গ্র্যাজুয়েশান

উচ্ছ্বাস (জুন ২০১৪)

রীতা রায় মিঠু
  • ১০
পারমিতা,

দেশ থেকে ফিরে কেমন যাচ্ছে তোর দিনকাল! খুব মনমরা হয়ে আছিস তাইনা? আজ বিকেলের ডাকে তোর পাঠানো পার্সেল পেয়েছি। দারুণ সুন্দর হয়েছে শাড়ীটা, ঠিক যেমন চেয়েছি, তেমনই হয়েছে। তোর পছন্দের তুলনা হয়না। শাড়ীতে অনুরাধাকে দারুণ মানাবে। আগামী সপ্তাহেই অনুরাধার গ্র্যাজুয়েশান, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলো। ঠিক করেছি অনুরাধার গ্র্যাজুয়েশানের দু’দিন আগে ওদের বাড়ীতে গিয়ে শাড়ীটা দিয়ে আসবো। শাড়ী পেয়ে ও নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে। এখানে তো ওর আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই, সেই কবে কোনকালে আমাকে কথায় কথায় বলেছিল, অফ হোয়াইট জমিনে ব্রোঞ্জ জরির কাজ করা একখানা তসর শাড়ীর খুব শখ ওর, শখের শাড়ী পড়ে গ্র্যাজুয়েশান সেরিমনিতে যেতে পারবে।

পারমিতা, শেষ পর্যন্ত মেয়েটা গ্র্যাজুয়েট হতে যাচ্ছে। ভেবে দ্যাখ তো সেই ১০ বছর আগের কথা, তুই আমাকে ফোন করে বললি, তোর প্রতিবেশী খুব বিপদে পড়েছে, আমার সাথে কথা বলতে চায়। আমি তো অবাক হয়ে গেছিলাম, তুই থাকিস নিউইয়র্কে, আমি থাকি কলম্বাসে, তোর থেকে হাজার মাইল দূরে, তোর সাথেই দেখা হয়না, তোর প্রতিবেশী আমাকে চিনে কি করে! ফোনে হ্যালো বলতেই ওপাশের কন্ঠস্বর হাউ হাউ করে কেঁদে কি যে বলছিল প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে বুঝতে পারলাম, উনার চাচাতো ছোট বোন থাকে আমাদের কাছাকাছি শহরে, নাম অনুরাধা, আগের রাতে স্বামী অনুরাধাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, সেই থেকে মেয়েটা নাকি ঘরের বাইরে বসে আছে। আমি যেন ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসি।
আমার প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল, মনে আছে তোর? তোকে ফোনে রেখেই আমি কবীরকে ডাকছিলাম, “অ্যাই শুনছো, তাড়াতাড়ি আসো, গাড়ী বের করতে হবে, অনুরাধার খুব বিপদ, সারারাত ঘরের বাইরে বসে আছে, হায় হায়, কি হবে রে!”
আমার চিল চীৎকারে ভয় পেয়ে কবীর দৌড়ে এসে দেখে, আমার হাতে ফোন তখনও ধরা আছে। ভেবেছে দেশ থেকে কোন দুঃসংবাদ এসেছে। খালি ইশারায় জিজ্ঞেস করে, “ কি হয়েছে, কার কি হয়েছে”?
আমি বলি, “অনুরাধাকে ওর স্বামী ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। মেয়েটা সারারাত রাস্তায় বসে আছে।
-অনুরাধা কে?
-আরে, এখন অত প্যাঁচাল পারার সময় নাই, গাড়ী বের করো।
- গাড়ী নিয়ে কোথায় যেতে হবে? প্যাঁচাল আমি পারছি নাকি তুমি পারছো? কে ফোন করেছে, পারমিতা? তুমি ফোনটা আমার কাছে দাও।

তারপর তো কবীর তোর সাথে কথা বলে সব জেনে নিল, এখন মনে পড়লে হাসিই পায়, আমি আগে কত গাধা ছিলাম, যখন তখন গাধার মত তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠতাম। অবশ্য আমি জানিনা গাধা যখন তখন তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠে কিনা। বেচারা প্রাণীটাকে নিয়ে আমরা কত মশকরা করি।
কবীর তোর সাথে কথা শেষ করে সাত তাড়াতাড়ি প্যান্ট পালটে নিয়ে আমাকে গাড়ীতে গিয়ে উঠতে বলে নিজে একটু দেরী করে ঘর থেকে বের হয়েছিল। ওটুকু সময়ের মধ্যে সে তার উকিল বন্ধুকে ফোন করে কিছু পরামর্শ করে নিয়েছিল। এটা অবশ্য সাথে সাথে বুঝিনি, গাড়ী স্টার্ট দিতে দেরী হয়েছে বলে মুখ ঝামটে বলেছি,
“আমাকে গাড়ীতে উঠতে বলে তুমি কি স্নো পাউডার মাখতে বসেছিলে? আমরা কি বিয়ের কনে দেখতে যাচ্ছি?

-বেশী কথা বলোনা, সামনে কি বিপদ আছে কে জানে! পারমিতার উচিত হয়নি তোমাকে এই ঝামেলায় জড়ানো।
-কেন, ঝামেলার কি দেখলে? একটা যুবতী মেয়েকে তার অপদার্থ স্বামী সারা রাত ঘরের বাইরে রেখে দিয়েছে, মেয়েটার এখানে আত্মীয়-স্বজন বলতে কেউ নেই, মেয়েটার চাচাতো বোন পারমিতার প্রতিবেশী, তাই পারমিতার কাছে এসে খুব কাঁদছিল। সব শুনে পারমিতা বলেছে আমার কথা যে আমরা খুব কাছাকাছি থাকি। এতে এমন কি সমস্যা হয়েছে বলো। আজ তোমার বোন যদি এমন বিপদে পড়ে, তুমি কি করতে?

-আরে মহিলা, দেশটার নাম আমেরিকা, এখানে অন্যের বউকে রাস্তা থেকে তুলে এনে আমার বাড়ীতে রাখবো, বউয়ের স্বামী তো আমার বিরুদ্ধে পুলিশ কেইস করবে।
-আরে ভদ্রলোক, দেশটার নাম আমেরিকা, এখানে স্বামী হলেই যে বউয়ের গায়ে হাত তুলবে, ঘর থেকে বের করে সারারাত রাস্তায় বসিয়ে রাখবে, যে কোন প্রতিবেশীও যদি তা দেখে পুলিশে কল দেয়, স্বামীর বারোটা বেজে যাবে।
-যাক, এখন ভ্যাজর ভ্যাজর থামাও, আমি উইলীর সাথে কথা বলে এসেছি, উইলী আসছে ওদের ঠিকানায়।
-উকিল উইলীর কথা বলছো?
-হ্যাঁ
-অনেক বুদ্ধিমান তো তুমি, আমার মাথায় এটা আসেনি কেন? আচ্ছা, পারমিতার কাছে কি শুনেছো, অনুরাধার আসলে কি হয়েছে?
-ঐ যা হয়, শাশ্বত বাঙ্গালী ব্যাপার স্যাপার। বউ কথা শুনেনা, শাশুড়ীর কোমড়ে তেল মালিশ করেনা, শ্বশুরের মাথায় নিদ্রাকুসুম তেল মেখে দেয়না, সারাদিন শুধু বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকে, স্বামী বোধ হয় শাসন করতে গিয়েছিল, বউয়ের সাথে কথা কাটাকাটি, ব্যস, বউকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখেছে, স্টুপিডিটি আর কাকে বলে!

পারমিতা, যদিও অনেকবার অনুরাধার গল্প করেছি, তারপরেও আজ কেন জানি সেদিনের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তোর প্রতিবেশী বৌদির দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে দেখি, উইলী সাহেব বাড়ীর গেটে দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের দেখা পাওয়া মাত্র এগিয়ে এলো। আশেপাশে আর কাউকে দেখছিলামনা, চারদিক শুনশান নীরব। বুঝতে পারছিলামনা ঠিকানা ভুল করেছি কিনা! বাড়ীর গেটে জটলা দেখেই বোধ হয় অনুরাধার শ্বশুর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনারা কই থিকা আইসছেন?”
কবীর জানতে চাইল, বাড়ীতে অনুরাধা নামে কেউ আছে কিনা?
-বুড়োর দুই চোখ সরু হয়ে গেছে, তবুও বলল, “ হ, আছে, আমার পুত্রবধূ সে। আপনেরা তার কি লাগেন?

এবার আমি এগিয়ে গিয়ে সরাসরি বললাম, আমরা তার বোনের কাছ থেকে ফোন পেয়ে এসেছি, আপনার ছেলে তার স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, সারারাত মেয়েটি ঘরের বাইরে কাটিয়েছে, আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি। সে কি হুলুস্থূলু কান্ড, আমাদের সাথে উইলী থাকায় ওরা সেদিন ভয় পেয়েছিল। অনুরাধাকে আমাদের কাছে ডেকে নিয়ে আসা হলো। আমার বুকটা মুচড়ে উঠেছিল, কি বাচ্চা একটা মেয়ে, কি সুন্দর মুখশ্রী অথচ চোখের নীচে কালি, ফর্সা হাতে কালশিটে নিয়ে কাঠের পুতুলের মত সামনে এসে দাঁড়ায়। জানতে চাই, ওর কোন দিদি নিউইয়র্কে থাকে কিনা। মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে, জিজ্ঞেস করি, নিউইয়র্কে দিদির কাছে যেতে চায় কিনা! মেয়েটা চমকে তাকায়, যেন দিদির কথায় খুব ভয় পেয়েছে, এরপর মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলে। আমি ফট করে বলে ফেলি, তুমি কথা বলছোনা কেন? অনুরাধা গলায় হাত দিইয়ে বুঝাতে চাইলো, গলার স্বর বন্ধ। অনেক পরে জেনেছিলাম, রাগের চোটে স্বামী গলা টিপে ধরেছিল।
যাক, বললাম,তোমার দিদি যে বলল তোমার স্বামী তোমাকে কাল সারারাত ঘরের বাইরে বসিয়ে রেখেছে, তোমার দিদি তো কাঁদতে কাঁদতে পাগল হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তুমি তো বাড়ীর ভেতরেই আছো। তাহলে তোমার দিদি এই ভুল খবর কোথায় পেল?

শাশুড়ীটা কি দজ্জাল দেখতে, বলে, আমাগোরও সেই একই কথা, এত দূরে বইসা ঐ মাগী আমাগোর ঘরের খবর কেমনে পায়? আপনেরা ত তাগোর কথায় নাচতে নাচতে আইছেন, কি দেইখা গেলেন, এক্কেবারে ত ঘরে ঢুইকাই কইছেন, আপনেগোর মাইয়ারে নিতে আইছেন। ত নেন, অখন সাথে লইয়া যান, তয় এক কথা কইয়া দেই, যেই দুয়ার দিয়া আপনেগোর মাইয়া বাইর হইব, সেই দুয়ার অর লাইগা বন্ধ হইয়া যাইব।

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল, দাঁত মুখ শক্ত করে বললাম, মাসীমা, আর কিছু বলতে হবেনা আপনাকে, আমরা বুঝে গেছি, এই মেয়ে কোন দোজখের মধ্যে জ্বলছে। আমেরিকায় থেকেও আপনার মুখের ভাষা এত কুৎসিত যে বাইরের অতিথির সামনেই অনর্গল নোংরা বকছেন, শূন্য বাড়ীতে এই মেয়ের সাথে কি যে করেন, তা তো বুঝতে বাকী নেই। আমাদের উচিৎ ছিল, আসবার আগে পুলিশে কল দেয়া, আপনাদের পুত্র কোথায়? তাকে ডাকেন।

আমার কথায় শাশুড়ী বোধ হয় কিছু ঘাবড়েছিল, ছেলেকে ডেকে পাঠালো। ছেলে আসলো, দেখি অপূর্ব সুন্দর এক যুবক, এ যে এমন অমানুষ হতে পারে চেহারা দেখে বুঝার উপায় নেই।
কবীর কথা বলল, “ভাই, শুনেন, আপনি এত বছর ধরে আমেরিকায় আছেন, এই দেশের আইন কানুন সম্পর্কে তো জানেন। কোন সাহসে আপনার স্ত্রীকে সারা রাত রাস্তায় বসিয়ে রেখেছেন?
ছেলে বলে, আমারই ভীষণ অন্যায় হইছে, আসলে সে কথা শুনেনা, মুখে মুখে তর্ক করে, আমার বাবা-মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, কালকেও আমার সাথে বেয়াদবী করছে তাই রাগের মাথায় কইছিলাম, বাইর হয়ে যাইতে।

-ভাই, একটাবার কি ভেবে দেখেছেন, রাতে কত রকমের বিপদ হতে পারতো। কত বদ, মাতাল, মাথা খারাপ লোক আমাদের চারপাশে ঘুরে, তাদেরই কেউ একজন যদি আপনার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যেত।
-বললাম তো, ভুল হইয়া গেছে। সকাল হইতেই ত ঘরে লইয়া আসছি, কিন্তু আপনেরা ত ভুল সংবাদ পাইছেন। এই যে বাঙ্গালীদের একটা স্বভাব, খালি কথা চালাচালি করে, ফোন একটা আছে ফ্রী, এর কথা তারে লাগায়, তার কথা আরেক জনের কাছে লাগায়। ভাই, আমরা দুইজনে ভালোই আছিলাম, ওর নিউইয়র্কের দিদি আর আমার বাড়ীর লোকজন ওর মাথা নষ্ট কইরা দিছে।

অনুরাধার কন্ঠস্বর আর শোনা হয়নি, ও সেদিন বোবা হয়েছিল। এরপর তো তোর কাছে অনুরাধার সব কাহিনী শুনলাম। উঠ ছেড়ি তোর বিয়া লাইগাছে বলেই ওকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো। বিয়ের সময় অনুরাধা মাত্র আই এস সি পাশ করেছে, গরীব বাপ-মায়ের মেয়ে বলেই আমেরিকার ছেলে পেয়ে আর দেরী করেনি। আহারে! আমাদের দেশের বাপ-মায়েরা এখনও মেয়েদের ঘাড়ের বোঝা মনে করে। মেয়েটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার শখ ছিল, মেয়ের জামাই মেয়ের বাবা-মাকে বলে এসেছিল, আমেরিকা আসার পর অনুরাধার পড়া চালিয়ে নিবে। এই লেখাপড়াই যে অনুরাধার জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়াবে, তা কেউ বুঝতেই পারেনি। অনুরাধা চায় লেখাপড়া করতে, ওর শ্বশুরবাড়ীর সকলে চায় অনুরাধা ঘরে থেকে সকলের সেবা যত্ন করুক। গত দশ বছরে মেয়েটার উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে গেছে, শাশুড়ী খিঁচে, ননদেরা খিঁচে, স্বামী তো পুরো ভেড়া টাইপ, মা-বোন যা বলে তাতেই নাচে।

তবে একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনুরাধার দিদি’র সাথে অনুরাধার যোগাযোগ রাখতে না দিলেও আমার সাথে কোন ত্যান্ডাই ম্যান্ডাই করতে পারেনি। ঐ যে বিয়ের রাতেই কবীর বিড়াল মেরে দিয়েছিল, উইলী উকিলকে সাথে নিয়ে কি যে বুদ্ধির কাজ করেছে। মাঝে মাঝেই অনুরাধা আমাদের বাসায় আসতো, মেয়েটাকে দেখলে আমি খুব কষ্ট পেতাম। এই পুঁচকে একটা মেয়ে, বিদেশ বিভুঁইয়ে একা পড়ে আছে, মা-বাবা পাশে নেই, মা-বাবার সাথে যোগাযোগ নেই, দিদি নিউইয়র্কে আছে অথচ দিদির ফোন নাম্বারও জানা নেই। এতকিছুর পরেও অনুরাধা তার স্বামী-শাশুড়ীর নামে একটি বদনামও করেনি আমার কাছে। শুধু বলতো, সবই আমার কপাল, কপালের লিখন তো খন্ডাতে পারবোনা, পায়ের নীচে মাটি তো খুঁজতে পারবো, ভাঙ্গা কপাল নিয়ে শক্ত মাটিতে দাঁড়াতে পারলেই হলো।

পারমিতা, সেদিনের পুঁচকে, স্বামী-শাশুড়ীর ভয়ে কম্পিত অনুরাধা আগামী সপ্তাহে গ্র্যাজুয়েশান করছে, ভাবতে পারিস? আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে, নিজের চোখে একটি অসহায় মেয়ের জীবন সংগ্রাম দেখলাম, শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তবে ছাড়লো।

এসেছিল গত পরশুদিন, আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না, সেদিন বুঝলাম দিদির জন্য ওর মন কীরকম পোড়ায়, আমার মাঝেই নাকি ও দিদিকে খুঁজে পেয়েছে। গ্র্যাজুয়েশানের সংবাদ দিতে এসেছিল, ঘরে মিষ্টি ছিল, অনুরাধাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে দিলাম। মিষ্টির প্লেট দেখে ওর মুখটা মলিন হয়ে গেছিল। হয়তো দিদির কথা মনে পড়ছিল, এই দিদির কোলে–পিঠে চড়ে বড় হয়েছে, দিদিই এ বিয়ের সমন্ধ করেছে অথচ আমেরিকা আসার পর আজ পর্যন্ত দিদির সাথে দেখা করতে পারেনি। ওর দিদিটার জন্য বুকে অনেক কষ্ট জমিয়ে রেখেছিল।
সবচেয়ে মজা পেয়েছি কখন বলতো, আমাকে দেখিয়ে গেল, দিদির জন্য প্লেনের টিকিট কিনেছে, নিজের উপার্জনের টাকায়, যেন দিদি মাথা উঁচু করে ছোট বোনের গ্র্যাজুয়েশান সেরিমনিতে উপস্থিত হতে পারে। টিকিট হাতে ধরা অবস্থায় অনুরাধাকে কি যে সুন্দর লাগছিল, সারা চোখে মুখে আনন্দ, উচ্ছ্বাস ছড়ানো, কি দৃপ্ত ভঙ্গী, কি অনির্বচনীয় সৌন্দর্য্যে মুখখানা মাখামাখি হয়েছিল। আমাকে সালাম করে বলল, গ্র্যাজুয়েশান সেরিমনিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য দু’খানা মাত্র টিকিট জোগাড় হয়েছে, একটি টিকিট ওর দিদির জন্য, আরেকটি টিকিট আমার জন্য। এই কথা শুনে আমি প্রথমে ভড়কে গেছি, পরে খুশীর চোটে আমি কাঁদতে শুরু করেছি। আমি টের পাচ্ছিলাম কি অসাধ্য সাধন করেছে এই মেয়ে, আবেগ সামলাতে না পেরে অনুরাধাকে বুকে টেনে নিলাম, তারপর দুই বোনে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলাম। ভাবছি, নিউইয়র্কের দিদির সাথে অনুরাধার প্রথম সাক্ষাৎএর দৃশ্য কেমন হতে পারে! আমি যাব ওর সাথে এয়ারপোর্টে দিদিকে রিসিভ করার জন্য, দিদির আসার কথা ওর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ীর কাউকে জানায়নি, দিদিকে আমাদের বাড়ীতেই তুলব।

অনুরাধা খুব ভাল চাকরী পেয়েছে, আগামী মাসে চলে যাচ্ছে মিশিগান, ওখানেই ওর পোস্টিং হয়েছে। স্বামী এখানেই থাকবে তার মা-বাবা, বোনদের আঁচলের নীচে।

ভালো থাকিস তুই।

মানসী
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কোয়েল মণ্ডল লেখাটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগল।মনে হচ্ছিল যেন আরও পড়ি...আর পড়ি।লেখার ভঙ্গি এতো সাবলীল যে মন ছুয়ে গেল।আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল।
সেলিনা ইসলাম ইচ্ছা,আত্মবিশ্বাস আর অধ্যাবসায় মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌছে দিতে পারে....! বরাবরের মত সুন্দর কাহিনী বিন্যাস, চমৎকার গল্প..! অনন্ত শুভকামনা দিদি
এফ রহমান গালে হাত দিয়ে ভাবছি , লেখকেরা এত সুন্দর করে কাহিনিকে লেখায় ফুটিয়ে তোলেন কিভাবে! গল্পের বর্ননার স্টাইলটা চমৎকার হয়েছে।
আপনার কমেন্ট পড়ে খুব উৎসাহ পেলাম রহমান ভাই।
পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। আর আমি যে টুকটাক লিখছি এগুলো পড়ে একটু উপদেশ দিলে ভালো লাগবে দিদি।
biplobi biplob Aki mayar jibonar bivinno dap gulir bohiprokas bash hoyasa.
অনেক ধন্যবাদ বিপ্লবী!
ফাহিম তানভীর দিদি আপনার গল্প সবসময় ই বড় হয় ...।তার পরও আমি মনোযোগ দিয়ে পরি ।।আজ ও পরলাম অনেক ভাল লাগল :)
তানভীর, এবারের গল্প কিন্তু মোটেও বড় হয়নি, হা হা হা! তুমি পড়েছো জেনে খুশী হলাম।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু বাস্তব জীবনের মূল্যবান বিষয়াদি তুলে ধরেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
ধন্যবাদ ওয়াহিদ উদ্দিন ভাইয়া!
এফ, আই , জুয়েল # বাস্তবতার আলোকে ঠ্যাস মেরে মেরে গল্পটা অসাধারন হয়েছে । দিদি---, আপনি অনেক কাছ থেকে ঘটনা গুলোকে তুলে নিয়ে এসেছেন । গণ্পের গতি খুবই সাবলীল ও চমপ্রদ হয়েছে । === দিদিকে ধন্যবাদ ।।
জুয়েল দাদা, কতদিন পর দেখা পেলাম। কি যে ভালো লাগছে, আমি আর আগের মত গল্পের আসরে আসার সুযোগ পাইনা, তারপরেও যে আপনি আমার গল্পের আঙ্গিনায় ঢুঁ মারতে ভুলেননি, কৃতজ্ঞতা জানাই।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী