ফেরা না ফেরা

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

হাসান আবাবিল
  • 0
  • ১০
এক.
নয়টা বাজতে তখনো পাঁচ মিনিট বাকি। এক গাদা মানুষের ভিড় ঠেলে দেশের একটা নামি-দামি প্রাইভেট ব্যাংকের ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করল মাসুদ। বসবার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান জায়গার ব্যাবস্থা থকলেও খালি নেই একটিও, তাই দাঁড়িয়ে থাকাদের দলেই সামিল হতে হল তাকে। পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সকলেই তার মত ভাইভা পরিক্ষায় এ্যটেন্ড করতে এসেছে। গিজ-গিজে মানুষের ভিড় দেখে অনিশ্চয়তার হাওয়ায় দুলতে লাগল মাসুদ। নিয়োগ বিঞ্জপ্তিতে মাত্র সাত জন লোক নেয়ার কথা, কিন্তু ভাইভায় এ্যটেন্ড করতে এসেছে অন্তত পক্ষে শ’দুয়েক লোক। সরকারি চাকুরির বয়স পাঁচ-সাত বছর আগেই পেরিয়ে গেছে। তবে এর মধ্যে দু-চারটা প্রাইভেট কোম্পানি আর রিয়েল এষ্টেট কোম্পানির চাকুরি হাত বদল হয়েছে। নতুন ফার্মাসিউটিক্যল কোম্পানির চাকুরিটা তার কাছে মোটেও কম্ফোর্টেবল মনে হচ্ছেনা। দুর্মূল্যের বাজারে সংসার আর ছেলের নতুন স্কুলের খরচ চালানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
অপর প্রান্তের দেয়ালের ওপর আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মাসুদ। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। মাথা ভরা অমাবস্যা বরণ কেশে সাদার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। জীবণ ও জীবিকার পেছনে প্রতিণীয়ত ছুটে চলা চির চেনা যৌবণ যেন বার্ধ্যকের কাছে পরাজয় বরণ করছে প্রতিনিয়ত প্রতি মুহুর্তে। প্রায় আধা ঘন্টা পর একজন ভদ্র মহিলা তার নাম ধরে ডাক দিলেন।
- জনাব মাসুদ রানা, পিতা: আবুল কালাম।
আয়নায় শেষ বারের মত নিজের চেহারাটা যাচাই করে নিল মাসুদ। বিস্কিট কালার শার্টের সাথে ম্যাচিং করা টাই টা ডান হাতে ঝাকিয়ে নিল কয়েকবার।
- দেখতে একেবারে ব্যাংকের ম্যানেজার ম্যানেজার মনে হচ্ছে। সেলফ্ কনফিডেন্স বাড়াতে বিড় বিড় করে বলল মাসুদ।
হাত ব্যাগে অভিঞ্জতার নথি-পত্র নিয়ে ধীর পায়ে ভাইভারুমে প্রবেশ করলো সে। মস্তবড় রুমের ভেতরে পুরোটাই পরিপাটি করে সাজানো। মাঝ বরাবর রাখা টেবিরের ওপাশে বসে আছেন তিন জন মানুষ। ডান পাশে একজন সু-দর্শণ পূরুষ। বাম পাশের চেয়ারে বসা ব্যাক্তির বয়স অপেক্ষাকৃত বেশি। মাথা ভর্তি পাকা চুল শুধু বয়সই নয় ঝুলি ভরা অভিঞ্জতার বিষয়টাও নিশ্চিত করে। সব শেষের চেয়ারটায় বসে আছেন মোটা কাঁচের চশমা পরা একজন ভদ্র মহিলা। মহিলার চোখে চোখ পড়তেই হাজার ভোল্টের শক খেল মাসুদ। শরীর মৃদু কাঁপতে শুরু করেছে। পায়ের নিচ থেকে যেন ক্রমেই মাটি সরে যাচ্ছে।
- আপনি বসতে পারেন। সাবলিল কন্ঠে প্রস্তাব করলেন সু-দর্শন ব্যাক্তি।
- Thank u sir.
কাঁপা কন্ঠে জবাব দিয়ে সামনে রাখা আসনে বসলো মাসুদ। রুমের মধ্যে এসির ঠান্ডা বাতাস, তারপরও বিন্দু বিন্দু ঘামতে শুরু করেছে সে।
- হাফ ডজন কোম্পানি ফেরত মি.মাসুদ রানা, তা ছেলে মেয়ে কটা ?
- জি মানে, একটি মাত্র ছেলে। কিন্তু তুমি...না মানে আপনি এখানে ?
I am miss nilufa yeasmeen, managing director of this bank.
- মিস নিলুফা ইয়াসমিন... মানে তুমি এখনো বিয়ে করোনি..?
- দেখুন মিষ্টার রানা, This is not your home so mind your language please !
- I am sorry ! আগের থেকে বেশি ঘামতে শুরু করেছে মাসুদ।
- চাকুরিটা কি আপনার খুব বেশি প্রায়জন ? এবার মুখ খুললেন মাঝের ব্যাক্তিটি ।
- না.. মানে জি স্যার।
- U may go now. অন্যদিকে দৃষ্টি মেলে খানিকটা কাঁপাকন্ঠে বললেন মিস. নিলুফা।
মিস. নিলুফার চোখে কাঁচের মত স্বচ্ছ জলের অস্তিত্ব দেখতে পেল মাসুদ রানা। ততক্ষণে রুম ছাড়তে উঠে দাঁড়িয়েছে সে।

দুই.
সকাল এগারটা নাগাদ ঘুম ভাঙতে সময় লাগলো মাসুদের। বাইরে মষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, বারান্দায় এসে বুঝতে পারল বাজ পড়ার শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেছে, নাহলে আরো কিছুক্ষণ ঘুমানো যেত। বারান্দায় রাখা হাতল ভাঙা চেয়ারটাতে বসে কয়েক বারের চেষ্টায় সিগারেটে আগুনের পরস দিল। বৃষ্টি ভেজা ঝাপটা বাতাশও যেন সহধর্মিনী রেবেকার মতই মাদক বিরোধী শ্লোগান দিচ্ছে। বৃষ্টির ঠান্ড হাওয়ায় সিগারেটের ধোঁয়াঘুলো দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে। মাসুদের স্মৃতির ধূসর চাদরে ভেসে উঠছে টুকরো টুকরো কিছু অতীত।
নিলুফাকে আদর করে নিলু ডাকতো মাসুদ। তার সাথে শিক্ষা জীবণের তিন-চার বছরের ফেরা না ফেরা স্মৃতি এখনো মাসুদের পিছু তাড়া করে ফেরে। সেবার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে কেবল নিলুই ফার্স্টক্লাশ পেয়েছিল। যৌতুক দেয়ার মত অবস্থা নিলুর বাবার ছিল না। কিন্তু মাসুদের বাবাও ছিল যৌতুক নেয়ার ক্ষেত্রে অনড়। বাবার কথা অমান্য করার মত দুঃসাহস মাসুদের ছিলনা। তাই সেদিন নিলুর অকুন্ঠ-অফুরন্ত ভালবাসা তাকে নিলুর কাছে ফেরাতে পারেনি। পিতৃ ভক্তির দায়বদ্ধতায় বন্দি হয়ে লৌহ মানবে পরিনত হওয়া মাসুদের ভাববার সময় হয়নি, সে যা করছে তা ভুল না সঠিক।
এই তো সেদিনের কথা, নিলুর কোমল হাতজোড়া মাসুদের হাতেই ছিল। সুজন মামার চায়ের ষ্টলে বসে কেটে যেত কত প্রহর কত বেলা। নিলু তার জন্য প্রতিদিন সাদাকাগজের বুকজুড়ে ভালবাসার নকশি কাঁথায় একটা করে চিঠি হলুদ খামে তার পকেটে গুঁজে দিত। মাসুদ প্রতিদিনই সেই চিঠির উত্তর দেবার প্রতিশ্রুতি করলেও শেষ পর্যন্ত উত্তর দেয়া হতনা।
সেই নিলুর সাথে এভাবেই হঠাৎ দেখা হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলনা মাসুদ। নিলুর ভালবাসার কাছে কি হেরে গেছে মাসুদ ? তা না হলে নিলু আজও বিয়ে করেনি কেন ? বিষয় গুলো ভীষণ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে তাকে।
- কি হয়েছে তোমার বলতো ? রাতেও তো ঘুমাওনি মনে হয়। খিচুড়ী রান্না করেছি, ঠান্ড হয়ে যাচ্ছে চল।
- কখন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে রেবেকা ?
- এইতো একঘন্টা মত হবে। আর হ্যা, কাল তুমি যে ব্যাংকে ভাইভা দিতে গেছিলে সেখান থেকে একটা চিঠি এসেছে। এক মিনিট দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।
রেবেকার হাত থেকে খামটা চিলের মত ছোঁ মেরে নিজের হাতে নিল মাসুদ। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল মাসুদের জয়েনিং লেটার। ধূসর চোখে নিজের জয়েনিং লেটারের দিকে চেয়ে থাকলো মাসুদ।
- কি হল অমন হাঁ করে কি দেখছো ? আমি জানতাম চাকরিটা তোমার হবেই।
মাসুদের মুখে একটা ফ্যাকাশে হাঁসি দেখতে পেল সহধর্মিনী রেবেকা।
- কি হল এমন মরার মতন হাঁসছো কেন ?
রেবেকার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে জয়েনিং লেটারটা দুহাতে টুকরো টুকরো করে বৃষ্টির মধ্যে মেলে ধরলো সে। ফেরা না ফেরা কিছু স্মৃতি তাকে আঘাত করতে লাগলো অনবরত।
- এটা তুমি কি করলে ? অবাক দৃষ্টিতে মাসুদের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে রেবেকা।
ততক্ষণে মাসুদের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। এবারও কোন উত্তর করলো না সে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো বর্ষণ মুখর কাল আকাশের দিকে। যদিও সে বর্ষণ তার বুকের ভেতরের বর্ষণের মতন ভারী নয় তবুও যেন বাইরের কাল আকাশের থেকে বেশি ভারী উঠছে তার বুকের ভেতরটা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক অনেক সুন্দর গল্প....জীবনের দু টুকরো ঘটনাকে খুব সুন্দর এবং সার্থকভাবে উপস্থাপন করেছেন খুব সাবলীল ভাবে....ভালো লাগল....
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু যদিও সে বর্ষণ তার বুকের ভেতরের বর্ষণের মতন ভারী নয় তবুও যেন বাইরের কাল আকাশের থেকে বেশি ভারী উঠছে তার বুকের ভেতরটা। হৃদয় ছুঁয়ে গেল। খুব ভাল লিখেছেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
এশরার লতিফ গতকাল পড়েছি। ভিন্নরকম উত্থান-পতন আর হেলায় হারানো ভালবাসার গল্প। ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

০৮ ফেব্রুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪