নিদাঘ

সবুজ (জুলাই ২০১২)

খালিদ সাফওয়ান (প্রান্ত)
  • ১২
  • ১০৪
* এক *

-‘সবুজ রঙ ছাড়া তুমি কি কিছুই বোঝ না? এতগুলা সবুজ রঙ্গের গেঞ্জি আছে; এরপর কি মনে করে তুমি আবার একই রঙ্গের শার্ট কিনে আনলে?’ ঝাঁঝের সাথে কথাগুলা বলে গেল তুলি।

-‘না বুঝি না। কারণ এটা আমার প্রিয় রঙ’। মুচকি মুচকি হেসে তুলিকে আরও ক্ষেপিয়ে দিতে চাইলো রানা।

-‘জামা পরবা সবুজ, কলম কিনবা সবুজ কালির, খালি সবুজ আর সবুজ’। উফ অসহ্য বলে গজগজ করতে থাকে তুলি।

-‘কেন? তোমার সমস্যা কি? সবুজ হল প্রকৃতির রঙ’। জানালার দিকে তাকিয়ে উদাস হয়ে রানা কথাগুলা বললো যেন তুলি রাগের চুড়ান্তে উঠে যায়।

-‘আর একটা সাহিত্য করবা কি আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো’। রাগে গজ গজ করতে করতে হুমকি দেয় তুলি।

-‘আমাকে খুন করলে তোমার কি হবে গো? তুমি তো বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে?’ বলেই এক হাত দিয়ে টান দিয়ে তুলিকে নিজের আলিঙ্গনে নিয়ে নেয়। তুলি কোন কথা বলতে পারে না। শুধু চাপা গোঙ্গানীর মত শব্দ করে বলে, ছাড়ো আমাকে। ফর্সা মুখটা তার লাল হয়ে গেছে। রানা ছাড়ে না। গন্ডি অতিক্রম করা চির অবাধ্য দূর্বোধ্য আরাধ্য ভালোবাসার গভীর আলিঙ্গনে কতক্ষণ ছিল তা মনে নেই তুলির।


রানা ফলিত রসায়নে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে আর তুলি অ্যাকাউন্টিং এ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ক্যাম্পাসেই পরিচয়। সেখান থেকেই প্রেম। মাত্র তিনদিন হল ওরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেরাই বিয়ে করে ফেলবে। তুলির ধারণা ওদের সম্পর্ক বাবা কিছুতেই মেনে নিবে না। পরশু ওদের বিয়ে করতে যাবার কথা। শুধু তুলির কথা চিন্তা করে রানা এমন একটা অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। যেই জেদী মেয়ে, কি করতে কি করে বসে ঠিক নেই। যা হবার হবে! এটা মনে নিয়েই ওরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে তুলির বিয়ের কথা প্রায় পাকাপাকি হয়ে গিয়েছে। ছেলের পুরা পরিবার অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন। বিয়ের পরই তুলিকে নিয়ে যাবার কথা। তুলি কিছুতেই রাজি নয়। ছেলের নাম তূর্য। দেখতে শুনতে ভালই। কিন্তু তুলি বেঁকে বসে আছে। এই নিয়ে ওর বাবা ওর উপরে ভীষণ নারাজ। একমাত্র মেয়ে। তুলির বাসায় থমথমে অবস্থা। এর মধ্যে ওরা নিজেরাই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রানা রাজি ছিল না এই অবস্থায় বিয়ে করার জন্য কিন্তু তুলির জিদের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে।


-হ্যালো? কে রে নিপা? তোরা সবাই রেডীতো? আমি আসছি এখনই। তুলি দ্রুত বলে গেল। আজকে ওদের কাজী অফিসে বিয়ে করার কথা। সকাল থেকেই বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করছে। বাড়ি থেকে বের হতে হবে কাউকে কিছু না জানিয়ে।

-তুলি! ঠান্ডা মাথায় একটু আমার কথা শোন। ওপাশ থেকে বান্ধবী নিপার করুণ গলার স্বর শুনে তুলি ঘাবড়ে যায়।

-কি হয়েছে রে? তুলির গলার স্বর আটকে যায়।

-তুই এখনই পি জি হসপিটালে আয়।

-নিপা, ফাজলামি করিস না। তুই জানিস এখন আমার কোথায় যাবার কথা। হসপিটাল এর কথা বলছিস কেন?

-ফাজলামি না। রানা ভাই এখন... বলেই নিপা কাঁদতে থাকে ওপাশ থেকে।

-কি হইসে রানার? বলেই তুলির মনে হল অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।

-রানা ভাই শাহবাগের মোড় ক্রস করার সময় একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দেয়। এখন উনি পি জি তে ‘আই সি ইউ’ তে আছে।

এইটুকু শুনেই নিপা ফোনটা ক্র্যাডলে রেখে দৌড়ে ঘর থেক বের হয়ে যায়।


বন্ধু বান্ধবরা যারা খবর পেয়েছে তারা রানার বেডকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি এক দৃষ্টে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে রানার হৃৎস্পন্দন এখনও একটু বাকী আছে। সবাই একটু একটু পর পর চোখ মুছছে। তুলি নির্বাক। কিছুই বলছে না। তুলির পরনে রানার দেয়া ‘সবুজ’ রঙ এর একটা শাড়ি। রানা ওকে কিছুদিন আগে উপহার দিয়েছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎ রানার বুকটা দুইবার একটু উঁচু হয়ে উঠেই থেমে গেল। মনিটরের হার্টের রেখাটা সবার চোখের সামনেই সরলরেখা হয়ে গেল। নিপা মুখে ওড়না চাপা দিয়ে আই সি ইউ থেকে বের হয়ে গেল। তুলি রানার গালে হাত দিয়ে বললো, ‘রানা!, দেখো আমি তোমার দেয়া সবুজ শাড়িটা পরে এসেছি। দেখো রানা। তাকাও একবার’।


* দুই *

পাঁচ বছর পরের কথা। অস্ট্রেলিয়াতে স্বামীর সংসারে ভালো থাকলেও মনে অনেক অশান্তি ওদের। বিয়ের সাড়ে সাত মাসের মাথায় তুলি’র একটা ছেলে হয়। তুলির স্বামী তূর্য, বৌ বাচ্চা বলতে অজ্ঞান। ভীষণ ভালবাসে সে তুলিকে। তুলি’র অতীত তার কাছে অজানা। শুধু জানে তুলি একজনকে পছন্দ করতো। এইটুকুই। কিছুই মনে করেনি তূর্য। তুলির অতীতের কোন বিষয় নিয়ে কখনো কোন সন্দেহ হয়নি তার মনে। তূর্যর মনে একটাই কষ্ট। ছেলেটা স্বাভাবিক নয়। ডাক্তার বলেছে ছেলেটা অটিস্টিক হয়ে জন্মেছে। বাচ্চার বয়স সাড়ে চার বছর হয়ে গেলেও কথা বলে না। মুখ দিয়ে বিচিত্র কিছু শব্দ করে। হাতের ধারে কলম পেন্সিল যা পায় তাই দিয়ে কাগজে এলোমেলো রেখা আঁকতে পছন্দ করে। ডাক্তার বলেছে, ওকে বিভিন্ন ধরণের রঙ পেন্সিল আর রঙ এর বোতল দিয়ে খেয়াল করতে, যে ও ছবি আঁকতে চায় কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।


-তুলি এই তুলি। শিগগির এদিকে এসো। জোরে ডাক দেয় তূর্য।

-রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসে তুলি। দেখে ওদের ঘরের মেঝে রঙ এ মাখামাখি। কৌটার সব কটি ওয়েল পেইন্ট এর বোতল অয়ন মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গেছে। আর মুখ দিয়ে বাচ্চাদের মত শব্দ বিচিত্র শব্দ করছে।

-দেখছো ছেলের কান্ড? সব বোতল ভেঙ্গে ফেলেছে। ভাগ্য ভালো যে হাত পা কাঁটেনি। মজার ব্যাপার দেখছো? সবুজ রঙ এর বোতলটাই শুধু ভাঙ্গেনি। আশ্চর্য্য তো! তূর্য অবাক হয়ে কথাটা বললো।

সবুজ রঙ দিয়ে অয়ন কাগজের উপরে এলোমেলো রেখা এঁকে যাচ্ছে। কোনদিকে খেয়াল করছে না। ঘরে মা বাপ কে দেখেও কোন প্রতিকার নেই অয়নের। শুধু তুলির ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো মুচড়ে ওঠা কষ্টে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তূর্য তার কিছুই টের পেলো না।

অয়ন আপন মনে সবুজ রঙ আঙ্গুলে মাখিয়ে সাদা কাগজে দূর্বোধ্য এক চিত্র নিজের মত করে এঁকেই যাচ্ছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বশির আহমেদ বেশ চম$কার ।
স্বাধীন আমার খুব ভালো লাগলো
Masum billah Manusher jibon koto picular
সিয়াম সোহানূর দক্ষ হাতের কারুকাজ। অয়ন আর রানার রঙ প্রীতির মিলটা কাকতালীয় হলেও বুঝতে হবে এ হচ্ছে বাংলার রঙ। অভিনন্দন ভাই প্রান্ত।
সূর্য বাহ সুন্দর তো। ভেতরগত কিছু ইতিহাস অয়ন হয়ে বেঁচে রইল।
মিলন বনিক খুব ! খুব সুন্দর একটা মর্মস্পর্শী গল্প...কিন্তু পাঠক কম কেন বুজলাম না...আমার খুব ভালো লাগলো..শুভ কামনা সব সময়...
রোদের ছায়া যাক ওই লাইনটা যে আসলেই ভুল সেটা লেখক নিজেই বলে দিয়ে ভালো করেছেন // গল্পটা চমত্কার কিন্তু প্রথম অংশের তুলনায় শেষের অংশে লেখকের নিজস্বতা খুঁজে পেলাম .......ভালো লাগলো ..
হাসান মসফিক শুভ কামনা থাকলো .......
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি pranto golpo valoi hoyechhe onnoder lekha gulo porte hobe lekha tobe aro valo hobe.......dhonnobad.......

১২ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী