স্বাধীনতা

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১৩)

শমিত দাস
  • 0
আমার সঙ্গে ঝোরার প্রথম দেখা হওয়াটা বেশ অদ্ভুত।
আমি শমিত। মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে আমার বি.এস.সি। আসলে শুরু করেছিলাম বি.এস.সি.। শেষ হয়েছে কিনা এখনও জানি না। আমি রেজাল্ট আনতে যাই নি।
তখন সদ্য এক প্রেমে রয়েছি। মেয়ের নাম অনামিকা। ডাকনাম অণু। অণুর সাথে আমার সদ্য সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে তখন। আমি গভীর ভালবাসার টানে তার জন্য এক চিঠি লিখেছিলাম। চিঠির নাম দিয়েছিলাম প্রিয়তমেষু। সেই চিঠি অণুর কাছে কোনদিনও পাঠাইনি। একদিন পকেটে সেই চিঠি নিয়ে হাজির হলাম আমার এক স্যারের বাড়িতে। আমি ছোটবেলায় সেই স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তাম।
অদ্ভুত ব্যাপার হল, স্যার ইংরেজি পড়ালেও তাঁর মাথায় কি করে যেন সিনেমার পোকা ঢুকে গিয়েছিল। ছোটবেলায় আমার একটু লেখালিখির শখ ছিল স্যার জানতেন। ওইদিনই হঠাৎ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
- শমিত, এখনও লেখো?
শত হলেও শিক্ষক মানুষ! আমি আর কি করে মিথ্যে বলি? গভীর প্রেমে ভরা চিঠির ডিজিটাল ভার্সনের প্রিন্ট আউট তখন আমার পকেটে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে বের করে দিয়ে বললাম, "হ্যাঁ স্যার"। সেই বের করে দেয়াই আমাকে দেখা করিয়ে দেয় ঝোরার সঙ্গে।
সেই চিঠি নিয়ে আমরা সেদিন রাত জেগে স্ক্রিপ্ট করে তার ৩-৪ দিন বাদে সেই সিনেমার শুট করি।
আর সেই সিনেমার ডাবিং-এর সময় আমার সাথে দেখা হয় ঈপ্সিতার। আমার ঝোরার। ঝোরা আমাদের নায়িকার হয়ে তার কথাগুলো বলে দিয়েছিল। সেদিন আমি ওকে শুধুই দেখেছিলাম। কথা হয়নি কোন। ডাব করে চলে গেল। আমি স্যারের কাছ থেকে লজ্জায় কখনও ওর নাম্বারও চাইতে পারিনি।
আমি আসলে বড়সড় প্রেমিক মানুষ তো, তাই এর মাঝে আরও দু’চারটে ছোটখাটো প্রেম এসেছে-গেছে। সেগুলো নিয়ে আমি খুব একটা মাইন্ড করিনি।
তারপর একদিন গার্লফ্রেন্ডের অভাবে এদিক ওদিক মেয়ে খুঁজতে গিয়েই মুখবইয়ে খুঁজে পেলাম ঈপ্সিতাকে। আমার ঝোরা। হৃদয় আমার তিড়িং করে উঠলো। এই তো, এই হয়ত তাহলে আমার আসল প্রেম। এতদিন তো এর জন্যই অপেক্ষা করে বসে ছিলাম। মুখবইয়েই আমাদের প্রথম কথা। প্রথম কথার দুদিন পর প্রথম দেখা। নন্দনের চায়ের দোকানটার ঠিক পাশে। আসলে আমি ছোটবেলা থেকেই বন্ধুদের দেখে দেখে শিখেছি যে মেয়ে পটাতে হলে প্রথমে তাকে নিয়ে সিনেমা হলে যাও। বেশ অন্ধকার থাকে। প্রথমবার হাত ধরতে ওখানেই সুবিধে। আর বন্ধুদের কথা মানব না এমন ক্ষমতা আমার আর কোথায়!
ঈপ্সিতার সাথেও আমার সেদিন সিনেমা দেখারই কথা ছিল। নন্দনের সামনে দেখা করে, এক কাপ চা খেয়ে, ওর বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে গেলাম সিনেমা দেখতে। আমি, সে আর তার দুটো বন্ধু। ছোটো পরিবার!
সেই দেখা থেকে তারপর গুনে গুনে টানা ২০০ দিন আমরা রোজ দেখা করেছি। সেই দেখার মাঝে লুকিয়ে আছে কত স্মৃতি। সারাদিন একসাথে ঘুরে বেড়ানো, ভিক্টোরিয়ার বাদাম ভাজা, সোনাগাছির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কোন "মাগী" কিরকম - সেটা নিয়ে আলোচনা, মিলেনিয়াম পার্কে প্রথম চুমু আরও কত কিছুই না।
আমার কথা তো অনেক কিছু বললাম। এবার একটু "ওর" কথা বলি। ওর পুরো নাম ঈপ্সিতা দেবনাথ। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ও তখন বি.এ. করছে।
সব থেকে মজার ব্যাপার হল, ওর একটা স্টেডি বয়ফ্রেন্ড ছিল। তার নাম শুভ। শুভ ভট্টাচার্য। পেশায় ডাক্তার। তারপরও যে ও কেন আমার সাথে প্রেম করছে তা প্রথমে বুঝিনি। আমি প্রথম প্রথম চেষ্টা করে যেতাম যাতে আস্তে আস্তে “শুভ” নামটা ওর মন থেকে মুছে যায়। আস্তে আস্তে সেটা হয়ে ওঠে শমিত। ওর বুক্কা। আমি যেমন ওকে ঝোরা বলে ডাকতাম, ও তেমনি আমাকে ডাকত বুক্কা বলে। ন্যাকামি মনে হোক আর যাই হোক, এটাই চলত আমাদের মধ্যে।
পরে আস্তে আস্তে যত ওকে জেনেছি, জানতে পেরেছি (যদিও বুঝতে পারিনি) যে, ও আসলে আমাদের মত ছা-পোষা মানুষের ফিলজফিতে বিশ্বাসই করে না। ওর মত, প্রেম একটা পবিত্র ব্যাপার, যা মানুষকে সমৃদ্ধ করে। মানুষকে আরও অনেক কিছু জানায়, শেখায়। সেই শেখা, সেই জানা, সেই অনুভূতি একজনের থেকে নিয়ে কেন নিজেকে আটকে রাখব? অনেকের থেকে নেয়া এবং দেয়াটা যেখানে এই সমাজের রীতিনীতি, সেখানে প্রেম কেন তার থেকে পিছিয়ে থাকবে?
সেই প্রেমকেও ও বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল সবার মাঝে। আমি বেচারাও সেই সবার মধ্যে একজন হয়েই থেকে গেলাম।
থেকে গেলাম, কিন্তু মানতে পারলাম না। আমার কেবলই মনে হত, এ কেমন ভালবাসা? যে আমাকে ভালবাসে মন প্রাণ উজাড় করে, সে কেন সেই একই মনঃপ্রাণ উজাড় করে আরেকজনকেও ভালবাসবে?
আমার শুরু হল নিজের সাথে খেলা। ভয়ঙ্কর এক খেলা। সবসময় চাইতাম ওকে আগলে রাখতে। নিজের কাছে রাখতে। আর বাকি সব প্রেমকে ভুলিয়ে দিতে।
বুঝিনি, বনের পাখিকে খাঁচায় বেঁধে রাখলেই সে পোষ মেনে যায় না। সে ছটফট করে সেই খাঁচা থেকে বেরোবার জন্য। সে বিদ্রোহ করে।
ঝোরাও ঠিক তাই করল। খাঁচা ভাঙ্গার জন্য, নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিদ্রোহ করে বসল।
সেই বিদ্রোহ আমি ভাঙতে পারিনি।
আমি প্রেমিক মানুষ। প্রেম ছাড়া কি আর চলে? আর ছেলেরা কি আর একজনের প্রেমে মজে নিজের খিধে মেটাতে পারে? মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ফিলজফি না বুঝতে পারলেও, নিজের বেলায় অ্যাপলই করতে তারা পারে। আমিও করলাম।
সুদক্ষিণা। সুদক্ষিণা সরকার।
কিন্তু মনের খিধে মিটল না তাতে।
আবার ফিরে আসতে গিয়ে দেখলাম, খাঁচার দরজা খোলা।
আমি তখন রক্তের সাদ পেয়ে গেছি। ছাড়তে পারছি না আর কিছুতেই। শরীরের খিধে মেটাতে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেছি।
চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে পেলাম আমার ঝোরারই বন্ধুকে। শ্রাবন্তি। তার সাথেই একদিন শুটিং-এর অজুহাত দিয়ে নোংরামি করে বসলাম।
কিন্তু আবার সেই শরীরের খিধে মিটল, কিন্তু মনেরটা মেটাই কি করে?
ঝোরা আমাকে সবসময় বলত, শরীর আর মনকে কখনও এক করিস না। মন তাতে অপবিত্র হয়। কিন্তু এই অপবিত্রতার সাদ যে একবার পেয়েছে, তাকে সেই পবিত্রতার সাদ চাখায় কার সাধ্যি?
আমি আবার সেই বনের পাখির খোঁজেই গেলাম। কিন্তু ঝোরা ততদিনে আমার সেই ঘটনার সবই জানতে পেরে গেছে। ভালবাসা আদায় করতে গিয়ে পেলাম একরাশ ঘৃণা। আমার প্রাপ্য ঘৃণা।
আজ আমার ঝোরার সাথে আমার ভৌগলিক দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের। কিন্তু মনের দূরত্ব কয়েক হাজার কিলোমিটারের। আমার ঝোরা ছেড়ে চলে গেছে আমাকে।
কিন্তু আজ এসে আমি সত্যি জোর গলায় বলতে পারি ঝোরা, তুই স্বাধীন, তুই আজ আমার সাথে থাকলেও তোকে পরাধীন করে রাখার চেষ্টা আমার আর থাকতো না। তুই যে ভালোবাসা সেদিন আমাকে দিয়েছিলি, আমি তোকে তখন তা দিতে পারিনি। সেই পবিত্র ভালোবাসা। আজ পারি। আজ আমি সেই পবিত্রতার খোঁজ পেয়েছি। হয়ত, হয়ত কেন, তাই, তুই দূরে চলে গেছিস বলেই আমি সেই পবিত্রতার খোঁজ পেয়েছি। ভালবাসতে শিখেছি।
আজ আমিও স্বাধীন। আমি ভালবাসতে পারি আমার মত করে। তোকে। আর কাউকে নয়, এটা আমি দূর থেকেও বলতে পারি। মন থেকেও নয়, শরীর থেকেও নয়। এই স্বাধীনতার সাদটা আমার দরকার ছিল, কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দরকার ছিল কি?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ কবির হোসেন ভাল লাগলো. ধন্যবাদ.
এশরার লতিফ ভালো লাগলো ভালবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা।
মামুন ম. আজিজ আরও ভালো কিছূ উপষ্থাপতি হতে পারত..তবে যা হয়েছে তাতে গলা ডুবানো যায়.....
নাইম ইসলাম বেশ ভালো লাগল সমিত'দা আপনার গল্প।আপনিতো ওপার বাংলার লেখালেখি নিয়ে দীর্ঘদিন ব্যস্ত! .
ধন্যবাদ ভাইয়া :) আমি খুব বেশি লেখালিখির দিকে নেই ভাইয়া :)
সুমন কিছু ব্যাপার থাকে যেখানে কেউ ভাগীদারি মেনে নিতে পারে না তেমনই একটা বিষয় প্রেম বা ভালবাসা। একই সময়ে এটা একাধিক্যে ভাগ করা যায় না, করলেও সেটা হয়ে ওঠে বেলেল্লাপনা। এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি। গল্প হিসেবে বলতে গেলে ভাল লাগল।
ধন্যবাদ. দোয়া করবেন :)
আহমেদ সাবের কথাপুরুষ 'এর শমিত দাসকে স্বাধীনতায় খুঁজে পেলাম না। গতানুগতিক কাহিনী। উপস্থাপনায় নতুনত্ব অনুপস্থিত। সমাপ্তিটা বড় সাদামাটা।
ধন্যবাদ ভাইয়া. আসা করি আগামীতে আপনাদের আশাপূরণ করতে পারব :) দোয়া করবেন :)
শমিত দাস ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে :) কিন্তু ভাইয়া আমি আপনাদের থেকে বয়সে অনেক ছোটো। আমি আমার এখন পর্যন্ত দুটো লেখার প্রত্যেকটিই এখানে দিয়েছি আমি। দোয়া করবেন যেন ভালো লিখতে পারি :)
এফ, আই , জুয়েল # অসাধারন গল্প । অনেক সুন্দর ।
মিলন বনিক শমিত ভাই..আপনার আগের গল্পও পড়েছি...এই গল্পের ক্ষুধা নিয়ে আগের গল্পে আবার ঢু মারলাম...অসাধারন গল্পের হাত..এবং নিশ্চিত হলাম কিনা জানাবেন যে ওপার বাংলার লেখালেখির জগতে আপনার সরব পদচারনা দীর্ঘদিনের...খুব ভালেঅ লাগল আপনার গল্প...আমার গল্পের হাটে আপনাকে আমনত্রন....

১৭ জুন - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪