’দিন আগে আমাকে বলে, তোকে এই ধান্দায় নামতে হবে। তুই থাকলে আরও বেশি টাকা পয়সা রোজগার হবে। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে অনেক মেরেছে। কিন্তু আমার তো কেউ নেইও এ শহরে, আর বাবা কোথায় গেছে তাও জানি না। এটাও জানি যে, আমি মরে গেলেও উনার কথায় রাজি হব না। এখন আমি কোথায় যাব, কী করবো-কিছুই ভেবে পাই না। তবে গ্রামের বাড়িতে আমার এক ফুফু আছে। কিন্তু সেখানে যেতে হলে তো টাকার প্রয়োজন। আর সে জন্য প্রতিদিন এখানে আসা। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য বা ভিক্ষা চাইতেও পারবো না। প্রতিদিন বসে বসে ভাবি কী করা যায়? কিন্তু বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে শূন্য হাতে ঐ নরকে ফিরে যেতে হয়। কোনদিন খাবার জোটে আবার কোনদিন কিল-চড়।
আমি শুধু ভাবলাম মানুষের জীবন কত বিচিত্র। আর এই বিচিত্র জীবনের সমস্যা গুলোও বিচিত্র।
মানবিকতার কারণে আমি বললাম-তোমার ফুফুর ওখানে যেতে যা টাকা লাগে সেটা যদি আমি দেই তোমাকে। আমার কথায় মেয়েটা কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো-আপনি এখন আসুন। কথাটা শুনে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম। তারপরেও বললাম-কেন তুমি টাকাটা নেবে না, তোমার তো প্রয়োজন। মেয়েটি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো-আমি তো আমার দুঃখ কষ্টকে আপনার কাছে বিক্রি করি নি যে আপনি আমাকে টাকা দেবেন এই বলে মেয়েটি ওঠে চলে গেলো।
সেদিনে পর থেকে আর তাকে কখনই এই পার্কে দেখিনি...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ কাহিনীর ভীন্ন্তা আছে, কিন্তু বৃষ্টি নে্ই।
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# অনেক ভালো এবং সুন্দর একটি গল্প, ধন্যবাদ।
Lutful Bari Panna বড় নিবিড় পর্যবেক্ষণ..
বশির আহমেদ চলমান জীবনের ঘটনা প্রবাহ সুন্দর রূপ দিয়েছেন । লিখতে লিখতে আপনার লেখা আরো্ও পরিপক্ক হবে ।
Sisir kumar gain সুন্দর গল্প।বেশ ভালো লাগলো।
তানি হক সুন্দর গল্প ..অনেক অনেক ভালো লাগলো ..কামনা এমন বাস্তব জীবনে না আসুক আপনাকে ...ধন্যবাদ
ধুমকেতু সুন্দর হয়েছে, তবে আরো ভালো করতে হবে।
আহমেদ সাবের সামাজিক বাস্তব একটা সমস্যার সকরুণ চিত্র। লেখায় যেটুকু জড়তা আছে, আশা করছি লিখতে লিখতে কেটে যাবে। গল্প-কবিতায় স্বাগতম।
নৈশতরী সহজ সবলীল কিন্তু ভালো লাগার মত অনেক কিছু আছে, গল্প ভালো লেগেছে !!
সরল আহমেদ বেশ ভালো লিখেছেন, ভালো লাগলো | শুভ কামনা রইলো |

০২ জুলাই - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪