স্বপ্নগুলো বেঁচে আছে এখনও

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

সুমন আফ্রী
  • ১০
আজ বিকালে আমি আত্মহত্যা করবো। কারণ প্রতিটি ঋতুর প্রতিটি বিকাল আমার ভালো লাগে। আমি চাই, আমার প্রিয় সময়টা উপভোগ করতে করতে মারা যাবো। তাই এই সিদ্ধান্ত। মরতে যখন হবেই, তখন নশ্বর দুনিয়াতে বেঁচে থেকে পাপের বোঁঝা বাড়ানোর কোনো মানে হয়না। অবশ্য আত্মহত্যা করাটাও একটা পাপ। আত্মহত্যাকারী কখনো স্বর্গে যেতে পারবে না। কিন্তু আমার বড় ইচ্ছা স্বর্গে যাওয়ার। অথচ্ সবকিছু জেনে-শুনেই সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে আমাকে।

আমি জাহান্নামি হবো। তবে একা নই। আরো কয়েকজনকে সঙ্গে করে নেবো। প্রথমে আমার এই আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে যার নাম বলবো- তিনি হলেন, আমার দেশের শিক্ষামন্ত্রী। শুধু বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীকেই নয় বরং সকল শিক্ষামন্ত্রীকেই আমি দায়ী করবো।
কারণ, তারা আমাদের জন্য যে নীতি প্রণয়ন করেছেন তাতে আমরা শিক্ষা পেয়েছি, বহুজাতিক কোম্পানীর গোলামী করতে হলে তোমাকে পড়ালেখা করতে হবে। জনগণের টাকায় সরকারী চাকুরী করে সেই জনগণকেই সেবা না দিয়ে টেবিলের উপর ঠ্যাং তুলে ঘুম দিয়ে মাস শেষে টাকা তুলতে হলে তোমাকে পড়ালেখা করতে হবে।

তারা আমাদেরকে শেখায়নি যে, পড়ালেখা করে ‘মানুষ’ হতে হবে। মনুষত্ব্য দিয়ে, ন্যায় দিয়ে হৃদয় ভরে তুলতে হবে। শুধু টাকার স্বপ্নই দেখিয়ে গেছেন আমাদের।

এরপর আমি দায়ী করবো শিক্ষকদের। কারণ, তারাও জেনে-বুঝে একই কাজ করেছেন! আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, “লেখাপড়া করে যে, গাড়ী-ঘোড়া চড়ে সে”!! শৈশবেই আমার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছেন লোভ নামক সর্বনাশা ভাইরাস। তাঁরা আমার অবচেতন মনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, তুমি ভালো করে লেখাপড়া করো। তাহলে ভালো চাকরী পাবে। সুখের (?) জীবন পাবে!
যাইহোক! আমি মনে হয় উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি! মৃত্যুর আগে উত্তেজিত হওয়া ঠিক না। আমি এই সুন্দর বিকালটার সৌন্দর্য নষ্ট করতে চাই না।

আমি এখন একটা দশতলা বিল্ডিংয়ের ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। এই ছাদটা থেকেই আমি লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবো। কিন্তু ছাদে এখনো কিছু লোক ঘুরঘুর করছে। তাদের চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবো আমি।

আমি কেনো এই দশতলার ছাদে, বা এখানে আমি কিভাবে এলাম-সেটি বলার আগে তাদের ব্যাপারে বলে শেষ করতে চাই, যাদেরকে আমি জাহান্নামে আমার সঙ্গী বানাবো।

যারা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর সমাজ ব্যাবস্থা আজকে এই অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে, তাদেরকে দায়ী করবো আমি। যারা দীর্ঘদিন ধরে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছে, “পড়াশোনা মানেই চাকরী করো, আর ভালো চাকরী মানেই জীবনসঙ্গী হিসেবে সুন্দরী বউ পাও” তাদের সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো আমি।

আমি কখনো আমার বাবা-মা’কে দায়ী করবোনা। কারণ, তারাও এই সমাজ ব্যবস্থার করুণ শিকারমাত্র।

আত্মহত্যা করার সময় হয়তো পরিবারের কথা মনে পড়বে। তবু আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। কারণ, আমার কোন স্বপ্ন নেই এই মুহুর্তে। স্বপ্ন ছিলো একটা সময়। খুব সাধারণ স্বপ্ন। পড়াশোনা শেষ করে একটা ছোটখাটো কাজ ম্যানেজ করবো। যেখানে গোলামী করা লাগবেনা, দ্বায়িত্বপালন করতে হবে। কিছুদিন কাজ করে কিছু টাকা জোগাড় করে নিজের মতো একটা ব্যাবসা শুরু করবো। একজন রমণীকে জীবনসঙ্গী বানাবো। ব্যাস এতটুকুই। এই সমাজ আমার স্বপ্নকে হত্যা করেছে। আমাকে আধুনিক দাসে পরিণত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

সেই আধুনিক দাসে নিজেকে সমর্পন করার জন্য এখানে এসেছি আজ। সবার কানে কানে মোবাইল ফোন। যোগাযোগ করছে একটা চাকুরীর আশায়। নিজের উপর একটু রাগ হতে লাগলো। কারণ, যোগাযোগ করার মতো আমার কেউ নেই।

আমি এথানে নিজেকে সমর্পন করতে এসেছি। আমার পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটানোর জন্য। কিন্তু ভাইভা শেষে বুঝেছি, হবে না। সব সিট বুকড্।

যত স্বপ্ন ছিলো নিভে গেছে একে একে। সব বিসর্জন দিয়ে পরিবারের স্বপ্ন পূরণের এই চেষ্টাটাও শেষ পর্যন্ত বিফল। আমার জীবনে এই মুহুর্তে কোন আশা নেই আর। সব স্বপ্নের সমাধি হয়ে গেছে। বুঝেছি, লবিংয়ের যুগে চাকুরী পেয়ে উঠা হবেনা। বাবা-মা’র প্রতি সমাজের নিক্ষিপ্ত নির্দয় বানীগুলোরও শেষ হবেনা কখনো।

আর তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আত্মহত্যা করার। যদি আমি মারা যায় পরিবারের সবাই কয়েকদিন খুব কান্নাকাটি করবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি যদি বেঁচে থাকি এবং কোন চাকুরী না পায় তবে যতদিন বেঁচে থাকবো দুনিয়ায় ততদিন সমাজের মুখ ভাঙানী, চাবুকের আঘাত নীরবে সহ্য করতে হবে সবাইকে। এর চেয়ে ভালো মারা যাই। নিজেও বাঁচলাম, পরিবারকে বাঁচালাম। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।

পকেটে রাখা মোবাইলটা বেঁজে চলেছে। ছোট ভাই ফোন দিয়েছে। পরিবারের কর্তা মানে আমার বাবা, তিনি কখনোই আমাকে ফোন দিবেন না। কারণ, বিগত কয়েক বছর ধরে তাঁর সাথে আমার কথা হয়না। ফোনটা কেঁটে দিলাম। একটু পরে আবার ফোন এলো। ভাবলাম, মোবাইলটা বন্ধ করে রাখাই ভালো। আত্মহত্যা করার সময় নিরিবিলি পরিবেশ চায়। ফোনটা কাটতে গিয়েও কাঁটলাম না। শেষবারের মতো একটু কথা বলে নেওয়া যাক। ভালো লাগবে।

ছোট ভাইয়ের বদলে মায়ের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো ওপাশ থেকে। বাড়ি কখন ফিরবো জানতো চাইলো। আমি শুনলাম। ফোনটা কেঁটে দিলাম। ব্যাটারী খুলে প্যান্টের পকেটে রাখলাম।

ছাঁদে কেউ নেই। কয়টা বাজে জানতে পারলে ভালো হতো। হাতঘড়িটা আজ পরে আসা হয়নি। রেলিংয়ে উঠে পড়লাম। শেষবারের মতো দেখে নিলাম চারপাশ। বুকভরে নি:শ্বাস নিলাম। চোখ বন্ধ করতেই অনেকগুলো মুখ ভেসে উঠলো সামনে। অনেক আবেগঘন কথা মনে পড়লো। চোখের কোনাটাও একটু ভিজে উঠলো যেন! তখনই মনে হলো, জন্মদাতা পিতার কন্ঠটা শোনা হয়নি অনেকদিন! শেষবারের মতো না শুনলে অতৃপ্তি থেকে যাবে।

মোবাইলটা ওপেন করলাম। এই সময়ের মধ্যে বাবার কাছ থেকে পঁচিশবার কল এসেছে। আজ তিন বছর পর! আবার কল এলো! ওপাশে মা। কেঁদে ফেলেছেন, বুঝতে পারছি। আমাকে বলল, বাবা না’কি পুলিশের কাছে যাচ্ছেন জিডি করতে। আর কারো সাথে কোনো কথাও বলছেন না! তাঁকেও না’কি কয়েকবার অগোচরে চোঁখ মুছতেও দেখা গেছে!

কথা বলতে বলতে মাগরিবের আযান কানে এলো। মুয়াজ্জিন আমায় ডাকছে। যিনি বিনামূল্যে পানি দিয়ে, অক্সিজেন দিয়ে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন- তাঁর সামনে মাথানত করে সম্মান প্রদর্শনের জন্য।
শুনেছি আযানের সময় শয়তান পালিয়ে বেড়ায়। আযান শোনার পর আমারও একটু ভয় করতে লাগলো। এই সুন্দর পৃথিবী, পরিবার সবাইকে ছেড়ে পরপারে চলে যাবো! বুকের ভিতর অজানা ব্যাথায় মোঁচড় দিয়ে উঠলো মুহুর্তেই। মুহুর্তেই মনে হলো, স্বপ্নদেখা মানুষগুলো কি আত্মহত্যা করে? তাদের স্বপ্নগুলো কি এতোই ঠুনকো যে, সামান্যতেই ভেঙে যাবে? এই মুহুর্তে আমার খুব করুণা হচ্ছে তাদের জন্য, যাদের কারণে স্বপ্নদেখা যুবকেরা বেঁচে থেকেও মরে যায়।

ওদিকে মা বলেই চলেছেন। “আমি আসছি” বলে রেখে দিলাম মোবাইলটা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু যত স্বপ্ন ছিল সেগুলো যদি একে একে নিভে যায় তবে জীবনে সত্যিই কোনো আশা থাকে না। শেষ মুহূর্তে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার মধ্যে বড় ধরণের শিক্ষণীয় বিষয় আছে। অনেক অনেক মানসম্পন্ন একটি গল্প। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আমার জন্য দোয়া করবেন প্লিজ। সবসময় ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৮
আপনার মন্তব্যে আপ্লুত হলাম। শুভকামনা রইলো আপনার প্রতি অনেক... ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৮
মাইনুল ইসলাম আলিফ দারুণ।একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮
অনুপ্রাণিত হলাম। শুভকামনা আপনার প্রতিও...
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অসাধারণ! অপার মুগ্ধতা ও শুভকামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৮
অনুপ্রাণিত হলাম। শুভকামনা আপনার প্রতিও...
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ আপনার গল্প বলার স্টাইল টা ভীষণ ভালো লাগলো। শুভ কামনা অশেষ।
ভালো লাগেনি ৯ জানুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি শুনেছি আযানের সময় শয়তান পালিয়ে বেড়ায়। আযান শোনার পর আমারও একটু ভয় করতে লাগলো। এই সুন্দর পৃথিবী, পরিবার সবাইকে ছেড়ে পরপারে চলে যাবো! বুকের ভিতর অজানা ব্যাথায় মোঁচড় দিয়ে উঠলো মুহুর্তেই।......// অসাধারণ গল্প.....শুভ কামনা রইলো....আসবেন আমার পাতায়...
ভালো লাগেনি ৮ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার লেখাটি পড়েছি ইতিমধ্যেই। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮
মৌরি হক দোলা গল্পের বিষয়বস্তু খুবই ভাল লেগেছে... লেখাটিও চমৎকার হয়েছে... অনেক অনেক ভালোলাগা ও শুভকামনা রইল আপনার জন্য...
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত এককথায় গল্পটি পড়ে মুগ্ধ । ভোট আর শুভকামনা রইল ।
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৮
অনুপ্রানিত হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮
Farhana Shormin সত্যি সুন্দর একটা গল্পের প্লট। ভাল লাগল। ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া আজ বিকালে আমি আত্মহত্যা করবো.. গল্পের শুরুতেই এমন অবতারনা গল্পের চমক। ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ। আমার ‘হিটলার ও কয়েকটি কয়েন’ গল্পটি সময় পেলে পড়বেন। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার লেখাটি পড়েছি ইতিমধ্যেই। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮
মোঃ ইকবাল হাসান ভাল লেগেছে, শুভকামনা লেখকের জন্য.. আমার পাতায় আমন্ত্রণ..
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৮
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৮

২৩ জুন - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪