অপরাহ্নে বর্ষণ

বৃষ্টি (আগষ্ট ২০১২)

এস এম অাখতারুজ্জামান
  • 0
  • ১৬৩
আজ বৃষ্টির দিন, সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে । সকাল গড়িয়ে এখন বিকেল চলছে তাও অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । অবশ্য এখন যে দাবাদহ চলছে তাতে বৃষ্টি প্রয়োজন। জেরিন এই বিকেলের বৃষ্টি কে নাম দিয়েছে অপরাহ্নের বারি । বিকালের বৃষ্টি এসে তাকে চিমত্মায় ফেলেছে কেননা বিকেলে তাকে প্রাইভেট পড়তে যেতে হয়। জেরিন ভাবনা থেকে এবার বাসত্মবে এল তার ব্যাগ গুছিয়ে নিলো প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার জন্য। সঙ্গে ছাতা নিয়ে নিল। হঠাৎই তার মনে হল গতকালের হোম ওয়ার্কটা করা হয়নি। তাই তার শাহরিয়ারের সঙ্গে একটু দেখা করা প্রয়োজন।
স্যার নিশ্চয়ই অংকগুলোর কথা জিজ্ঞেস করবেন। বাসা থেকে বের হয়ে রিক্রা নিয়ে স্যারের বাসায় চলে গেল জেরিন। সবাই আসলো কিন্তু শাহরিয়ার আজ আসেনি। জেরিনকে হোম ওয়ার্কের কথা জিজ্ঞেস করলে জেরিন অসুস্থতার কথা বলে পার পেয়ে যায় এ যাত্রায়। জেরিন অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তাই তার পড়াশুনার একটু চাপ আছে আর শাহরিয়ারের সাথে তার বোঝাপড়া একটু ভালো। পরেরদিন সকালবেলা জেরিন শাহরিয়ারকে কলেজে না দেখে তার সেল ফোনে ফোন করল । ফোন ধরে তার মা জানালো শাহরিয়ার দু’দিন ধরে অসুস্থ। জেরিনের আজ কেমন যেন লাগছে সে ভাবছে শাহরিয়ারকে দেখতে গেলে তার মা কি ভাববে তাছাড়া তারা তো শুধু ক্লাস মেইট ই , তাই সে ঠিক সিদ্ধামত্ম নিতে পারে না কি করবে। তবে শাহরিয়ার কে দেখতে যাওয়া তার উচিৎ বলে মনে হচ্ছে তাই সে তার মাকে বলে প্রাইভেটের পরে জান্নাতুল ফাতেমা কে নিয়ে শাহরিয়ারকে দেখতে তার বাসায় গেল।
শাহরিয়ারদের বাসায় যেয়ে প্রথমেই চোখে পড়ল সুন্দর বাহারী রঙের ফুলের বাগান। আর পুকুর পাড়ে একটু পেছনের দিককার জায়গায় সাজানো মেহগনী , নারকেল, শিশুকাঠের বাগান। জেরিন দরজায় গিয়ে টোকা দিতেই শাহরিয়ার এর মা দরজা খুললেন এবং বসতে বললেন তারপর ক্লাস মেইট শুনে সে শাহরিয়ারের রম্নমে নিয়ে গেলেন। শাহরিয়ার তো জেরিনকে দেখে অবাক ! সে একটু অপ্রস্ত্তত ছিল। জেরিন বলল জ্বরের কি অবস্থা ? কখন হলো ? ঔষধ খেয়েছো ? আমি তো কিছুই জানি না। শাহরিয়ার বলল জ্বর এখনও আছে মনে হয় আরও দু একদিন থাকবে।ঔষধ খেয়েছি দেখা যাক কি হয়। জেরিন বলল শরীরের প্রতি খেয়াল রেখো । শাহরিয়ারের মা জেরিনদের চা-বিস্কুট খেতে দিলেন। খানিকক্ষণ পরে জেরিন বলল আজ আসি খালাম্মা।
কয়েকদিন পরে হঠাৎ ই জেরিনের সাথে শাহরিয়ারের দেখা হল। শাহরিয়ার বলল ভালো আছো। পড়াশুনা কেমন চলছে জেরিন বলল হ্যা ভালো । তবে কিছু হোম ওয়ার্ক নিয়ে একটু সমস্যা আছে তোমার সাহায্য দরকার। আচ্ছা ঠিক আছে কাল ক্লাসের পরে এসো।রাতে বালিশে মাথা রেখে জেরিন ভাবছে আমি কি শাহরিয়ারকে পছন্দ করতে শুরম্ন করেছি তবে কেন ওর প্রতি একটা টান অনুভব করি । আমি কি ওর প্রেমে পরেছি? অন্যদিকে শাহরিয়ার ভাবছে জেরিন দেখতে সুন্দর, স্মার্ট, লেখাপড়ায় ভালো, ব্যবহার ভালো এই মেয়ে আমাকে দেখতে বাসায় এসেছে আমার বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না ওকে যে আমি পছন্দ করি তা কি ও বুঝেছে। সময় সুযোগ এলে মনের কথা বলব ওকে।
পরদিন ক্লাসের পরে জেরিন শাহরিয়ারের কাছে এল হোমওয়ার্কের অংক নিয়ে । প্রত্যেকটা অংক অনেক সুন্দরভাবে শাহরিয়ার জেরিনকে বুঝিয়ে দিল। শাহরিয়ার জেরিনকে কলম ফেরত দিতে গিয়ে হাতে হাত লাগল দু’জনে জমকে উঠল। ক্লাসে একটু দেরীতে ঢুকল শাহরিয়ার । জেরিন জান্নাতুলকে বলল শাহরিয়ার কে তোর কেমন লাগে । জান্নাতুল বলল আমার তো ভালই লাগে কিমুুত্ম ও তো তোকে পছন্দ করে। তুৃই কিভাবে জানলি দেখছো না ও তোর প্রতি কত খেয়াল রাখে । যা শয়তান তেমন কিছু নয় সময় হলে দেখা যাবে। আজ শাহরিয়ারকে অন্যরকম লাগছে চুলে স্মার্ট কাট , এরো শার্ট , পাম শুতে ভালোই লাগছে তাকে। ক্লাসে বসে এতক্ষণ খেয়াল করল জেরিন।

ক্লাসের ফাঁকে শাহরিয়ার জেরিনকে বলল আজ প্রাইভেটের পরে একটু থেকো তোমার সাথে কথা আছে। জেরিন বলল ঠিক আছে। জেরিনের মনে মনে ভালো লাগা কাজ করছে আবার টেনশনও হচ্ছে , শাহরিয়ার ভাবছে জেরিন কি আমার ডাকে সারা দিবে। প্রাইভেটের পরে হানিফ উদ্যানে আম গাছের নিচে দু’জনে বসল। দু’জনই চুপচাপ। হঠাৎ ই নিরবতা ভেঙ্গে শাহরিয়ার বলল আমি তোমাকে ... তারপর চুপ হয়ে গেল আবার কিছুক্ষণ পরে বলল পছন্দ করি। জেরিন হেসে দিল বলল এই কথা বলতে স্যারের এত বাহানা। শাহরিয়ার বলল তোমার কি মত।জেরিন বলল আমি আসলে তোমাকে ... থেমে গেল কিছুক্ষণ পরে বলল অনেক অনেক ভালোবাসি। এবার দু’জন ই একেবারে চুপ হয়ে গেল । অনেকক্ষণ পরে শাহরিয়ার বলল তবে আমরা কি কাছাকাছি চলে আসছি। জেরিন বলল আমি কিছু জানি না । তবে তোমাকে হারালে সবকিছু হারিয়ে যাবে।

এরপর এভাবে প্রায়ই জেরিন শাহরিয়ার নিজেদের মধ্যে মনের কথা বিনিমিয় করে। দুজনের সম্পর্ক বেশ ভালোই চলছিল।কয়েকদিন পরে হঠাৎ ই খবর এল শাহরিয়ার এর বাবা বদলি হয়ে চিটাগাং যাচ্ছেন। পরশু অথাৎর্ সোমবার দিন যেতে হবে। সোমবার সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শাহরিয়ারের মন খুবই খারাপ। সে বদলির সংবাদ জানিয়েছে জেরিনকে। জেরিন বলেছে সে বিদায় দিতে আসবে। শাহরিয়ার তার মাকে জিনিসপত্র গুছাতে সাহায্য করছে।

বিকেলের দিকে বৃষ্টি আরও জোড়ে নামতে লাগল। হঠাৎ ই খবর এল জেরিনের খালা খুবই অসুস্থ হয়ে পরেছেন। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। খবর পেয়ে জেরিন তার মায়ের সাথে ছুটল। কিছুদূর যাওয়ার পর জেরিনের মনে পড়ল তার শাহরিয়ার এর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা কিন্তু এখন তো কোন উপায় নেই । শাহরিয়ার কি ভাববে! ও কি আমায় ভুল বুঝবে ! অন্যদিকে শাহরিয়ার তার মা-বাবার সাথে বাস স্টান্ড চলে এসেছে, তার অনেক বন্ধু প্রায় সবাই তার সাথে দেখা করতে এসেছে, তাকে বিদায় জানানোর জন্য। শাহরিয়ার ভাবছে সবাই তো এল কিন্তু জেরিন কেন এখনও আসছে না ও কি আমার সাথে দেখা করতে আসবে না । সেল ফোনে ফোন দিলে দু;খিত শুনাচ্ছে।


মনে মনে ভাবছে ...আজ শ্রাবণের দ্বিতীয় দিনে এত বৃষ্টি নামছে মেঘের অভিমান হতে কিন্তু আমার হৃদয় আকাশে যে ভালোবাসার বৃষ্টি নেমেছিল সে ভালোবাসা আমি কি আর ফিরে পাবো না । জেরিন তুমি কেন আসলে না ? তুমি কি আমায় সত্যিই ভালোবাসোনি ? তবে কেন আমায় স্বপ্ন দেখালে তবে কি আজ দু’ আঁখিতে ঝরছে অঝর ধারায় শ্রাবণের বৃষ্টি। তবে কি আজ অপরাহ্নের বারিতে ধুয়ে যাবে সব । শাহরিয়ারের মা ডাকছে বাস তো চলে এল উঠবি না বাবা। শাহরিয়ার বাসে ওঠে জানালা দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে রইল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক গতিশীলতা আছে..লেখার মানও ভালো...ভালো লাগলো...শুভ কামনা...
আহমেদ সাবের প্রেমের প্রথম কদম ফুল। মোটামুটি স্বচ্ছন্দ লেখা। ভাল লাগল।
তানি হক সুন্দর লিখেছেন ...লিখতে থাকলে আগামীতে আরো ভালো লিখতে পারবেন ..এই কামনা ..ধন্যবাদ
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ............................বাস্তবে এমনই হয়। গল্পটা ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
Sisir kumar gain বেশ সুন্দর লেখা ।বেশি বেশি করে,ভালো লেখকদের লেখা পড়বে।তাহলে আরো ভালো করতে পারবে।শুভ কামনা রইলো।
আরমান হায়দার লেখার হাত ভাল। লিখতে থাকুন। শুভকামনা।
তান্নি ভাইয়া, লেখাটাতে ভালোলাগার রেশ ছিলনা বললে ভুল হবে. আমার ভালো লেগেছে. আশা করি আরো অনেক ভালো লেখা উপহার পাব আমরা. আবারও বলি `অল্প কথার গল্প' তাই বলে স্বল্প ভালো লাগেনি. অনেক ভালো লেগেছে.
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

২৭ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী