ঋষিকন্যা

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

রীতা রায় মিঠু
  • ৩৩
  • 0
  • ১৪
তখন থেকেই আমি তাকিয়ে আছি ঋষিজার দিকে,
কেমন ধীর, স্থির চলন বলন তার।
অতি মৃদুস্বরে যখন সে বাবা বলে ডাকে,
আমার হৃদয়ের গহীনে টের পাই শীতলতার আমেজ!
ভাবি আমি, ঋষিজা নামের মানে যদি হয় ‘ঋষিকন্যা’,
আমিই তাহলে সেই ঋষি!
আগেতো কোনদিন ভাবিনি এমন করে নামের কি মহিমা,
যিনি ঋষিজা নামটি রেখেছিলেন, বাংলা ভাষার প্রতি
তাহার মমতাকেই ধরে নিয়েছিলাম এমন নামকরনের কারন হিসেবে।
আমার চেতনায় ছিলোনা নামের কি গুরুত্ব, নাম তো নাম,
মনে পড়ে, কতশিশুর নাম রাখা হয়েছিল ‘মিলেনিয়াম’
যারা ভুমিষ্ঠ হয়েছিল একুশ শতকের প্রথম দিবসে
অথবা প্রথম মাসের যে কোন এক ক্ষনে!
আহ! একুশ শতকের কথা ভাবার সাথে সাথেই
‘একুশ’ শব্দটি কেমন এক ঝংকার তুললো হৃদয় বীণার তারে!
হ্যাঁ, এবার অনেক বেশী স্বচ্ছ হয়েছে ‘ঋষিজা’ নামের উৎস।

বাংলা ভাষার জন্য প্রান উৎসর্গ করেছিলেন
রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার, সালাম নামের তরুনের দল
সেও আজ থেকে ষাট বছর আগে!
ষাট বছর পরেও দেখি প্রায় প্রতি রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে চলেছে
এক নারী, তাঁর কিশোরী বালিকাটিকে বাংলা শেখানোর উৎসাহে!
দোষ আমার! উচ্চশিক্ষার মানসে চলে এসেছিলাম দেশ ছেড়ে মার্কিন মুলুকে।
আমার উপর নির্ভর করেই ওরাও এসেছিল, মা ও তিন মেয়ে।
কাজের চাপে দিশেহারা আমি, খেয়াল করার অবসর নেই
মায়েরা আমার মাতৃভাষা ভুলেই গিয়েছে কিনা!
আসলে খেয়াল করার প্রয়োজনই বোধ করিনি
সারাক্ষন তো ‘বাবা’ ডাক শুনি, ‘মা’ ডাক শুনি
কই ‘ড্যাডি’ বা ‘মাম্মি’ তো এখনও শুনিনা
তাহলে আমিই বা কেন অযথা উতলা হতে যাব
মেয়েরা বাংলা ভুলে গেছে ভেবে!
আমি প্রতিদিন খাবারের থালাতে দেখি গরম ধোঁয়া উঠা ভাত
সাথে ডাল, মাছ আর একটা সব্জী।
আমার পাশে বসেই ‘ঋষিজা’ হাত দিয়েই ভাত মেখে
কেমন সুন্দর করে খেয়ে যায়!
রুই, ইলিশ, পাবদা, কই মাছ ভালো চেনে, আরও
জানে পিঠা পায়েসের কথা।
মাকে ডেকে বলে, ‘মা, পাটিসাপটা পিঠা বানাও, ক্ষীর দেবে বেশী করে’
তার মায়ের দেখি মুখ উপচে পড়ে খুশীর ঝলক!
তা পড়ারই কথা।
‘ঋষিজা’কে নিয়ে এসেছিলাম যখন সে মাত্র দুই বছরের শিশু,
ভাল করে কথাই ফুটেনি মুখে।
মনে পড়ে যায়, এসে উঠেছিলাম বাঙ্গালী বিবর্জিত এক শহরে।
ঋষিজা পড়ে গিয়েছিল মহাবিপদে
কি হবে তার মুখের ভাষা, ইংরেজী নাকি বাংলা!
ছয় নম্বর বিপদ সঙ্কেত টের পেয়েছিলাম যখন
ঋষিজা ‘বাংলিশ’ এ কথা বলা শুরু করেছিল।
আমার মুখে অসহায়তা দেখে মেয়ের মা বলেছিল,
“মেয়ের নাম রেখেছি ঋষিজা, এতো আর বিনা কারনে রাখিনি
নামের প্রভাবেই মেয়ে আমার সকল বাধা কাটিয়ে উঠবে”।
তা কেটেছে, ঋষিজা এখন আর ‘বাংলিশ’ এ কথা বলেনা
নিরেট ইংলিশেও কথা বলেনা।
যখন যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি করেই ও কথার আদান-প্রদান করে।
তার বাংলা উচ্চারণ শুনলে পরে দেশের ‘বাংলিশ’ ছেলেমেয়ের বাবা মায়েরাও
থমকাবে, নিজের ছেলেমেয়েদের প্রতি, নিজের ভাষার প্রতি তাদের অবজ্ঞার জন্য।
তারা এখানেও থমকায়, যখন ঋষিজা ‘একুশের অনুষ্ঠানে’
শুদ্ধ বাংলায় কবিতা আবৃত্তি করে যায়।
গত তিন বছর আগেই মাত্র নয় বছর বয়সে
ঋষিজা আবৃত্তি করেছিল, ‘কাজলা দিদি’
হলভর্তি মানুষের চোখ জলে ছলছল করে উঠেছিল।
তারা ঋষিজাকে বুকে চেপে ধরে আহ্লাদে আহ্লাদে ভরিয়ে দিয়েছিল।
গেলো বছর ‘একুশের’ অনুষ্ঠানেই আবৃত্তি করলো, জসীমুদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’।
সবাই এখন ধরেই নিয়েছে, এ বছরের ‘একুশে’তে
ঋষিজা আরও বড় কোন কবিতা আবৃত্তি করবে।
হয়তো সত্যিই ঋষিজা এবছর আরও বড় কোন চমক দেখাবে
সবকিছু নির্ভর করে ঋষিজার বাংলাপ্রেমী মায়ের উপর।
এই নারীকে দেখলেই বাংলাকে দেখা হয়ে যায়,
তার সাথে কথা বললেই বাংলাকে ভালো না বেসে উপায় থাকেনা।
‘একুশে পদক’ পায় শুধুমাত্র মুখচেনা কীর্তিমানেরা
যখন ঋষিজার মায়েরা থেকে যায় পর্দার অন্তরালে!
সে কোন পদকের অপেক্ষায় থাকেনা, যেমন
থাকেনি ষাট বছর আগের সেই দামাল তরুনেরা।
এরা জন্মেছেই সবার হয়ে মাতৃভূমির প্রতি ঋণশোধের দায় নিয়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ধুমকেতু মনটা ভরে গেল কবিতাটি পড়ে। ধন্যবাদ কবি।
মামুন ম. আজিজ গল্পমাতৃক এক কবিতা , বেশ লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
ধন্যবাদ আজিজ! মাস শেষ হয়ে এসেছে, এরপরেও আমার লেখাটি পড়েছেন, প্রশংসা করেছেন, আমাকে ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ করেছেন। ভাষার মাসে আপনাদের মত ছোট ভাইদের জন্য প্রাণভরা ভালোবাসা থাকলো।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান অসম্ভব রকমের ভাবাবেগে আত্মনিমগ্ন করে রাখার মত মায়াবী একটি কবিতা| অসাধারণ.......
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আক্তারুজ্জামান ভাই, সূর্যকে লেখা আমার মন্তব্যটুকু আপনাদের সকলের জন্যই লিখেছি, এক কথা বার বার বললে পরে শুনতে ভালো শুনায়না বলে এখানে আর আলাদা করে বললামনা, তবে আপনার মন্তব্য পেয়ে আমার ভীষন ভালো লাগছে।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সূর্য আমরা বাঙালীরা উদার, তবে একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সেটা প্রশংসায়................. হা হা হা। লেখাটার বেশ কয়েক জায়গায় হু হু আবেগে ভেসেছি যেমন: শুদ্ধ বাংলায় কবিতা আবৃত্তি করে যায়। গত তিন বছর আগেই মাত্র নয় বছর বয়সে ঋষিজা আবৃত্তি করেছিল, ‘কাজলা দিদি’..... আপনারও যে এমনটা হয়েছে বলাই বাহুল্য। অনেক ভাল লাগা জানবেন।........☼
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সূর্য, উত্তর জানাতে দেরী হলো বলে দুঃখিত ভাইটি। তোমার কথাই ঠিক, অনেকবার আবেগে ভেসেছি, আমি কোনদিন কবিতা লিখিনি, কবিতা অনেক কঠিন, ঋষিকন্যা লিখেও কেমন ভয়ে ভয়ে ছিলাম, যারা সত্যিকারের কবিতা বুঝে তারা কিভাবে গ্রহণ করবে আমার এই দুঃসাহসকে! তোমাদের সকলের ভালোবাসা পেয়ে আমি আবেগে আপ্লুত হচ্ছি যতটুকু না হয়েছি ঋষিকন্যা (জীবনের প্রথম প্রচেষ্টা) লিখে। তোমার ভাল লাগা কৃতজ্ঞতাভরেই গ্রহণ করছি। ভালো থেকো।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
এম এম এস শাহরিয়ার এরা জন্মেছেই সবার হয়ে মাতৃভূমির প্রতি ঋণশোধের দায় নিয়ে ---- হু ... দায় শুধু ওদেরই , আর আমাদের কি .... ?
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আপন, দায় আসলে আমাদের সকলের, যে যেভাবে নেয় ঘটনাকে।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সাইফুল করীম ঋষিজা অমর বাংলা প্রেমিক হোক আর ঋষিও তাঁর অনন্ত ভালবাসা শত প্রতিকূলতার মাঝেও ধারণ করে বাহিত করুক সবদিকে। যিনি ঋষি তিনি তো সাধনার-ই বর, চলতে থাকুক কাব্য-রথ......ভরে যাক সুন্দর এ চরাচর.........
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
কি অপূর্ব তোমার প্রশংসা করার ভাষা! অনেক খুশী হলাম সাইফুল। ভালো থেকো।
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সেলিনা ইসলাম প্রথমেই স্বাগতম জানাই - প্রবাসে প্রতিকূল সমাজে বেড়ে উঠা সন্তানকে নিয়ে আতঙ্কিত প্রায় প্রতিটি বাবা মা , আপনার কবিতার গল্প জুড়ে পেলাম একজন প্রবাসী গর্বিত মা-কে যা সত্যিই প্রশংসনীয় !সৃষ্টিশীল মানুষের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তার অস্তিত্বকে পরিপূর্ণ কাঠামো দেয়া , আত্মতৃপ্তি পাওয়া ! খুব সুন্দর কবিতা ভাল লাগল শুভেচ্ছা রইল শুভকামনা নিরন্তর
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ @সেলিনা ইসলাম। আপনাদের সাথে সাথে আমিও প্রশংসা করতে চাই ঐসকল ভাষাপ্রেমীদের, যাঁরা নিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের সংস্কৃতিকে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে! ভালো থাকুন।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
অদিতি কবিতার আড়ালে সুন্দর একটা গল্প বলে গেলেন। অনেক ভাল লাগল পড়তে।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
অদিতি, ধন্যবাদটুকু জানাতেও কত দেরী করে ফেললাম ভাই! আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইলো তোমার প্রতি!
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
Lutful Bari Panna অনেক সুন্দর লিখেছেন দিদি..
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সত্যি কি তাই!
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সন্দেহ কেন দিদি? তবে ভালর তো শেষ নেই। যত চর্চা করবেন তত ভাল হবে।
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
Azaha Sultan আপনার দেশপ্রেম দেখে আমি মুগ্ধ.........'পাশে যবে ছিল হয় নি চাওয়া, দূরে যবে গেল তার লাগিল হাওয়া' অসম্ভব ভাল লাগল আপনার লেখা..........দেশ ছেড়ে না গেলে এমন লেখা কখনো লেখা যায় না........
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আযাহা, লেখা মাত্র শুরু করলাম, তাই লেখার মান সম্পর্কে নিজেরই সন্দেহ আছে, কিনতু আমার দেশ প্রেম নিয়ে যে এখানের কারো মনে কোন সন্দেহ নেই, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমার কি যে ভালো লাগছে!
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪