রেনোড্রজেন

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

হাবিব রহমান
  • ১৪
আজ থেকে ৮ বছর আগের কথা। পৃথিবীতে বিভিন্ন পারমানবিক বিপর্যয়ের হওয়ার ফলে বিবিধ আইনগত বাধ্যবাধকতা চালু হয় এবং যার কারনে বিজ্ঞানিদের মাঝে পরমাণু নিয়ে গবেষণার আকর্ষণ অনেকটা কমে যায়। কিন্তু প্রফেসর রেনো পরমানু নিয়ে গবেষণা চালিয়ে জান এবং হাইড্রোজেনের মত এমন বিন্যাস্ত এবং সরল একটি পরমানুকে পুনর্বিন্যাস করে নতুন এক পরমাণুর জন্মদেন। কোন রকম তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছাড়াই তিনি হাইড্রোজেনের এই পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম হন। তার এই আবিষ্কারে পুরো পৃথিবীর বিজ্ঞানিরা একেবারে নড়ে চড়ে বসেন কেননা আগে পরমাণুর পুনর্বিন্যাস করা সম্ভব এমনটা কেউ কল্পনা পর্যন্ত করতেন না। তার সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা সরূপ তার নামের সাথে মিলিয়ে পরমাণুটার নামকরণ করা হয় রেনোড্রজেন। পরমাণু আবিষ্কার সাধারণ জীবন যাপনে তেমন কোন প্রভাব ফেলেনা বলে ব্যক্তি হিসাবে প্রফেসর রেনো তেমন জনপ্রিয় হন নাই। অনেকেই তার নাম পর্যন্ত জানেনা। তা ছাড়া দরিদ্র দেশের একজন বিজ্ঞানী হওয়ার কারণে আবিষ্কার নিয়ে যত হৈচৈ হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম আলোচিত ছিলেন প্রফেসর রেনো। তাতে রেনোর কোন মন কষ্ট ছিলনা। কারণ তিনি ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন অন্য একটা এসাইনমেন্টে। সেই এসাইনমেন্টটা শেষ করতে পারেনি রেনো। ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। প্রফেসর রেনোর মৃত্যুর পর তার গবেষণা সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ হঠাৎ করে কমে যেতে থাকে। রেনোড্রজেন সম্পর্কে মানুষ প্রায় ভুলতেই বসেছিল। পৃথিবীর কয়েকটি গবেষণাগারে দীর্ঘ দিন রেনোড্রজেন বলতে গেলে বন্দি হয়ে থাকল।

ইরিয়ণ তার ব্যক্তিগত ল্যাবে বসে খুব মনোযোগ সহকারে একটা তরল পদার্থের দিকে তাকিয়ে আছে। তরলটা একটা কাচের পাত্রে রাখা আছে। আজকে সকালে বিক্রিয়াটি করতে সক্ষম হয় ইরিয়ণ। বিক্রিয়ার ফলে এই তরলটি তৈরি হয়েছে। অনেক দিন ধরে বিক্রিয়াটি করার চেষ্টা করছে সে কিন্তু সঠিক অনুঘটকের সন্ধান পাচ্ছিলনা বলে বিক্রিয়াটি ঘটছিলনা। বায়ু শূন্য স্থানে পরমাণু দুটির সংমিশ্রণ করতেই উদ্ভট এই কাল কুচকুচে তরলটি তৈরি হয়েছে। বলা যায় এই তরলটি পৃথিবীতে একটি নতুন উপাদান। এর আগে এই উপাদানের অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিলনা। রেনোড্রোজেন এবং অক্সিজেনের সংমিশ্রণে এই তরলটি তৈরি করে বসে সে যদিও এইটি তার গবেষণার বিষয় নয়। কিন্তু হাইড্রোজেনের ফুয়েল সেল নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে রেনোড্রজনের প্রতি আকৃষ্ট হয় ইরিয়ণ। অক্সিজেন এবং রেনোড্রজেনের বিক্রিয়া ঘটানের চেষ্টা করে চলছে। এই বিক্রিয়াটি নিয়ে তার গবেষণা পত্র তৈরী করার ইচ্ছা তার এবং এই প্রতিবেদন দিয়ের ডক্টরেট ডিগ্রীটা পেয়ে যাবে, এমনই প্রত্যাশা করছে ইরিয়ণ। যদিও তার প্রফেসর একজন রগচটা এবং বদমেজাজি মানুষ, গবেষণার বিষয় বদলে ফেলার জন্য হয়ত তাকে ডিসকোয়ালিফাই করে বসতে পারে। কিন্তু লোকটা বদমেজাজি হলেও কাজ পাগল। ভাল কাজের মূল্যায়ন করতে পারে। প্রতিবেদনে তরলটার বৈশিষ্ট্য গুলো নিখুত ভাবে তুলে ধরতে পারলে এটা তার পছন্দ হলেও হতে পারে। তাই ইরিয়ণ তরলটার বৈশিষ্ট্য গুলো যাচাই করার জন্য কাজ শুরু করল। তরলটাকে তার টেবিলের মাঝ খানে এনে রাখল। ভাল করে লক্ষ্য করে তরলটাকে দেখছে সে। কাচের পাত্রটার প্রায় অর্ধেক পূর্ণ হয়ে আছে। তরলটাকে দেখতে দেখতেই হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ পড়ল ইরিয়ণের এবং আতৎকে উঠল। অনেক বেজে গেছে। এক্ষণই বেরিয়ে পড়তে না পারলে সময় মত পৌঁছানোই যাবেনা। খুবই মজার একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে আজকে। কোন ভাবেই এই পার্টিটা মিস করা যাবেনা। তাড়াতাড়ি করে ল্যাবটা বন্ধ করে পার্টির উদ্দেশ্যে রওনা দিল ইরিয়ণ।
পরেরদিন ল্যাবে আসতে একটু দেরী হল ইরিয়ণের। গতকালের পার্টিটা জমেছিল বেশ। খাওয়া দাওয়া, পানিয়, আনন্দ, হুল্লোড়, হৈ চৈ, চিৎকার চেঁচামেচি, কোন কিছু কমতি ছিলনা কালকের পার্টিতে। ঘুম থেকে উঠতেই দেরি হয়ে গেল তাই। ল্যাবের দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল। বাইরে ভীষণ রোদ আর প্রচণ্ড গরম কিন্তু তার ল্যাবটা যেন শীতল হয়ে আছে। বিষয়টা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। এসি কি গতকাল বন্ধ করে যায়নি? সুইচটা চেক করল ইরিয়ণ। না এসি চলছে না। ল্যাবের সব গুলো লাইট জ্বালাল। তার টেবিলের মাঝখানে রাখা তরলের পাত্রটা দেখে আতৎকে উঠল ইরিয়ণ। তার স্পষ্ট মনে আছে কাচের পাত্রের অর্ধেকটা পূর্ণ ছিল তরলটায়। এখন দেখছে পাত্রটা সম্পূর্ণ ভরা। তরলটা নিজে থেকে বাড়ল কিভাবে?
দ্রুত তরলটার কিছু স্যাম্পল নিয়ে টেস্ট করতে বসল। প্রথমেই যাচাই করে দেখল তরলটা এসিটিক কিনা। বিস্ময়কর হচ্ছে তরলটা দেখতে কুৎসিত হলেও পানির মতই নির্বিষ গন্ধও নেই। হাতে নিয়ে দেখল তরলটা তেলের মত চিটচিটে না। তরলটা হাতে নিয়ে কেমন শরীর কেমন যেন ঘিনঘিন করছিল। দ্রুত হাত মুছে নিয়ে ধুয়ে ফেলল। তারপর তরলটার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গুলো যাচাই করার জন্য আবার ব্যস্ত হয়ে উঠল। তরলটার পৃষ্ঠটান পানির চেয়ে একটু বেশি। তরলটার আপেক্ষিক তাপ যাচাই করতে গিয়ে হোঁচট খেল ইরিয়ণ। ক্যালরি মিটারে এর সংখ্যাটা একেক সময় একেক রকম দেখাচ্ছে। আরও কয়েকবার বিষয়টা যাচাই করার চেষ্টা করে দেখার চেষ্টা করল। ফলাফল একেক সময় একেক রকম দেখাচ্ছে। ওর ক্যালরি মিটারে কি কোন সমস্যা হল? যাচাই করার জন্য ইরিয়ণ পানির আপেক্ষিক তাপ মাপল। যথাযথ উত্তর। ক্যালরি মিটার ঠিকই আছে। তবে? কিছু বুঝে উঠতে পারছে না ইরিয়ণ। টেবিলে রাখা কাচের পাত্রটার দিকে তাকাল ইরিয়ণ। তরলটা কচের পাত্র উপচে এখন টেবিলে এসে পড়েছে। তার টেবিলটা এলুমিনিয়াম এ্যলয়ের তৈরি। তরলটা টেবিলের মাঝখানে কাচের পাত্রের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই যেন ইরিয়ণের। তারপরেও মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছে ও। খুঁজছে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর।
একনম্বর প্রশ্ন, তার ল্যাব এই রকম ঠাণ্ডা হয়ে গেল কেন? ঘরের তাপ আসলে গেল কই? তাহলে কি তরলটা তাপ শোষণ করে নিচ্ছে? কিন্তু গৃহীত তাপ সমান হবে বর্জিত তাপ। ঘর যে পরিমাণ তাপ হারাবে তরলটা যদি তা শোষণ করে তার তাপমাত্রাও বাড়বে। সেক্ষেত্রে তরলটা অসম্ভব তেতে থাকার কথা। কিন্তু তরলটা তেতে নেই।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, তরলটা পরিমাণে বাড়ছে কি ভাবে? পদার্থ কি রিপ্রোডাক্টিভ হতে পারে?
তৃতীয় প্রশ্ন, তরলটার আপেক্ষিক তাপ আসলে কত? ক্যালরি মিটার কেন তার প্রকৃত আপেক্ষিক তাপ নিরূপণ করতে পারছে না?
সবগুলো প্রশ্ন একসাথে চিন্তা করলে একটা সম্ভাবনাই উকি দিচ্ছে তার মনে। তরলটি তার ল্যাবের তাপশক্তি শোষণ করেছে আসলে শোষণ করেছে শক্তি। সকল পদার্থই আসলে শক্তির এক রূপ। মানে পদার্থও আসলে শক্তি। পদার্থকে শক্তিতে আবার শক্তিকে পদার্থে রূপান্তর করা যায়। তার ল্যাবের তাপশক্তিকে তরলটা শোষণ করে পদার্থে পরিণত করে নিজের পরিমাণ বাড়াচ্ছে আর এই কারণে তার আপেক্ষিক তাপ স্থির থাকছে না একেক সময় একেক রকম হচ্ছে। পুরোটাই সম্ভাবনা। কোন প্রমাণ নেই তার কাছে।
ঝন্নাৎ করে কাচ ভাঙ্গার শব্দে চমকে উঠল ইরিয়ণ। চিন্তায় মগ্ন ছিল বলে বেশী চমকে উঠেছিল কিন্তু ভয় পেয়ে গেল যখন দেখল তার এলুমিনিয়াম এ্যলয় এর টেবিলটার মাঝ বরাবর ছিদ্র হয়ে কাচের পাত্রটি ফ্লোরে পরে গেছে এবং ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে। তার আগের অনুমান যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে তরল পদার্থটি শক্তিকে পদার্থে নয় শুধু পদার্থকেও শক্তিতে রূপান্তর করে পুনরায় পদার্থে রূপান্তর করে নিচ্ছে। তার অনুমান যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে পৃথিবীর জন্য এটি এক অশনি সংকেত। এটি এক ভয়ংকর চেইন রিয়েকশন। এমনটি ঘটতে থাকলে পৃথিবীতে এই কদাকার তরল পদার্থ ছাড়া আর কোন পদার্থই থাকবেনা। তার অনুমান সঠিক হোক বা না হোক এখনই বিষয়টা দেশের গুরুত্বপূর্ণ লোকদের জানানো দরকার। এই চেইন রিয়েকশনটা থামানো না গেলে পৃথিবীর জন্য ভয়ংকর বিপদ সম্মুখীন। এই রকম ভয়ংকর বিপদ মনে হয় পৃথিবীর জন্ম ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। আর পৃথিবীর বিপদ মানে পৃথিবীর সকল জীবের জন্য বিপদ। কিন্তু কাকে জানাবে, ইরিয়ণ ভেবে পাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসে জানাবে? না সেটা সঠিক হবে না। সাংবাদিকরা অযথাই আজেবাজে রিপোর্ট করে সমস্ত পৃথিবীকে ঘাবড়ে দেবে। ফলে বিশৃঙ্খলা ছাড়া বাড়তি কিছু হবে না। তার প্রফেসর এর কথা ছাড়া সঠিক কারো কথা মাথায় আসছে না তার। আগপাছ ভাবার আর কোন সময় নেই। ফোনে তাকে বিষয়টি বোঝাতে পারবেনা বলেই ল্যাবটা বন্ধ করেই দ্রুত ছুটল প্রফেসর এর কাছে।
প্রফেসর ল্যান্সলট খুবই রাশভারী এবং গুরু গম্ভীর লোক। খুবই কম কথা বলেন। প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বা কাজ করতে পছন্দ করেন না। কয়েকটা রেফারেন্স বুক সামনে নিয়ে তার মাঝে ডুবে ছিলেন ল্যান্সলট। তার কামড়ায় নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ আসেনা। খুব ঘনিষ্ঠরাও অনুমতি ছাড়া তার রুমে প্রবেশ করে না। ইরিয়ণ এসব জানে এবং মানে কিন্তু আজকে তা তোয়াক্কা না করে প্রফেসর এর রুমে ঢুকে পড়ল। তার টেবিলের সামনে হাপাতে হাঁপাতে বলল, স্যার আপনাকে এক্ষুনি আমার ল্যাবে যেতে হবে। ল্যান্সলট তার বই গুলোর ভিতর হতে মাথা উঠালেন। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে বললেন, ইরিয়ণ আমার রুমে এই ভাবে ঢুকে যাওয়া আমি একদম পছন্দ করিনা। আশা করি তোমার মনে থাকবে। তুমি তোমার ল্যাব এ সময় নষ্ট করতে পার। আমি সময় নষ্ট করা পছন্দ করিনা। আমি এখন ব্যস্ত, আমার সময় নষ্ট করোনা। তুমি যেতে পার।
ইরিয়ণ ঝাঁঝের সাথে বলল, “আমি জানি আপনি অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু আপনাকে আমার ল্যাবে যেতে হবে এবং এক্ষুনি!” পরের কথা গুলো বিনয়ের সাথে বলল, “স্যার নয়তো ভয়ংকর বিপদ ঘটে যাবে। আমাদের হাতে খুব বেশী সময় নেই”।
গত বিশ বছরে কেউ তার সাথে এমন ভাবে কথা বলেছে মনে করতে পারলেন না মিস্টার ল্যান্সলট। ইরিয়ণের ঘাবড়ে যাওয়া চেহারার দিকে ভাল করে তাকালেন। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। জানতে চাইলেন, কি হয়েছে তোমার ল্যাবে?
: স্যার সত্যি বলছি। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ এবং নিজের চোখে না দেখলে বিষয়টা ধরতে পারবেন না। প্লিজ স্যার আমাদের হাতে সময় কম। নয়তো পুরো পরিস্থিতি আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। যেতে যেতে আপনাকে বিষয়টা আমি ব্যাখ্যা করব।
ল্যান্সলট উঠে দাঁড়ালেন। ইরিয়ণের বর্তমান কাজ নিয়ে তিনি বিরক্ত হলেও তিনি জানেন সে মেধাবী। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ না হলে এইরকম ব্যস্ততা দেখাতো না। তিনি বললেন, “চল দেখি কি হয়েছে।”
যেতে যেতে ইরিয়ণ রেনোড্রজেন নিয়ে তার গবেষণা এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানালো। তার তৈরি তরলটার বিরল বৈশিষ্ট্যর কথা বলল। মিস্টার ল্যান্সলট ইরিয়ণের কথা শুনে মানতেই পারছেন না। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে সব কিছু তাই তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন করে বিষয়টা নিয়ে স্পষ্ট হতে চাইলেন। কিন্তু ইরিয়ণের ল্যাবে এসে যখন নিজের চোখে তরলটাকে দেখলেন অবাক হওয়া ছাড়া আর কোন রকম মানবিক আবেগ দেখাতে পারলেন না। ইরিয়ণের ল্যাবটার মাঝ খানে গর্ত হয়ে আছে সেখানে থিকথিক করছে কাল তরল পদার্থ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে চারদিক থেকে এর আয়তন বাড়ছে। গর্তটা যত বড় হচ্ছে গাণিতিক হারে এর বৃদ্ধির গতিও বাড়ছে। ল্যান্সলট কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। ইরিয়ণের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমাদের কি করা দরকার। তোমার কি মনে হয়?”
: প্রথম আমাদের সেন্ট্রাল গর্ভামেন্টকে জানানো দরকার। এই ফিসন বিক্রিয়াকে থামাতে হলে সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
: তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু সেন্ট্রাল গর্ভামেন্ট এর কার সাথে যোগাযোগ করব? তোমার পরিচিত কেউ আছে?
: স্যার, আপনি মাথা ঠাণ্ডা রাখেন। আমার সেটা জানা থাকলে প্রথমে আমি তার কাছেই যেতাম।
: তুমি ঠিকই বলেছ। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। বিষয়টা সাধারণ মানুষের থেকে গোপনে রাখতে হবে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারলে ভীষণ বিশৃঙ্খলা লেগে যাবে। কাকে জানাই....দাড়াও। হ্যাঁ ভাইস চেন্সলর কে জানাই। কি বলল?
: আমার মনে হয় এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
ভাইস চেন্সলর কে বোঝাতে বহুত কষ্ট হল। বেচারা সাহিত্যের প্রফেসর কিন্তু যোগ্য ভিসি। যখন গুরুত্বটা বুঝলেন তখন তিনি ছুটে আসলেন ইরিয়ণের ল্যাবে। ল্যান্সলট এবং ইরিয়ণ তাকে অকুস্থল দেখাল। তিনি এইসব কিছু বুঝেন না। তিনি বুঝেন ল্যান্সলটের চেহারার ভাষা। তিনি বোঝেন ব্যবস্থাপনা। তিনি বললেন, ল্যান্সলট ভাল খবর হচ্ছে কি জান? ল্যান্সলট এবং ইরিয়ণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। এর মধ্যে ভাল কি হতে পারে? তিনি শেষ করলেন, “ইরিয়ণের ল্যাবটা কোন লোকালয়ে নয়। লোকালয়ে হলে মহা সমস্যা হয়ে যেত। ইভ্যকুয়েশন করতে গেলেই চারিদিকে খবর পড়ে যেত। আর ক্যান্টনমেন্টটা খুব কাছে।”
চার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পুরো এলাকা আর্মি ঘিরে ফেলল। চারিদিকে ৩০০ গজ অর্ধবৃত্ত ধরে কাঁটাতার দিয়ে এলাকাটা সংরক্ষিত করা হল। সব ধরণের ট্রেস পাসিং বন্ধ করে দেয়া হল। আর্মির গার্ড বসিয়ে দেয়া হল সব জায়গায়। ইরিয়ণের ল্যাবটাকে কেন্দ্র করে নিমিষের মধ্যেই একটা গবেষণা কেন্দ্র, অফিস কক্ষ, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বসানো হয়ে গেল। অল্পক্ষণেই গড়ে উঠল একটা স্যাটেলাইট শহর। সবধরনের যোগাযোগ করার জন্য সার্বক্ষণিক চারটা হেলিকপ্টার দেয়া হয়েছে। যে কোন জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য স্টেন্ড বাই রাখা হল আরও দশটি হেলিকপ্টার। দেশের সেরা সেরা গবেষকদের ছয় ঘণ্টার নোটিশে এখানে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এই গবেষণা দলে সব প্রায় ধরণের বিজ্ঞানীদের রাখা হয়েছে। এই দলের প্রধান করা হয়েছে ল্যান্সলটকে। তাকে সহায়তার করার জন্য ইরিয়ণকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দলে রাখার কথা নয়। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা তার সৃষ্টি বলে তাকে দলে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জি -৮ এর সকল সরকার প্রধানদের নিয়ে অত্যন্ত গোপনীয় একটা টেলি কনফারেন্সের আয়োজন করতে যাচ্ছেন। এই স্বল্প সময়ে তরল পদার্থটার উপরে একটা ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে। সেটা দেখানো হবে জি-৮ এর সরকার প্রধানদের। সেখান থেকেও পৃথিবীর সেরা গবেষকদের উড়িয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটা কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটি ভিজিলেন্ট টিম হিসাবে কাজ করবে এবং প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর তথ্য সংগ্রহ করে সরকারকে আপডেট করবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।
ইরিয়ণের ল্যাব এর ভেতরে কুৎসিত বৃত্তাকার আয়তনের এক খাদ তৈরি হয়েছে যার পরিধি প্রায় পনের ফিট। গভীরতা প্রায় তিন ফিট। ল্যান্সলট খাদটার পাশে এসে দাঁড়ালেন। তাকে খুবই অসহায় দেখাচ্ছে। যে ভাবে তরলটা তার আয়তন বৃদ্ধি করছে তাতে পুরো পৃথিবী এই তরলে পরিণত হতে সময় লাগবে ৭৮৩ দিন ৭ ঘণ্টা ২৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড এবং ৮ ন্যানো সেকেন্ড। সৌরমন্ডলির এই নীল রং এর গ্রহটি পরিণত হবে কাল কুৎসিত এক গ্রহে। ল্যান্সলট ভাবছেন, আমরা কি পারব এই ফিশন বিক্রিয়াটাকে ঠেকাতে? আমাদের হাতে কি এত সময় আছে? তিনি হিসাব করে দেখেছেন ২৩ দিন ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিট ৭ সেকেন্ড পরে পৃথিবীকে বাঁচানো মানুষের টেকনোলোজির বাইরে চলে যাবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Amar Kachhe Khub Valo Laglo Vai Habibur Apnar Biggan BIsoyok Lekhatir Jonno.......Dhonnobad
আহমেদ সাবের বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও যেভাবে একটা পরমাণু গবেষণা সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনী লিখলেন, তাতে অবাক না হয়ে পারছি না। লেখার স্টাইলও অসাধারণ। গল্পের বাকিটুকু পাবার অপেক্ষায় থাকলাম।
বর্তমানে আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না থাকলেও এইচ.এস.সি পর্যন্ত বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছি। তাই বিজ্ঞানের প্রতি টান রয়ে গেছে। আপনাকে ধন্যবাদ এবং আগামী পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ ...
Meshkat সাইফাই ও যে শিল্পির ছোঁয়ায় সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে তে এই গল্প পরলে বোঝা যায়। তা, বাকিটুকু কই?
আপনাকে ধন্যবাদ। আগামী সংখ্যায় বাকিটুকু প্রকাশিত হবে। পড়ার জন্য আগাম আমন্ত্রণ....
amar kobita 'notuner sondhane' porar amontron roilo.
মাহবুব খান ৫ দিলাম
অনেক অনেক ধন্যবাদ মাহবুব ভাই।
মাহবুব খান না বললেন চলবে ,নাবল্লেন শেষ / অনুরণন চলতে থাকলো ,ফুরালনা রেশ/
শুভ নববর্ষ।
আগামী সংখ্যায় আশা রাখি শেষাংশ প্রকাশিত হবে। পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অসাধারণ কল্পনাশক্তির পাতনে এ মহান সৃষ্টি 'রেনোড্রজেন' । আর কল্পনার সাথে বর্ণনার বর্ণচ্ছটা পাঠককে বিমোহিত, রুমাঞ্চিত। ভাল লাগাটা অন্যরকম।আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশাটাও আকাশ্চুম্বী হতে থাকলো । অভিনন্দন ও শুভকামনা ভাই হাবিবুর রহমান। শুভ নববর্ষ।
শুভ নববর্ষ জামাল ভাই। আপনি অনেক অনেক বাড়িয়ে বললেন। তবে সত্যিই যদি পাঠকেকে কিছুটা হলেও আনন্দ দিতে পারি তাতে আমি আনেক আপ্লুত। আমি অনুপ্রাণিত। প্রত্যাশা পুরনের চেষ্টা করে যাবো। সংগে থাকবেন আশা রাখি। শুভ কামনা রইল।
সময় হলেই বুঝা যাবে কতটুকু বাড়িয়ে বলেছি বা কতটুকু যথার্থ বলেছি-----। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
আরমান হায়দার বিজ্ঞানের বিষয়কে সাহিত্যে তুণে আনার চেষ্টার জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাচ্চি। শুভকামানা।
অনেক ধন্যবাদ হায়দার ভাই.... তবে এগুলো প্রকৃত বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার ফাঁক ফোকর দিয়ে, বলতে গেলে পাস কাটিয়ে লেখা। তাই ফিকশন....। আবার ফিকশনও বাস্তব হয়ে যায়, এইচ.জি ওয়েল্স এর অনেক কল্প কাহিনী এখন কিন্তু বাস্তব....। আপনাকে আবারও ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
Lutful Bari Panna নিশ্চয়ই শুনেছেন যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়.. মু হা হা হা। প্রথমেই বলেন হাইড্রোজেনে মাত্র একটা ইলেক্ট্রণ একটা নিউট্রন। প্রোটনের সংখ্যা বেড়ে দুটো হলে সেটার ওজন বেড়ে ডাবল হয়। এখানে কি এমন ওলট পালট করার থাকতে পারে। আর যদি থাকেই সেটা কেন ব্যাখ্যা করলেন না? পদার্থকে শক্তিতে পরিণত করা যখন যায় তখন শক্তিকেও পদার্থে রূপান্তর করা যাবে। বিশেষ করে সৃষ্টির সূচনালগ্নে শক্তিই পদার্থ হয়েছিল। সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তবে গল্পটা ছিল টান টান, উত্তেজনায় ভরপুর। তবে বেখাপ্পা জায়গায় গল্প শেষ করে দিয়ে পাঠকের উত্তজনা বাড়ানোর অভ্যাসের জন্য আপনাকে দ্বিতীয়বার শুলে চড়ানো হল।
শেষ মেষ ধরা খাইলাম... হে হে হে। যাক! ভবিষ্যতে গল্প পোস্ট করার আগে আর একটু পড়াশুনা করে নিতে হবে। তবে আমার গল্পটা লেখার ইচ্ছা হয়েছিল আপেক্ষিক তাপ নিয়ে, লেখার আগেই আমার বিজ্ঞানির নাম ঠিক করলাম রেনো...। তার থেকে গল্পের নাম রেনোড্রজেন। আপেক্ষিক তাপ মাপার যন্ত্রের নাম খুজতে গিয়ে বিশ্ময়কর ভাবে আবিস্কার করলাম ক্যালোরি মিটারের প্রকৃত আবিস্কারকের নামও রেনো.... কি কাক তালিয়। হাইড্রোজেন নিয়েও একটু পড়েছিলাম। কিন্তু আসলে বিস্তারিত পড়া হয়ে ওঠেনি.... আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পন্ডিত মাহী এমন সুন্দর সাইন্স ফিকশন অনেকদিন পড়িনি। চমৎকার। কিন্তু হঠৎ যে শেশ হয়ে গেলো!!! আর কই...????
পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে লেখাটা লেখার পর আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করল। কোন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রে হাতে পরলে আমাকে না তুলো ধূনো করে ফেলে। এখনো সেই ভয়ে আছি.....। আবার যেহেতু এটা একটা ফিকশন এবং আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই তাই একটু আসস্থ আছি। আপনাদের কাছে ভাল লাগছে শুনে এখন বুকে একটু একটু বল পাচ্ছি.... আপনাদেরকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
সূর্য আহমাদ মুকুল ভাই সহ বেশ কজনের সাথে গল্পকবিতার বিভিন্ন লেখক এবং তাদের লেখা নিয়ে আলাপ হয়। গতকাল এমনই এক আলাপোচ্ছলে আপনার গল্পটার কথা শুনলাম। প্রথম থেকে শেষ অবধি থ্রিলার মুভির মতো টেনে রাখার যথেষ্ট যোগ্যতা গল্পটির রয়েছে। শেষটায় ছোট গল্পের আদল রেখে যেভাবে শেষ করলেন তাতে সাইফাই প্রিয়দের দু'চারটা ডান্ডা খাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।................ টান টান উত্তেজনায় ভরপুর সুন্দর একটা গল্প। [[পদার্থকে শক্তিতে আবার শক্তিকে পদার্থে রূপান্তর করা যায়। এই কথাটা কি ঠিক? যতদূর জানি শক্তির দ্বারা পদার্থের রূপ অথবা এক শক্তিকে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। কিন্তু শক্তিকে পদার্থে রূপান্তরিত করার ব্যপারটা জানা নেই]]
ভাই আমি আসলে বিজ্ঞানের ছাত্র নই। আমি একজন একাউন্টেন্ট। এক সময় ছিলাম! তবে যতদূর জানি, পাকিস্তানের বিজ্ঞানি আব্দুস সালামের মতবাদ হচ্ছে, সকল পদার্থই আসলে শক্তির আরেক রূপ (আমার ভুল হতেও পারে!) যেহেতু পদার্থও একপ্রকার শক্তি এবং শক্তিকে রূপান্তর করা যায় ... সেই মতবাদ থেকে এই ফিকশনের জন্ম। হ্যাঁ এমনটা বাস্তবে হয় না... এই জন্যইতো ল্যন্সলট এত অবাক হয়েছিলেন, বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তবে শেষ কথা হচ্ছে এটা একটা ফিকশন...!!

১৬ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী