রাজনীতিতে অন্ধকারের পর ভোর

ভোর (মে ২০১৩)

কামরুল হাছান মাসুক
  • 0
  • ৫০
আধুরির ছোট বেলা থেকেই শখ রাজনীতি করা। সে জানে বাংলাদেশের রাজনীতি হচ্ছে কলুষিত রাজনীতি। তবুও শখ বলে কথা। একবার ক্লাসে শিক্ষক সবাইকে জিজ্ঞেস করছে কে কি হবে। আধুরি বলেছিল, সে একজন নামকরা রাজনীতিবিদ হবে। সবার কি হাসি। হাসতে হাসতে কেউ টেবিল থেকে পড়ে যাচ্ছিল। আবার কেউ হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিল। শিক্ষকও সবার সাথে হাসিতে যোগ দিলেন। ছেলেরাই রাজনীতিবিদ হতে চায় না। সে জায়গায় মেয়ে হয়ে রাজনীতি করা অসম্ভব একটা ব্যাপার।

আধুরি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কলেজ জীবন থেকেই সে রাজনীতি শুর“ করেছে। রাজনীতিবিদ হওয়া যার শখ, রাজনীতি থেকে তার দূরে থাকা সম্ভব নয়। প্রথম বর্ষে ভর্তি হলে হলে কেউ সিট পায় না। তাকে অপেক্ষা করতে হয়। রাজনীতি করার মনমানষিকতা থাকার কারণে আধুরি প্রথম বর্ষেই হল পেয়ে যায়। র“মে উঠেই নেত্রীর আসন দখল করে ফেলে। যারা রাজনীতির সাথে জড়িত থাকে হলের সবাই তাদের সমীহ করে। হলের ক্ষমতা বলতে যারা ছাত্ররাজনীতি করে তাদেরই। আধুরি ক্ষমতাকে কাজে লাগায়। খুব দাপটের সাথেই চলতে থাকে।
দেশে শুর“ হয়েছে সরকারী বিরোধী দলের লড়াই। এক পক্ষ আরেক পক্ষের প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। সরকার মারছে বিরোধী দলকে। বিরোধী দল মারছে সরকারি দলকে। যারা যেই দলের সে সেই দলের হয়ে কাজ করছে।
আধুরি সরকারি দলের। সে সরকারি দলের হয়েই কাজ করার কথা। এখন সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়। সরকারি দলের নেতা নেত্রীর অভাব নেই। সরকার যেহেতু ক্ষমতায় ভাত ছিটালেই কাক আসার কথা। নেতা নেত্রীরাও কাক হয়ে দলের মধ্যে আসতে লাগল। আধুরি অনেক আগে থেকেই দল করে। তবুও দলে তার জায়গা হচ্ছে না। ক্ষমতার গন্ধ হচ্ছে সবচেয়ে বড় গন্ধ। একবার যে এই গন্ধ পায় সে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে ক্ষমতার গন্ধের দিকেই ছুটে। আধুরিও তাই করছে। তার একটা পদ দরকার। তার একটা অবস্থান দরকার।

দলীয় নেতা কর্মীদের ভিড়ে আধুরি নিজের অবস্থান হারাতে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সে তার অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। অবস্থান ধরে রাখতে হলে লিংকআপ ভাল থাকতে হবে। মেধা, যোগ্যতার চেয়ে কে কতজন লোক জমায়েত করতে পারবে তার হিসেব দেখে। কে কত টাকা ঢালতে পারে তার হিসেব নিকেশ করে।
আধুরির বাবা কৃষক। ওর এত টাকা পয়সা নেই খরচ করার। নেতা কর্মীদের পিছনে খরচ না করতে পারলে লোক জমায়েত করা যায় না। আধুরির কোন লিংকআপও নেই। আধুরির কোন সন্ত্রাসী বাহিনীও নেই। সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলে দলের কাছে ভাল দাম পাওয়া যায়। দলে সন্ত্রাসী বাহিনীদের কদর অনেক বেশি।

দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ যাচ্ছে। সরকারি দল, বিরোধী দলের মতানৈক্য চরম অবস্থানে পৌছেছে। দুই দলই চাচ্ছে যার যার দলে লোক জমায়েত করতে। কে কত বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন তা দেখানোর জন্য পৃথক পৃথক ভাবে নাগরিক জমায়েত করা হচ্ছে। সরকারি দল একশ জন মানুষ জমায়েত করলে বিরোধী দল চাচ্ছে দুইশ জন করতে। এভাবেই চলছে। আধুরি লোক জমায়েত করতে পারে না। টাকাও ঢালতে পারে না। গডমাদারও হতে পারে না। এখন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের পথে। সে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। কেউ তাকে সহযোগীতা করছে না। সবার এক কথা লোক জমায়েত কর। টাকা ঢাল। সন্ত্রাসী হয়ে যাও। না হলে রাজনীতি ছেড়ে দাও।

আধুরির রক্তের সাথে মিশে আসে রাজনীতি। তার ডি এন এ টেস্ট করালে রাজনীতি পাওয়া যাবে। সে যে কোন মূল্যে রাজনীতির মাঠে থাকতে চায়। সরকারি দল একটু বেকায়দায় আছে। তাকে নিত্য নতুন বিভিন্ন কায়দা কানুন করতে হয়। সরকার চাচ্ছে সর্বকালের সর্ববৃহৎ লোক জমায়েত করতে। লোক জমায়েত করলেই হবে না। তাদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা লোক জমায়েত করবেন তাদেরও মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। গিভ এন্ড টেইক না হলে কোন কিছু হয় না।

দলের নেত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যারা লোক জমায়েত করার জন্য রাতদিন প্ররিশ্রম করছে তাদের যেন মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করে। এত প্ররিশ্রম করছে যদি কান্ত হয় তারা যদি একটু শান্তির পরশ না পায় তাহলে কি তাদের আগ্রহ থাকবে। অধিকাংশ কর্মঠ কর্মীরাই চায় মেয়ে মানে মাল। তারা বিয়ে করেনি। শারিরীক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাদের দরকার মাল মানে মেয়ে। মেয়েদের তারা মাল হিসেবেই ডাকে।

আধুরির কাছে মাল সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। মাল সরবরাহ করতে পারলে সে ভাল পদে যাবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ভাল পদে যাওয়ার জন্য যেমন অস্ত্র হাতে একটা একশন দরকার। মেয়েদের জন্য দরকার মাল নয়ত নিজের সম্ভম। নিজের সম্ভম দিতে পারলে তারাতারি দলের উপরে উঠা যায়। এটা সব সরকারের আমলেই। সে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে সরকারই এই কাজটা বেশি করে করেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। জনগণের চাহিদা না মানলে কি হয়। জনগণ মানে ছাত্র নেতারা চায় মেয়ে। সরকার তাদের খুশি করার জন্য সরবরাহ করতে হয়। সরকারের দোষ কি? জনগণ ঠিক না থাকলে সরকারের কোন দোষ থাকে না। দোষীদের বিরোদ্ধে একশন নিতে গেলে যদি ভোট হারানোর ভয় থাকে। বখাটেদের না রাগানোই ভাল এই নীতিতে সরকার চলতে থাকে।

আধুরির কাছে প্রস্তাব আসে সে যেন সুন্দরী মেয়েদের সরবরাহ করে। সম্মেলন উপলক্ষে ছাত্রনেতাদের খুশি করতে পারলে তারাতারি উপরে উঠতে পারবে। পিছনে ফিরে আর কখনো তাকাতে হবে না।

আধুরি সব দিতে পারবে সম্বম দিতে পারবে না। নেতারা বলে নিজেরটা দিলে লজ্জা লাগলে অন্যরটা সংগ্রহ করে দিলেই হয়। আধুরির কারো কাছে বলতেই পারে না। মেয়েদের এ রকম পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত দিতে সে চায় না। কারো কাছেই প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারে না। এদিকে ছাত্রনেতাদের কাছ থেকে হুমকি দমকি আসছে যদি না দিতে পারে তাহলে হলে থাকতে পারবে না। রাজনীতি করতে পারবে না।

আধুরি রাজনীতিকে ভালবাসে। মনে প্রাণে মিশে আসে। সম্ভম দিয়ে রাজনীতিতে সে বিশ্বাসী না। সব দিতে পারবে শুধু সম্ভম দিতে পারবে না। একটা মেয়ের কাছে সবচেয়ে দামী জিনিষই সম্ভম। এটা একবার দিয়ে দিলে মেয়েদের দাম থাকে না। সে একটা খেলনা হয়ে যায়। যে ইচ্ছা সেই তাকে ব্যবহার করতে পারে। ব্যবহারের পর কাঁদায় ছুড়েও দিতে পারে।

আধুরিকে দলের হাইকমান্ড থেকে ডাকা হয়েছে। ছাত্রনেতাদের নির্দেশ না মানার কারণে তাকে তিরস্কার করা হয়েছে। দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। হল থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রটিয়ে দেওয়া হয়েছে আধুরি ভোগের সামগ্রী। তাকে সে পার সে ভোগ কর। এই কথাগুলো মাইকিং করে বলা যায় না। তথাকথিত কিছু ভদ্রলোক আসেন। যারা মাইকের আওয়াজ সহ্য করতে পারে না। রাতের আঁধারে উনারা ঠিকই করেন।

আধুরির জীবন থেকেও রাজনীতি প্রিয়। একজন মানুষের জীবন চলে গেলে আর কিছু থাকে না। আধুরি ভাবে তাকে যদি রাজনীতি খেকে মুছে দেওয়া হয় তাহলেও তার জীবন বলতে কিছু থাকবে না। এখন সেই কাজটাই করা হয়েছে। কলঙ্কও লেপ্টে দেওয়া হয়েছে। নেতাদের বাসায় আসা যাওয়া সবাই দেখেছে। মানুষের মন সন্দেহ প্রবণ। তারা গুজবেই বেশি বিশ্বাস করে। গুজব যারা ছড়ান তারা বিশ্বাসযোগ্য করেই ছাড়াতে চান।

আধুরিকে এখন সবাই বেশ্যা হিসেবেই জানে। সে রাতে নেতাদের সাথে ঘুমায়। দিনের বেলায় বক্তিতা দেয়। সত্য ঘটনা তা না। সত্য ঘটনা হচ্ছে সে রাতে কারো সাথে ঘুমায় না। সে দিনের বেলায় বক্তিতাও দেয় না। সে বক্তিতা দিতে চেয়েছিল তাকে দেওয়া হয়নি। সে সুষ্ঠু রাজনীতির চেষ্টা করেছিল তাকে কেউ সুযোগ দেয়নি। সে একটা অবস্থার পরিবর্তন করতে চেয়েছিল তাকে জায়গা দেওয়া হয় নি। এভাবেই আধুরির মত অনেক মেধাবী রাজনীতিবিদ হারিয়ে যাচ্ছে। কলঙ্ক নিয়ে মাঠ ছাড়ছে। তবুও আধুরি হতাশ না। আধুরি বিশ্বাস করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক দ্বারা অবশ্যই ফিরে আসবে। দেহ দিয়ে, টাকা দিয়ে, সন্ত্রাসী করে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। জনগণ মেনে নিবে না। আঁধারের পর যেমন আলো আসে তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্ধকারের বদলে ভোর আসবে। যেখানে আধুরির মত অপার সম্ভবনাময়ী ভবিষৎ রাজনীতিবিদদের নেতাদের ক্রিয়ানক হতে হবে না। দেহ বিলিয়ে দিতে হবে না। গডমাদার হতে হবে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ রাজনীতিতে নীতি না থাকলে যা হয়। দুর্নীতিবাজ কদর্য মানুষদের কাছ থেকে এর বেশী আর কী আশা করা যায় ? শুভকামনা রইলো।
তাপসকিরণ রায় রাজনীতির খেলা এমনি খেলা--সব চে বড় জঘন্য পর্যায়ের খেলা।ভালো লাগলো লেখাটি।
মিলন বনিক বর্তমান নোংরা রাজনীতির বাস্তব চিত্র...খুব ভালো লাগলো....শুভ কামনা.....
রফিক আল জায়েদ রাজনীতির নোংড়া চিত্র বাস্তবে এমনই। ভাল থাকবেন।

১৮ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী