এই যে ম্যাডাম। ছাতাটা একটু দেওয়া যাবে। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি। এই যে মশাই। আপনি বৃষ্টিতে ভিজে গেলে আমি কি করব। আমার ছাতা আপনাকে দিয়ে দিলে আমি ভিজব না। কি আজব কথা বলেন। তা হলে আপনার ছাতার নিচে আমাকে নিয়ে নেন। তাহলেই হয়ে যায়। আমার বৃষ্টিতে ভিজলে নিউমনিয়া হয়ে যায়। আপনি বিষণ পাজি। জানা নেই শুনা নেই একটা মেয়ের কাছে এভাবে ছাতা চাওয়া। আবার বলে কিনা ছাতার নিচে ঢুকে যাব। কি ম্যাডাম বয়রা হয়ে গেলেন নাকি। দেখুন না কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ। আসুন। আপনারা যে কি। মেয়েদের দেখলেই কথা বলতে শুরু করেন। আপনিও। মানে কি। এই জন্য কথায় বলে না, কাউকে উপকার করতে নেই। ঠিক আছে। পরিচয় পর্বটা হয়ে যাক। পরিচয় পর্ব হতে যাবে কেন। আমরা কি কোন টিভি অনুষ্ঠানে আনন্দ আনুষ্ঠান করছি যে, আমাদের পরিচয় পর্বটা শেষ করতে হবে। মেয়েরা কিন্তু বৃষ্টিকে অনেক পছন্দ করে। এই বৃষ্টির দিনে কোন মেয়ের মন এতটা টক হতে পারে জীবনে কোনদিন কল্পনাই করিনি। কল্পনা করতে হবে না। বাসত্মবেই দেখুন। আমার নাম নীলাঞ্জনা। সবাই নীলা বলেই ডাকে। আমার নাম শুভনীল। সবাই শুভ বলেই ডাকে। এই মিয়া আমাকে আবার নকল করছেন নাতো। আপনাদের নিয়ে এক বিপদ। কখনো সত্য কথা বলতে যাবেন না। মেয়েদের মনকে আকৃষ্ট করার জন্য একের পর এক মিথ্যার আশ্রয় নিবেনই। অপ্রয়োজনীয় জগড়া করা ঠিক না। আমি যা বলছি তা সত্যই বলছি। আপনি যে আমার ছাতার নিচে এসে গেলেন আপনি যাবেন কই। আমি আর কতক্ষন ছাতাটাকে ধরে এবং সঙ্গ দিয়ে সেবা করব। ও। তাইতো। আমার কাছে ছাতাটা দেন। আমিই ধরে রাখি। আর আপনি যতক্ষন চাইবেন ততক্ষন আমি সঙ্গ দিতে রাজি আছি। এই যে মিষ্টার, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আপনি এখনই আমার ছাতার নিচ থেকে চলে যান। আপনার নিউমনিয়া হোক আর ক্যান্সারই হোক এতে আমার কি। আমি ভিজে একেবারে ঠান্ডা লাগার মত অবস্থা। উনি রোমান্স করে যাচ্ছেন। কত বড় র্নিলজ্জ। আজকাল ছেলেদের লজ্জা বলতে কিছু নেই। আমি যদি এখন চলে যাই তাহলে আপনি যেতে পারবেন না। দেখুন রাসত্মায় একটা মানুষ নেই। রাত বাজে দশটা। আপনি ভয়েই মারা যেতেন। নিরব হলে মনে হচ্ছে কে যেন পিছন থেকে আসছে। ও। তাই বলুন। ঠিক আছে আমার সাথেই চলুন। আপনার কোন সমস্যা হবে নাতো। সমস্যা ক্ষানিকটা হতে পারে। তবুও যাব। একটা মেয়েকে এত রাতে বৃষ্টিস্নাতে একা রেখে যাওয়া যায় না। আপনার কথা শুনে আমার সত্যই ভয় করছে। একটু আগেও ভয় ছিল না। এখন ভয় করছে। ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি যেহেতু আছি সেহেতু ভয় না পেলেও চলবে। আপনি কি কোন এ্যানজেল নাকি যে, কাউকেই ভয় পান না। এত সাহস দেখানো উচিত না। অবশ্য আপনারা মেয়েদের সামনেই সাহস দেখাতে পারেন। বিয়ে হয়ে গেলে স্ত্রীর সামনে কোনদিন সাহস দেখাতে দেখলাম না। বিয়ে হলে অনেকের দায়িত্ব নিজের উপর পড়ে যায়। তাই সবাইকে নিয়ে ভাবতে হয়। বিয়ের আগে দায়িত্ব নেই। সুতরাং এত ভাবনা নেই। শুভ, আমি আমার বাসায় এসে গেছি। তুমি ইচ্ছে করলে আমার ছাতাটা নিয়ে যেতে পার। না নীলা লাগবে না। আমি অদৃশ্য মানব আমার ছাতা লাগবে না। তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যই তোমার সাথে এতক্ষন ছিলাম। আমাদের কাজই হচ্ছে বিপদে পড়া যাত্রিদের সঙ্গ দিয়ে যাওয়া। আবার কখনো যদি তুমি এরকম বিপদ কিংবা ভয়ে পড় তাহলে আমাকে পাবে। তোমার সাথে কথা বলে অনেক ভাল লেগেছে। অদৃশ্য মানব না হলে আমি তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম। তুমি অনেক অনেক ভাল একটা মেয়ে। শুভকামনা। শুভ, শোন। আমার কিছু কথা ছিল। তোমাদের জগৎ সম্পর্কে জানার ইচ্ছে ছিল। সময় নেই। কাজ শেষ করে চলে যেতে হয়। দাঁড়িয়ে থাকা মানেই মায়া-মমতাকে প্রশ্রয় দেওয়া। ঠিক আছে। বিপদের সময়ই আমি তোমাকে ডাকব। আমাকে ডাকতে হবে না। আমি এমনিতেই উপস্থিত হয়ে যাব। কখনো কখনো আবার নাও হতে পারি। হাতের কাছে বেশি কাজ জমে থাকলে সবসময় আশা যায় না। আমি তবুও চেষ্টা করব। নীলা শুভকে খোঁজার চেষ্টা করছে। বৃষ্টি হলেই ছাতা নিয়ে বের হয়ে যায়। গভীর রাতে একা নিরব বিষন্ন নগরীতে হাঁটতে থাকে। যদি শুভর দেখা পাওয়া যায়। হাঁটতে হাঁটতে আনমনে কোথায় চলে যায় নীলা জানেও না। যখন বুঝতে পারে অনেক দূর এসে গেছে তখন দেখা যায় হয়ত ভোরের সূর্যটা আকাশে উঁকি দিয়ে উঠে গেছে। এভাবে শুভর জন্য দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস অপেক্ষা করে যাচ্ছে। শুভর দেখা পাওয়া যায় না। শুভর সাথে যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিনের জন্মদিন পালন করে। বৃষ্টি হলেই ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়ে। কারো বারণ মানে না। নীলার বাবা মা নীলাকে অনেক ডাক্তার দেখাচ্ছে। এরকম কেন হচ্ছে। কোন ডাক্তার কোন জবাব দিতে পারছে না। নীলাও শুভকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না। মনে মনেই শুভর সাথে কত কথোপকথন। প্রেমের বাক্য বিনিময়। দেখে যেন মনে হয় কত হাজার বছরের পরিচয়। নীলার বয়স হয়ে যাচ্ছে। নীলা বিয়ে করতে চাচ্ছে না। শুভকে ছাড়া সে কাউকেই বিয়ে করবে না। শুভর দেখা বাসত্মবে কেউ পায় না। বাবা মা চিমত্মায় অস্থির। আমাদের সমাজে বেশি বয়স হয়ে গেলে মেয়ে নিতে চায় না। এরকম অবস্থায় কোন ছেলের সাথে বিয়েও দেওয়া যায় না। জেনে-শুনে এই মেয়েকে কেও বিয়ে করতে চাইবে না। বাবা মা বলে কথা। সমত্মানের সুখের জন্য তারা অনেক কিছু করতে দ্বিধাবোধ করে না। মাঝে মাঝে তাদের অনেক সিদ্ধামত্ম সৈরাচারি হলেও তারা এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চেষ্টা করেন না। সুতরাং বাবা মার একগোঁয়েমির কারণে নীলাকে যেভাবেই হোক বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের রাতেই শুভর কথা শুনে বরের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে বাসর রাতেই চিৎকার চেচাঁমেচি করে মানুষ জমিয়ে ফেলে। পরের দিন সকালে নীলাকে তার বাপের বাড়িতে পাঠানো হয়। নীলা শুভকে বলতে থাকে এরকম চরম মূহুর্তেও তুমি আসবে না। কেনই এসেছিলে। জীবনের সব সুখকে ছিনিয়ে নিয়ে আবার কেনই চলে গেলে। একবার একবারের জন্য দেখা দাও। কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করেই চলে যাব। চিরতরে চলে যাব। রাতের শেষ প্রহরের দিকে তুমূল বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে শহর-নগর-বন্দর সব কিছু ধোঁয়ে নিতে থাকে। ভারি বর্ষণের কারণে কিছুক্ষন পরপরই বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে। শিশুরা ভয়ে ঘুম থেকেই চিৎকার দিতে থাকে। নীলা ঘুমাতে থাকে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতে থাকে। নীলার ঘুম ভেঙ্গে যেতে থাকে। নীলা ঘুম ভাঙ্গাতে চাচ্ছে না। তবুও ঘুমটা কেন জানি ভেঙ্গে যেতে চাইছে। এরকম একটা সুখের আবেশ নীলা মিস করতে চাইছে না। শুভকে দেখা যাচ্ছে। সে বৃষ্টিতে ছাতা না নিয়েই ভিজতে থাকে। নিউমনিয়া নামক যেই বস্ত্তটি আছে তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। তবুও সে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। নীলা বারবার ডাকছে। শুভ দাঁড়াও বৃষ্টিতে ভিজ না। আমি তোমার জন্য ছাতা নিয়ে আসছি। একটু দাঁড়াও। আমাকে নিয়ে যাও। শুভ দাঁড়াচ্ছে না। সে তার মত চলেই যাচ্ছে। নীলা পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে। শুভর নাগাল পাচ্ছে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।