শাড়ী সংস্কৃতি

শাড়ী (সেপ্টেম্বর ২০১২)

কামরুল হাছান মাসুক
  • ১১
বাবা তুমি আমাকে একটা শাড়ী এনে দিবা।
মা তকে কতবার বলেছি তুই বাংলাদেশি সংস্কৃতিটাকে এখানে আনিছ না। এটা আমেরিকা। এটা বাংলাদেশ নয়। এখানে শাড়ী পড়ে ঘুরে বেড়ালে মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে হাসবে।
বাবা এটা তোমার ভূল ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে সম্মান করে। সুতরাং কেউ যদি কারো সংস্কৃতিটাকে ধরে রাখতে চায় তাহলে এখানে কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামাবে না। সুতরাং তুমি আমাকে অবশ্যই একটা শাড়ী কিনে দিবে।
লতা তুই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছিস না। আমরা এখানকার সিটিজেন। আমরা এখানে স্থায়ী হয়ে গেছি। আমরা কখনো বাংলাদেশে ফিরে যাব না। সুতরাং এখানকার সংস্কৃতিটাকে মেনে নেওয়া আমাদের কর্তব্য। তুই একটা তুচ্ছ শাড়ী নিয়ে আমার সাথে এরকম তর্কতর্কি করছিস। ভাবতেই কেমন লাগছে।
বাবা তুমি যেটাকে তুচ্ছ মনে করছ আসলে সেটা তুচ্ছ না। এটা একটা শাড়ীর ব্যাপার না। এটা সমগ্র বাংলাদেশের সংস্কৃতির ব্যাপার। তুমি শাড়ীটাকে তুচ্ছ করে সমগ্র বাংলাদেশের সংস্কৃতিটাকেই তুচ্ছ করছ। তুমি নিশ্চই জান শাড়ী বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটা অংশ। আমাদের দেশের মেয়েরা পহেলা বৈশাখে, বসন্ত বরণে এবং বিবাহ উৎসবে শাড়ী পড়ে। এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে মিশে আছে।
লতা আমি আমেরিকার একটা নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। তুর চেয়ে আমি কম বুঝি না। যে জায়গায় যেটা প্রজোয্য যেখানে সেটাকেই ধারণ করতে হয়।
বাবা তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পার। তুমি অনেক বুদ্ধিজীবী হতে পার। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তোমার কথা মানতে পারছি না। কারণ আমার যেটা মনে হয়, যে যেই জায়গাই থাকুক না কেন তার অবশ্যই তার নিজস্ব সংস্কৃতিটাকে ধরে রাখতে হবে।
ধর, তুমি বড় কোন কিছু আবিষ্কার করলা। তাহলে তোমার নাম হবে। তোমার নাম হলেই তুমি কোন দেশের এই পরিচয়টা আসবে। তখন তুমি কি করবা। না পারবা নিজের দেশের সংস্কৃতিটাকে তুলে ধরতে। না পারবে ভিন দেশের সংস্কৃতিটাকে তুলে ধরতে। এই জন্য সব সময় নিজের দেশের সংস্কৃতিটাকে ধরে রাখার জন্য অনুশীলন করতে হয়। তাহলে দেখবে কারো কাছে হাত পাততে হবে না।
যাক, আমার বলার ছিল বললাম। মানলেও মানতে পার। না মানলেও মানতে পার। তবে কেউ যদি তোমাকে টিস করে তাহলে আমাকে কিছু বলতে পারবে না।
ঠিক আছে বাবা। তাই হবে। তোমাকে কিছু বলব না। আমার দেশের সংস্কৃতিটাকে আমি ফুটিয়ে তুলব।
আমেরিকানরা কোন কিছুতেই কোন বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না। তবে লতার শাড়ীটার বিষয়ে সবাই আগ্রহ দেখাল। কেউ কেউ বিরুপ মন্তব্য করতেও দ্বিধাবোধ করল না। সবার একটাই কৌতুহল কোন দেশ থেকে এসেছে।
আমেরিকানরা ভদ্র হলেও টিস করতে তারা কখনো দ্বিধাবোধ করে না। যেমন ধরা যাক, কেউ মুসলিম বললেই তাকে টিস করা আরম্ভ করবে। কারণ তারা ধারণ করে রেখেছে মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী। সুতরাং মুসলিম কাউকে দেখলেই সন্ত্রাসী হিসেবে তাকে টিস করা আরম্ভ করবে। তারা এরকম বিষয়গুলোতে অনেক মজা পেয়ে থাকে। তবে সবাই যে করে তা কিন্তু না। কেউ কেউ করে। লতার ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। লতার শাড়ীকে নিয়ে টিস করতে লাগল। লতা তার দেশ বাংলাদেশ বলার সাথে সাথেই সবাই হেসে উঠল। বাংলাদেশ নামে যে একটা দেশ আছে এই বিষয়টাই তারা জানে না। তারা নিজেদের গন্ডির ভিতর ছাড়া অন্য কোন কিছুই জানে না। অল্প বিস্তর যারা জানে তারা বলতে লাগল, ঐ দেশে নাকি মানুষ না খেয়ে মারা যায় তাহলে এত বড় শাড়ী তারা পড়ার টাকা পায় কোথায়। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা যায় ঐ দেশে এত বড় বড় শাড়ী পড়ে। কি আজব তামাসা।
দেখতে দেখতে অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। আমেরিকানরা কৌতুহলে বিশ্বাসী। সুতরাং এরকম এত বড় একটা জটলা দেখে মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে লাগল। একটা সময় মানুষের ভিড় এতটা বেড়ে গেল যে, যানযটের উপক্রম হয়ে গেল।
কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই প্যা পু্যঁ বাশিঁ বাজাতে বাজাতে পুলিশের গাড়ী এসে গেল। তাদের মূল ঘটনাস্থলে পোঁছতে অনেক সময় লাগল। সংবাদকর্মীরা ও বসে নেই। সংবাদ কর্মীরা সংবাদ দেবার মত তথ্য পেয়ে ছোটে আসতে লাগল। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এলাকা লোকে লোকারন্য হয়ে গেল।
লতার ভয় করতে লাগল। তার মনে হতে লাগল সে চিরিয়াখানার কোন জন্তো। এমন একটা অবস্থা হল যে, লোক ঠেলে সে যে বাহির হবে এই অবস্থাও নেই। লতার কান্না পেতে লাগল তবুও সে নিজেকে প্রাণপ্রণে সামলাতে চেষ্টা করল। কারণ এত গুলো মানুষের সামনে তার নিজের সংস্কৃতিটাকে বিজর্সন দিতে পারে না। তাকে তার বিশ্বাসের প্রতি অটল থাকতে হবে। সে যে তার সংস্কৃতিটাকে সম্মান করার জন্য শাড়ীটাকে পড়েছে সেটা তাকে এই হাজারো মানুষের সামনে প্রমাণ করে দেখাতে হবে।
সংবাদকর্মীরা লতাকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মকর্তারা সংবাদটিকে ভাল ভাবেই লুফে নিয়েছে। মজার সংবাদটি সারা দেশে প্রচার করছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহবুব খান আলাদা রকম গল্প /ভালো লাগলো
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জাকিয়া জেসমিন যূথী আমেরিকায় এইরকম কাহিনী ঘটে তা তো জানা ছিলো না। পরিচিত ও আত্মীয় স্বজনের অনেকেই সেখানে থাকে। বাংলাদেশী পোশাকেই থাকে সেখানে। আপনি এভাবে গল্পকে উপস্থাপন না করিয়ে বরং শাড়ি দেখে বিদেশীরা খুব পছন্দ করেছে সেটা তুলে ধরতে পারতেন। আর, আপনার বোধহয় অজানা যে, শাড়ি শুধুই বাংলাদেশী পোশাক নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই শাড়ি পরা হয়, পার্থক্য হলো- শুধু বাংলাদেশে (এবং কোলকাতায়) এই শাড়িকে অনেক শালীন বা ভদ্রভাবে পরা হয়। অন্যান্য দেশে এটাকে খুব অশ্লিলভাবেই পরা হয়। আর বানানের প্রতি মনযোগি হবেন। টিস=টিজ। ভালো থাকুন।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
রোদের ছায়া গল্পটি আধুনিক রূপকথার গল্প মনে হলো , যাই হোক লিখতে থাকুন বেশি বেশি .........তবে বানানে কিন্তু প্রচুর সময় দিয়ে হবে . টিস = টিজ ( তবে গল্পে এই শব্দ না ব্যবহার করলেও চলত , এর বাংলা অর্থ টা ব্যবহার করা যেত )
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
প্রিয়ম ভালই লেগেছে |
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মিলন বনিক কেমন যেন মনে হলো...অতি বাস্তব না পরাবাস্তব....নতুন তথ্য পেলাম মনে হচ্ছে....আমেরিকায় এমনটি কি হয়????
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ শাড়ীর প্রতি বাঙ্গালী টাল চিরন্তন। সুন্দর একটা বিষয়ের শৈল্পিক উপস্থাপন। ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আহমেদ সাবের গল্পকার যে দেশের পটভূমিতে গল্পটা বলেছেন, তেমন এমটা দেশে আমি থাকি। আমার অভিজ্ঞতা গল্পে বর্ণিত অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে, সব দেশেই কিছু হীন মনের মানুষ থাকে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
ভালো লাগেনি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
হিমেল চৌধুরী ভালো লাগল।
ভালো লাগেনি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
Lutful Bari Panna ফ্যান্টাসী ধরনের মনে হল। অ্যামেরিকায় সত্যি সত্যি এমন ঘটে নাকি?
ভালো লাগেনি ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ম তাজিমুল ইসলাম গল্পটা মজার
ভালো লাগেনি ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

১৮ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪