বৃষ্টি এবং লেবুচুরির গল্প

বৃষ্টি (আগষ্ট ২০১২)

সুহৃদ আকবর
  • 0
  • ৮৫
আষাঢ় মাসের শুরুতে আমরা নানার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। থাকতাম প্রায় একমাস। বেড়ানো শেষ হলে যখন বাড়িতে ফিরে আসতাম; তখন অপেক্ষায় থাকতাম, আবার কখন আষাঢ় মাস আসে। আমার নানার বাড়িটি ছিল-আম, জাম, লিচু, আনারস, পেয়ারা সহ নানা ফল-ফলাদিতে পরিপূর্ণ। সে বছরও আমরা মায়ের সাথে নানার বাড়ীতে গেলাম। আমার নানার বাড়ি ছিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। সে জায়গাটি এক সময় সন্ত্রাসের জনপদ নামে পরিচিত ছিল। দিনে দুপুরে মানুষকে হত্যা করা হতো। কিন্তু আমার কাছে তা মোটেই সন্ত্রাসের জনপদ বলে মনে হয় না। পুরো ফটিকড়ি এলাকাটা সবুজ গাছ-গাছালি, নানান প্রজাতির পাখি, অবারিত সবুজে মোড়া চা- বাগান আর লাল মাটিতে পরিপূর্ণ। আমি তার নাম দিয়েছি চট্টগ্রামের রাণী। তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটা নদী। নদীটির নাম হালদা। সে নদীতে শীতকালে পানি থাকে না। কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। আষাঢ় এলে বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায় সে নদীটি। তখন তার বুকে জাগে ঢেউ। সে তখন উতলা যুবতী হয়ে ছুটে বেড়ায় কালনাগিনী সাপের মতো আঁকাবাঁকা। অবাধ্য ক্ষ্যাপাটে ছেলের মত অনিরুদ্ধ হয় তার গতি। সে বয়ে চলে তার আপন মনে। আর ভিজিয়ে দিয়ে যায় ভূ-পৃষ্ঠকে। সে জন্য ফটিকছড়ি আমাকে প্রতিনিয়তই আকর্ষণ করতে থাকে, আজন্ম করবে, আমি চিরঋণী হয়ে থাকবো তার কাছে আমৃত্যু।
নানার বাড়িতে গিয়েই আমি কাপড়-চোপড় খুলে ফেলতাম। চলে যেতাম হালদা নদীর পাশে। মামাতো ভাই সোহেল থাকতো আমার সাথী। তখন খালি গায়ে নদীর কুলে গিয়ে আমি দাঁড়াতাম। নদীটি তখন কী সুন্দর! স্বচ্ছ পানিতে ভরপুর থাকতো। দেখতাম, কী সুন্দর পানি অবিরাম হেলে দুলে বয়ে চলছে কালনাগিনীর মতো। মনে মনে ভাবতাম, এতো পানি কোথায় যাচ্ছে? নদীর পাড়ে ছিল মেহগনি, আকাশমণি আর সেগুন গাছ। সেখানে বাস করতো কাক, টিয়া, ময়না, তোতা আর শালিক পাখি। আর ছিল সারি সারি তালগাছ; সে গাছে ঝুলতো বাবুই পাখির বাসা। পাখির কিচির মিচির কলধ্বনি পানির স্রোত আর বাতাসের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। আমি দেখতাম আর পুলকিত হতাম। যতই দেখতাম ততই আমার ভালো লাগতো। চোখে ধরতো নেশা। তখন বাতাস এসে আমার শরীর ছুঁয়ে দিত। আমি তখন দু’হাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতাম। যেন প্রিয়ার নরম হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমার শরীরে। সে এক অন্য রমক অনুভূতি। আলাদা স্বাদ। এটা অনুভবের ব্যাপার মাত্র।
একদিন দুপুর ১২টা। আকাশ থেকে পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। প্রকৃতিতে তখন চলছে আলো- আধারির খেলা। আমি আর সোহেল দাঁড়িয়ে আছি একটা বটগাছের নীচে। দূরে একটা রাখাল ছেলে ছড়ি হাতে গরুর পাল সামলাতে ব্যস্ত। বিশ গজ সামনে চোখে পড়ছে একটা লেবু বাগান। বাগানের মালিকের নাম তালেব আলী। এলাকার উন্নয়ন ও শিক্ষা বিস্তারে তাঁর পূর্ব পুরুষদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। দাঁতমারা এ.বি.জেড শিকদার উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তাঁরই পূর্ব পুরুষ। যাক সে কথা। সে এক ভিন্ন অধ্যায়। এবার ফিরে আসি মূল কথায়।
হঠাৎ আমাদের মাথায় শয়তানী বুদ্ধি ভর করলো। চিন্তা করলাম আজ আমরা লেবু চুরি করবো। কিন্তু পাহারাদার কুলি লোকটিকে কিছুতেই ফাঁকি দিতে পারছিলাম না। বদের হাড়্ড়ি সে একটু সময়ের জন্য ও বাগান থেকে সরছে না। সে শুধু এদিক ওদিক, হাই-হুই করছে। বাগানের পাশেই ছিল তার ঘর। ঘরটি ছিল মাটির, ছাউনি ছিল টিনের। একটু পর পনের ষোল বছরের একটি মেয়েকে দেখলাম বাবা বলে পাহারাদার কুলিকে ডাক দিলো। মেয়েটির গায়ের রং শ্যামলা। গায়ের রং একেবারে সাদা না হলেও বেশ আকর্ষণীয় ছিল সে মেয়েটি। শ্যামলা বরণের এমন মেয়ে আমি এর আগে কোনোদিন দেখিনি।
আমরা চুপিচুপি বাগানের ভেতর ঢুকলাম। আমি দুই হাতে দুইটা করে চারটা লেবু নিলাম। একটি লেবু দেখলাম খুবই রসালো, সেটি তুলতে গিয়ে আমার হাতে কাঁটা বিঁধলও। আমি ব্যথা পেলাম, কিছুক্ষণ পর সে স্থান থেকে রক্ত বের হলো। ইতিমধ্যে মামাতো ভাই সোহেল আমাকে রেখে দৌড়ে পালাল। কারণ সে পাহারাদার কুলিকে আসতে দেখেছে, আমি দেখি নাই। যার কারণে আমি ওর সাথে সমানে সমানে দৌড়াতে পারলাম না। তবে চেষ্টার ত্র“টি করিনি। উপরন্তু দৌড়াতে গিয়ে আমি একবার উচ্ছা খেয়ে পড়ে গেলাম। এবং শেষ পর্যন্ত কি হলো- আমি ধরা পড়ে গেলাম সেই পাহারাদার কুলির হাতে। পিছন থেকে তার কালো লোমশ হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম। আমার গাল বেয়ে ঘাম বের হতে লাগলো। আমি কাঁদতে লাগলাম।
এদিকে মামাতো ভাই সোহেল বাড়িতে গিয়ে আমার বড় মামাকে সব ঘটনা খুলে বললো। মামা এক মুহূর্ত দেরি না করে হন্যে হয়ে ছুটে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। পাহারাদার কুলি লোকটি কোন কথা বললো না। কারণ, আমার মামাকে সে চিনতো এবং মান্য করতো। সে জানতো না যে আমি মফিজের ভাগিনা। আমার মামার নাম ছিল মফিজ। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এরপর থেকে আমি আর চুরি করিনা। কারণ, এই ঘটনার পর মা আমাকে বলেছেন- বাবা, চুরি করে না... ’চুরি করা মহাপাপ’। সে কথাটি এখনো আমার হৃদয় পটে গেঁথে আছে। কিন্তু সেই বৃষ্টিভেজা দিনগুলোর কথা, মামাতো ভাই সোহেলের সাথে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা আর মামার পাগলকরা ভালবাসার মিষ্টি স্মৃতি এখনো আমাকে বড়ই আলোড়িত করে তোলে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক নিজেদের কাছাকাছি হালদা পরের গল্প শুনে ভালই লাগছে...অনেক শুভ কামনা...
আহমেদ সাবের ছোটকালে এ ধরনের চুরি কম-বেশী আমরা সবাই করেছি। স্মৃতিচারণের ভঙ্গীতে সাবলীল লেখাটা ভাল লাগল।
তানি হক দারুন লাগলো আপনার মামা বাড়ির লেবু চুরির গল্প ..শুভকামানা ও ধন্যবাদ
Sisir kumar gain বেশ সুন্দর স্মৃতি কথা ।ভালো লাগলো।শুভেচ্ছা রইলো।
আরমান হায়দার আত্মজীবনি মুলক সুন্দর লেখা। ভাল লাগল। হালদা নদীর নাম শুনেছি অনেক । কিন্তু যাওয়া হয়নি।
তান্নি ভাইয়া, বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে এতটুকু কার্পন্য কোথাও আড়াল ছিলনা আপনার লেখায়. নিমিষেই হারিয়ে গিয়েছিলাম গ্রামে কাটানো দিনগুলোর সোনালী অতীতে.আপনি অনেক ভালো করবেন ইনশাল্লাহ. মূল্যায়ন করলাম. ভালো থাকবেন.
ধন্যবাদ, কাছে থাকুন। বাস্তব নাকি ?

০৫ জুন - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী