সবুজ গাঁয়ের কথা

সবুজ (জুলাই ২০১২)

সুহৃদ আকবর
  • ১৩
  • 0
  • ১০৫
আমার একটি গ্রাম আছে। তার নাম নয়নপুর। তার গায়ের রঙ সবুজ। আবার পরে আছে সবুজ শাড়ি। সে সবুজে মিশে থাকতো আম, জাম, নারিকেল, সুপারি, তাল-বেল, নিম, কাঁঠাল, লিচু, হিজল, জারুল, তমালের মনমাতানো সৌরভ। আর রয়েছে মাঠের পর মাঠ সবুজ ধান ক্ষেত। সেখানে বাবুই পাখিরা খেলা করতো। আসতো ময়না-টিয়াও। ধানের আগায় খেলা করতো ঘাসফড়িং। সে আমার আত্মার আত্মীয়। সে সবুজের অবারিত বাগানে হেসে খেলে আমার বেড়ে ওঠা। সে গ্রামকে ভুলি কেমনে। সেখানে আছে একটি নদী । নদীটি বর্ষাকালে পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। পানিতে খেলা করে গ্রামের কিশোর-যুবার দল। কলসি কাঁখে গ্রামের তরুণীরা দলবেঁেধ পানি আনতে যায়। আর খিলখিলিয়ে হাসে। সে হাসিতে ঝড় ওঠে যুবকদের দেহ-মনে। ছেলেরা দেয় চোখ ইশারা। এরপর শুরু হয় প্রেম এবং কলসি নিয়ে টানাটানি থেকে আরো কত কী। সে এক মনোরম দৃশ্য। নদীতে জেলেরা জাল টানে। সে জালে ধরা পড়ত রুই, কাতলা, বোয়াল, ইলিশ, মাগুর, পুঁটি, রূপচাঁদা, সুরমাসহ অসখ্য ছোট-বড় মাছ। আর কাজের ফাঁকে মনের সুখে গাইত ভাটিয়ালি গান। সে গানের সুরে মোহিত হত চারদিক। মাছেরা লাফিয়ে উঠত। সোনালি পানিতে দেখা যেত পুঁটি আর কাঁচকি মাছের ঝিলিক। রাখালেরা গরুর পাল নিয়ে খালি চরে ছেড়ে দিত। আর অবসরে বটতলায় বসে বাঁশি বাজাতো। সে বাঁশিতে সৃষ্টি হত আশ্চর্য এক সুর লহরী। সে সুর কত তরুণী-যুবতী, সুন্দরী মেয়েকে যে আনমনা করে দিত তার হিসেব নেই। মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠকাবি বড়ৃচন্ডীদাসের শ্রীকৃঞ্চকীর্তন কাব্যের বংশী খন্ডে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে সে কথা:-
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নইকুলে।
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে।।
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন।
বাঁশীর শবদেঁ মো আঊলাইলোঁ রান্ধন।।
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি সে না কোন জনা।
দাসী হআঁ তার পাএ নিশিবোঁ আপনা।।
নদীর ধারে ছিল কাশবন। বাতাসে দুলে উঠতো সাদা কাশফুল। বালক-বালিকারা স্কুলে যাবার পথে সে ফুল ছিঁড়ে খেলা করতো। মাঝেমাঝে সে বাগানে বই রেখে স্কুল পালাতো দুষ্ট ছেলের দল। চলে যেত নাটকপাড়ায়। দেখতো সাপ নাচানো অথবা খেলতো কানামাছি বা গোল্লাছুট।
আমার মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তাঁর একটি সবুজ শাড়ি ছিল। সে শাড়িতে ছিল দশ-বারোটা তালি দেওয়া। আমি হলাম তাঁর ছোট ছেলে। বড় আপার মুখে শুনেছি, আমি যখন পেটে ছিলাম তখন মায়ের অনেক কষ্ট হয়েছে। এমন কি আমি যেদিন পৃথিবীতে আসি সেদিন মা বেহুঁশ হয়ে যান। কারণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুর্বল হয়ে গেছে তাঁর শরীর। আর আমি হয়েছি অনেক মোটাসোটা। মনে পড়ে, যখন আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম। ছুটি হতো বিকাল ৪টায়। এসে দেখতাম তখনও মা ভাত খাননি। আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার গায়ে ফুটে থাকতো শিশির বিন্দুর মতো ঘামের কণা। আমি মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে টানতাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরতেন। আমার ঘাম মুছে দিতেন। বলতাম, ভাত খাবো। মা আমাকে ভাত বেড়ে দিতেন। মায়ের শাড়িটি ছিল অনেক পুরনো। কারণ, বাবা ছিলেন কৃষিজীবী মানুষ। আয় বেশি ছিল না। তাই মাকে নতুন শাড়ি কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। আর আমার মাকেও সে জন্য পুরাতন শাড়ি পরে থাকতে হতো। তবু মা থাকতেন সব সময় হাসিখুশি। আমার মাকে কখনো বাবার সাথে মুখ বেজার করে থাকতে দেখিনি। কখনো দেখিনি খারাপ ব্যবহার করতে।
তবে এখন গ্রামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সবুজ গাছপালা কমে যাবার ফলে আগের সে সৌন্দর্য আর চোখে পড়ে না। নয়নজুড়ানো মনমাতানো চিরহরিৎ বন আর নেই। খোঁড়া অজুহাতে ধ্বংস করা হচ্ছে মাইলের পর মাইল সবুজ বন। পাহাড়ি এলাকায় গেলে আমাদের তা চোখে পড়বে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি এলাকায়। সে কারণে, আমরা নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি। বন্যা, খরা হচ্ছে বারবার। আর বিশুদ্ধ অ∙িজেনের অভাবও দেখা দিয়েছে। যার ফলে আমাদেরকে নানান অসুখ-বিসুখের মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। আসুন, আমরা আমাদের দেশকে মায়ের মতো ভালবাসি। তার শরীর পরিপূর্ণ করে তুলি সবুজে সবুজে। তার জন্য আমাদেরকে বেশি বেশি দেশি গাছ লাগানো দরকার। তাহলেই কেবল আমাদের চারপাশকে আমরা নির্মল আরো পবিত্র আরো স্বাস্থ্যকর দেখতে পাবো। আর আমাদের নতুন প্রজন্ম নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে দেশের মাটিতে। তার জন্য আমাদের প্রয়োজন সবুজ একটি গ্রাম, সবুজ একটি শহর, সবুজ একটি দেশ। সবুজে সবুজে ভরে উঠুক আমাদের সবার আঙ্গিনা। আসুন, তাতেই আমাদের জীবনের সৌন্দর্য আর আনন্দ খুঁজে ফিরি।
এখনো আমার মা জীবিত আছেন। তবে বাবা আর বেঁচে নেই। মা এখন নতুন নতুন শাড়ি পরেন। বড় ভাইয়েরা কিনে দেয়। আমাদেও এখন আর আগের মত অভাব নেই। বাড়িতে গেলে মায়ের সাথে গল্প করে সময় কেটে যায় আমার। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গতবার বাড়িতে যাবার পর মা আলমিরা খুলে একটি শাড়ি দেখালো। বললো, চিনতে পারিস কিনা বল? সে শাড়িটি চিনতে আমার মোটেই কষ্ট হয়নি। যার সাথে জড়িয়ে আছে আমার লাল, নীল রঙের হাজারো টুকরো টুকরো স্মৃতি। কারণ, সে শাড়িটিতে যে এখনো আমার মায়ের গন্ধ লেগে আছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sisir kumar gain ভাল লিখেছেন ।আরো লিখবেন আশা করি।ধন্যবাদ।
সিয়াম সোহানূর অপূর্ব একটা ছবি একেছেন ভাই। এই ছবিটি চেনা ।
সূর্য চর্চায় শাণিত হোক অক্ষর বিন্যাস। সুন্দর প্রচেষ্টা মায়ের ছেড়া আচল(সত্যিকারের মা এবং দেশমাতার সবুজহীন হওয়া দুটোই) হৃদয় ছুয়ে গেছে
স্বাধীন ভাল লাগা রইল গল্প প্রচেষ্টায়। আরো অনেক ভাল ভাল গল্প পাওয়ার আশায় রইলাম। এ সংখ্যার শেষ লেখাটা পড়া হল এ গল্প দিয়ে।
মাহবুব খান অনেক আবেগ ময় গল্প ভালো লাগলো
মিলন বনিক মনজুড়ানো আত্মকথন..সাথে অনেক দিন পর বড়ৃচন্ডীদাসের শ্রীকৃঞ্চকীর্তন পড়লাম..ভালো লাগলো...
আহমেদ সাবের অনেকটা আত্মচরিতের মত মনে হল। সাদামাটা লেখা। গ্রামের হারিয়ে যাওয়া সম্পদ নিয়ে আক্ষেপ। সাথে কিছুটা পরিবার প্রসঙ্গ । মন্দ হয়নি লেখাটা।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন .....................ভালই লাগল গল্পটা, নিজের কথা। শুভেচ্ছা রইল।
রোদের ছায়া এটা ঠিক গল্প ও না , কিছুটা আত্মকথন .......ভালই লাগলো ....তবে কবিতার ঘরে না হয়ে গল্পের ঘরে হলে সমস্যা থাকত না ( বিষয়টা গ.ক.খেয়াল করলেও পারত)

০৫ জুন - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী