সর+লতা

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

কামরুল হাছান মাসুক
  • ১৪
  • ৬৭
নাসার বিজ্ঞানীরা ইউরিকাস নামে একটি স্পেসশিপ মঙ্গলে পাঠিয়েছেন। স্পেসশিপটির কাজ হচ্ছে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা খোঁজে বের করা। তাদের নির্দেশ মতই স্পেসশিপটি মঙ্গলে অবতরণ করে। মঙ্গলে অবতরণ করার সাথে সাথেই সর+লতা শব্দদ্বয়দুটি কম্পিউটারের স্কিনে ভাসতে থাকে। নাসার বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আমেরিকার সব ভাষাবিদদের ডাকা হল শব্দদ্বয়গুলির রহস্য আবিষ্কার করার জন্য। আমেরিকার ভাষাবিদরা দেখলেন শব্দদ্বয় গুলোকে যেকোন ভাষাতেই পড়া যায়। একজন আমেরিকান শব্দদ্বয়গুলোকে দেখে যা বোঝেন, একজন ইন্ডিয়ানও তাই বোঝেন। অর্থাৎ শব্দদ্বয়গুলোকে এমন ভাবে ইউনিকোড করা যে, পৃথিবীর যে কোন ভাষাভাষি লোকই শব্দদ্বয়গুলিকে পড়তে পারবেন। পৃথিবীর সমগ্র ভাষাবিদদের ডাকা হল। পৃথিবীর সমগ্র ভাঘাভাঘা ভাষাবিদগণ একসাথে মিলিত হলেন শব্দদ্বয়গুলোর রহস্য উদ্ভাবন করার জন্য। সমগ্র ভাষাবিদগণ এ মর্মে সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, শব্দদ্বয়গুলি বাংলাভাষার যদিও সব ভাষায় পড়া যায়। বাংলাভাষার সকল ভাষাবিদদের ডাকা হল রহস্য উদ্ভাবন করার জন্য। অনেক আলোচনা সমালোচনা করেও কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারলেন না। এদিকে রহস্য উদ্ভাবন করতে না পারলে বাংলাভাষার ইমেজের একটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাভাষাবিদগণ পৃথিবীর সমগ্র দেশের কাছে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করলেন যে, শব্দদ্বয়গুলোর রহস্য উদ্ভাবন করতে একটু সময় লাগবে। যে কোন গবেষণা করতে যেমন অনেক সময়ের দরকার হয় তেমনি শব্দদ্বয়ের রহস্য উদ্ভাবন করতেও সময়ের দরকার হবে। এককভাবে গবেষণা না করে সামগ্রিকভাবে গবেষণা করলে এর ফল তারাতারি পাওয়া যেতে পারে। সুতরাং পৃথিবীর সমগ্র ভাষাবিদদের নিয়ে নাসার মত এতটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হোক যাতে করে ভবিষ্যতেও কোন শব্দের রহস্য উদ্ভাবন করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। শব্দদ্বয়গুলির রহস্য উদ্ভাবন করা গেলে হয়ত মঙ্গলে বসতি স্থাপন করা যেতে পারে। সুতরাং যুক্তিক দাবি উপস্থাপনের কারণে সবাই সম্মত হল। সম্মিলিত গবেষণা শুরু হয়ে গেল।
কেউ বলতে লাগলেন, সর+লতা মানে হচ্ছে একটা সন্ধি। সর এবং লতার মিলনকেই এখানে বোঝানো হচ্ছে।
কেউ বলতে লাগলেন, না না না। তা হতে পারে না। বাংলা ব্যাকরণ মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দাদের বোঝার কথা না।
কেউ বলতে লাগলেন, যোগ চিহ্নটা দিয়ে কিন্তু মিলন বোঝানো হয়ে থাকে। সর এবং লতার মিলনকেই বোঝানো হতে পারে।
এভাবেই ভাষাবিদদের মধ্যে চলছে তর্ক-বির্তক্য, আলোচনা-সামালোচনা। পত্রিকাতেও উক্ত আলোচনা-সমালোচনা বের হচ্ছে। দর্শকরাও আগ্রহ নিয়ে পড়ছেন এবং মজা পাচ্ছেন। বিজ্ঞানের গবেষণা যদি ভাষাবিদরা করেন তাহলে মজা পাবার কথাই।
বাংলাদেশের একজন ভাষাবিদ উনার নাম মিসির আলী। উনি এখন পর্যন্ত কোন কথাই বলেন নি। উনি শুধু শব্দ নিয়ে গবেষণায় মগ্ন আছেন। উনি বললেন, আমরা ভাষাবিদরা শব্দদ্বয়গুলি নিয়ে যে গবেষণা করছি, আমরা কেউ শব্দদ্বয়গুলি নিজের চোখে দেখি নি। যদি আমরা নিজের চোখে দেখতে পারতাম তা হলে আমাদের গবেষণাটি একধাপ এগিয়ে যেত। মিসির আলীর কথাটি যুক্তিযুক্ত মনে করে সব ভাষাবিদদের দেখানো হল।
মিসির আলী এবার বললেন, সবচেয়ে ভাল হয় কোন ভাষাবিদদের যদি মঙ্গলে পাঠানো যেত তাহলে। তাহলে সরাসরি অবলোকন করে বিষয়টাকে আয়ত্ত্বে আনা যেত।
মিসির আলীর কথা শুনে সবারই চোখ ছানাভরা হয়ে গেল। লোকটা বলে কি। মঙ্গলে এখন পর্যন্ত কোন প্রাণিকেই পাঠানো যায় নি সে জায়গায় মানুষ। জ্যান্ত ফিরে আসার সম্ভবনা ১% ও নেই। সুতরাং কেউ যেতে রাজি হল না।
মিসির আলীকে সবাই অনুরোধ করতে লাগল বিষয়টা যেহেতু আপনিই তুলেছেন সুতরাং আপনিই যান।
মিসির আলী মঙ্গলে যেতে রাজি হল একটি শর্তের বিনিময়ে। মিসির আলীর সাথে রুপাকে নিতে হবে। রুপা নাকি অনেক রুপবতি, গুনবতি মেয়ে। এরকম একটা লাভন্য, সুন্দর মেয়ের হাত ধরে শনি গ্রহেও নাকি যাওয়া সম্ভব। এটাত মঙ্গল। এখন সমস্যা হচ্ছে রুপা মেয়েটি রাজি হবে নাকি।
সবার অনুরোধের কারণে রুপা মেয়েটি মিসির আলীর সাথে যেতে রাজি হল। নির্দিষ্ট দিনে স্পেসে করে যাত্রা শুরু হল। যাত্রার শুরুতেই মিসির আলীকে রুপা বলতে লাগল, এরকম বৃদ্ধ নামওলা ব্যক্তির সাথে ভ্রমন করতেই কেমন জানি লাগছে।
মিসির আলী শুনে ও শুনলেন না। এরকম সুন্দর একটা মেয়ের অনেক কথাকেই ছাড় দিতে হয়।
রুপা মিসির আলীকে কতগুলো শর্ত দিতে লাগল। স্পেসে কোন রকম ধুমপান করা যাবে না, বেশি বেশি চা খাওয়া যাবে না, কোন বিষয় নিয়ে বেশি ভাবা যাবে না।
মিসির আলীর মাথা খারাপ হওয়ার দশা। এই তিনটি বিষয়ই উনার খুব প্রিয়। এই তিনটি বিষয় ছাড়া উনি একদিনও থাকতে পারেন না। এখানে উনি কিভাবে থাকবেন।
রুপা বলতে লাগল, পৃথিবীতে এত কোটি কোটি মেয়ে থাকতে আমাকেই কেন সিলেক্ট করলেন বলুনত।
এখনই শুনতে চাও। পরে বলি।
না। আমি এখনই শুনতে চাই।
তাহলে শুন। তোমাকে আমি অনেক পছন্দ করি। আমার বয়সটা বাটির দিকে। পৃথিবীতে যদি আমি তোমাকে প্রস্তাব করতাম তাহলে বিষয়টা অনেক হাস্যকর মনে হত। তুমি আমার মেয়ের বয়সি। সুতরাং বুঝতেই পারছ। সমাজ, পরিবার পরিজন কেউ মেনে নিত না। সবের্াপরি তুমিও হয়ত রাজি হতে না।
আপনি একটা স্বার্থপর। আপনি এত খারাপ জানলে আমি কখনো আপনার সাথে আসতাম না। আপনাকে না গবেষণার জন্য পাঠানো হচ্ছে। আপনি এসব কি বলছেন।
আমাকে যে গবেষণার জন্য পাঠানো হয়েছে, আমি অনেক আগেই তার রহস্য সমাধান করে ফেলেছি। জীবনটা নিরস মনে হচ্ছিল। যেই মেয়েটাকে পছন্দ করি তাকে পেলে হয়ত সরস হবে এই ভাবনাটা নিয়েই এই নাটকটা করেছি। ভাবলাম, তোমাকে যেহেতু পৃথিবীতে পাব না মঙ্গলেই নিয়ে যাই। তোমার মত এত সুন্দরী মেয়ে থাকলে শুধু মঙ্গলে না, শনিতেও যাওয়া সম্ভব।
আপনি একটা রাবিশ। আপনাকে কেন যে সম্মান দিয়ে পৃথিবী থেকে পাঠানো হয়েছে।
আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বলুন রহস্যর সমাধানটা কি।
এখনই শুনতে চাও।
হুম।
এখন বলব না কারণ বললেই মঙ্গলে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও কোন লাভ হবে না যেতেই হবে। বিরতিহীন স্পেসে উঠেছি। নামার কোন সুযোগ নেই।
আপনি রহস্যটা বলুন নয়ত এক্ষনি আপনাকে আঘাত করব।
ঠিক আছে বলি। তবে শর্ত থাকবে আমরা যতক্ষণ বেঁচে থাকব ততক্ষণ তুমি আমার সাথে ভাল ব্যবহার করবে।
আচ্ছা। ঠিক আছে।
হাজার হাজার কোটি কোটি বছর আগে সর এবং লতা নামে বাংলাদেশের দুই জন যুবক এবং যুবতী ছিল। তারা একে অপরকে ভালবাসত। তাদের পরিবার এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল এমন একটা প্রন্থার। যেই প্রন্থার মাধ্যামে চিরজীবন বেঁচে থাকতে পারে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের মত উড়ার প্রশিক্ষণ নিল। একদিন তারা ঠিক ঠিক ওরে চলে এল মঙ্গলে। তাদের ভালবাসার নিদর্শনস্বরুপ শব্দদ্বয়দুটিকে লিখে গিয়েছিল।
বুঝলাম। তাহলে ইউনিকোডের বিষয়টা।
ছেলেটা অতি মাত্রায় মেধাবী ছিল। তাই সে অনেক চিন্তা ভাবনা করে এমন শব্দদ্বয় আবিষ্কার করল যাতে করে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ বোঝতে পারে।
ব্যাখ্যাটা এরকম না ও হতে পারে।
তা ঠিক। আমার মনে হয় এই ব্যাখ্যাটাই হবে। কাহিনীটা গুড়িয়ে পেছিয়ে হতে পারে। যাই হোক, আমরা যেহেতু ওখানে যাচ্ছি সেহেতু নিজের চোখেই দেখতে পারব। চিন্তা করছি, ওখানে গিয়ে তোমার এবং আমার ইউনিকোড দিয়ে নাম লিখে দিব। মিসির আলী+রুপা। ইউনিকোডটা বের করতে পারছি না। তুমি সাহয্য করলে বের করতে পারব।
আমি রাজি নও। আপনাকে আমি পছন্দ করি না। যতক্ষণ বেচেঁ থাকব ততক্ষণ আপনার মুখ আমি দেখতে চাচ্ছি না। আপনি একটা উন্মাদ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক সুন্দর গল্প...সাথে রহস্যের গন্ধ পেলাম...ভালো লাগলো...
জাকিয়া জেসমিন যূথী অতি চমত্কার একটা গল্প. এটাই তো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ! এত সুন্দর তাই প্রিয়তে নিলাম.
রোদের ছায়া সরলতার সাথে বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী জুড়ে দিয়ে আপনি তো এক ধাপ এগিয়ে গেলেন ...........অনেক প্রানবন্ত গল্প শুধু শব্দদ্বয়দুটি,শব্দদ্বয়গুলি ,শব্দদ্বয়গুলো বড্ড বেরসিকের মত লাগলো ........আশা করি বুঝি নিবেন ....অনেক শুভকামনা .....
মামুন ম. আজিজ এত ডাইমেনশনাল চিন্তা কেমনে করলে, হ্যাটস ওফ ফর ইউ। ..হুমায়ূন স্যার এই গল্পটা পড়তে পারলনা, আফসোস..উনি পড়লে সেটা খুবই কাজের কাজ হতো। ..আমি মুগ্ধ হয়েছি তোম,ার কল্পনার দৌড়াত্মে
এশরার লতিফ 'তোমাকে যেহেতু পৃথিবীতে পাব না মঙ্গলেই নিয়ে যাই'--লেখাটা পড়ে বেশ আনন্দ পেলাম। শুভকামনা ।
অষ্টবসু হা হা বেশ মজার মহাকাশ প্রেম, তাও আবার মঙ্গলে!......।
প্রিয়ম হা হা হা হা হা দারুন একটা গল্প লিখেছেন ভাই ভালই লাগলো |

১৮ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪